আল্-জামিয়াতুল আহ্লিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম
আল্-জামিয়াতুল আহ্লিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম, বাহাটহাজারী মাদ্রাসাবাংলাদেশের একটি কওমী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান; যা বাংলাদেশের বন্দর নগরী চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায় অবস্থিত। এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৯৬ সালে (হিজরী ১৩১০ সনে)। এটি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ও সর্বপ্রাচীন দেওবন্দ মাদ্রাসা।[৪][৫] এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি দারুল উলুম দেওবন্দ দ্বারা দারুল উলুম শিক্ষার প্রবর্তন করে। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলাম শিক্ষার অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান।
২০০৯ সালের এশিয়ান গবেষনার জাতীয় ব্যুরোর প্রতিবেদন অনুযায়ীঃ[৬]"With its impeccable Deobandi credentials, Hathazari madrasa ranks among the top ten madrasas in the subcontinent in terms of its academic standards and reputation."
ইতিহাস
ভারতীয় উপমহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়, আল্-জামিয়াতুল আহ্লিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৯৬ সালে। পরবর্তীতে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ১৯০১ সালে বাংলাদেশের বন্দর নগরী চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বর্তমান স্থানে স্থানান্তরিত হয়।[৭] এই প্রতিষ্ঠানটি এ অঞ্চলে ইসলামিক শিক্ষা ও ইসলামী আন্দোলনে সূত্রপাত ঘটায়। পরবর্তীতে ব্রিটিশরা এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে।[৮] এ অঞ্চলের তৎকালীন সংকৃতি ও সামাজিক অবস্থা ইসলামী চিন্তাচেতনা ও মুসলিম আকিদা’র পরিপন্থি ছিল। মুসলমানের ধর্মীয় শিক্ষা ও সংস্কৃতি সংরক্ষণ, সামাজিক জীবনে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত শিরক বিদ-আত এবং মুসলিম সমাজকে বিদেশী সংস্কৃতির আগ্রাসন থেকে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে, ঐতিহ্যবাহী ইসলাম শিক্ষা কেন্দ্র “দারুল উলুম দেওবন্দ” ১৮৬৬ সালে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়।[৯]
এই একই লক্ষ্যে, বন্দর নগরীর কিছু বিখ্যাত উলামা বিদেশী সংস্কৃতি এবং শিরক-বিদ-আত এর কবল থেকে মুসলিম সমাজকে রক্ষার উদ্দেশ্যে বিশ্ব বিখ্যাত ইসলাম শিক্ষার প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম দেওবন্দ এর সংবিধান অনুসারে “আল্-জামিয়াতুল আহ্লিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম” স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এই সিদ্ধান্তটি কার্যকরের জন্যে, হাকিমুল উম্মাত মৌলানা আশ্রাফ আলী থান্বী ‘র আদেশানুসারে তার প্রিয় অনুসারী ও ছাত্র শাইখুল ইসলাম মৌলান হাবিবুল্লাহ –র সাথে মৌলানা আব্দুল ওয়াহেদ, মৌলানা সুফী আজিজুর রহমান এবং মৌলানা আব্দুল হামিদ এই মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন।[১০]
শাইখুল ইসলাম মৌলানা হাবিবুল্লাহ কর্তৃক ১৮৯৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে আল্-জামিয়াতুল আহ্লিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম ১১৮ বছর সুদীর্ঘ পথ অতিক্রম করে এসেছে। মুসলিম উম্মাহের স্বার্থে এই প্রতিষ্ঠানটি এখনো সংগ্রাম করে যাচ্ছে। আল্-জামিয়াতুল আহ্লিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম –কে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলে বহু মাদ্রাসা, মক্তব, মসজিদ, ইসলামিক সেন্টার ও প্রার্থনা গৃহ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।[৫]
হাটহাজারী মাদ্রাসা “বিতর্কহীন ভাবে এই দেশের সবচেয়ে বিখ্যাত মাদ্রাসা” পরিণত হয়েছে।"[৭]
সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা
দারুল উলুম তার শিক্ষা ব্যবস্থাকে ছয়টি প্রধান অংশে ভাগ করেছেঃ
- প্রাইমারী লেভেলঃ উর্দু, ফার্সি, আরবী, নাহু-সার্ফ, সীরাত-উন-নবী, ফিকহ্, পাশাপাশি গণিত, ইতিহাস, বাংলা, ইংরেজী ও ভূগোল।
- মাধ্যমিক লেভেলঃ উচ্চতর আরবী ব্যাকরণ, আরবী সাহিত্য, ফিকহ্
- উচ্চ মাধ্যমিক লেভেলঃ উচ্চতর ফিকহ্ এবং উসুল-ই-ফিকহ্, উচ্চতর যুক্তিবিদ্যা, উচ্চতর আরবী সাহিত্য, উচ্চতর অর্থনীতি, উচ্চতর দর্শন, উচ্চতর ইসলামের ইতিহাস।
- স্নাতক লেভেলঃ হাদিস, তাফসির, আরবী ও ফার্সি কবিতা,
- স্নাতকোত্তর লেভেলঃ ছয়টি প্রধান হাদিস বইঃ বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, আবু দাউদ শরীফ, তিরমিদি শরীফ, নাসাই শরীফ এবং ইবন মাজাহ্ শরীফ প্রাধানত পড়ানো হয়।
- ডক্টরেটঃ পাশাপাশি ইসলামীক আইন, আরবী ভাষা শিক্ষা, উচ্চতর হাদি’আত শিক্ষা, বাংলা সংস্কৃতি এবং ইসলাম শিক্ষা এখানে পড়ানো হয়।
আন্ত-বিদ্যালয়
“বড় মাদ্রাসা” বাংলাদেশের প্রধান তিনটি বৃহত্তম মাদ্রাসার মধ্যে অন্যতম। অন্য দুইটি মাদ্রাসা হল পটিয়ার আল-জামিয়াহ্ আল-ইসলামীয়া এবং লালখান বাজারের জামিয়াতুল উলুম আল-ইসলাম। এর সব কয়টি মাদ্রাসা বাংলাদেশের বন্দর নগরী চট্টগ্রামেঅবস্থিত। এই তিনটি মাদ্রাসা একযোগে বাংলাদেশের ৭,০০০ এর অধিক ছোট ইসলামিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা নিয়ন্ত্রণ করে।[১১] এই তিনটি বৃহৎ মাদ্রাসা প্রায় একই পরিচালনা পর্ষদের অধীনে।[৮]
প্রকাশনা
আল্-জামিয়াতুল আহ্লিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম নিম্নের ম্যাগাজিন গুলো প্রকাশ করে থাকে
- মাসিক মুঈনুল ইসলাম (Monthly Muinul Islam)
- বার্ষিক আল মুঈন (Yearly Al Muin)
প্রাক্তন বিশিষ্ট শিক্ষার্থী
- আল্লামা ফয়েজুল্লাহ
- মুফতি আব্দুর রহমান
- আল্লামা শাহ আহমদ শফী
- মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ
- আল্লামা হাফেয জুনায়েদ বাবুনগরী
- আল্লামা আজিজুল হক
আরো দেখুন
তথ্য উৎস
- ↑ "আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম-হাটহাজারী।"। Darululum-hathazari.com। সংগৃহীত ২০১৩-০৮-১৬।
- ↑ "1500 sued for Hathazari thana attack"। Bangladesh News। ১৪ এপ্রিল ২০০৮। সংগৃহীত ১ জুন ২০১২।
- ↑ "পরিচিতি" [About]। darululum-hathazari.com (Bengali ভাষায়)। ২০০৯-১১-২২। সংগৃহীত ১ জুন ২০১২।
- ↑ Kabir, Humayun 'Replicating the Deobandi model of Islamic schooling: the case of a Quomi madrasa in a district town of Bangladesh', Contemporary South Asia, 17:4, 415 - 428.
- ↑ ৫.০ ৫.১ Singh (editor-in-chief), Nagendra Kr. (২০০৩)।Encyclopaedia of Bangladesh (1st সংস্করণ)। New Delhi, India: Anmol Publications। পৃ: ২৫৯।আইএসবিএন 8126113901।
- ↑http://www.nbr.org/publications/specialreport/pdf/Preview/PR09_IslamEd.pdf
- ↑ ৭.০ ৭.১ Ahmad, Mumtaz and Matthew J. Nelson. "Islamic Education in Bangladesh and Pakistan: Trends in Tertiary Institutions." (Preview) NBR Project Report. April 2009. (alternate non-preview version)
- ↑ ৮.০ ৮.১ Riaz, Ali (২০০৮)। Faithful education : madrassahs in South Asia। New Brunswick, N.J.: Rutgers University Press। পৃ: ১৪৯। আইএসবিএন 0813543452।
- ↑ "Madrasa Deoband - by Moulana Yunus Osman"। Beautifulislam.net। সংগৃহীত ২০১৩-০৮-১৬।
- ↑ "আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম-হাটহাজারী।"। Darululum-hathazari.com। সংগৃহীত ২০১৩-০৮-১৬।
- ↑http://www.asiantribune.com/news/2005/10/31/reality-reminder
নোটস
বহিঃসংযোগ
- Official Website of Hifazat-E-Islam Bangladesh[১]
- Hifazat-E- Islam Bangladesh[২]
- Darul Ulooms, Jamiyas and Qaumi Madrasahs Worldwide[৩]
- The First Online Madrasa (Islamic Academy) In Bangladesh[৪]
|
No comments:
Post a Comment