Buy IP

********** Welcome to Buy ip **********

বোখারী শরীফ ও বিশ্লেষণ

 বোখারী শরীফ, পৃষ্ঠা  ৩৪ 
প্রথম অধ্যায় 
ঈমান

পাঁচটি মৌলিক জিনিসের উপর ইসলাম ধর্মের ভিত্তি স্থাপিত। উহাদের মধ্যে সর্ব প্রধান হইতেছে ‘ঈমান’।


ঈমান কাহাকে বলে?
আল্লাহ জাল্লা জালালুহুর নিকট হইতে হযরত মোহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাহা কিছু বহন করিয়া আনিয়া কোরআন রূপে এবং হাদিছের মাধ্যমে মানব জাতিকে দান করিয়েছেন ঐ সবকে অন্তরের সহিত বিশ্বাস ও মৌখিক স্বীকার করিয়া কার্যে পরিণত করার জন্য প্রস্তুত থাকাকে ‘ঈমান’ বলে।


অন্তরে দৃঢ়বিশ্বাস রাখিয়া মুখে স্বীকার করতঃ আল্লাহ তায়ালার সমুদয় আদেশ নিষেদগুলিকে ব্যবহারিক জীবনে কার্যে পরিণত করার নাম ইসলাম। সমস্ত আদেশ নিষেধ গুলিকে কার্যে পরিণত করার সৌকর্য্য এবং আন্তরিক বিশ্বাসের দৃঢ়তার প্রতিফলনের তারতম্য অনুপাতে ইমানের উন্নতি ও অবনতি হইয়া থাকে। কোরআন শরীফের বহু আয়াতে এই উন্নতি ও অবন্তির প্রতি ইঙ্গিত রহিয়াছে। এ ছাড়া ঈমানের বহু শাখা প্রশাখাও আছে। যেমন- আল্লাহ্‌র প্রিয় ব্যক্তি, বস্তু ও কার্য্যকে ভালবাসা এবং আল্লাহ্‌র অপ্রিয় যাবতীয় বস্তুকে অপছন্দ করা ঈমানের একটি শাখা। স্বীয় চরিত্রে ঐ শাখা- প্রশাখার উন্মেষ ও অস্তিত্বের কম বেশী হওয়ার দরুনও ঈমানের উন্নতি- অবনতি হইয়া থাকে।
আরবী ভাষায় ঈমান শব্দের অর্থ বিশ্বাস। কিন্তু জে ঈমান মানব জাতির কল্যাণের উৎস এবং পরকালের নাজাত, মুক্তি ও সুখ- শান্তির একমাত্র পথ সে ঈমান শুধু মাত্র বিশ্বাসের নামই নহে। বরং সেই ঈমান- রত্ন বহু সাধনার ধন। সাধনা ব্যতিরেকে ঐ অমূল্য রত্ন হাসিলও হয় না, রক্ষিতও হয় না। এই বিষয়টি বুঝাইবার জন্যই বোখারী (রঃ) কয়েকজন মনীষীর কয়েকটি মূল্যবান কথার উল্লেখ করিতেছেন।
ওমর ইবনে আব্দুল আজীজ (রঃ) খোলাফায়ে- রাশেদীনগণের অনুরূপ খলীফা অ বিশিষ্ট তাবেয়ী ছিলেন। একদা তিনি তাঁহার আলজেরিয়াস্থ গভর্নরকে একটি হেদায়েত- নামা লিখিয়া পাঠাইয়াছিলেন। উহাতে তিনি উল্লেখ করিয়াছিলেন- “নিশ্চয় জানিও ঈমানের অন্তর্গত বিভিন্ন পর্যায়ের অনেকগুলি বিষয়বস্তু রহিয়াছে- (১) ফরজ ও ওয়াজিব সমূহ, (যেগুলি অবশ্যই করণীয়, যেমন- আল্লাহ্‌ ও রসুলের আনুগত্য স্বীকার করতঃ কালেমা পড়া, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া, রমজানের রোজা রাখা, যাকাত দান করা, হজ্ব করা, দ্বীনের এল্‌ম শিখা, জেহাদ করা ইত্যাদি।) (২) মশরু বা জায়েজ বিষয় সুমহ ( যে গুলির উপর মানুষ তাহার স্বাধীন ইচ্ছা ও কর্মশক্তি প্রয়োগ করিয়া কাজ করার জন্য আল্লাহ্‌ তায়ালার অনুমতি প্রাপ্ত হইয়াছে।) (৩) নির্ধারিত সীমা সমূহ, ( অনেক স্থলে আল্লাহ্‌ তায়ালা মানুষকে স্বাধীন ইচ্ছা ও কর্মশক্তি প্রয়োগের অনুমতি দিয়েছেন, কিন্তু কোন স্থানেই তাহাকে লাগামহীন ছাড়িয়া দেন নাই। বরং প্রত্যেক ক্ষেত্রেই আল্লাহ্‌ তায়াল সীমা নির্ধারিত

পৃষ্ঠা  ৩৫ বোখারী শরীফ

করিয়া দিয়েছেন সেই সকল সীমা লঙ্ঘন করার অনুমতি মোটেই নাই। যেমন- আল্লাহ্‌ তায়ালা মানুষকে চক্ষু দান করিয়াছেন এবং তদ্বারা জাগতিক কাজকর্ম দেখা ও আল্লাহ্‌র সৃষ্টি জগতের নৈপুণ্য দেখিয়া জ্ঞান আহরণ করার অনুমতি দিয়েছেন। কিন্তু সেই সঙ্গে সীমা নির্ধারিত করিয়া দিয়েছেন যে, শরীয়তের নিষিদ্ধ বস্তু দেখতে পারিবে না। যেমন- অন্যের ছতর বা গুপ্তস্থান দেখা; বেগানা স্ত্রীলোকের প্রতি দৃষ্টিপাত করা ইত্যাদি। এইরূপে মানুষের প্রত্যেকটি ইন্দ্রিয় ও শক্তিকে পরিচালিত করিবার অনুমতি আল্লাহ্‌ তায়ালা দিয়েছেন বটে, কিন্তু সর্বক্ষেত্রেই সীমা নির্ধারিত করিয়া রাখিয়াছেন। সুতরাং ঐ নির্ধারিত সীমা লঙ্ঘন করা মহাপাপ) (৪) সুন্নাহ- অর্থাৎ রসুলুল্লাহ (সাঃ) এবং তাঁহার খোলাফায়ে রাশে দীনের আদর্শ সমূহ। (এই আদর্শ সমূহ হইতে আদবকায়দা ও নিয়ম পদ্ধতি গ্রহণ করিয়া তদনুযায়ী দৈনন্দিন জীবন, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন, সাধনা, ভজনা, ও এবাদত বন্দেগীর জীবন, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবন প্রভিতিকে গঠিত ও পরিচালিত করিতে হইবে। জীবনের কোন ক্ষেত্রেই ঐ পবিত্র আদর্শকে মুহূর্তের জন্যও পরিত্যাগ করা চলবে না।) যাহারা ঈমানের অঙ্গ স্বরূপ উপরোক্ত চারিটি বিষয়- বস্তুকে পূর্ণরূপে আয়ত্ব ও রক্ষা করিবে তাহাদের ঈমান পুর্ণাঙ্গ হইবে।

পক্ষান্তরে যাহারা এইগুলিকে যত্ন ও সাধনার সহিত পূর্ণ না করিবে তাহাদের ঈমান অঙ্গহীন ও অসম্পূর্ণ থাকিয়া যাইবে। অতএব বুঝা গেল যে ঈমান কেবলমাত্র বিশ্বাসের নামই নহে; কর্মময় জীবনের অন্তহীন সাধনা ও প্রযত্ন উহার সহিত আঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত রহিয়াছে। ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ (রঃ) এ কথাও উক্ত চিঠিতে উল্লেখ করিয়াছেন যে- যদি আমি বাঁচিয়া থাকি, তবে আমি ঈমানের এই সমস্ত অঙ্গ- প্রতঙ্গ ও শাখা প্রশাখা সম্বন্ধে বিস্তারিত বর্ণনা দান করিব, যাহাতে জনসাধারণের পক্ষে উহা বুঝিতে ও তদনুযায়ী আমল করিতে সহজ হয়। আর যদি আমি মরিয়া যাই, তবে জানিয়া রাখিও- তোমাদের সংসর্গে থাকিয়া হুকুমত করার আদৌ কোন অভিপ্রায় আমার নাই।”


হযরত ইব্রাহিম (আঃ) বলিয়াছেন- আমি আমার অন্তরের সমস্ত অছওয়াছা (মানবীয় দুর্বলতা) দূর করতঃ একীন ও বিশ্বাসকে গাঢ় হইতে গাঢ়তর করিয়া ঈমানের উন্নতি সাধন করিতে চাই। 
ছাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) বলিতেন- প্রতিবন্ধকতায় কর্মজীবন এবং ত্যাগ তিতিক্ষা ও কষ্ট- ক্লেশের পরীক্ষার ভিতর দিয়া যে অটল বিশ্বাস প্রমাণিত হয় উহাই আসল পূর্ণাঙ্গ ঈমান। ঐরূপ বিশ্বাস ব্যতিরেকে শুধু মুখে বুলি আওরড়ানো বা ভাবাবেগ প্রকাশের নাম ঈমান নহে।

পৃষ্ঠা  ৩৬ বোখারী শরীফ

আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলিতেন- প্রত্যেক জিনিসেরই কোন না কোন গুনাগুন বা ক্রিয়া- প্রতিক্রিয়া থাকবেই; এই সব গুনাগুন বা ক্রিয়া- প্রতিক্রিয়ার দ্বারাই জিনিষটির পরিচয় হয়। সেমতে ঈমানেরও কতিপয় গুনাগুন বা ক্রিয়া- প্রতিক্রিয়া আছে- উহা এই যে, ঈমানদার ব্যক্তির আল্লাহ্‌র উপর বিশ্বাস এবং ভয় ও ভক্তি এত বাড়িয়া যায় যে, (আল্লার স্পষ্ট আদিষ্ট কাজগুলি ত করেই এবং নিষিদ্ধ কাজগুলিও চিরতরে বর্জন করে। এতদ্ব্যতীত) যে কোন কাজে বা কথায় তাহার মনে যদি সামান্য মাত্র খটকা বা সংশয়ের উদয় হয় যে, হয়ত এই কাজটি বা কথাটি পরিণামে আল্লাহ্‌র অসন্তষ্টির কারন হইতে পারে বা ইহাতে আল্লাহ্‌র অনুমোদন না থাকিতে পারে, ঈমানের প্রতিক্রিয়ার ফলে তাহাও সে বর্জন করিয়া চলে। মানুষের জীবনে এই অবস্থা যখন উপস্থিত হয়, তখনই তাহার ঈমান পূর্ণতা লাভ করে এবং খাঁটি তাকওয়া তাহার হাসিল হয়।
কোরআন শরীফের একটি আয়াতে আছেঃ- আল্লাহ্‌ তায়ালা হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) কে এবং নুহ, ইব্রাহীম, মুছা ও ইছাকে (আঃ) (এতদ্ভিন্ন সমস্ত পয়গাম্বরগণকে) একই ধর্ম এবং একই ঈমান ও ইসলাম প্রতিষ্ঠীর আদেশ করিয়াছেন; এবং ইহাও বলিয়া দিয়াছেন যে, এই মুল ধর্মকে সকলে ঠিক রাখ- ইহাতে বিভিন্ন মত পোষণ করিও না।
অন্য এক আয়াতে আছে- তোমাদের প্রত্যেকের জন্য ভিন্ন ভিন্ন পথ এবং ভিন্ন ভিন্ন তরিকা ও পদ্ধতি নির্দিষ্ট করিয়া দিয়াছি।
উক্ত আয়াতদ্বয়ের সমষ্টিগত তৎপরয এই যে, বিভিন্ন নবীগণের শরীয়তের ধর্ম পালনের পদ্ধতি ও প্রণালীর এবং ধর্মাচরণের খুঁটিনাটি বিষয়ে হয়ত পার্থক্য আছে বটে; কিন্তু মুল ধর্মের ভিতরে কোন পার্থক্য নাই। এক আল্লাহ্‌র দাসত্ব স্বীকার করতঃ একান্ত অনুগত হইয়া তাঁহার আদেশ পালনার্থে প্রতিযোগিতা করিয়া নেক কাজে অগ্রসর হওয়াই ঈমানের আসল মুল। এখনে ধর্মীয় অনুছানাদি ও আচারণের পার্থক্য স্বরূপ বলা যায়- যেমন নামায কায়েম করার হুকুম প্রত্যেক নবীর শরীয়তেই ছিলো, কিন্তু পূর্ণাঙ্গ পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামায়াতে আদায় করার হুকুম হইয়াছে শুধু শেষ নবী মোহাম্মাদ (সাঃ) এর শরীয়তে।

অন্য এক আয়াতে আছেঃ- তোমরা যদি আমার প্রভু আল্লাহ্‌কে না ডাক, তাঁহার নিকট প্রার্থনা না কর, তবে তাহাতে আমার প্রভুর কোনই ক্ষতি নাই।

পৃষ্ঠা  ৩৭ বোখারী শরীফ

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) এখানে আল্লাহ্‌ তায়ালার নিকট প্রার্থনা (দোয়া) করাকে ঈমানের অন্তর্ভুক্ত বলিয়া বর্ণনা করিয়াছেন।
অতএব সহজেই উপলব্ধি করা যায় যে, ঈমান রত্ন কত ব্যাপক ও সম্প্রসারিত এবং কত খুঁটিনাটি বিষয়বস্তু ইহার অন্তর্ভুক্ত রহিয়াছে। সুতরাং ঈমান শুধু বিশ্বাস করার নামই নহে। 


ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি জিনিষের উপর 
৭। হাদিছঃ- আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) হইতে বর্ণিত আছে, রসুলুল্লাহ (সাঃ) বলিয়াছেন- পাঁচটি স্তম্ভের উপর ইসলামের সৌধ স্থাপিত। (১) এক আল্লাহ্‌ই মাবুদ, অন্য কোনও মাবুদ (পুজনীয়) নাই, মোহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহ্‌র রসুল; ইহা প্রকাশ্য- ভাবে স্বীকার ও গ্রহণ করিয়া লওয়া, (২) নামায পূর্ণাঙ্গরূপে আদায় করা, (৩) যাকাত দান করা, (৪) হজ্জ করা, (৫) রমযান মাসে রোজা রাখা। 




ঈমানের শাখা- প্রশাখা
আল্লাহ্‌কে সন্তুষ্ট করার যে সমস্ত পন্থা আছে বা যত প্রকার নেক ও সৎকাজ আছে উহার প্রত্যেকটিই মূল ঈমানের শাখা- প্রশাখা; অতএব, ঈমানের শাখা অনেক। ইমাম বোখারী (রঃ) এখানে কোরআনের দুইটি আয়াত উদ্ধৃত করিয়াছেন, যাহাতে মানব জাতির কল্যাণের ও সত্যিকারের মানুষ হওয়ার পন্থারূপে স্বয়ং আল্লাহ্‌ তায়ালা কয়েকটি মোটামোটি কাজ আঙ্গুলের উপর গণনা করিয়া দিয়াছেন। সেই হিসাবে আয়াত দুটি অতি মূল্যবান ও অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন, তাই এখানে উহার ব্যাখ্যা বিশেষভাবে করা হইতেছে। প্রথম আয়াতঃ-

প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা  ৩৮ বোখারী শরীফ

অর্থঃ- প্রকৃত প্রস্তাবে নেক ও সৎকাজ এইগুলিঃ- (১) সর্ব প্রথমে মোটামূটি কয়েকটি বিষয়ের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপনের দ্বারা দেল ও অন্তরকে ঠিক করিতে হইবে- (ক) আল্লাহ্‌কে বিশ্বাস করিয়া ভয় ও ভক্তির সহিত তাঁহার আনুগত্য স্বীকার করিতে হইবে এবং উপলব্ধি করিতে হইবে যে, আল্লাহ্‌ই আমাদিগকে সৃষ্টি করিয়াছেন, তাঁহার নিকট হইতেই আমরা আসিয়াছি। (খ) আবার একদিন আমাদের সকলকেই আল্লাহ্‌র নিকট ফিরিয়া যাইতে হইবে এবং বিচারের সম্মুখীন হইতে হইবে। চোখ, কান, হাত, পা, জ্ঞান, বুদ্ধি, আলো- বাতাস, ধন- দৌলত ইত্যাদি যাহা কিছু নেয়ামত আল্লাহ্‌ তায়ালা আমাদিগকে দান করিয়াছেন। আমরা উহার সদ্ব্যবহার করিয়াছি কি অসদ্ব্যবহার করিয়াছি তাহার হিসাব দিতে হইবে। সেই শেষ বিচারের দিনের উপর বিশ্বাস স্থাপন করিয়া আল্লাহ্‌ প্রদত্ত নেয়ামত সমূহের সদ্ব্যবহার করতঃ হিসাব দিবার জন্য প্রস্তুত হইতে হইবে। (গ) ফেরেস্তাদের সম্বন্ধে বিশ্বাস স্থাপন করিতে হইবে যে, তাঁহারা নিষ্পাপ, ত্রুটিহীন; কখনও আল্লাহর  বিরুদ্ধাচরণ করেন না, বা তাঁহাদের দ্বারা কোন ভুল- ত্রুটি হওয়া সম্ভব নহে। তাঁহারা আল্লাহ্‌র বানী পয়গম্বরগণের নিকট অবিকলরূপে পৌছাইয়া দিয়াছেন, বিন্দুমাত্র ব্যতিক্রম হয় নাই এবং ইহাতে সন্দেহের অবকাশ মাত্র নাই। (ঘ) আল্লারহ কোরআনকে পুর্নভাবে বিশ্বাস করিতে হইবে যে, ইহার অন্তর্গত কোন একটি অক্ষরের মধ্যেও আদৌ কোনরূপ সন্দেহ, দোষ বা ভুল- ত্রুটি নাই। (ঙ) আল্লার নবীগণের প্রতি পুর্ণ আস্থা স্থাপন করিতে হইবে যে, তাঁহারা আল্লাহ্‌র প্রেরিত সম্পূর্ণ নিষ্পাপ মানুষ ও সত্য পথ প্রদর্শক ছিলেন। যে যুগের, যে দেশের বা যে জাতির জন্য যিনি নবী হইয়া আসিয়াছেন- সেই যুগের, সেই দেশের সমগ্র জাতি তাঁহাকেই আদর্শকরূপে মানিয়া চলিতে হইবে, যেমন- কেয়ামত পর্যন্ত শেষ যুগের জন্য সমগ্র বিশ্বমানবের পয়গাম্বর হইলেন হজরত মোহাম্মাদ (সাঃ)। কেয়ামত পর্যন্ত সকলকে একমাত্র তাহাঁরই আদর্শ অনুসরণ করিয়া চলিতে হইবে।
(২) পার্থিব ধন- দৌলত ও বিষয়- সম্পত্তির দিকে স্বভাবগত ভাবে মানুষের মনের মায়া ও আকর্ষণ থাকা সত্বেও আল্লাহ্‌র সন্তষ্টি লাভের জন্য ধন সম্পত্তি যথাস্থানে দান করিতে হইবে। যথা- ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দিগকে, (পিতৃহীন, কর্মশক্তিহীন অসহায়) এতিম বালক বালিকাদিগকে, অভাবগ্রস্ত দরিদ্রদিগকে, (যাহারা কঠোর পরিশ্রম করিয়াও অভাব মোচনে অক্ষম) পথিকদিগকে, ( যাহারা প্রবাসে অভাবে পরিয়াছে), যাঞ্জাকারী ভিক্ষুকদিগকে, ( যে সব অন্ধ, খঞ্জা, বৃদ্ধ, রুগ্ন ও আতুর ইত্যাদি কর্মশক্তিহীনতার দরুন ভিক্ষা করিতে বাধ্য হইতেছে।) এবং দাসত্বে আবদ্ধ মানুষকে, ( তাদের মুক্তির জন্য) দান করিতে হইবে।
(৩) আল্লাহ্‌র নির্দেশিত এবং তাঁহার রসূলের (সাঃ) প্রদর্শিত নিয়ম অনুযায়ী আল্লাহ্‌র দাসত্বের প্রতীক নামায কায়েম ( পূর্ণাঙ্গে আদায় ও জারী) করিতে হইবে।

প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা  ৩৯ বোখারী শরীফ

 (৪) স্বীয় ধনের চল্লিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত স্বরূপ দিতে হইবে।
(৫) অঙ্গীকার করিলে উহা রক্ষা করিতে হইবে। ( আল্লাহ্‌র সহিত অঙ্গীকার বা মানুষের সহিত অঙ্গীকার- সমস্ত অঙ্গীকারই অক্ষরে অক্ষরে পালন করিতে হইবে)।

(৬) ধৈর্য্যধারনের অভ্যাস করিতে হইবে। ভীষণ বিপদের সময়। যাহারা এই সৎগুণাবলী অর্জন করিতে সক্ষম হইবে, তাহারাই খাঁটি সত্যবাদী এবং তাহারাই প্রকৃত ঈমানদার ও মোত্ত্বাকী পরিগণিত হইবে। (২ পাড়া ৬ রুকু)


দ্বিতীয় আয়াতঃ- ( ১৮ পারা ১ রুকু )

এই আয়াতে আল্লাহ্‌ তায়ালা মানব জীবনকে স্বার্থক ও সাফল্যমণ্ডিত করার জন্য আটটি গুণ অর্জনের শর্ত উল্লেখে বলিতেছেনঃ
স্বীয় জীবনকে সাফল্যমণ্ডিত করিতে পারিয়াছে তাহারা-
(১) যাহারা ( আল্লাহ্‌ ও আল্লাহ্‌র রসূলকে মান্য করিয়া কেয়ামতের হিসাব নিকাশ, বেহেস্ত – দোযখকে বিশ্বাস করিয়া ) ঈমানদার হইয়াছে।
(২) যাহারা ভয় ও ভক্তির সহিত, আল্লাহ্‌র দরবারে কাকুতি- মিনতির সহিত নামায কায়েম করিয়াছে।
(৩) যাহারা বৃথা সময় নষ্ট করা হইতে বিরত রহিয়াছে। ( চক্ষু, কর্ণ, জিহ্বা, দর্শনশক্তি, শ্রবণশক্তি, বাকশক্তি, কর্মশক্তি, চলনশক্তি, চিন্তাশক্তি প্রভৃতি যে সব অমূল্য শক্তির সমারোহ আল্লাহ্‌ তায়ালা মানুষকে দান করিয়াছেন, ঐগুলিকে জীবনের স্থায়ী উন্নতিমূলক কাজে ব্যয় করিবে। অবনতির বা অনর্থক কাজে অপচয় করা হইতে বিরত থাকিতে হইবে)।

প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা  ৪০ বোখারী শরীফ

(৪) যাহারা পবিত্রতা সাধন করিয়াছে। ( আত্মার পবিত্রতা, দেহের পবিত্রতা, বস্ত্রের পবিত্রতা, স্ত্রির পবিত্রতা, অর্থের পবিত্রতা, ইত্যাদি সর্ব প্রকারের পবিত্রতাই ইহার অন্তর্ভুক্ত। হিংসা, বিদ্বেষ, নির্দয়তা, নিষ্ঠুরতা, কৃপণতা, স্বার্থন্ধতা, ক্রোধান্ধতা, কপটতা, মোহান্ধতা, ইত্যাদি অপবিত্র স্বভাব সমূহ হইতে আত্মাকে শোধিত রাখিতে হইবে। সুদ, ঘুষ, শোষণ, দুর্নীতি, চুরি- জুয়াচুরি, ধোঁকাবাজি ইত্যাদি সর্ব প্রকার হারাম উপায় হইতে অর্থকে পবিত্র রাখিতে হইবেতদুপরি শরীয়ত অনুযায়ী যাকাত দান করিতে হইবে। অর্থের উপরই মানুষের সর্বস্ব নির্ভর করে, তাই অর্থের অপবিত্রতা তাহার প্রতিটি স্তরকেই অপবিত্র করিয়া দেয়। কাজেই অর্থের পবিত্রতা ব্যতিরেকে মানুষের কল্যাণ সাধিত হইতে পারে না। এক হাদিসে আছে- কোন কোন ব্যক্তি অসহায় আশ্রয়হীন ও বিপদগ্রস্ত হইয়া আল্লাহ্‌কে ডাকিতে থাকে। কিন্তু আল্লাহ্‌ তাহার ডাক শোনেন না, কারন তাহার পানাহারের বস্তু ও পরিধেয় বস্ত্র ইত্যাদি প্রত্যেকটিই হারাম এবং অসদুপায়ে অর্জিত।)
(৫) যাহারা সংযম অভ্যাস করিয়া কাম- রিপুকে দমন করিয়া রাখিয়াছে। অর্থাৎ দেহের রাজা ও জীবনীশক্তির মূলধন বীর্যের অপচয় বা অপব্যয় করে নাই। অবশ্য বিবাহ- সুত্রে আবদ্ধা রমণী অথবা ( এর চেয়েও অধিক আধিপত্য যাহার উপর স্থাপিত হইয়াছে ; বিবাহের ন্যায় শরীয়ত অনুমোদিত অপর সুত্র-) স্বত্ব সূত্রে অর্জিত রমণীর গর্ভে মানব বীজ বপন উদ্দেশে যদি বীর্য্য ব্যয় করে তবে তাহা দূষণীয় নহে। এতদ্ব্যতীত যাহারা অন্য কোনও গর্হিত উপায়ে ( হস্ত মৈথুন, পুংমৈথুন, পশুমৈথুন, বেগানা স্ত্রী দর্শন, স্পর্শন বা ব্যবহার ইত্যাদি দ্বারা ) বীর্য্য ব্যয় করিবে ও কাম- রিপু চরিতার্থ করিবে তাহারা নিশ্চয়ই ব্যভিচারী সাব্যস্ত হইবে।
(৬, ৭) যাহারা নিজেদের নিকট গচ্ছিত আমানতের এবং এবং নিজেদের ওয়াদা অঙ্গীকারের পুরাপুরি রক্ষণাবেক্ষণ করিয়াছে। আমানতের অর্থ- দায়িত্ব গ্রহণ করা। দায়িত্ব অনেক প্রকারের আছে- যথা আল্লাহ্‌র আমানত, (আল্লাহ্‌র আমানতের অর্থঃ- আল্লাহ্‌র আদেশ ও নিষেধাবলী অনুযায়ী স্বীয় জীবনকে গঠিত ও পরিচালিত করার গুরুদায়িত্বভার গ্রহণ করা। এই গুরুদায়িত্বকেই কোরআন শরীফের ২২ পারার ৫ম রুকুতে আল্লাহ্‌ তায়ালা আমানত বলিয়া ব্যক্ত করিয়া বলিয়াছেন- আমি আসমান, জমিন ও পর্বতমালাকে আমার আমানত বা বিশেষ একটি গুরুদায়িত্বভার গ্রহণ করার প্রতি আহ্বান জানাইলে উহারা সকলেই ভয়ে ভীত হইয়া নিজ নিজ অক্ষমতা প্রকাশ করিল, কিন্তু মানব জাতিকে সেই আহ্বান জানান হইলে তাহারা উহা গ্রহণ করিয়া নিল।) সামাজিক আমানত, রাষ্টিয় আমানত, চাকরি ও পদের আমানত, ব্যক্তিগতভাবে গচ্ছিত টাকা- পয়সা, জমি-জমা বা গোপনীয় কথার আমানত ইত্যাদি। অনুরূপভাবে অঙ্গীকার এবং শপথ ও অনেক প্রকারের- আল্লাহ্‌ তায়ালার নিকট শপথ, সমাজের নিকট শপথ, রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের শপথ, ব্যক্তিগত ওয়াদা রক্ষার শপথ ইত্যাদি।

বোখারী শরীফ, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা  ৪১ 

(৮) যাহারা আজীবন নামাযসমূহের প্রতি যত্নবান রহিয়াছে।
অর্থাৎ কখনও সে সাধনায় ক্ষান্ত হয় নাই- স্থান, কাল, পাত্র নির্বিশেষে কোনও বাধা বিপত্তি লক্ষ্য না করিয়া চিরজীবন একনিষ্ঠ সাধনা করিয়ায় গিয়াছে।

যাহারা এই গুনগুলি অর্জন করিতে পারিয়াছে, তাহারাই হইবে ফেরদৌস বেহেস্তের অধিকারী, তাহারা তথায় অমর জীবন লাভ করিয়া অনন্তকাল অফুরন্ত সুখ- শান্তি ভোগ করিবে। 
--------------------------------------

বোখারী শরীফ, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা  ৩১৮
একামত আরম্ভেই কাতার সোজা করিবে, প্রয়োজন হইলে পরেও উহার জন্য তৎপর হইবে
৪২২। হাদিছঃ-
নো’মান ইবনে বশীর (রাঃ) বর্ণনা করিয়াছেন, নবী (সাঃ) ফরমাইয়াছেন, খবরদার হুশিয়ার! তোমরা নামাযের মধ্যে সোজাভাবে সারিবদ্ধ হইয়া দাঁড়াইবে। অন্যথায় আল্লাহ্‌ তায়ালা তোমাদের মধ্যে পরস্পর বিরোধ সৃষ্টি করিয়া দিবেন।
ব্যাখ্যাঃ- নামাযের মধ্যে কাতার বাঁকা করিয়া দাঁড়ান একটি সাধারণ বিষয় মনে করা হইয়া থাকে, কিন্তু উহার কুফল বড়ই মারাত্মক। ইহার দরুন আল্লাহ্‌ তাহালা পরস্পরের বিরোধ, বিভেদ ও বিষাদ সৃষ্টি করিয়া দেন। বর্তমান মোসলমানদের অবস্থা দেখিলেই রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর উক্তির সত্যতা প্রমাণিত হইয়া যাইবে। পরস্পর বিভেদ ও বিবাদ বড় শাস্তি যাহা জ্ঞানী মাত্রই উপলব্ধি করিতে পারেন। আল্লাহ্‌ তায়ালা কোরআন শরিফের বহু স্থানে ইহুদী ও নাছারাদের উপর স্বীয় গজব ও আজাবের উল্লেখপূর্বক বলিয়াছেন-“আমি তোমাদের মধ্যে পরস্পর হিংসা, বিদ্বেষ, বিভেদ ও বিবাদের সৃষ্টি করিয়া দিয়াছি”।
মূল হাদিছের অর্থ এরূপও বলা হয়, “তোমরা নামাযের মধ্যে সোজাভাবে সারিবদ্ধ হইয়া দাঁড়াইবেনতুবা আল্লাহ্‌ তায়ালা তোমাদের আকৃতি বিকৃত করিয়া দিবেন

কাতার সোজা করিতে ইমাম তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখিবে
৪২৩। হাদিছঃ-
আনাছ (রাঃ) বর্ণনা করিয়াছেন – একদা নামাযের একামত শেষ হইয়া গেলে পর, রসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের প্রতি লক্ষ্য করিয়া বলিলেন, সোজা সারিবদ্ধভাবে পরস্পর মিলিত হইয়া দাড়াও। স্মরণ রাখিও, আমি পেছনের দিকেও তোমাদিগকে দেখি। ( অনেকে ইহার রূপক অর্থ বলিয়াছেন। অর্থাৎ জ্ঞাত হইয়া থাকি। আর অনেকে বলিয়াছেন, প্রকৃত প্রস্তাবেই হযরত (সাঃ) ইচ্ছা করিলে স্বীয় চোখে পেছন দিকেও দেখিতে পাইতেন, ইহা তাঁহার খোদা প্রদত্ত বৈশিষ্ট্য ছিল। যেমন সাধারণতঃ কানের দ্বারা পেছনের শব্দও শুনা যায়। )

পৃষ্ঠা  ৩১৯
কাতার সোজা করা নামাযের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ
৪২৪। হাদিছঃ-
আনাছ (রাঃ) হইতে বর্ণিত আছে – রসুলুল্লাহ (সাঃ) ফরমাইয়াছেন, কাতার সোজা কর। কাতার সোজা করা নামাযের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।
৪২৫। হাদিছঃ-
আবু হোরায়রা (রাঃ) হইতে বর্ণিত আছে, রসুলুল্লাহ (সাঃ) বলিয়াছেন, নামাযের মধ্যে কাতার সোজা করিয়া দাড়াও। কারণ, উহার উপর নামাযের সৌন্দর্য্য নির্ভর করে।
কাতার সোজা এবং পূর্ণ না করা গোনাহ
৪২৬। হাদিছঃ-
( রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর বহু দিন পর ) সাহাবী আনাছ (রাঃ) বছরা হইতে মদিনায় আসিলেন। কোন এক ব্যক্তি তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিল, আপনি রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর যামানার অনুপাতে আমাদের মধ্যে কি কি দোষ ত্রুটি দেখিতে পান? তিনি বলিলেন অন্য কোন দোষ বিশেষরূপে ব্যক্ত করিতে চাই না, কিন্তু এই একটি দোষ যে, তোমরা নামাযের মধ্যে কাতার ঠিক ও দুরস্ত কর না।

পরস্পর লাগালাগি হইয়া সারি বাঁধিবে ফাঁক রাখিবে না
ছাহাবী নোমান ইবনে বশীর (রাঃ) বলিয়াছেন, আমাদের ( তথা ছাহাবীদের) প্রত্যেককেই দেখিয়াছি, নিজ সঙ্গীর কাঁধে কাঁধ মিলাইয়া এবং পরস্পর পায়ের গিঁঠ মিলাইয়া নামাযে দাঁড়াইতেন।
আনাছ (রাঃ) বলিয়াছেন, ( জামাতে নামায পড়িতে ) আমাদের প্রত্যেকেই নিজ সঙ্গীর কাঁধে কাঁধ ও পায়ের পা মিলাইয়া দাঁড়াইতেন।
পাঠকবৃন্দ! একটু লক্ষ্য করিলেই বুঝিতে পারিবেন যে, পরস্পর পা মিলাইয়া দাঁড়ানোর উদ্দেশ্য এই নয় যে, বস্তুতঃ একে অন্যের পায়ের সহিত পা মিলাইয়া দাঁড়াইতে হইবে। সে জন্যই এখানে কাঁধের এবং পায়ের গিঁঠেরও উল্লেখ আছে ; অথচ সারি বাঁধিতে পরস্পর কাঁধে কাঁধ মিলানো সহজ ব্যাপার নহে এবং পায়ের গিঁঠে গিঁঠ মিলানো ত সম্ভবই নহে। এখানে এই সমস্ত বাক্যের দ্বারা বস্তুতঃ দুইটি বিষয়ে তৎপর হওয়ার আদেশ করাই আসল উদ্দেশ্য। প্রথম- এই যে, খুব সোজাভাবে সারি বাঁধিবে ; যেরূপ কাঁধে কাঁধ ও পায়ে পা মিলাইয়া দাঁড়াইলে স্বভাবতঃই উহা হইয়া থাকে এবং কাতার সোজা করার ইহা অন্যতম উপায়। দ্বিতিয়- এই যে, যথাসাধ্য লাগালাগি দাঁড়াইবে ; মধ্যভাগে ফাঁক ছাড়িবে না।
অনেক হাদীছে এরূপ উল্লেখ আছে যে, মধ্যভাগে একটু ফাঁক থাকিলে শয়তান সেখানে আসিয়া প্রবেশ করে ( নামাজিদের অন্তরে ওছওয়াছার সৃষ্টি করে )
আনাছ (রাঃ) এর উক্তি  কাঁধে কাঁধ এবং পায়ের পা মিলানর একমাত্র উদ্দেশ্য যে ইহাই তাহার প্রকৃষ্ট প্রমাণও বিদ্যমান রহিয়াছে যে,  আনাছ (রাঃ) তাঁহার উক্তির ভিত্তি নিম্নে বর্ণীত হাদিছটির উপর স্থাপন করিয়াছে।
৪২৭। হাদিছঃ-

আনাছ (রাঃ) হইতে বর্ণীত আছে, নবী (সাঃ) বলিয়াছেন, তোমরা কাতার খুব সোজা করিয়া দাঁড়াইবে ; আমি আমার পেছন দিকেও দেখিয়া থাকি ( অনেকে ইহার রূপক অর্থ বলিয়াছেন। অর্থাৎ জ্ঞাত হইয়া থাকি। আর অনেকে বলিয়াছেন, প্রকৃত প্রস্তাবেই হযরত (সাঃ) ইচ্ছা করিলে স্বীয় চোখে পেছন দিকেও দেখিতে পাইতেন, ইহা তাঁহার খোদা প্রদত্ত বৈশিষ্ট্য ছিল। যেমন সাধারণতঃ কানের দ্বারা পেছনের শব্দও শুনা যায়। ) আনাছ (রাঃ) বলেন- সেমতে আমাদের প্রতেকেই কাঁধে কাঁধ এবং পায়ের পা মিলাইয়া থাকিত। 

-------------------------------------

বোখারী শরীফ, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃষ্ঠা  ২৯৩
দ্বাদশ অধ্যায়
রিজিক কোশাদাহ হওয়ার আমল
১০৬৫। হাদিছঃ-

অর্থ- আনাছ (রঃ) বর্ণনা করিয়াছেন, আমি রসুলুল্লাহ (সাঃ) কে বলিতে শুনিয়াছি – যে ব্যক্তির আকাংখা থাকে যে, তাহার খাওয়া পরায় স্বাচ্ছন্দ্য ও ধনসম্পদে প্রশস্ততা লাভ হউক এবং তাহার মৃত্যুর পরেও তাহার সুনাম বাকি থাকে তাহার কর্তব্য হইবে আত্মীয়দের সহিত সুষ্ঠূরূপে আত্মীয়তা বজায় রাখিয়া চলা। 




No comments:

Post a Comment