বোখারী শরীফ, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩১৮
একামত আরম্ভেই কাতার সোজা করিবে, প্রয়োজন হইলে পরেও উহার
জন্য তৎপর হইবে
৪২২। হাদিছঃ-
নো’মান ইবনে বশীর (রাঃ) বর্ণনা করিয়াছেন, নবী (সাঃ)
ফরমাইয়াছেন, খবরদার হুশিয়ার! তোমরা নামাযের মধ্যে সোজাভাবে সারিবদ্ধ হইয়া
দাঁড়াইবে। অন্যথায় আল্লাহ্ তায়ালা তোমাদের মধ্যে পরস্পর বিরোধ সৃষ্টি করিয়া
দিবেন।
ব্যাখ্যাঃ- নামাযের মধ্যে কাতার বাঁকা করিয়া দাঁড়ান একটি
সাধারণ বিষয় মনে করা হইয়া থাকে, কিন্তু উহার কুফল বড়ই মারাত্মক। ইহার
দরুন আল্লাহ্ তাহালা পরস্পরের বিরোধ, বিভেদ ও বিষাদ সৃষ্টি করিয়া দেন। বর্তমান
মোসলমানদের অবস্থা দেখিলেই রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর উক্তির সত্যতা প্রমাণিত হইয়া
যাইবে। পরস্পর বিভেদ ও বিবাদ বড় শাস্তি যাহা জ্ঞানী মাত্রই উপলব্ধি করিতে পারেন।
আল্লাহ্ তায়ালা কোরআন শরিফের বহু স্থানে ইহুদী ও নাছারাদের উপর স্বীয় গজব ও
আজাবের উল্লেখপূর্বক বলিয়াছেন-“আমি তোমাদের মধ্যে পরস্পর হিংসা, বিদ্বেষ, বিভেদ ও
বিবাদের সৃষ্টি করিয়া দিয়াছি”।
মূল হাদিছের অর্থ এরূপও বলা হয়,
“তোমরা
নামাযের মধ্যে সোজাভাবে সারিবদ্ধ হইয়া দাঁড়াইবে। নতুবা আল্লাহ্ তায়ালা তোমাদের আকৃতি বিকৃত করিয়া দিবেন”।
কাতার সোজা করিতে ইমাম তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখিবে
৪২৩। হাদিছঃ-
আনাছ (রাঃ) বর্ণনা করিয়াছেন – একদা নামাযের একামত শেষ
হইয়া গেলে পর, রসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের প্রতি লক্ষ্য করিয়া বলিলেন, সোজা
সারিবদ্ধভাবে পরস্পর মিলিত হইয়া দাড়াও। স্মরণ রাখিও, আমি পেছনের দিকেও তোমাদিগকে
দেখি। ( অনেকে ইহার রূপক অর্থ বলিয়াছেন। অর্থাৎ জ্ঞাত হইয়া থাকি। আর অনেকে
বলিয়াছেন, প্রকৃত প্রস্তাবেই হযরত (সাঃ) ইচ্ছা করিলে স্বীয় চোখে পেছন দিকেও দেখিতে
পাইতেন, ইহা তাঁহার খোদা প্রদত্ত বৈশিষ্ট্য ছিল। যেমন সাধারণতঃ কানের দ্বারা
পেছনের শব্দও শুনা যায়। )
পৃষ্ঠা ৩১৯
কাতার সোজা করা নামাযের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ
৪২৪। হাদিছঃ-
আনাছ (রাঃ) হইতে বর্ণিত আছে – রসুলুল্লাহ (সাঃ)
ফরমাইয়াছেন, কাতার সোজা কর। কাতার সোজা করা নামাযের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।
৪২৫।
হাদিছঃ-
আবু
হোরায়রা (রাঃ) হইতে বর্ণিত আছে, রসুলুল্লাহ (সাঃ) বলিয়াছেন, নামাযের মধ্যে কাতার সোজা
করিয়া দাড়াও। কারণ, উহার উপর নামাযের সৌন্দর্য্য নির্ভর করে।
কাতার
সোজা এবং পূর্ণ না করা গোনাহ
৪২৬।
হাদিছঃ-
(
রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর বহু দিন পর ) সাহাবী আনাছ (রাঃ) বছরা হইতে মদিনায় আসিলেন। কোন
এক ব্যক্তি তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিল, আপনি রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর যামানার অনুপাতে
আমাদের মধ্যে কি কি দোষ ত্রুটি দেখিতে পান? তিনি বলিলেন অন্য কোন দোষ বিশেষরূপে
ব্যক্ত করিতে চাই না, কিন্তু এই একটি দোষ যে, তোমরা নামাযের মধ্যে কাতার ঠিক ও
দুরস্ত কর না।
পরস্পর লাগালাগি হইয়া সারি বাঁধিবে ফাঁক রাখিবে না
ছাহাবী নোমান ইবনে বশীর (রাঃ) বলিয়াছেন, আমাদের ( তথা
ছাহাবীদের) প্রত্যেককেই দেখিয়াছি, নিজ সঙ্গীর কাঁধে কাঁধ মিলাইয়া এবং পরস্পর পায়ের
গিঁঠ মিলাইয়া নামাযে দাঁড়াইতেন।
আনাছ (রাঃ) বলিয়াছেন, ( জামাতে নামায পড়িতে ) আমাদের
প্রত্যেকেই নিজ সঙ্গীর কাঁধে কাঁধ ও পায়ের পা মিলাইয়া দাঁড়াইতেন।
পাঠকবৃন্দ! একটু লক্ষ্য করিলেই বুঝিতে পারিবেন যে,
পরস্পর পা মিলাইয়া দাঁড়ানোর উদ্দেশ্য এই নয় যে, বস্তুতঃ একে অন্যের পায়ের সহিত পা
মিলাইয়া দাঁড়াইতে হইবে। সে জন্যই এখানে কাঁধের এবং পায়ের গিঁঠেরও উল্লেখ আছে ; অথচ
সারি বাঁধিতে পরস্পর কাঁধে কাঁধ মিলানো সহজ ব্যাপার নহে এবং পায়ের গিঁঠে গিঁঠ
মিলানো ত সম্ভবই নহে। এখানে এই সমস্ত বাক্যের দ্বারা বস্তুতঃ দুইটি বিষয়ে তৎপর
হওয়ার আদেশ করাই আসল উদ্দেশ্য। প্রথম- এই যে, খুব সোজাভাবে সারি বাঁধিবে ; যেরূপ কাঁধে কাঁধ
ও পায়ে পা মিলাইয়া দাঁড়াইলে স্বভাবতঃই উহা হইয়া থাকে এবং কাতার সোজা করার ইহা
অন্যতম উপায়। দ্বিতিয়- এই যে, যথাসাধ্য
লাগালাগি দাঁড়াইবে ; মধ্যভাগে ফাঁক ছাড়িবে না।
অনেক হাদীছে এরূপ উল্লেখ আছে যে, মধ্যভাগে একটু ফাঁক
থাকিলে শয়তান সেখানে আসিয়া প্রবেশ করে ( নামাজিদের অন্তরে ওছওয়াছার সৃষ্টি করে )
আনাছ (রাঃ) এর উক্তি
কাঁধে কাঁধ এবং পায়ের পা মিলানর একমাত্র উদ্দেশ্য যে ইহাই তাহার প্রকৃষ্ট
প্রমাণও বিদ্যমান রহিয়াছে যে, আনাছ (রাঃ)
তাঁহার উক্তির ভিত্তি নিম্নে বর্ণীত হাদিছটির উপর স্থাপন করিয়াছে।
৪২৭। হাদিছঃ-
আনাছ (রাঃ) হইতে বর্ণীত আছে, নবী (সাঃ) বলিয়াছেন, তোমরা
কাতার খুব সোজা করিয়া দাঁড়াইবে ; আমি আমার পেছন দিকেও দেখিয়া থাকি ( অনেকে ইহার
রূপক অর্থ বলিয়াছেন। অর্থাৎ জ্ঞাত হইয়া থাকি। আর অনেকে বলিয়াছেন, প্রকৃত
প্রস্তাবেই হযরত (সাঃ) ইচ্ছা করিলে স্বীয় চোখে পেছন দিকেও দেখিতে পাইতেন, ইহা
তাঁহার খোদা প্রদত্ত বৈশিষ্ট্য ছিল। যেমন সাধারণতঃ কানের দ্বারা পেছনের শব্দও শুনা
যায়। ) আনাছ (রাঃ) বলেন- সেমতে আমাদের প্রতেকেই কাঁধে কাঁধ এবং পায়ের পা মিলাইয়া
থাকিত।
No comments:
Post a Comment