Buy IP

********** Welcome to Buy ip **********

Thursday, July 7, 2016

ইয়াজুজ মাজুজ



ইয়াজুজ মাজুজের পরিচয়[সম্পাদনা]
সহীহ হাদীস থেকে জানা যায়, তারা আদম (আ) এর বংশধর। প্রমাণ স্বরূপ সহীহ বুখারীর হাদীসটি উল্লেখযোগ্য। নবী (স) বলেন, “রোজ হাশরে আল্লাহ্‌ তা’আলা আদমকে বলবেন, ‘হে আদম’! আদম বলবেন, ‘আমি আপনার দরবারে উপস্থিত আছি। সমস্ত কল্যাণ আপনার হাতে’। আল্লাহ্‌ বলবেন, ‘জাহান্নামের বাহিনীকে আলাদা কর’। আদম বলবেন, ‘কারা জাহান্নামের অধিবাসী’? আল্লাহ্‌ বলবেন, ‘প্রতি হাজারের মধ্যে নয়শত নিরানব্বই জন’। ‘এ সময় শিশু সন্তান বৃদ্ধ হয়ে যাবে, গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভের সন্তান পড়ে যাবে এবং মানুষদেরকে আপনি মাতাল অবস্থায় দেখতে পাবেন। অথচ তারা মাতাল নয়। আল্লাহ্‌র শাস্তির ভয়াবহতা অবলোকন করার কারণেই তাদেরকে মাতালের মত দেখা যাবে’। (সূরা হাজ্জঃ ২) সাহাবীগণ বললেন, “হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমাদের মধ্যে সেই একজন কে”? তিনি বললেন, “তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ কর। কেননা তোমাদের মধ্য হতে একজন আর এক হাজারের অবশিষ্ট ইয়াজুজ মাজুজ হবে”। অতঃপর তিনি বললেন, “যাঁর হাতে আমার প্রাণ, তাঁর কসম। আমি আশা করি, তোমরা জান্নাতীদের চারভাগের এক ভাগ হবে”। [আবূ সা’ঈদ (রা) বলেন] আমরা এটা শুনে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে তাকবীর পাঠ করলাম। তারপর নবী (স) বললেন, “আমি আশা করি, তোমরা সমস্ত জান্নাতবাসীর এক তৃতীয়াংশ হবে”। আমরা এ সংবাদ শুনে আবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলে তাকবীর দিলাম। তিনি আবার বললেন, “আমি আশা করি তোমরা সমস্ত জান্নাতীদের অর্ধেক হবে”। এ কথা শুনে আমরা আবারও ‘আল্লাহু আকবার’ বলে তাকবীর দিলাম। তিনি বললেন, “তোমরা তো অন্যান্য মানুষের তুলনায় এমন, যেমন সাদা ষাঁড়ের দেহে কয়েকটি কাল পশম অথবা কালো ষাঁড়ের শরীরে কয়েকটি সাদা পশম”। (সহীহ বুখারী, হাদীস সংখ্যা- ৩৩৪৮)[২৬]

ইয়াজুজ মাজুজের আগমন[সম্পাদনা]
কুরআন ও সহীহ হাদীসের বর্ণনা থেকে যা জানা যায়, তাহলো কিয়ামতের পূর্বমুহূর্তে তারা মানব সমাজে চলে এসে ব্যাপক অশান্তি ও বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। রাসূল (স) বলেন, “ইয়াজুজ মাজুজ প্রাচীরের ভিতর থেকে বের হওয়ার জন্য প্রতিদিন খনন কাজে লিপ্ত রয়েছে। খনন করতে করতে যখন তারা বের হওয়ার কাছাকাছি এসে যায় এবং সূর্যের আলো দেখতে পায় তখন তাদের নেতা বলেঃ ফিরে চলে যাও, আগামীকাল এসে খনন কাজ শেষ করে সকাল সকাল বের হয়ে যাব। আল্লাহ্‌ তা’আলা রাত্রিতে প্রাচীরকে আগের চেয়ে আরো শক্তভাবে বন্ধ করে দেন। প্রতিদিন এভাবেই তাদের কাজ চলতে থাকে। অতঃপর আল্লাহ্‌ কর্তৃক নির্ধারিত মেয়াদ যখন শেষ হবে এবং তিনি তাদেরকে বের করতে চাইবেন তখন তারা খনন করবে এবং খনন করতে করতে যখন সূর্যের আলো দেখতে পাবে তখন তাদের নেতা বলবেঃ ফিরে চলে যাও। ইনশা-আল্লাহ্‌ (যদি আল্লাহ্‌ চান) আগামীকাল এসে খনন কাজ শেষ করে সকাল সকাল বের হয়ে যাব। এবার তারা ইনশা-আল্লাহ্‌ বলবে। অথচ এর আগে কখনও তা বলেনি। তাই পরের দিন এসে দেখবে যেভাবে রেখে গিয়েছিল সেভাবেই রয়ে গেছে। অতি সহজেই তা খনন করে মানব সমাজে বের হয়ে আসবে। তারা পৃথিবীর নদী-নালার সমস্ত পানি পান করে ফেলবে। এমনকি তাদের প্রথম দল কোন একটি নদীর পাশে গিয়ে নদীর সমস্ত পানি পান করে শুকিয়ে ফেলবে। পরবর্তী দলটি সেখানে এসে কোন পানি দেখতে না পেয়ে বলবেঃ এখানে তো এক সময় পানি ছিল। তাদের ভয়ে লোকেরা নিজ নিজ সহায়-সম্পদ নিয়ে অবরুদ্ধ শহর অথবা দুর্গের মধ্যে প্রবেশ করবে। ইয়াজুজ মাজুজের দল যখন পৃথিবীতে কোন মানুষ দেখতে পাবেনা তখন তাদের একজন বলবে যমিনের সকল অধিবাসীকে খতম করেছি। আকাশের অধিবাসীরা বাকী রয়েছে। এই বলে তারা আকাশের দিকে তীর নিক্ষেপ করবে। রক্ত মিশ্রিত হয়ে তীর ফেরত আসবে। তখন তারা বলবে যমিনের অধিবাসীকে পরাজিত করেছি এবং আকাশের অধিবাসী পর্যন্ত পৌঁছে গেছি। অতঃপর আল্লাহ্‌ তাদের ঘাড়ে ‘নাগাফ’ নামক এক শ্রেণীর পোঁকা প্রেরণ করবেন। এতে এক সময়ে একটি প্রাণী মৃত্যু বরণ করার মতই তারা সকলেই হালাক হয়ে যাবে”। নবী (স) বলেন, “আল্লাহ্‌র শপথ! তাদের মরা দেহ এবং চর্বি ভক্ষণ করে যমিনের জীব-জন্তু ও কীটপতঙ্গ মোটা হয়ে যাবে এবং আল্লাহ্‌র শুকরিয়া আদায় করবে”। (ইবনে মাজাহ্‌, হাদীস সংখ্যা- ৪০৮০)[২৭]

তবে নির্দিষ্টভাবে তাদের আগমন হবে ঈসা (আ) এর আগমন এবং দাজ্জালকে পরাজিত করার পর। নবী (স) বলেন, “অতঃপর ঈসা (আ) এর নিকট এমন কিছু লোক আসবেন, যাদেরকে আল্লাহ্‌ তা’আলা দাজ্জালের ফিতনা হতে হেফাযত করেছেন। তিনি তাদের চেহারায় হাত বুলাবেন এবং জান্নাতের মধ্যে তাদের উচ্চ মর্যাদা সম্পর্কে সংবাদ দিবেন। ঈসা (আ) যখন এ অবস্থায় থাকবেন তখন আল্লাহ্‌ তা’আলা তাকে জানাবেন যে, আমি এমন একটি জাতি বের করেছি, যাদের সাথে মোকাবেলা করার ক্ষমতা কারো নেই। কাজেই আপনি আমার বান্দাদেরকে নিয়ে তুর পাহাড়ে উঠে যান। এ সময় আল্লাহ্‌ তা’আলা ইয়াজুজ মাজুজের বাহিনী প্রেরণ করবেন। তারা প্রত্যেক উঁচু ভূমি থেকে বের হয়ে আসবে। তাদের প্রথম দলটি ফিলিস্তিনের তাবারীয়া জলাশয়ের সমস্ত পানি পান করে ফেলবে। তাদের শেষ দলটি সেখানে এসে কোন পানি না পেয়ে বলবেঃ এক সময় এখানে পানি ছিল। তারা আল্লাহ্‌র নবী ও তার সাথীদেরকে অবরোধ করে রাখবে। ঈসা (আ) ও তাঁর সাথীগণ প্রচণ্ড খাদ্যাভাবে পড়বেন। এমনকি বর্তমানে তোমাদের কাছে একশত স্বর্ণ মুদ্রার চেয়ে তাদের কাছে একটি গরুর মাথা তখন বেশি প্রিয় হবে। আল্লাহ্‌র নবী ঈসা (আ) ও তাঁর সাথীগণ এই ফিতনা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আল্লাহ্‌র কাছে দু’আ করবেন। আল্লাহ্‌ তাদের দু’আ কবুল করে ইয়াজুজ মাজুজের ঘাড়ে ‘নাগাফ’ নামক একশ্রেণীর পোঁকা প্রেরণ করবেন। এতে এক সময়ে একটি প্রাণী মৃত্যু বরণ করার মতই তারা সকলেই হালাক হয়ে যাবে। অতঃপর আল্লাহ্‌র নবী ঈসা ও তার সাহাবীগণ যমিনে নেমে এসে দেখবেন ইয়াজুজ মাজুজের মরা-পচা লাশ ও তাদের শরীরের চর্বিতে সমগ্র যমিন ভরপুর হয়ে গেছে। কোথাও অর্ধহাত জায়গাও খালি নেই। আল্লাহ্‌র নবী ঈসা (আ) তাঁর সাথীগণ আল্লাহ্‌র কাছে আবার দু’আ করবেন। আল্লাহ্‌ তাদের দু’আ কবুল করে উটের গর্দানের মত লম্বা লম্বা একদল পাখি পাঠাবেন। আল্লাহ্‌র আদেশে পাখিগুলো তাদেরকে অন্যত্র নিক্ষেপ করে পৃথিবীকে পরিষ্কার করবে। অতঃপর আল্লাহ্‌ তা’আলা প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। এতে পৃথিবী একেবারে আয়নার মত পরিষ্কার হয়ে যাবে”। (সহীহ মুসলিম)[২৮] [বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ মূল হাদীসের যে অংশে ইয়াজুজ মাজুজ প্রসঙ্গ এসেছে শুধুমাত্র ততটুকুই উল্লেখিত হয়েছে।]

কুরআন ও সহীহ হাদীসে ইয়াজুজ মাজুজ[সম্পাদনা]
কুরআন মাজীদের সূরাহ আল-কাহ্‌ফে ইয়াজুজ মাজুজের বিবরণ এসেছে। আল্লাহ তা’আলা বলেন,

এরপর সে আরেক পথ ধরল। চলতে চলতে সে দু’ পাহাড়ের মাঝে এসে পৌঁছল। সেখানে সে এক সম্প্রদায়কে দেখতে পেল। যারা কথাবার্তা কমই বুঝতে পারে। তারা বলল, ‘হে যুলক্বারনায়ন! ইয়াজুজ মাজুজ পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করছে, অতএব আমরা কি আপনাকে কর দেব যে, আপনি আমাদের ও তাদের মাঝে একটা বাঁধ নির্মাণ করে দেবেন?’ সে বলল, ‘আমাকে আমার প্রতিপালক যা দিয়েছেন তা-ই যথেষ্ট, কাজেই তোমরা আমাকে শক্তি-শ্রম দিয়ে সাহায্য কর, আমি তোমাদের ও তাদের মাঝে এক সুদৃঢ় প্রাচীর গড়ে দেব। আমার কাছে লোহার পাত এনে দাও’। শেষ পর্যন্ত যখন সে দু’পাহাড়ের মাঝের ফাঁকা জায়গা পুরোপুরি ভরাট করে দিল সে বলল, ‘তোমরা হাপরে দম দিতে থাক’। শেষ পর্যন্ত যখন তা আগুনের মত লাল হয়ে গেল তখন সে বলল, ‘আনো, আমি এর উপর গলিত তামা ঢেলে দেব’। এরপর তারা (অর্থাৎ ইয়াজুজ মাজুজ) তা অতিক্রম করতে পারবে না, আর তা ভেদ করতেও পারবে না। সে বলল, ‘এ আমার প্রতিপালকের করুণা, যখন আমার প্রতিপালকের ওয়া’দার নির্দিষ্ট সময় আসবে, তখন তিনি তাকে ধূলিসাৎ করে দেবেন আর আমার প্রতিপালকের ওয়া’দা সত্য’। আমি তাদেরকে সেদিন এমন অবস্থায় ছেড়ে দেব যে, তারা একদল আরেক দলের উপর তরঙ্গমালার মত পড়বে। আর শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে। অতঃপর আমরা সব মানুষকে একসঙ্গে একত্রিত করব। (সূরাহ আল-কাহ্‌ফঃ ৯২-৯৯)[২৯]

কিয়ামতের পূর্বে পাহাড় ভেদ করে ইয়াজুজ মাজুজের আগমন সম্পর্কে আল্লাহ্‌ তা’আলা অন্যত্র বলেন,

এমনকি (তখনও তারা ফিরে আসবে না) যখন ইয়াজুজ ও মাজুজের জন্য (প্রাচীর) খুলে দেয়া হবে আর তারা প্রতিটি পাহাড় কেটে ছুটে আসবে। সত্য ওয়া’দার (পূর্ণতার) সময় ঘনিয়ে আসবে, তখন আতঙ্কে কাফিরদের চক্ষু স্থির হয়ে যাবে। (তখন তারা বলবে) হায়! আমরা তো এ ব্যাপারে উদাসীন ছিলাম, না, আমরা ছিলাম অন্যায়কারী। (সূরাহ আল-আম্বিয়াঃ ৯৬-৯৭)[২৯]

যায়নাব বিনতে জাহাশ (রা) হতে বর্ণিত। একবার নবী (স) ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় তাঁর নিকট আসলেন এবং বলতে লাগলেন, “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্‌। আরবের লোকদের জন্য সেই অনিষ্টের কারণে ধ্বংস অনিবার্য যা নিকটবর্তী হয়েছে। আজ ইয়াজুজ মাজুজের প্রাচীর এ পরিমাণ খুলে গেছে”। এ কথা বলার সময় তিনি তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলির অগ্রভাগকে তার সঙ্গের শাহাদাত আঙ্গুলের অগ্রভাগের সঙ্গে মিলিয়ে গোলাকার করে ছিদ্রের পরিমাণ দেখান। যায়নাব বিনতে জাহাশ (রা) বলেন, তখন আমি বললাম, “হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমাদের মধ্যে পুণ্যবান লোকজন থাকা সত্ত্বেও কি আমরা ধ্বংস হয়ে যাব?” তিনি বললেন, “হ্যাঁ, যখন পাপকাজ অতি মাত্রায় বেড়ে যাবে”। (সহীহ বুখারী, হাদীস সংখ্যা- ৩৩৪৬)[৩০]

প্রধান ঘটনা সমূহ[সম্পাদনা]
সহীহ হাদীস বলছে দাজ্জাল একজন মানুষ হবে, যে কিনা ঘন কোঁকড়ানো চুলওয়ালা এবং এক চোখের মনি উল্টানো এবং অন্য চোখ কানা বিশিষ্ট কুতসিৎ চেহারার। যাকে ঈসা (আঃ) আল্লাহর নির্দেশে মেরে ফেলবেন।আশাকরি সহীহ হাদিস ছাড়া অন্য কোন গল্পের বই পড়ে কেউ বিভ্রান্ত হবেন না, কারন এতে করে ইসলামের ভাব মূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে।

ইয়াজূজ-মাজূজ সম্পর্কে ইসরাঈলী রিওয়ায়াতে ও ঐতিহাসিক কিসসা-কাহিনীতে অনেক ভিত্তিহীন কথাবার্তা প্রচলিত রয়েছে। কোন কোন তাফসীর বিদও এগুলো ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে তুলে ধরেছেন, কিন্তু স্বয়ং তাঁদের কাছেও এগুলো নির্ভরযোগ্য নয়। কুরআন তাদের সংক্ষিপ্ত অবস্থা বর্ণনা করেছে এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সম্পর্কে উম্মাতকে অবহিত করেছেন। ঈমান ও বিশ্বাস স্থাপনের বিষয় ততটুকুই, যতটুকু কুরআনও হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। তাফসীর, হাদীস ও ইতিহাসবিদগণ এর অতিরিক্ত যেসব ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক অবস্থা বর্ণনা করেছেন, সেগুলি বিশুদ্ধও হতে পারে এবং অশুদ্ধও হতে পারে। ঐতিহাসিকগণের বিভিন্নমুখী উক্তিগুলো নিছক ইঙ্গিত ও অনুমানের উপর নির্ভরশীল। এগুলো শুদ্ধ কিংবা অশুদ্ধ হলেও তার কোন প্রভাব কুরআনের বক্তব্যের উপর পড়ে না।

সহীহ হাদিস দুটি নিন্মে পেশ করা হলোঃ

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর এক ভাষণের কম বেশি অংশ দাজ্জালের ঘটনার বর্ণনায় এবং সে দাজ্জাল হতে ভয় প্রদর্শনেই কাটিয়ে দেন। সে ভাষণে তিনি একথাও বলেনঃ দুনিয়ার প্রথম হতে শেষ পর্যন্ত এর অপেক্ষা বড় হাঙ্গামা আর নেই। সমস্ত নবী (আঃ) নিজ নিজ উম্মাতকে সতর্ক করে গেছেন। আমি সর্বশেষ নবী এবং তোমরা সর্বশেষ উম্মাত। সে নিশ্চিতরূপে তোমাদের মধ্যেই আসবে। যদি আমার জীবদ্দশায় সে এসে পড়ে তবে তো আমি তাকে বাধা দান করব। আর যদি আমার পরে আসে তবে প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার আক্রমণ হতে নিজেকে বাঁচাতে হবে। আমি আল্লাহ তা'আলাকেই প্রত্যেক মুসলমানের অভিভাবক করে যাচ্ছি। সে সিরিয়া ও ইরাকের মথ্যবর্তী স্থানে বের হবে। সে ডানে ও বামে খুব ঘুরা ফেরা করবে। হে জনমন্ডলী ওহে আল্লাহর বান্দাগণ! দেখ, তোমরা অটল থাকবে। জেনে রেখো, আমি তোমাদেরকে তার এমন পরিচয় জানিয়ে দিচ্ছি যা অন্য কোন নবী স্বীয় উম্মাতকে জানিয়ে যাননি। সে প্রথমত দাবী করবে- "আমি নবী।" সুতারাং তোমরা স্মরণ রেখো আমার পরে আর কোন নবী নেই। অতঃপর এচেয়ে বেড়ে গিয়ে বলবেঃ "আমি আল্লাহ।" অতএব তোমরা জেনে রেখো, আল্লাহকে এই চোখে কেউ দেখতে পারে না। মৃত্যুর পর তখায় তাঁর দর্শন লাভ ঘটতে পারে। আরও স্মরণ রেখো যে, সে এক চক্ষুবিশিষ্ট হবে এবং তোমাদের প্রভু এক চক্ষুবিশিষ্ট নন। তার চক্ষুর মধ্যবর্তী স্থানে "কাফির" লিখিত থাকবে যা প্রত্যেক শিক্ষিত অশিক্ষিত মোটকথা প্রত্যেক ঈমানদারই পড়তে পারবে। তার সাথে আগুন থাকবে ও বাগান থাকবে। তার আগুন হবে আসলে জান্নাত এবং বাগানটি হবে প্রকৃত পক্ষে জাহান্নাম। তোমাদের মধ্যে যাকে সে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে সে যেন আল্লাহ তা'আলার নিকট সাহায্য প্রার্থণা করে এবং সূরা কাহাফের প্রাথমিক আয়াতগুলো পাঠ করে। যেমন ইবরাহীম (আঃ)- এর উপর নমরূদের আগুন শান্তিদায়ক হয়েছিল। তার এক হাঙ্গামা এও হবে যে, সে এক বেদুঈনকে বলবে - "আমি যদি তোমার মৃত পিতা-মসাতাকে জীবিত করতে পারি তবে কি তুমি আমাকে প্রভূ বলে স্বীকার করবে।" এমন সময় দু'জন শয়তান তার পিতা-মাতার আকারে প্রকাশিত হবে এবং তাকে বলবে- "বৎস! এটাই তোমার প্রভূ! সুতরাং তাকে মেনে নাও।"

তার আর একটা ফিৎনা এও হবে যে, তাকে একটি লোকের উপর জয়যুক্ত করা হবে। সে তাকে করাত দ্বারা ফেড়ে দু'টুকরো করে দেবে। তারপর সে জনগণকে বলবেঃ আমার এ বান্দাকে তোমরা দেখ, এখন আমি তাকে জীবিত করব। কিন্তু সে পুনরায় এ কথাই বলবে যে, তার প্রভূ আমি ছাড়া অন্য কেউ। অতঃপর এ দুর্বৃত্ত তাকে উঠা-বসা করাবে এবং বলবেঃ "তোমার প্রভূ কে?" সে উত্তরে বলবেঃ "আমার প্রভূ আল্লাহ এবং তুমি তার শত্রু দাজ্জাল। আল্লাহর শপথ! এখন তো আমার পূর্বাপেক্ষাও বেশি বিশ্বাস হয়েছে। (ইবনু মাজাহ)

দাজ্জালের আবির্ভাব ও ধ্বংস

নাওয়াস ইবনু-সামআন (রাঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) একদিন ভোর বেলা দাজ্জালের আলোচনা করলেন। আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি তার সম্পর্কে এমন কিছু কথা বললেন, যার দ্বারা মনে হচ্ছিল যে, সে নেহায়াতই তুচ্ছ ও নগণ্য (উদাহরণতঃ সে কানা হবে।) পক্ষান্তরে কিছু কথা এমন বললেন, যার দ্বারা মনে হচ্ছিল, তার ফিৎনা অত্যন্ত ভয়াবহ ও কঠোর হবে।(উদাহরণতঃ জান্নাত ও দোযখ তার সাথে থাকবে এবং অন্যান্য আরও অস্বাভাবিক ও ব্যতিক্রমধর্মী ঘটনা ঘটবে।) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর বর্ণনার ফলে (আমরা এমন ভীত হয়ে পড়লাম), যেন দাজ্জাল খেজুর গাছের ঝাড়ের মধ্যেই রয়েছে।(অর্থৎ, অদূরেই বিরাজমান রয়েছে।) বিকালে যখন আমরা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর দরবারে উপস্থিত হলাম, তখন তিনি আমাদের মনের অবস্থা আঁচ করে নিলেন এবং জিজ্ঞেসা করলেনঃ তোমরা কি বুঝেছ? আমরা আরয করলামঃ আপনি দাজ্জালের আলোচনা প্রসঙ্গে এমন কিছু কথা বলেছেন, যাতে বোঝাযায়, তার ব্যপারটি যেহেতু তুচ্ছ এবং আরও কিছু কথা বলেছেন, যাতে মনে হয় সে খুব শক্তিসম্পন্ন হবে এবং তার ফিৎনা হবে খুব গুরুতর। এখন আমাদের মনে হয়েছে যে, যেন সে আমাদের নিকটেই খেজুর গাছের ঝাড়ের মধ্যে লুকিয়ে আছে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) বললেনঃ তোমাদের সম্পর্কে আমি যেসব ফিৎনার আশঙ্কা করি, তন্মধ্যে দাজ্জালের তুলনায় অন্যান্য ফিৎনা অধিক ভয়ের যোগ্য। যদি আমার জীবদ্দশায় সে আবির্ভূত হয়, তবে আমি নিজে তার মুকাবিলা করব। পক্ষান্তরে সে যদি আমার পরে আসে, তবে প্রত্যেকেই নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী তাকে পরাভূত করার চেষ্টা করবে। আমার অনুপস্থিতিতে আল্লাহ তা'আলা প্রত্যেক মুসলমানের সাহায্যকারী। (তার লক্ষন এই যে) সে যুবক, ঘন কোঁকড়ানো চুলওয়ালা হবে। তার একটি চক্ষু উপরের দিকে উথিত হবে। (এবং অপর চক্ষু হবে কানা।) যদি আমি (কুৎসিত চেহারার) কোন ব্যক্তিকে তার সাথে তুলনা করি, তবে সে হচ্ছে আবদুল উযযা উবনু কুতনা। (জাহিলিয়াত যুগে কুৎসিত চেহারার 'বনু-খুযাআ' গোত্রের এ লোকটির তুলনা ছিল না।) যদি কোন মুসলমান দাজ্জালের সম্মুখীন হয়ে যায়, তবে সূরা কাহাফের প্রথম আয়াতগুলো পড়ে নেয়া উচিত। দাজ্জাল সিরিয়া ও ইরাকের মধ্যবর্তী স্থা থেকে বের হয়ে চতুর্দিকে হাঙ্গামা সৃষ্টি করবে। হে আল্লাহর বান্দারা! তোমরা তার মুকাবিলায় সুদৃঢ় থাক। আমরা আরয করলামঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ), সে কতদিন থাকবে। তিনি বললেনঃ সে চল্লিশ দিন থাকবে, কিন্তু প্রথম একদিন এক বছরের সমান হবে। দ্বিতীয় দিন এক মাসের এবং তৃতীয় দিন এক সপ্তাহের সমান হবে। অবশিষ্ট দিনগুলো সাধারণ দিনের মতই হবে। আমরা আরয করলাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ), যে দিনটি এক বছরের সমান হবে, আমরা কি তাতে শুধু এক দিনের (পাঁচ ওয়াক্ত) নামাযই পড়ব? তিনি বললেনঃ না; বরং সময়ের অনুমান করে এক বছরের নামায পড়তে হবে। আমরা আরয করলামঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সে কেমন দ্রুত গতিতে সফর করবে? তিনি বললেনঃ সে মেঘ খন্ডের মত দ্রুত চলবে, যার পিছনে অনুকূল বাতাস থাকে। দাজ্জাল কোন সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছে তাকে মিথ্যা ধর্মবিশ্বাসের প্রতি দাওয়াত দেবে। তারা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করলে সে মেঘমালাকে বর্ষণের আদেশ দেবে। ফলে, বৃষ্টি বর্ষিত হবে এবং মাটিকে আদেশ দেবে; ফলে শস্য-শ্যামলা হয়ে যাবে। তাদের চুষ্পদ জন্তু তাতে চরবে। সন্ধ্যায় যখন জন্তুগুলো ফিরে আসবে, তখন তাদের কুঁজ পূর্বের তুলনায় উঁচু হবে এবং স্তন দুধে পরিপূর্ণ থাকবে। এরপর দাজ্জাল অন্য সম্প্রদায়ের কাছে যাবে এবং তাদেরকেও কুফরের দাওয়াত দেবে। কিন্তু তারা তার দাওয়াত প্রত্যাখ্যা করবে। সে নিরাশ হয়ে ফিরে গেলে সেখানকার মুসলমানরা দুর্ভিক্ষে পতিত হবে।তাদের কাছে কোন অর্থ-কড়ি থাকবে না। সে শস্যবিহীন অনুর্বর ভূমিকে সম্বোধন করে বলবে। তোর গুপ্তধন বাইরে নিয়ে আয়। সেমতে ভূমির গুপ্তধন তার পেছনে পেছনে চলবে- যেমন মৌমাছিরা তাদের সরদারের পেছনে পেছনে চলে। অতঃপর দাজ্জাল একজন ভরপুর যুবক ব্যক্তিকে ডাকবে এবং তাকে তরবারির আঘাতে দিখন্ডিত করে দেবে। তার উভয় খন্ড এতটুকু দূরত্বে রাখা হবে; যেমন তীর নিক্ষেপকারী ও তার লক্ষবস্তুর মাঝখানে থাকে। অতঃপর সে তাকে ডাক দিবে। সে (জীবিত হয়ে) দাজ্জালের কাছে আনন্দ চিত্তে চলে আসবে।

ইতি মধ্যে আল্লাহ তা'আলা ঈসা (আঃ) কে নামিয়ে দিবেন তিনি দু'টি রঙিন চাদর পরে দামিস্ক মাসজিদের পূর্ব দিককার সাদা মিনারে ফেরেশতাদের পাখার উপর পা রেখে অবতরণ করবেন। তিনি যখন ম্তক অবনত করবেন, তখন তা থেকে পানির ফোঁটা পড়বে। (মনে হবে যেন এখনই গোসল করে এসেছেন।) তিনি যখন মস্তক উঁচু করবেন, তখনও মোমবাতির মত স্বচ্ছ পানির ফোঁটা পড়বে। তাঁর শ্বাস-প্রশ্বাস তাঁর দৃষ্টির সমান দূরত্বে পৌঁছাবে। ঈসা (আঃ) দাজ্জালকে খুঁজতে খুঁজতে বাবুল্লুদ্দে গিয়ে তাকে ধরে ফেলবেন। (এই জনপদটি এখনও বাইতুল মুকাদ্দাসের অদূরে এ নামেই বিদ্যমান) সেখানে তাকে হত্যা করা হবে। এরপর তিনি জনসমক্ষে আসবেন, স্নেহভরে মানুষের চেহারায় হাত বুলাবেন এবং তাদেরকে জান্নাতের সুউচ্চ মর্যাদার সুসংবাদ শোনাবেন।

এমতাবস্থায় আল্লাহ তা'আলা ঘোষণা করবেনঃ আমি আমার বান্দাদের মধ্য থেকে এমন লোক বের করব, যাদের মুকাবিলা করার শক্তি কারও নেই। কাজেই আপনি মুসলমানদেরকে সমবেত করে তূর পর্বতে চলে যান। (সে মতে তিনি তাই করবেন।) অতঃপর আল্লাহ তা'আলা ইয়াজূজ-মাজূজের রাস্তা খুলে দেবেন। তাদের দ্রুত চলার কারণে মনে হবে যেন উপর থেকে পিছলে নীচে এসে পড়ছে। তাদের প্রথম দলটি তাবরিয়া উপসাগরের কাছ দিয়ে যাওয়ার সময় তারা পানি পান করে এমন অবস্থা করে দেবে যে, দ্বিতীয় দলটি এসে সেখানে কোন দিন পানি ছিল, একথা বিশ্বাস করতে পারবে না। ঈসা (আঃ) ও তাঁর সঙ্গীরা তূর পর্বতে আশ্রয় নেবেন। অন্য মুসলমানরা নিজ নিজ দুর্গে ও নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেবে। পানাহারের বস্তুসামগ্রী সাথে থাকবে, কিন্তু তাতে ঘাটতি দেখা দেবে। ফলে একটি গরুর মাথাকে একশ' দীনারের চাইতে উত্তম মনে করা হবে। ঈসা (আঃ) ও অন্যান্য মুসলমানরা কষ্ট লাঘবের জন্য আল্লাহর কাছে দু'আ করবেন। (আল্লাহ দু'আ কবুল করবেন।) তিনি মহামারী আকারে রোগ-ব্যধি পাঠাবেন। ফলে, অল্প সময়ের মধ্যেই ইয়াজূজ-মাজূজের গোষ্ঠী সবাই মরে যাবে। অতঃপর ঈসা (আঃ) সঙ্গীদেরকে নিয়ে তূর পর্বত থেকে নীচে নেমে এসে দেখবেন পৃথিবীতে তাদের মৃতদেহ থেকে অর্ধ হাত পরিমিত স্থানও খালি নেই এবং মৃতদেহ পঁচে অসহ্য দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। (এ অবস্থা দেখে পুনরায়) ঈসা (আঃ) ও তাঁর সঙ্গীরা আল্লাহর দরবারে দু'আ করবেন (যেন এই বিপদও দূর করে দেয়া হয়।) আল্লাহ তা'আলা এ দু'আও ক্ববুল করবেন এবং বিরাট আকৃতির পাখি প্রেরণ করবেন, যাদের ঘাড় উটের ঘাড়ের মত। তারা (মৃতদেহগুলো উঠিয়ে যেখানে আল্লাহ ইচ্ছা করবেন, সেখানে ফেলে দেবে।) কোন কোন রিওয়াতে রয়েছে মৃতদেহগুলো সমুদ্রে নিক্ষেপ করবে। এরপর বৃষ্টি বষিত হবে। কোন নগর ও বন্র এ বৃষ্টি থেকে বাদ থাকবে না। ফলে সমগ্র ভূ-পৃষ্ঠ ধৌত হয়ে কাচের মত পরিষ্কার হয়ে যাবে। অতঃপর আল্লাহ তা'আলা ভূপৃষ্ঠকে আদেশ করবেনঃ তোমার পেটের সমূদয় ফল-ফুল উদগীরণ করে দাও এবং নতুনভাবে তোমার বারকাতসমূহ প্রকাশকর। ফলে তাই হবে এবং এমন বারকাত প্রকাশিত হবে যে, একটি ডালিম একদল লোকের আহারের জন্য যথেষ্ট হবে এবং মানুষ তার ছাল দ্বারা ছাতা তৈরী করে ছায়া লাভ করবে। দুধে এতো বারকাত হবে যে, একটি উষ্ট্রির দুধ একদল লোকের জন্য, একি গাভীর দুধ এক গোত্রের জন্য এবং একটি ছাগলের দুধ একটি পরিবারর জন্য যথেষ্ট হবে। চল্লিশ বছর যাবত এই অসাধারণ বারকাত ও শান্তি-শৃঙ্খলা অব্যাহত থাকার পর যখন কিয়ামাতের সময় সমাগত হবে; তখন) আল্লাহ তা'আলা একটি মনোরম বায়ু প্রবাহিত করবেন। এর পরশে সব মুসলমানের বগলের নিচে বিশেষ এক প্রকার রোগ দেখা দেবে এবং সবাই মৃত্যুমুখে পতিত হবে; শুধু কাফির ও দুষ্ট লোকেরাই অবশিষ্ট থেকে যাবে। তারা ভূ-পৃষ্ঠে জন্তু-জানোয়ারের মত খোলাখুলি অপকর্ম করবে। তাদের উপরই কিয়ামাত আসবে। (মুসলিম)


No comments:

Post a Comment