Buy IP

********** Welcome to Buy ip **********

Saturday, May 28, 2016

তারাবীহ ২০ রাকাত


তারাবীহ এর রাকাত সংখ্যা নিয়ে কথিত আহলে হাদিসদের মিথ্যাচারঃ একটি দলিল ভিত্তিক বিশ্লেষণ
ভূমিকা
আমাদের দেশের কিছু আহলে হাদিস নামধারীরা তারাবীহের রাকাত সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে দীর্ঘদিন যাবত। তাদের দাবী সহীহ হাদিসের ভিত্তিতে কেবল ৮ রাকাত তারাবীহ নামায প্রমাণিত। দলিল হিসেবে কিছু হাদিস পেশ করে যার কোনটিই স্পষ্ট তারাবীহকে বুঝায়না, বা হাদিসগুলি একেবারেই দুর্বল। এরপরও বিশ রাকাত তারাবীহ যা হাদিস ও সাহাবায়ে কিরামের সর্ব সম্মত ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে প্রমাণিত একে অস্বীকার করে যায় নিতান্তই ঘাড়ত্যারামী করে। রামাযান মাসে জাতিকে সুন্নত আমল থেকে বিরত রাখে এক নিকৃষ্ট পন্থায়। সেই সকল ভ্রান্ত অনুসারীদের দাবি-যুক্তি খন্ডনের নিমিত্তে আমার এই প্রয়াস। আলোচনার সুবিধার্থে লেখাটি দু’টি পর্বে বিভক্ত করেছি। প্রথম পর্বে ওদের দলিলকৃত হাদিস উল্লেখ করে তার জবাব প্রদান। আর দ্বিতীয় পর্বে তারাবীহ নামায বিশ রাকাত হাদিস ও সাহাবাদের সর্বসম্মত ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে প্রমাণিত এ বিষয় বিস্তারিত আলোচনা করা। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সত্য জানার তৌফিক দিন।
৮ রাকাত তারাবীহের পক্ষে কথিত আহলে হাদিসদের দলিলসমূহ
এক নং দলিল
ﻦﻋ ﻲﺑﺃ ﺔﻤﻠﺳ ﺪﺒﻋ ﻦﺑ ﻪﻧﺃ ﻦﻤﺣﺮﻟﺍ ﻩﺮﺒﺧﺃ ﻪﻧﺃ : ﻝﺄﺳ ﺔﺸﺋﺎﻋ ﻲﺿﺭ ﻪﻠﻟﺍ ﻒﻴﻛ ﺎﻬﻨﻋ ﺓﻼﺻ ﺖﻧﺎﻛ ﻝﻮﺳﺭ ﻪﻠﻟﺍ ﻰﻠﺻ ﻪﻠﻟﺍ ﻪﻴﻠﻋ ﻢﻠﺳ ﻭ ﻲﻓ ﻥﺎﻀﻣﺭ ؟ ﺎﻣ ﺖﻟﺎﻘﻓ ﻥﺎﻛ ﻝﻮﺳﺭ ﻪﻠﻟﺍ ﻰﻠﺻ ﻪﻠﻟﺍ ﻪﻴﻠﻋ ﻭ ﻢﻠﺳ ﺪﻳﺰﻳ ﻥﺎﻀﻣﺭ ﻲﻓ ﻻﻭ ﻲﻓ ﻩﺮﻴﻏ ﻯﺪﺣﺇ ﻰﻠﻋ ﺓﺮﺸﻋ ﺔﻌﻛﺭ ﺎﻌﺑﺭﺃ ﻲﻠﺼﻳ ﻞﺴﺗ ﻼﻓ ﻦﻋ ﻦﻬﻟﻮﻃﻭ ﻦﻬﻨﺴﺣ ﻢﺛ ﺎﻌﺑﺭﺃ ﻲﻠﺼﻳ ﻞﺴﺗ ﻼﻓ ﻦﻋ ﻦﻬﻟﻮﻃﻭ ﻦﻬﻨﺴﺣ ﻢﺛ ﻲﻠﺼﻳ ﺎﺛﻼﺛ ﺖﻟﺎﻗ . ﺔﺸﺋﺎﻋ ﺖﻠﻘﻓ ﻝﻮﺳﺭﺎﻳ ﻡﺎﻨﺗﺃ ﻪﻠﻟﺍ ﻞﺒﻗ ﻥﺃ ﺮﺗﻮﺗ . ؟ ﻝﺎﻘﻓ ﺎﻳ ﻥﺇ ﺔﺸﺋﺎﻋ ﻲﻨﻴﻋ ﻥﺎﻣﺎﻨﺗ ﻻﻭ ﻡﺎﻨﻳ ﻲﺒﻠﻗ ( ﺏﺍﻮﺑﺃ -ﻯﺭﺎﺨﺒﻟﺍ ﺢﻴﺤﺻ ،ﺪﺠﻬﺘﻟﺍ ﻡﺎﻴﻗ ﺏﺎﺑ ﻲﺒﻨﻟﺍ ﻰﻠﺻ ﻪﻠﻟﺍ ﻪﻴﻠﻋ ﻢﻠﺳ ﻭ ﻞﻴﻠﻟﺎﺑ ﻲﻓ ﻩﺮﻴﻏﻭ ﻥﺎﻀﻣﺭ 1/154 )
হযরত আবু সালমা বিন আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত তিনি আয়েশা রাঃ এর কাছে জানতে চান নবীজী সাঃ এর নামায কেমন হত রামাযান মাসে? তিনি বললেন-রাসূল সাঃ রামাযান ও রামাযান ছাড়া ১১ রাকাত থেকে বাড়াতেন না। তিনি ৪ রাকাত পড়তেন তুমি এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জানতে চেওনা। তারপর পড়তেন ৪ রাকাত তুমি এর সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা বিষয়ে জানতে চেওনা, তারপর পড়তেন ৩ রাকাত। হযরত আয়েশা রাঃ বলেন-তখন আমি বললাম-হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি বিতর পড়ার পূর্বে শুয়ে যান? তিনি বললেন-হে আয়েশা! নিশ্চয় আমার দু’চোখ ঘুমায় আমার কলব ঘুমায়না। (সহীহ বুখারী-১/১৫৪)
জবাব
১. এই হাদিসে ইযতিরাব তথা অস্পষ্টতা ও পরস্পর বিরোধিতা থাকায় এ দিয়ে দলিল দেয়া ঠিক নয়। আল্লামা কুরতুবী রহঃ বলেন-আমি আয়েশা রাঃ এর এই বর্ণনাটি অনেক আহলে ইলমদের কাছে জিজ্ঞাসা করেছি অনেকেই এতে অস্পষ্টতা ও পরস্পর বিরোধিতা আছে বলে মত প্রকাশ করেছেন। (ফাতহুল বারী শরুহুল বুখারী-৩/১৭)
২. খোদ হযরত আয়েশা রাঃ থেকে ১৩ রাকাত তারাবীহের কথা সহীহ সনদে বর্ণিত আছে। সুতরাং হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী অস্পষ্টতা ও পরস্পর বিরোধিতা দূর করতে এই পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন-“সঠিক কথা হল এ ব্যাপারে আমি যা উল্লেখ করেছি এগুলো সব ভিন্ন সময় ও ভিন্ন পরিস্থিতির উপর নির্ভরশীল” অর্থাৎ নবীজী একেক সময় একেক রাকাত নামায পড়েছেন তারাবীহের ক্ষেত্রে।(ফাতহুল বারী-৩/১৭)
এর মাধ্যমে কথিত আহলে হাদিসদের “৮ রাকাতের মাঝেই তারাবীহ নামায সীমাবদ্ধ এরচে’ বেশী তারাবীহ নামায নেই” এই দাবিটি বাতিল হয়ে যাচ্ছে। খোদ আহলে হাদিসদের আলেম মাওলানা আব্দুর রহমান মুবারকপুরী বলেন-নিশ্চয় একথা প্রমাণিত যে রাসূল সাঃ ১৩ রাকাত তারাবীহ পড়েছেন ফজরের দু’রাকাত সুন্নত ছাড়াই।(তুহফাতুল আহওয়াজী-২/৩)
৩. এই হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হল নবীজী সাঃ এক সালামে ৪, ৪ রাকাত করে তারাবীহ আর শেষে এক সালামে ৩ রাকাত বিতর পড়েছেন, অথচ কথিত আহলে হাদিসদের আমল এর বিপরীত। তারা তারাবীহ দুই দুই রাকাত করে পড়েন। আর বিতর এক রাকাত বা তিন রাকাত দুই সালামে পড়েন। সুতরাং যেই হাদিস দলিলদাতাদের কাছে আমলহীন এর দ্বারা দলিল দেয়া যায়?
৪. আসল কথা হল এই যে, এই হাদিসটি তাহাজ্জুদ নামাযের সাথে সংশ্লিষ্ট। এতে তারাবীহের কথা বর্ণিত নয়। নিম্নে এ ব্যাপারে কিছু প্রমাণ উপস্থাপন করা হল।
“হাদিসে মূলত তাহাজ্জুদের বর্ণনা এসেছে” একথার দলিল
১. হাদিসের শব্দ ﺎﻣ ﻥﺎﻛ ﻝﻮﺳﺭ ﻰﻠﺻ ﻪﻠﻟﺍ ﻪﻠﻟﺍ ﻪﻴﻠﻋ ﻭ ﻢﻠﺳ ﺪﻳﺰﻳ ﻥﺎﻀﻣﺭ ﻲﻓ ﻻﻭ ﻲﻓ ﻩﺮﻴﻏ (নবীজী সাঃ রামাযান ও রামাযান ছাড়া অন্য সময় বাড়াননা) এটাই বুঝাচ্ছে যে, প্রশ্নটি করা হয়েছিল রামাযান ছাড়া অন্য সময়ে যে নামায নবীজী পড়তেন তা রামযানে বাড়িয়ে দিতেন কিনা? এই প্রশ্নটি এজন্য করা হয়েছে যেহেতো বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে রাসূল সাঃ রামাযানে আগের তুলনায় অনেক নামায পড়তেন ও ইবাদত করতেন, তাই এই প্রশ্নটি করাটা ছিল স্বাভাবিক। আর রামযান ছাড়া কি তারাবীহ আছে? যে রামাযানের আগেই তারাবীহ আর বিতর মিলিয়ে ১৩ রাকাত নবীজী পড়তেন? নাকি ওটা তাহাজ্জুদ? তাহাজ্জুদ হওয়াটাই কি সঙ্গত নয়? সুতরাং এটাই স্পষ্ট বুঝা যায় তারাবীহ নয় প্রশ্ন করা হয়েছে তাহাজ্জুদ নিয়ে যে, নবীজী তাহাজ্জুদের নামায রামাযান ছাড়া যে ক’রাকাত পড়তেন তা থেকে রামাযানে বাড়িয়ে পড়তেন কিনা? এর জবাবে আয়েশা রাঃ বললেন-১৩ রাকাত থেকে বাড়াতেননা তাহাজ্জুদ নামায।
২. এই হাদিসের শেষাংশে এই শব্দ আছে যে ﺖﻟﺎﻗ ﺔﺸﺋﺎﻋ ﺖﻠﻘﻓ ﻝﻮﺳﺭﺎﻳ ﻡﺎﻨﺗﺃ ﻪﻠﻟﺍ ﻥﺃ ﻞﺒﻗ ﺮﺗﻮﺗ ؟ (তারপর আয়েশা রাঃ বললেন-হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কি বিতর পড়ার আগে ঘুমান?) এই বিষয়টি তারাবীহ এর ক্ষেত্রে কল্পনাতীত যে নবীজী সাঃ তারাবীহ নামায পড়ে ঘুমিয়ে পড়েন আর সাহাবীরা বিতর পড়ার জন্য নবীর জন্য অপেক্ষমাণ থাকেন। বরং এটি তাহাজ্জুদ এর ক্ষেত্রে হওয়াটাই যুক্তিসঙ্গত নয়কি?
৩. মুহাদ্দিসীনে কিরাম এই হাদিসকে তারাবীহ এর অধ্যায়ে উল্লেখ করেননি। বরং তাহাজ্জুদ অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন। ইমাম মুহাম্মদ বিন নসর মারওয়াজী তার কিতাব “কিয়ামুল লাইল” এর ﺩﺪﻋ“ ﻰﺘﻟﺍ ﺕﺎﻌﻛﺮﻟﺍ ﻡﻮﻘﻳ ﺎﻬﺑ ﻡﺎﻣﻻﺍ ﺱﺎﻨﻠﻟ ﻰﻓ ”ﻥﺎﻀﻣﺭ(রামযানে ইমাম কত রাকাত তারাবীহ পড়বে) অধ্যায়ে অনেক হাদিস আনলেও আয়েশা রাঃ থেকে বর্ণিত এই হাদিসটি সহীহ হওয়া সত্বেও তিনি আনেননি। সাথে এদিকে কোন ইশারাও করেননি।
৪. মুহাদ্দিসীনে কিরাম এই হাদিসকে তারাবীহ এর রাকাত সংখ্যার অধ্যায়ের পরিবর্তে তাহাজ্জুদের অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন। যেমন ইমাম বুখারী রহঃ তার প্রণিত বুখারী শরীফে এই হাদিসটি নিম্ন বর্ণিত অধ্যায়ে উল্লেখ করেছেন-
(ক) বিতর অধ্যায়-(১/১৩৫)
(খ) নবীজী সাঃ এর রাতে (নামাযের উদ্দেশ্যে) দান্ডয়মানতা রামযানে ও রামযান ছাড়া-(১/১৫৪)
(গ) রামযানে (নামাযের উদ্দেশ্যে) দান্ডয়মানতার ফযীলত অধ্যায়-(১/২৬৯)
(ঘ) নবীজী সাঃ এর দু’চোখ ঘুমায় মন ঘুমায়না-(১/৫০৩)
প্রথম অধ্যায়ে বিতরের রাকাত সংখ্যা আর দ্বিতীয় অধ্যায়ে তাহাজ্জুদ রামাযানে বেশি পড়তেন কিনা তা জানা আর তৃতীয় অধ্যায়ে রামাযানে বেশি বেশি নামাযের ফযীলত আর চতুর্থ অধ্যায়ে নবীজী ঘুমালে যে তার অযু ভাঙ্গেনা তার কারণ বর্ণনা জন্য হাদিস আনা হয়েছে। তারাবীহের রাকাত সংখ্যা বুঝানোর জন্য কোথায় এসেছে এই হাদিস???
৫. আল্লামা হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী এই হাদিসের ব্যাক্ষায় বলেন-আর আমার কাছে এটি প্রকাশিত হয়েছে যে, ১১ রাকাতের থেকে না বাড়ানোর রহস্য এটি যে, নিশ্চয় তাহাজ্জুদ ও বিতরের নামায রাতের নামাযের সাথে খাস। আর দিনের ফরয যোহর ৪ রাকাত আর আসর সেটাও ৪ রাকাত আর মাগরীব হল ৩ রাকাত যা দিনের বিতর। সুতরাং সাযুজ্যতা হল-রাতের নামায দিনের নামাযরের মতই সংখ্যার দিক থেকে সংক্ষিপ্ত ও বিস্তারিতভাবে। আর ১৩ রাকাতের ক্ষেত্রে সাযুজ্যতা হল-ফযরের নামায মিলানোর মাধ্যমে কেননা এটি দিনের নামাযই তার পরবর্তী নামাযের জন্য।(ফাতহুল বারী শরহুল বুখারী-৩/১৭)
ইবনে হাজার রহঃ এর এই রহস্য বা হিকমত বর্ণনা কি বলছেনা এই হাদিস দ্বারা তাহাজ্জুদ উদ্দেশ্য তারাবীহ নামায নয়? এই বক্তব্যে তাহাজ্জুদের কথা স্পষ্টই উল্লেখ করলেন ইবনে হাজার রহঃ।
তাহাজ্জুদ ও তারাবীহের মাঝে পার্থক্য
কথিত আহলে হাদিসরা বলেন “তাহাজ্জুদ আর তারাবীহ একই” তাদের এই দাবিটি ভুল নিম্নবর্ণিত কারণে
১. তাহাজ্জুদের মাঝে ডাকাডাকি জায়েজ নয় তারাবীহতে জায়েজ।
২. তারাবীহের সময় ঘুমানোর আগে তাহাজ্জুদের সময় নির্ধারিত নয় তবে উত্তম ঘুমের পর।
৩. মুহাদ্দিসীনে কিরাম তাহাজ্জুদ ও তারাবীহের অধ্যায় ভিন্ন ভিন্ন লিখেছেন।
৪. তাহাজ্জুদ নামাযের হুকুম কুরআন দ্বারা প্রমাণিত যথা সূরা ইসারার ৭৯ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ِﻞْﻴَّﻠﻟﺍ َﻦِﻣَﻭ ِﻪِﺑ ْﺪَّﺠَﻬَﺘَﻓ َﻚَّﻟ ًﺔَﻠِﻓﺎَﻧ ﻰَﺴَﻋ ﻥَﺃ َﻚَﺜَﻌْﺒَﻳ َﻚُّﺑَﺭ ﺎًﻣﺎَﻘَﻣ ﺍًﺩﻮُﻤْﺤَّﻣ অর্থাৎ আর রাতে তাহাজ্জুদ পড় এটি তোমার জন্য নফল, অচিরেই তোমাকে তোমার রব প্রশংসিত স্থানে অধিষ্ঠিত করবেন।
আর তারাবীহের ব্যাপারে আল্লাহর নবী বলেন-নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা রামযানের রোযা তোমাদের উপর ফরয করেছেন আর আমি তোমাদের উপর এতে কিয়াম করাকে সুন্নত করেছি (সুনানে নাসায়ী-১/৩০৮)
সুতরাং বুঝা গেল তাহাজ্জুদ আল্লাহর আয়াত আর তারাবীহ নবীজীর বক্তব্য দ্বারা প্রমাণিত।
৫. তাহাজ্জুদের হুকুম মক্কায় হয়েছে আর তারাবীহের হুকুম মদীনায় হয়েছে।
৬. ইমাম আহমাদ রহঃ ও তারাবীহ তাহাজ্জুদ আলাদা বিশ্বাস করতেন(মাকনা’-১৮৪)
৭. ইমাম বুখারী রহঃ এর ক্ষেত্রে বর্ণিত তিনি রাতের প্রথমাংশে তার সাগরীদদের নিয়ে তারাবীহ পড়তেন আর শেষ রাতে একাকি তাহাজ্জুদ পড়তেন। (ইমাম বুখারী রহঃ এর জীবনী)
৮. তাহাজ্জুদ এর নির্দিষ্ট রাকাত সংখ্যা রাসূল সাঃ থেকে প্রমাণিত অর্থাৎ বিতরসহ বেশি থেকে বেশি ১৩ রাকাত আর কমপক্ষে ৭ রাকাত। আর তারাবীহ এর রাকাত সংখ্যার ক্ষেত্রে খোদ আহলে হাদিস ইমামদের স্বাক্ষ্য যে এর কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা নবীজী সাঃ থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত নয়।
২ নং দলিল
ﻦﻋ ﻦﺑ ﺮﺑﺎﺟ ﺪﺒﻋ ﻪﻠﻟﺍ ﻝﺎﻗ : ﺎﻨﺑ ﻰﻠﺻ ﻝﻮﺳﺭ ﻪﻠﻟﺍ ﻰﻠﺻ ﻪﻠﻟﺍ ﻪﻴﻠﻋ ﻢﻠﺳ ﻭ ﻲﻓ ﻥﺎﻤﺛ ﻥﺎﻀﻣﺭ ﺕﺎﻌﻛﺭ ﺎﻤﻠﻓ ﺮﺗﻮﻟﺍﻭ ﻦﻣ ﻥﺎﻛ ﺎﻨﻌﻤﺘﺟﺍ ﺔﻠﺑﺎﻘﻟﺍ ﻲﻓ ﺪﺠﺴﻤﻟﺍ ﺝﺮﺨﻳ ﻥﺃ ﺎﻧﻮﺟﺭﻭ ﺎﻨﻴﻟﺇ ﻢﻠﻓ ﻝﺰﻧ ﻲﻓ ﻰﺘﺣ ﺪﺠﺴﻤﻟﺍ ﻰﻠﻋ ﺎﻨﻠﺧﺪﻓ ﺎﻨﺤﺒﺻﺃ ﻝﻮﺳﺭ ﻪﻠﻟﺍ ﻰﻠﺻ ﻪﻠﻟﺍ ﻪﻴﻠﻋ ﻭ ﺎﻨﻠﻘﻓ ﻢﻠﺳ : ﻪﻟ ﺎﻳ ﻝﻮﺳﺭ ﻪﻠﻟﺍ ﺝﺮﺨﺗ ﻥﺃ ﺎﻧﻮﺟﺭ ﺎﻨﻴﻟﺇ ﺎﻨﺑ ﻞﺼﺘﻓ : ﻝﺎﻘﻓ ﺖﻫﺮﻛ ﺐﺘﻜﻳ ﻥﺃ ﻢﻜﻴﻠﻋ ﺮﺗﻮﻟﺍ ( ﻡﺎﻴﻗ 90-ﻞﻴﻠﻟﺍ )
হযরত জাবের রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন-রাসূল সাঃ আমাদের সাথে রামযানে ৮ রাকাত নামায ও বিতর নামায পড়লেন, তারপর যখন পরদিন হল আমরা মসজিদে একত্রিত হলাম এবং আকাংখা করলাম নবীজী সাঃ আমাদের কাছে আসবেন। আমরা মসজিদে অবস্থান করতে লাগলাম। প্রভাত হয়ে গেল। তখন আমরা গেলাম নবীজী সাঃ এর কাছে। তাকে বললাম-হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আকাংখী ছিলাম আপনি আমাদের কাছে যাবেন এবং আমাদের নিয়ে নামায পড়বেন, তখন তিনি বললেন-আমি এটি পছন্দ করছিলামনা যে, তোমাদের উপর বিতর ফরয হয়ে যাক।(কিয়ামুল লাইল-৯০)
জবাব
এই হাদিসটি নিয়ে কথিত আহলে হাদিসরা সবচে’ বেশি খুশি হতে দেখা যায়। অথচ আশ্চর্যের বিষয় হল এই হাদিসটি দুর্বল। শুধু একজন নয় এই হাদিসের তিনজন রাবীর ক্ষেত্রে মুহাদ্দিসীনে কিরাম বলেছেন তারা গ্রহণযোগ্য নয়। দেখুন মুহাদ্দিসীনে কিরাম কি বলে এই হাদিসের বর্ণনাকারীদের ব্যাপারে।
ইবনে হুমাইদ রাজী
১. হাফেজ জাহাবী রহঃ বলেন-তিনি দুর্বল
২. ইয়াকুব বিন শি’বা রহঃ বলেন-তিনি অনেক অগ্রহণীয় হাদিস বর্ণনা করেন।
৩. ইমাম বুখারী রহঃ বলেন-এতে আপত্তি আছে।
৪. আবু জুরআ রহঃ বলেন-তিনি মিথ্যাবাদী।
৫. ইসহাক কু’সজ রহঃ বলেন-আমি স্বাক্ষ্য দিচ্ছি তিনি মিথ্যাবাদী।
৬. সালেহ জাযরাহ রহঃ বলেন-প্রত্যেক বিষয়ে সে হাদিস বর্ণনা করে। আল্লাহর উপর অধিক অপবাদ আরোপকারী আমি তাকে ছাড়া কাউকে দেখিনি। সে লোকদের হাদিস পরিবর্তন করে ফেলে।
৭. আল্লামা ইবনে খারাশ রহঃ বলেন-আল্লাহর কসম সে মিথ্যাবাদী
৮. ইমাম নাসায়ী রহঃ বলেন-সে গ্রহণযোগ্য নয়। (মিযানুল ই’তিদাল-৩/৪৯-৫০)
ইয়াকুব বিন আব্দুল্লাহ আশআরী
# ইমাম দারা কুতনী রহঃ বলেন-সে শক্তিশালী নয় (মিযানুল ই’তিদাল-৩/৩২৪)
ঈসা বিন জারিয়া
১. আল্লামা ইয়াহইয়া বিন মায়ীন রহঃ বলেন-তার কাছে অগ্রহণীয় হাদিস আছে।
২. ইমাম নাসায়ী বলেন-তার হাদিস অগ্রহণীয়।
৩. ইমাম নাসায়ী বলেন-তার হাদিস পরিত্যাজ্য।
৪. আবু দাউদ রহঃ বলেন-তার হাদিস অগ্রহণীয়।
৫. আল্লামা জাহাবী বলেন-তিনি দুর্বলদের মাঝে শামীল (মিযানুল ই’তিদাল-২/৩১১)
এছাড়া এ হাদিসটি “বুলুগুল মারাম” কিতাবে হযরত জাবের রাঃ থেকেই বর্ণিত কিন্তু সেখানে রাকাত সংখ্যার কথা উল্লেখ নেই। দেখুন বুলুগুল মারাম-৪২-৪৩
এছাড়াও এ হাদিসে আরেকটি সমস্যা আছে, তাহল-এই হাদিসে বিতর ফরয হবার আশংকার কথা বলা হয়েছে অথচ অন্য সহীহ হাদিসে তারাবীহ ফরয হয়ে যাবার আশংকা উল্লেখে করা হয়েছে। (মিযানুল ই’তিদাল-২/৪২-৪৩)
প্রিয় পাঠক/পাঠিকাদের হাতেই ছেড়ে দিলাম এই হাদিস দিয়ে হুকুম প্রমাণিত করার ভার। এরকম দুর্বল হাদিস দিয়ে এরকম মতবিরোধপূর্ণ বিষয় কি প্রমাণিত হয়?
৩ নং দলিল
ﻲﻨﺛﺪﺣ ﻭ ﻚﻟﺎﻣ ﻦﻋ ﻦﻋ ﻦﺑ ﺪﻤﺤﻣ ﻦﻋ ﻒﺳﻮﻳ ﻦﺑ ﺐﺋﺎﺴﻟﺍ ﻪﻧﺃ ﺪﻳﺰﻳ ﻝﺎﻗ ﺮﻣﺃ ﺮﻤﻋ ﻦﺑ ﺏﺎﻄﺨﻟﺍ ﺐﻌﻛ ﻦﺑ ﻲﺑﺃ ﻱﺭﺍﺪﻟﺍ ﺎﻤﻴﻤﺗﻭ ﻥﺃ ﺎﻣﻮﻘﻳ ﺱﺎﻨﻠﻟ ﻯﺪﺣﺈﺑ ﺔﻌﻛﺭ ﺓﺮﺸﻋ ( ﺄﻃﻮﻣ 98-ﻚﻟﺎﻣ )
মুহাম্মদ বিন ইউসুফ সায়েব বিন ইয়াজীদ রহঃ থেকে বর্ণনা করেন যে, নিশ্চয় ওমর রাঃ ওবাই বিন কাব রাঃ ও তামীমে দারী রাঃ কে মানুষের সাথে ১১ রাকাত নামায পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।(মুয়াত্তা মালিক-৯৮)
জবাব
এই হাদিস দিয়েও দলিল দেয়া ঠিক নয়। কারণ-
১. হাদিসটির শব্দে পরস্পর বিরোধীতা রয়েছে। যেমন এই হাদিসের সূত্রের একজন বর্ণনাকারী মুহাম্মদ বিন ইউসুফ তার সাগরীদ ৫ জন। তার মধ্যে ৩জন ১১ রাকাত আর ১জন ১৩ রাকাত ও ১জন ২১ রাকাতের বর্ণনা নকল করেন। এছাড়া যারা ১১রাকাতের কথা বর্ণনা তাদের বর্ণনার শব্দেও রয়েছে বিস্তর ফারাক। যথা-
ক. ইমাম মালিক এনেছেন ওমর রাঃ ওবাই বিন কাব রাঃ ও তামীমে দারী রাঃ কে মানুষের সাথ ১১ রাকাত নামায পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
খ. হযরত ইয়াহইয়া আল কাত্তান বর্ণনা করেন-ওমর রাঃ ওবাই বিন কাব ও তামিমে দারী এর কাছে লোকদের একত্র করেন আর তারা দু’জন ১১ রাকাত নামায পড়াতেন।
গ. আব্দুল আজীজ বিন মুহাম্মদ রহঃ এর বর্ণনায় এসেছে-আমরা হযরত ওমর রাঃ এর আমলে ১১ রাকাত নামায পড়তাম।
বর্ণনাকারীর বর্ণনার ঠিক নেই, সাথে সাথে যারা এক কথা বলেছেন তাদের বক্তব্যটিও পরস্পর বিরোধী এমন বর্ণনা পরিত্যাজ্য। (ইলাউস সুনান-৭/৪৮)
২. এই বর্ণনাটি হযরত ওমর রাঃ থেকে আরেকটি সহীহ ও শক্তিশালী বর্ণনার বিপরিত। হযরত ওমর রাঃ থেকে ২০ রাকাত তারাবীহের কথা ইমাম মালিক রাহঃ তার মুয়াত্তার ৪০ নং পৃষ্ঠায় ও হাফেজ ইবনে হাজার ফাতহুল বারীর ৪ নং খন্ডের ২১৯ নং পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেন। সুতরাং বুঝা গেল এই বর্ণনাটি আমলযোগ্য নয়।
৩. ইমাম মালিক রাহঃ নিজেই এই বর্ণনাটি আমলযোগ্য মনে করেননি, তাই তিনি নিজে ৮ রাকাতের কথা বলেননা।
৪. যদি হযরত ওমর রাঃ থেকে ১১ রাকাতের বর্ণনাটি সহীহ হত তাহলে পরবর্তীতে হযরত উসমান রাঃ ও আলী রাঃ থেকে এরকম বর্ণনা ও আমল প্রমাণিত হত, অথচ তাদের থেকে এরকম বর্ণনা প্রমাণিত নয়।
৫. এটাও হতে পারে যে, প্রথমে হযরত ওমর রাঃ এর কাছে নবীজী থেকে ৮ রাকাতের বর্ণনা এসেছিল কিন্তু পরবর্তীতে ২০ রাকাতের বর্ণনাটি পৌঁছলে তিনি ৮ রাকাতের বর্ণনাটি পরিত্যাগ করেন।
এই সকল কারণে এই হাদিসটি আমলযোগ্য হিসেবে বাকি থাকেনা।
আহলে হাদিস ইমামদের বক্তব্য তারাবীহের রাকাত সংখ্যার ব্যাপারে
১. শায়েখ ইবনে তাইমিয়া রহঃ বলেন-আর যারা ধারণা করে যে, নিশ্চয় রামযানের দন্ডায়মানতার নির্দিষ্ট সংখ্যা প্রমাণিত আছে নবীজী সাঃ থেকে যার উপর বাড়ানো কমানো যাবেনা সে ভুলের মাঝে আছে।(ফাতওয়া ইবনে তাইমিয়া-২/৪০১)
২. আল্লামা ইবনে সুবকী রহঃ বলেন-জেনে রাখ! নিশ্চয় রাসূল সাঃ কি বিশ রাকাত তারাবীহ পড়েছেন না তার চে’ কম পড়েছেন তা তার থেকে বর্ণিত নেই (শরহুল মিনহাজ)
৩. আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ুতী রহঃ বলেন-নিশ্চয় ওলামায়ে কিরাম মতান্যৈক্য করেছেন এর সংখ্যার ক্ষেত্রে, যদি তা নবীজী সাঃ থেকে প্রমাণিত বিষয় হত তাহলে তাতে মতবিরোধ হতনা।(আল মিসবাহ-৭৪)
৪. মাওলানা ওয়াহীদুজ্জামান বলেন-তারাবীহ নামাযের নির্দিষ্ট রাকাত নেই।( নাজলুল আবরার-১/১২৬)
৫. আবুল খায়ের নুরুল হাসান খাঁ বলেন-মোটকথা হল নির্দিষ্ট সংখ্যা নবী থেকে প্রমাণিত নয়।( আল উরফুল জাদি-৮৪)
৬. নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান বলেন-নিশ্চয় তারাবীহ নামায সুন্নত মৌলিকভাবে। যেহেতো নবীজী সাঃ তা রাতে পড়তেন তার পর তা ছেড়ে দিয়েছেন উম্মতের প্রতি দরদে যেন তা ফরয না হয়ে যায়, আর এর কোন নির্দিষ্ট রাকাতের কথা সহীহ হাদিসে নেই, কিন্তু নবীজী সাঃ এর একথা জানা যায় যে, তিনি রামাযানে এত ইবাদত করতেন যা অন্য সময়ে করতেননা।(আল ইনতিকাদুর রাজী’-৬১)
ঠান্ডা মাথায় উল্লেখিত আলোচনা পড়লে আশা করি সবার কাছে স্পষ্ট হবে ৮ রাকাত তারাবীহের দাবিটি একটি ভুল দাবি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের রামাযানের এই পবিত্র আমল তারাবীহ ২০ রাকাত আদায় করে তার নৈকট্য হাসিল করা তৌফিক দান করুন


No comments:

Post a Comment