Buy IP

********** Welcome to Buy ip **********

Thursday, August 25, 2016

জিলহজের আমল


জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনের ফযিলত ও 


সহিহ হাদিসে বর্ণিত আমল


আল্লাহ তা‘আলা দয়ালু। তাই তিনি আপন বান্দাদের তওবার সুযোগ দিতে ভালোবাসেন। তিনি চান বান্দারা ইবাদাতের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য লাভ করুক। এই উদ্দেশ্যে তিনি আমাদের জন্য বছরে কিছু বরকতময় ও কল্যাণবাহী দিন রেখেছেন যাতে আমলের সওয়াব বহুগুণে বৃদ্ধি করা হয়। আমরা পরীক্ষার দিনগুলোতেসর্বোচ্চ চেষ্টা চালাই সবচেয়ে ভালো ফলাফল অর্জন করার জন্য। তবে কেন আখেরাতের জন্য এসব পরীক্ষার দিনগুলোতেও সর্বাধিক প্রচেষ্টা ব্যয় করব না? এ দিনগুলোতে আমল করা তো বছরের অন্যান্য দিনের তুলনায় অনেক বেশি নেকী ও কল্যাণ বয়ে আনে। এমন দিনগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য যিলহজ মাসের এই প্রথম দশদিন। এ দিনগুলো এমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেগুলোকে দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ দিন বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাতে আমলের প্রতি তিনি সবিশেষ উদ্বুদ্ধ করেছেন। এ দিনগুলোর শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে শুধু এতটুকুই যথেষ্ট যে আল্লাহ তা‘আলা এর কসম করেছেন।

 যে কারণে এই দশ দিন বছরেরশ্রেষ্ঠ দশ দিন


. আল্লাহ তা‌আলা এর কসম করেছেন : আল্লাহ তা‌‘আলা যখন কোনো কিছুর কসম করেন তা কেবল তার শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদাই প্রমাণ করে। কারণ,মহান সত্তা শুধু মহা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েরই কসম করেন। 


আল্লাহ তা‌‘আলা বলেন, ‘কসম ভোরবেলার। কসম দশ রাতের।’ {সূরা আল-ফাজর, আয়াত : ১-২} 

আয়াতে ‘কসম দশ রাতের’ বলে যিলহজের দশকের প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়েছে। এটিই সকল মুফাসসিরের মত। ইবনে কাসীর রাহিমাহুল্লাহ বলেন, এ মতটিই সঠিক।
২ এসবই সেই দিন আল্লাহ যাতে তাঁর জিকিরের প্রবর্তন করেছেন : আল্লাহ তা‌‘আ বলেন, ‘যেন তারা নিজদের কল্যাণের স্থানসমূহে হাযির হতে পারে এবং তিনি তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু থেকে যে রিজিক দিয়েছেন তার ওপর নির্দিষ্ট দিনসমূহে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে।’ {সূরা আল-হজ, আয়াত : ২৮} 
জমহূর উলামার মতে, আয়াতে নির্দিষ্ট দিনসমূহ বলে যিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনকে বুঝানো হয়েছে। এটিই ইবন উমর ও ইবন আব্বাস রাদিআল্লাহু আনহুমার মত।

৩. রাসূলুল্লাহ দিনগুলোকে শ্রেষ্ঠ দিনবলে আখ্যায়িত করেছেন : যিলহজের এই দিনগুলোকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ দিন বলে আখ্যায়িত করেছেন। যেমন জাবির রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, 

‘পৃথিবীর দিনগুলোর মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ দিনগুলো হলো দশকের দিনসমূহ। অর্থাৎ যিলহজের (প্রথম) দশদিন। জিজ্ঞেস করা হলো, আল্লাহর পথে জিহাদেও কি এর চেয়ে উত্তম দিন নেই? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদেও এর চেয়ে উত্তম দিন নেই। হ্যা, কেবল সে-ই যে (জিহাদে) তার চেহারাকে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে।’
 [মুসনাদ বাযযার : ১১২৮; মুসনাদ আবী ই‘আলা : ২০৯০]

৪. এই দিনগুলোর মধ্যে রয়েছে আরাফার দিন: আরাফার দিন হলো বড় হজের দিন। এটি ক্ষমা ও মাগফিরাতের দিন। জাহান্নাম থেকে মুক্তিও নাজাতের দিন। যিলহজের এই দশকে যদি ফযীলতের আর কিছু না থাকত তবে এ দিবসটিই তার মর্যাদার জন্য যথেষ্ট হত। এ দিনের ফযীলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

‘আরাফা দিবসই হজ’। [তিরমিযী : ৮৯৩;নাসায়ী : ৩০১৬]

৫. এতে রয়েছে কুরবানীর দিন : কোনো কোনো আলিমের মতে কুরবানীর দিনটি বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ দিন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,

‘আল্লাহর কাছে সর্বাধিক মর্যাদাপূর্ণ দিন হলো কুরবানীর দিন অতপর স্থিরতার দিন’। (অর্থাৎ কুরবানীর পরবর্তী দিন। কারণ, যেদিন মানুষ কুরবানী ইত্যাদির দায়িত্ব পালন শেষ করে সুস্থির হয়।) [নাসায়ী : ১০৫১২; ইবন খুযাইমা, সহীহ : ২৮৬৬]
৬. এ দিনগুলোতে মৌলিক ইবাদতগুলোর সমাবেশ ঘটে :
হাফেয ইবন হাজর রহিমাহুল্লাহ তদীয় ফাতহুল বারী গ্রন্থে বলেন,‘যিলহজের দশকের বৈশিষ্ট্যের কারণ যা প্রতীয়মান হয় তা হলো, এতে সকল মৌলিক ইবাদতের সন্নিবেশ ঘটে। যথা : সালাত, সিয়াম, সাদাকা, হজ ইত্যাদি। অন্যকোনো দিন এতগুলো ইবাদতের সমাবেশ ঘটে না।’ [ফাতহুল বারী : ২/৪৬০]

 আমল করে মহান আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি হাসিল করার উপায়ঃ 

১-   প্রথম দশদিনে নফল রোযা ও রাতে ইবাদত করা

জিলহজ্ব মাসের চাঁদ উদিত হওয়ার পর থেকে দশ তারিখ পর্যন্ত যত দিন সম্ভব নফল রোযা রাখা আর রাতের বেলা বেশী বেশী ইবাদত করা যথা নফল নামায,কুরআন তিলাওয়াত,তাসবীহ-তাহলীল,তাওবা-ইস্তিগফার ও রোনাজারী ইত্যাদি ইবাদতের মাধ্যমে রাত কাটানো।

ফযীলত
 হযরত আবু হুরায়রা রা.থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জিলহজ্বের দশ দিনের ইবাদত আল্লাহর নিকট অন্য দিনের ইবাদত তুলনায় বেশী প্রিয়,প্রত্যেক দিনের রোযা এক বছরের রোযার ন্যায় আর প্রত্যেক রাতের ইবাদত লাইলাতুল কদরের ইবাদতের ন্যায় ।

{তিরমিজী শরীফ,হাদীস নং-৭৫৮,সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৩৭৫৭,কানযুল উম্মাল ফি সুনানিল আকওয়াল ওয়াল আফআল, হাদীস নং-১২০৮৮}

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা.থেকে বর্ণিত।রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন-এই দশ দিনের আমল অপেক্ষা অন্য দিনের আমল প্রিয় নয়।{বুখারী শরীফ,হাদীস নং-৯২৬}

-   যারা কুরবানী করার ইচ্ছে পোষণ করছেন, তারা জিলহজ্ব মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার পর থেকে হাত পায়ের নখ, মাথার চুল ও অবাঞ্ছিত চুল ইত্যাদি কাটবে না, যদি ৪০ দিন না হয়ে থাকে এগুলো না কাটার মেয়াদ। যদি ৪০ দিনের বেশি হয়ে থাকে, তাহলে এসব কেটে ফেলা আবশ্যক। নতুবা ১০দিন পর কুরবানীর পর পরিস্কার করবে। এ কাজটি সুন্নাত।

হযরত উম্মে সালমা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃইরশাদ করেছেন যে, যখন [জিলহজ্বের প্রথম] ১০ দিনের সূচনা হয়,আর তোমাদের কেউ কুরবানী করার ইচ্ছে করে,সে যেন চুল-নখ ইত্যাদি না কাটে। {সুনানে নাসায়ীকুবরা, হাদীস নং-৪৪৫৪, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীসনং-৩১৪৯, সুনানে বায়হাকী, হাদীস নং-১৮৮০৬, মুসনাদুলহুমায়দী, হাদীস নং-২৯৩, মুসনাদে আবী আওয়ানা, হাদীসনং-৭৭৮৭, মুসনাদুশ শাফেয়ী, হাদীস নং-৮৪৬, মাশকিলুল আসার,হাদীস নং-৪৮১১}

৩-   যারা হজ্বে যায়নি, তাদের জন্য জিলহজ্ব মাসের নয় তারিখ রোযা রাখা সুন্নাত এবং আরাফার দিনের একটি বিশেষ দুয়া

ফযীলত

হযরত আবু কাতাদা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-আরাফার দিনের রোযার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে, এ রোযা তার পূর্বের ও পরের বৎসরের গোনাহ মুছে ফেলবে। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-৭৪০}

তবে যারা হজ্বে গিয়েছেন, তাদের জন্য এদিন রোযা না রাখা উচিত।

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ আরাফার দিনে আরাফার ময়দানে রোযা রাখতে নিষেধ করেছেন। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২৪৪২,সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৮১৭২,কানযুল উম্মাল ফি সুনানিল আক্বওয়াল ওয়াল আফআল,হাদীস নং-২৩৯২৩, আল মুজামুল আওসাত, হাদীসনং-২৫৫৬}

হযরত উম্মুল ফযল রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন-লোকেরা আরাফার দিন নবী কারীম সাঃ রোযা রেখেছেন কি না? তা নিয়ে সন্দেহে পতিত হলে আমি রাসূল সাঃ এর পানীয় প্রেরণ করলাম, আর নবীজী সাঃ তা পান করলেন। [ফলে সবাই নিশ্চিত হলেন যে, রাসূল সাঃ রোযা রাখেন নি। {সহীহমুসলিম, হাদীস নং-২৬৫১}

নোটঃ উলামাদের মত হল এই রোজার দিন হল যার যার দেশের ৯ই জিলহজ যখন আসে তখন অর্থাৎ সৌদি আরবের ৯ই জিলহজের সাথে মিলিয়ে নয়।  
আরাফার দিনের দুয়াঃ 

ইখলাছ ও বিশ্বাসের সাথে এ দিনে নিম্নোক্ত কালিমাটি বেশী বেশী পড়া উচিত। নবীজী আরাফার দিন এ কালিমাটি খুব বেশী পড়তেন। (মুসনাদে আহমাদঃ ৬৯২২ )

لَا اِلٰهَ اِلَّا اللهُ وَحْدَهٗ لَا شَرِيْكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ بِيَدِهِ الْخَيْرُ وَهُوَ عَلٰى كُلَّ شَيْئٍ قَدِيْرٍ


বাংলা উচ্চারণঃ  লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহুওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু লাহুল মূলকু ওয়া লাহুলহামদু বিয়াদিহিল খাইরু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়্যিন ক্কদির।

৪-   তাকবীরে তাশরীক বলা।
যিলহজ্ব মাসের ৯তারিখের ফজর থেকে তের তারিখের আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাযের পর একবার তাকবীর বলা ওয়াজিব।পুরুষের জন্য আওয়াজ করে,আর মহিলাদের জন্য নীরবে।

তাকবীরে তাশরীক হচ্ছে :

الله اكبر الله اكبر لا اله الا الله والله اكبرو الله اكبر ولله الحمد

উচ্চারণঃ  "আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।"

নামায জামাতের সাথে হোক বা একাকি, পুরুষ মহিলা সবার জন্য প্রতি ফরয নামাযের পর এ তাকবীরটি একবার বলা ওয়াজিব। পুরুষরা উচ্চস্বরে বলবে আর মহিলারা অনুচ্চস্বরে। নামায কাযা হয়ে গেলে তা আদায়ের পরও তাকবীর বলবে। কাযা নামাযের পর তাকবীর বলতে ভুলে গেলে পরে তা কাযা করার কোন বিধান নাই।

প্রমাণ-
ফাতওয়া শামী-তৃতীয়খন্ড,৬১ পৃষ্ঠা,সালাত অধ্যায়,ঈদ পরিচ্ছেদ,
ইলাউস সুনান, সালাত অধ্যায়, তাকবীরাতুত তাশরীক পরিচ্ছেদ, ৮ম খন্ড, ১৪৮ পৃষ্ঠা}

ফযীলত

হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ আরাফার দিন তথা ৯ ই জিলহজ্বের ফজর থেকে আইয়ামে তাশরীকের শেষদিন পর্যন্ত পর্যন্ত তথা ১৩ ই জিলহজ্ব [আসর নামায] পর্যন্ত তাকবীরে তাশরীক পড়তেন। {সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-৬০৭১,মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা,হাদীস নং-৫৬৮১}

৫-   ঈদের দিনের সবচেয়ে বড় আমল হল ঈদের নামায শেষে কুরবানী করা।

১০, ১১ম ১২ যিলহজ্বের যে কোন একদিন,কোন ব্যক্তির মালিকানায় যদি নিত্য প্রয়োজন অতিরিক্ত সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ, অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রোপা বা এর সমমূল্যের সম্পদ থাকে, {বর্তমান বাজার মূল্যে যা ৮৪,০০০/= প্রায়} তাহলে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব।

পুরুষ-মহিলা সকলের উপরই এ বিধান প্রযোজ্য।
প্রমাণ-ফাতওয়াশামী-৯/৪৫৩, ৪৫৭
ফাতওয়া আলমগীরী-৫/২৯২

ফযীলত

হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, কুরবানীর দিনে বনী আদম এমন কোন কাজ করতে পারে না, যা আল্লাহর নিকট রক্ত প্রবাহিত করা তথা কুরবানী করার চেয়ে বেশি প্রিয়। কুরবানীর পশু সকল শিং, তাদের পশম ও তাদের খুরসহ কেয়ামতের দিন [কুরবানীদাতার পাল্লায়]এসে হাজির হবে। আর কুরবানীর পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই আল্লাহর নিকট সম্মানের স্থানে পৌছে যায়। সুতরাং তোমরা প্রফুল্লচিত্তে কুরবানী করবে। {সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১৪৯৩,মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীসনং-৭৫২৩, কানযুল উম্মাল ফি সুনানিল আক্বওয়াল ওয়াল আফআল, হাদীস নং-১২১৫৩}

যায়েদ বিন আরকাম রাঃ বলেন-রাসূল সা. এর সাহাবাগণ বললেন-হে আল্লাহর রাসূল! এ সকল কুরবানীর ফযীলত কি? উত্তরে তিনি বললেন-তোমাদের জাতির পিতা ইবরাহীম আ. এর সুন্নাত। তারা পুনরায় আবার বললেন-হে আল্লাহর রাসূল! তাতে আমাদের জন্য কী সওয়াব রয়েছে? উত্তরে তিনি বললেন-কুরবানীর পশুর প্রতিটি চুলের বিনিময়ে একটি সওয়াব রয়েছে। তারা আবারো প্রশ্ন করলেন-হে আল্লাহর রাসূল! ভেড়ার লোমের কি হুকুম? [এটাতো গণনা করা সম্ভব নয়] তিনি বললেন-ভেড়ার লোমের প্রতিটি চুলের বিনিময়ে একটি সওয়াব রয়েছে। {সুনানে ইবনে মাজাহ-হাদীস নং-৩১২৭}

মহান আল্লাহ্‌ আমাদেরকে জিলহজ মাসের প্রথম ১০ দিনে ইবাদাত করে আখিরাতের সম্বল হাসিল করার তাওফিক দান করুন। আমিন। 



কুরবানী ১


কুরবানীর মাসলা মাসায়েল

কুরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি আদায় করা ওয়াজিব।

সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি এই ইবাদত পালন করে না তার ব্যাপারে হাদীস শরীফে এসেছে, ‘যার কুরবানীর সামর্থ্য রয়েছে কিন্তু কুরবানী করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’-মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস : ৩৫১৯; আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব ২/১৫৫

ইবাদতের মূলকথা হল আল্লাহ তাআলার আনুগত্য এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন। তাই যেকোনো ইবাদতের পূর্ণতার জন্য দুটি বিষয় জরুরি। ইখলাস তথা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পালন করা এবং শরীয়তের নির্দেশনা মোতাবেক মাসায়েল অনুযায়ী সম্পাদন করা। এ উদ্দেশ্যে এখানে কুরবানীর কিছু জরুরি মাসায়েল উল্লেখ হল।

কার উপর কুরবানী ওয়াজিব

মাসআলা : ১. প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থমস্তিষ্ক সম্পন্ন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, যে ১০ যিলহজ্ব ফজর থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা, অলঙ্কার, বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজন আসে না এমন জমি, প্রয়োজন অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় সকল আসবাবপত্র কুরবানীর নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য।

আর নিসাব হল স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি, রূপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি, টাকা-পয়সা ও অন্যান্য বস্ত্তর ক্ষেত্রে নিসাব হল এর মূল্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া। আর সোনা বা রূপা কিংবা টাকা-পয়সা এগুলোর কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে কিন্তু প্রয়োজন অতিরিক্ত একাধিক বস্ত্ত মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায় তাহলেও তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব।-আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৫৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪০৫

নেসাবের মেয়াদ

মাসআলা ২. কুরবানীর নেসাব পুরো বছর থাকা জরুরি নয়; বরং কুরবানীর তিন দিনের মধ্যে যে কোনো দিন থাকলেই কুরবানী ওয়াজিব হবে।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩১২

কুরবানীর সময়

মাসআলা : ৩. মোট তিনদিন কুরবানী করা যায়। যিলহজ্বের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত। তবে সম্ভব হলে যিলহজ্বের ১০ তারিখেই কুরবানী করা উত্তম। -মুয়াত্তা মালেক ১৮৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৮, ২৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৫

নাবালেগের কুরবানী

মাসআলা : ৪. নাবালেগ শিশু-কিশোর তদ্রূপ যে সুস্থমস্তিষ্কসম্পন্ন নয়, নেসাবের মালিক হলেও তাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। অবশ্য তার অভিভাবক নিজ সম্পদ দ্বারা তাদের পক্ষে কুরবানী করলে তা সহীহ হবে।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৬

মুসাফিরের জন্য কুরবানী

মাসআলা : ৫. যে ব্যক্তি কুরবানীর দিনগুলোতে মুসাফির থাকবে (অর্থাৎ ৪৮ মাইল বা প্রায় ৭৮ কিলোমিটার দূরে যাওয়ার নিয়তে নিজ এলাকা ত্যাগ করেছে) তার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। -ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৪, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৫, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৫

নাবালেগের পক্ষ থেকে কুরবানী

মাসআলা : ৬. নাবালেগের পক্ষ থেকে কুরবানী দেওয়া অভিভাবকের উপর ওয়াজিব নয়; বরং মুস্তাহাব।-রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৫; ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৫

দরিদ্র ব্যক্তির কুরবানীর হুকুম

মাসআলা : ৭. দরিদ্র ব্যক্তির উপর কুরবানী করা ওয়াজিব নয়; কিন্তু সে যদি কুরবানীর নিয়তে কোনো পশু কিনে তাহলে তা কুরবানী করা ওয়াজিব হয়ে যায়। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯২

কুরবানী করতে না পারলে

মাসআলা : ৮. কেউ যদি কুরবানীর দিনগুলোতে ওয়াজিব কুরবানী দিতে না পারে তাহলে কুরবানীর পশু ক্রয় না করে থাকলে তার উপর কুরবানীর উপযুক্ত একটি ছাগলের মূল্য সদকা করা ওয়াজিব। আর যদি পশু ক্রয় করে ছিল, কিন্তু কোনো কারণে কুরবানী দেওয়া হয়নি তাহলে ঐ পশু জীবিত সদকা করে দিবে।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৪, ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৫

প্রথম দিন কখন থেকে কুরবানী করা যাবে

মাসআলা : ৯. যেসব এলাকার লোকদের উপর জুমা ও ঈদের নামায ওয়াজিব তাদের জন্য ঈদের নামাযের আগে কুরবানী করা জায়েয নয়। অবশ্য বৃষ্টিবাদল বা অন্য কোনো ওজরে যদি প্রথম দিন ঈদের নামায না হয় তাহলে ঈদের নামাযের সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর প্রথম দিনেও কুরবানী করা জায়েয।-সহীহ বুখারী ২/৮৩২, কাযীখান ৩/৩৪৪, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৮

রাতে কুরবানী করা

মাসআলা : ১০. ১০ ও ১১ তারিখ দিবাগত রাতেও কুরবানী করা জায়েয। তবে দিনে কুরবানী করাই ভালো। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস : ১৪৯২৭; মাজমাউয যাওয়াইদ ৪/২২, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২০, কাযীখান ৩/৩৪৫, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৩

কুরবানীর উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত পশু সময়ের পর যবাই করলে

মাসআলা : ১১. কুরবানীর দিনগুলোতে যদি জবাই করতে না পারে তাহলে খরিদকৃত পশুই সদকা করে দিতে হবে। তবে যদি (সময়ের পরে) জবাই করে ফেলে তাহলে পুরো গোশত সদকা করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে গোশতের মূল্য যদি জীবিত পশুর চেয়ে কমে যায় তাহলে যে পরিমাণ মূল্য হ্রাস পেল তা-ও সদকা করতে হবে।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০২, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২০-৩২১

কোন কোন পশু দ্বারা কুরবানী করা যাবে

মাসআলা : ১২. উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয। এসব গৃহপালিত পশু ছাড়া অন্যান্য পশু যেমন হরিণ, বন্যগরু ইত্যাদি দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়। -কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫

নর ও মাদা পশুর কুরবানী

মাসআলা : ১৩. যেসব পশু কুরবানী করা জায়েয সেগুলোর নর-মাদা দুটোই কুরবানী করা যায়। -কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫

কুরবানীর পশুর বয়সসীমা

মাসআলা : ১৪. উট কমপক্ষে ৫ বছরের হতে হবে। গরু ও মহিষ কমপক্ষে ২ বছরের হতে হবে। আর ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা কমপক্ষে ১ বছরের হতে হবে। তবে ভেড়া ও দুম্বা যদি ১ বছরের কিছু কমও হয়, কিন্তু এমন হৃষ্টপুষ্ট হয় যে, দেখতে ১ বছরের মতো মনে হয় তাহলে তা দ্বারাও কুরবানী করা জায়েয। অবশ্য এক্ষেত্রে কমপক্ষে ৬ মাস বয়সের হতে হবে।

উল্লেখ্য, ছাগলের বয়স ১ বছরের কম হলে কোনো অবস্থাতেই তা দ্বারা কুরবানী জায়েয হবে না। -কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫-২০৬

এক পশুতে শরীকের সংখ্যা

মাসআলা : ১৫. একটি ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা দ্বারা শুধু একজনই কুরবানী দিতে পারবে। এমন একটি পশু কয়েকজন মিলে কুরবানী করলে কারোটাই সহীহ হবে না। আর উট, গরু, মহিষে সর্বোচ্চ সাত জন শরীক হতে পারবে। সাতের অধিক শরীক হলে কারো কুরবানী সহীহ হবে না। -সহীহ মুসলিম ১৩১৮, মুয়াত্তা মালেক ১/৩১৯, কাযীখান ৩/৩৪৯, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭-২০৮

সাত শরীকের কুরবানী

মাসআলা : ১৬. সাতজনে মিলে কুরবানী করলে সবার অংশ সমান হতে হবে। কারো অংশ এক সপ্তমাংশের কম হতে পারবে না। যেমন কারো আধা ভাগ, কারো দেড় ভাগ। এমন হলে কোনো শরীকের কুরবানীই সহীহ হবে না। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭

মাসআলা : ১৭. উট, গরু, মহিষ সাত ভাগে এবং সাতের কমে যেকোনো সংখ্যা যেমন দুই, তিন, চার, পাঁচ ও ছয় ভাগে কুরবানী করা জায়েয। -সহীহ মুসলিম ১৩১৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭

কোনো অংশীদারের গলদ নিয়ত হলে

মাসআলা : ১৮. যদি কেউ আল্লাহ তাআলার হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে কুরবানী না করে শুধু গোশত খাওয়ার নিয়তে কুরবানী করে তাহলে তার কুরবানী সহীহ হবে না। তাকে অংশীদার বানালে শরীকদের কারো কুরবানী হবে না। তাই অত্যন্ত সতর্কতার সাথে শরীক নির্বাচন করতে হবে। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৮, কাযীখান ৩/৩৪৯

কুরবানীর পশুতে আকীকার অংশ

মাসআলা : ১৯. কুরবানীর গরু, মহিষ ও উটে আকীকার নিয়তে শরীক হতে পারবে। এতে কুরবানী ও আকীকা দুটোই সহীহ হবে।-তাহতাবী আলাদ্দুর ৪/১৬৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩৬২

মাসআলা : ২০. শরীকদের কারো পুরো বা অধিকাংশ উপার্জন যদি হারাম হয় তাহলে কারো কুরবানী সহীহ হবে না।

মাসআলা : ২১. যদি কেউ গরু, মহিষ বা উট একা কুরবানী দেওয়ার নিয়তে কিনে আর সে ধনী হয় তাহলে ইচ্ছা করলে অন্যকে শরীক করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে একা কুরবানী করাই শ্রেয়। শরীক করলে সে টাকা সদকা করে দেওয়া উত্তম। আর যদি ওই ব্যক্তি এমন গরীব হয়, যার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব নয়, তাহলে সে অন্যকে শরীক করতে পারবে না। এমন গরীব ব্যক্তি যদি কাউকে শরীক করতে চায় তাহলে পশু ক্রয়ের সময়ই নিয়ত করে নিবে।-কাযীখান ৩/৩৫০-৩৫১, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১০

কুরবানীর উত্তম পশু

মাসআলা : ২২. কুরবানীর পশু হৃষ্টপুষ্ট হওয়া উত্তম।-মুসনাদে আহমদ ৬/১৩৬, আলমগীরী ৫/৩০০, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৩

খোড়া পশুর কুরবানী

মাসআলা : ২৩. যে পশু তিন পায়ে চলে, এক পা মাটিতে রাখতে পারে না বা ভর করতে পারে না এমন পশুর কুরবানী জায়েয নয়। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫, সুনানে আবু দাউদ ৩৮৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৩, আলমগীরী ৫/২৯৭

রুগ্ন ও দুর্বল পশুর কুরবানী

মাসআলা : ২৪. এমন শুকনো দুর্বল পশু, যা জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না তা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫, আলমগীরী ৫/২৯৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪

দাঁত নেই এমন পশুর কুরবানী

মাসআলা : ২৫. যে পশুর একটি দাঁতও নেই বা এত বেশি দাঁত পড়ে গেছে যে, ঘাস বা খাদ্য চিবাতে পারে না এমন পশু দ্বারাও কুরবানী করা জায়েয নয়। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৫, আলমগীরী ৫/২৯৮

যে পশুর শিং ভেঙ্গে বা ফেটে গেছে

মাসআলা : ২৬. যে পশুর শিং একেবারে গোড়া থেকে ভেঙ্গে গেছে, যে কারণে

মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে পশুর কুরবানী জায়েয নয়। পক্ষান্তরে যে পশুর অর্ধেক শিং বা কিছু শিং ফেটে বা ভেঙ্গে গেছে বা শিং একেবারে উঠেইনি সে পশু কুরবানী করা জায়েয। -জামে তিরমিযী ১/২৭৬, সুনানে আবু দাউদ ৩৮৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৪, আলমগীরী ৫/২৯৭

কান বা লেজ কাটা পশুর কুরবানী

মাসআলা : ২৭. যে পশুর লেজ বা কোনো কান অর্ধেক বা তারও বেশি কাটা সে পশুর কুরবানী জায়েয নয়। আর যদি অর্ধেকের বেশি থাকে তাহলে তার কুরবানী জায়েয। তবে জন্মগতভাবেই যদি কান ছোট হয় তাহলে অসুবিধা নেই। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫, মুসনাদে আহমদ ১/৬১০, ইলাউস সুনান ১৭/২৩৮, কাযীখান ৩/৩৫২, আলমগীরী ৫/২৯৭-২৯৮

অন্ধ পশুর কুরবানী

মাসআলা : ২৮. যে পশুর দুটি চোখই অন্ধ বা এক চোখ পুরো নষ্ট সে পশু কুরবানী করা জায়েয নয়। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫, কাযীখান ৩/৩৫২, আলমগীরী ২৯৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪

নতুন পশু ক্রয়ের পর হারানোটা পাওয়া গেলে

মাসআলা : ২৯. কুরবানীর পশু হারিয়ে যাওয়ার পরে যদি আরেকটি কেনা হয় এবং পরে হারানোটিও পাওয়া যায় তাহলে কুরবানীদাতা গরীব হলে (যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়) দুটি পশুই কুরবানী করা ওয়াজিব। আর ধনী হলে কোনো একটি কুরবানী করলেই হবে। তবে দুটি কুরবানী করাই উত্তম। -সুনানে বায়হাকী ৫/২৪৪, ইলাউস সুনান ১৭/২৮০, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৯, কাযীখান ৩/৩৪৭

গর্ভবতী পশুর কুরবানী

মাসআলা : ৩০. গর্ভবতী পশু কুরবানী করা জায়েয। জবাইয়ের পর যদি বাচ্চা জীবিত পাওয়া যায় তাহলে সেটাও জবাই করতে হবে। তবে প্রসবের সময় আসন্ন হলে সে পশু কুরবানী করা মাকরূহ। -কাযীখান ৩/৩৫০

পশু কেনার পর দোষ দেখা দিলে

মাসআলা : ৩১. কুরবানীর নিয়তে ভালো পশু কেনার পর যদি তাতে এমন কোনো দোষ দেখা দেয় যে কারণে কুরবানী জায়েয হয় না তাহলে ওই পশুর কুরবানী সহীহ হবে না। এর স্থলে আরেকটি পশু কুরবানী করতে হবে। তবে ক্রেতা গরীব হলে ত্রুটিযুক্ত পশু দ্বারাই কুরবানী করতে পারবে। -খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৯, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬, ফাতাওয়া নাওয়াযেল ২৩৯, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৫

পশুর বয়সের ব্যাপারে বিক্রেতার কথা

মাসআলা : ৩২. যদি বিক্রেতা কুরবানীর পশুর বয়স পূর্ণ হয়েছে বলে স্বীকার করে আর পশুর শরীরের অবস্থা দেখেও তাই মনে হয় তাহলে বিক্রেতার কথার উপর নির্ভর করে পশু কেনা এবং তা দ্বারা কুরবানী করা যাবে। -আহকামে ঈদুল আযহা, মুফতী মুহাম্মাদ শফী রহ. ৫

বন্ধ্যা পশুর কুরবানী

মাসআলা : ৩৩. বন্ধ্যা পশুর কুরবানী জায়েয। -রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৫

নিজের কুরবানীর পশু নিজে জবাই করা

মাসআলা : ৩৪. কুরবানীর পশু নিজে জবাই করা উত্তম। নিজে না পারলে অন্যকে দিয়েও জবাই করাতে পারবে। এক্ষেত্রে কুরবানীদাতা পুরুষ হলে জবাইস্থলে তার উপস্থিত থাকা ভালো। -মুসনাদে আহমদ ২২৬৫৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২২-২২৩, আলমগীরী ৫/৩০০, ইলাউস সুনান ১৭/২৭১-২৭৪

জবাইয়ে একাধিক ব্যক্তি শরীক হলে

মাসআলা : ৩৫. অনেক সময় জবাইকারীর জবাই সম্পন্ন হয় না, তখন কসাই বা অন্য কেউ জবাই সম্পন্ন করে থাকে। এক্ষেত্রে অবশ্যই উভয়কেই নিজ নিজ যবাইয়ের আগে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ পড়তে হবে। যদি কোনো একজন না পড়ে তবে ওই কুরবানী সহীহ হবে না এবং জবাইকৃত পশুও হালাল হবে না। -রদ্দুল মুহতার ৬/৩৩৪

কুরবানীর পশু থেকে জবাইয়ের আগে উপকৃত হওয়া

মাসআলা : ৩৬. কুরবানীর পশু কেনার পর বা নির্দিষ্ট করার পর তা থেকে উপকৃত হওয়া জায়েয নয়। যেমন হালচাষ করা, আরোহণ করা, পশম কাটা ইত্যাদি।সুতরাং কুরবানীর পশু দ্বারা এসব করা যাবে না। যদি করে তবে পশমের মূল্য, হালচাষের মূল্য ইত্যাদি সদকা করে দিবে।-মুসনাদে আহমদ ২/১৪৬, নায়লুল আওতার ৩/১৭২, ইলাউস সুনান ১৭/২৭৭, কাযীখান ৩/৩৫৪, আলমগীরী ৫/৩০০

কুরবানীর পশুর দুধ পান করা

মাসআলা : ৩৭. কুরবানীর পশুর দুধ পান করা যাবে না। যদি জবাইয়ের সময় আসন্ন হয় আর দুধ দোহন না করলে পশুর

কষ্ট হবে না বলে মনে হয় তাহলে দোহন করবে না। প্রয়োজনে ওলানে ঠান্ডা পানি ছিটিয়ে দেবে। এতে দুধের চাপ কমে যাবে। যদি দুধ দোহন করে ফেলে তাহলে তা সদকা করে দিতে হবে। নিজে পান করে থাকলে মূল্য সদকা করে দিবে। -মুসনাদে আহমদ ২/১৪৬, ইলাউস সুনান ১৭/২৭৭,

রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৯, কাযীখান ৩/৩৫৪, আলমগীরী ৫/৩০১

কোনো শরীকের মৃত্যু ঘটলে

মাসআলা : ৩৮. কয়েকজন মিলে কুরবানী করার ক্ষেত্রে জবাইয়ের আগে কোনো শরীকের মৃত্যু হলে তার ওয়ারিসরা যদি মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী করার অনুমতি দেয় তবে তা জায়েয হবে। নতুবা ওই শরীকের টাকা ফেরত দিতে হবে। অবশ্য তার

স্থলে অন্যকে শরীক করা যাবে। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৯, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২৬, কাযীখান ৩/৩৫১

কুরবানীর পশুর বাচ্চা হলে

মাসআলা : ৩৯. কুরবানীর পশু বাচ্চা দিলে ওই বাচ্চা জবাই না করে জীবিত সদকা করে দেওয়া উত্তম। যদি সদকা না করে তবে কুরবানীর পশুর সাথে বাচ্চাকেও জবাই করবে এবং গোশত সদকা করে দিবে।-কাযীখান ৩/৩৪৯, আলমগীরী ৫/৩০১, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৩

মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী

মাসআলা : ৪০. মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী করা জায়েয। মৃত ব্যক্তি যদি ওসিয়ত না করে থাকে তবে সেটি নফল কুরবানী হিসেবে গণ্য হবে। কুরবানীর স্বাভাবিক গোশতের মতো তা নিজেরাও খেতে পারবে এবং আত্মীয়-স্বজনকেও দিতে পারবে। আর যদি মৃত ব্যক্তি কুরবানীর ওসিয়ত করে গিয়ে থাকে তবে এর গোশত নিজেরা খেতে পারবে না। গরীব-মিসকীনদের মাঝে সদকা করে দিতে হবে। -মুসনাদে আহমদ ১/১০৭, হাদীস ৮৪৫, ইলাউস সুনান ১৭/২৬৮, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬, কাযীখান ৩/৩৫২

কুরবানীর গোশত জমিয়ে রাখা

মাসআলা : ৪১. কুরবানীর গোশত তিনদিনেরও অধিক জমিয়ে রেখে খাওয়া জায়েয।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪, সহীহ মুসলিম ২/১৫৯, মুয়াত্তা মালেক ১/৩১৮, ইলাউস সুনান ১৭/২৭০

কুরবানীর গোশত বণ্টন

মাসআলা : ৪২. শরীকে কুরবানী করলে ওজন করে গোশত বণ্টন করতে হবে। অনুমান করে ভাগ করা জায়েয নয়।-আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৭, কাযীখান ৩/৩৫১

মাসআলা : ৪৩. কুরবানীর গোশতের এক তৃতীয়াংশ গরীব-মিসকীনকে এবং এক তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীকে দেওয়া উত্তম। অবশ্য পুরো গোশত যদি নিজে রেখে দেয় তাতেও কোনো অসুবিধা নেই। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪, আলমগীরী ৫/৩০০

গোশত, চর্বি বিক্রি করা

মাসআলা : ৪৪. কুরবানীর গোশত, চর্বি ইত্যাদি বিক্রি করা জায়েয নয়। বিক্রি করলে পূর্ণ মূল্য সদকা করে দিতে হবে। -ইলাউস সুনান ১৭/২৫৯, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৫, কাযীখান ৩/৩৫৪, আলমগীরী ৫/৩০১

জবাইকারীকে চামড়া, গোশত দেওয়া

মাসআলা : ৪৫. জবাইকারী, কসাই বা কাজে সহযোগিতাকারীকে চামড়া, গোশত বা কুরবানীর পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া জায়েয হবে না। অবশ্য পূর্ণ পারিশ্রমিক দেওয়ার পর পূর্বচুক্তি ছাড়া হাদিয়া হিসাবে গোশত বা তরকারী দেওয়া যাবে।

জবাইয়ের অস্ত্র

মাসআলা : ৪৬. ধারালো অস্ত্র দ্বারা জবাই করা উত্তম।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৩

পশু নিস্তেজ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা

মাসআলা : ৪৭. জবাইয়ের পর পশু

নিস্তেজ হওয়ার আগে চামড়া খসানো বা অন্য কোনো অঙ্গ কাটা মাকরূহ। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৩

অন্য পশুর সামনে জবাই করা

মাসআলা : ৪৮. এক পশুকে অন্য পশুর সামনে জবাই করবে না। জবাইয়ের সময় প্রাণীকে অধিক কষ্ট না দেওয়া।

কুরবানীর গোশত বিধর্মীকে দেওয়া

মাসআলা : ৪৯. কুরবানীর গোশত হিন্দু ও অন্য ধর্মাবলম্বীকে দেওয়া জায়েয।-ইলাউস সুনান ৭/২৮৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০০

অন্য কারো ওয়াজিব কুরবানী আদায় করতে চাইলে

মাসআলা : ৫০. অন্যের ওয়াজিব কুরবানী দিতে চাইলে ওই ব্যক্তির অনুমতি নিতে হবে। নতুবা ওই ব্যক্তির কুরবানী আদায় হবে না। অবশ্য স্বামী বা পিতা যদি স্ত্রী বা সন্তানের বিনা অনুমতিতে তার পক্ষ থেকে কুরবানী করে তাহলে তাদের কুরবানী আদায় হয়ে যাবে। তবে অনুমতি নিয়ে আদায় করা ভালো।

কুরবানীর পশু চুরি হয়ে গেলে বা মরে গেলে

মাসআলা : ৫১. কুরবানীর পশু যদি চুরি হয়ে যায় বা মরে যায় আর কুরবানীদাতার উপর পূর্ব থেকে কুরবানী ওয়াজিব থাকে তাহলে আরেকটি পশু কুরবানী করতে হবে। গরীব হলে (যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়) তার জন্য আরেকটি পশু কুরবানী করা ওয়াজিব নয়।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬, খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৯

পাগল পশুর কুরবানী

মাসআলা : ৫২. পাগল পশু কুরবানী করা জায়েয। তবে যদি এমন পাগল হয় যে, ঘাস পানি দিলে খায় না এবং মাঠেও চরে না তাহলে সেটার কুরবানী জায়েয হবে না। -আননিহায়া ফী গরীবিল হাদীস ১/২৩০, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬, ইলাউস সুনান ১৭/২৫২

নিজের কুরবানীর গোশত খাওয়া

মাসআলা : ৫৩. কুরবানীদাতার জন্য নিজ কুরবানীর গোশত খাওয়া মুস্তাহাব। -সূরা হজ্ব ২৮, সহীহ মুসলিম ২২/১৫৯, মুসনাদে আহমদ, হাদীস ৯০৭৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪

ঋণ করে কুরবানী করা

মাসআলা : ৫৪. কুরবানী ওয়াজিব এমন ব্যক্তিও ঋণের টাকা দিয়ে কুরবানী করলে ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। তবে সুদের উপর ঋণ নিয়ে কুরবানী করা যাবে না।

হাজীদের উপর ঈদুল আযহার কুরবানী

মাসআলা : ৫৫. যেসকল হাজী কুরবানীর দিনগুলোতে মুসাফির থাকবে তাদের উপর ঈদুল আযহার কুরবানী ওয়াজিব নয়। কিন্তু যে হাজী কুরবানীর কোনো দিন মুকীম থাকবে সামর্থ্যবান হলে তার উপর ঈদুল আযহার কুরবানী করা জরুরি হবে। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৩, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৫, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৫, ইমদাদুল ফাতাওয়া ২/১৬৬

নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে কুরবানী করা

মাসআলা : ৫৬. সামর্থ্যবান ব্যক্তির রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে কুরবানী করা উত্তম। এটি বড় সৌভাগ্যের বিষয়ও বটে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রা.কে তার পক্ষ থেকে কুরবানী করার ওসিয়্যত করেছিলেন। তাই তিনি প্রতি বছর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকেও কুরবানী দিতেন। -সুনানে আবু দাউদ ২/২৯, জামে তিরমিযী ১/২৭৫, ইলাউস সুনান ১৭/২৬৮, মিশকাত ৩/৩০৯

কোন দিন কুরবানী করা উত্তম

মাসআলা : ৫৭. ১০, ১১ ও ১২ এ তিন দিনের মধ্যে প্রথম দিন কুরবানী করা অধিক উত্তম। এরপর দ্বিতীয় দিন, এরপর তৃতীয় দিন। -রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৬

খাসীকৃত ছাগল দ্বারা কুরবানী

মাসআলা : ৫৮. খাসিকৃত ছাগল দ্বারা কুরবানী করা উত্তম। -ফাতহুল কাদীর ৮/৪৯৮, মাজমাউল আনহুর ৪/২২৪, ইলাউস সুনান ১৭/৪৫৩

জীবিত ব্যক্তির নামে কুরবানী

মাসআলা : ৫৯. যেমনিভাবে মৃতের পক্ষ থেকে ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে কুরবানী করা জায়েয তদ্রূপ জীবিত ব্যক্তির পক্ষ থেকে তার ইসালে সওয়াবের জন্য নফল কুরবানী করা জায়েয। এ কুরবানীর গোশত দাতা ও তার পরিবারও খেতে পারবে।

বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তির কুরবানী অন্যত্রে করা

মাসআলা : ৬০. বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তির জন্য নিজ দেশে বা অন্য কোথাও কুরবানী করা জায়েয।

কুরবানীদাতা ভিন্ন স্থানে থাকলে কখন জবাই করবে

মাসআলা : ৬১. কুরবানীদাতা এক স্থানে আর কুরবানীর পশু ভিন্ন স্থানে থাকলে কুরবানীদাতার ঈদের নামায পড়া বা না পড়া ধর্তব্য নয়; বরং পশু যে এলাকায় আছে ওই এলাকায় ঈদের জামাত হয়ে গেলে পশু জবাই করা যাবে। -আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৮

কুরবানীর চামড়া বিক্রির অর্থ সাদকা করা

মাসআলা : ৬২. কুরবানীর চামড়া কুরবানীদাতা নিজেও ব্যবহার করতে পারবে। তবে কেউ যদি নিজে ব্যবহার না করে বিক্রি করে তবে বিক্রিলব্ধ মূল্য পুরোটা সদকা করা জরুরি। -আদ্দুররুল মুখতার, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০১

কুরবানীর চামড়া বিক্রির নিয়ত

মাসআলা : ৬৩. কুরবানীর পশুর চামড়া বিক্রি করলে মূল্য সদকা করে দেওয়ার নিয়তে বিক্রি করবে। সদকার নিয়ত না করে নিজের খরচের নিয়ত করা নাজায়েয ও গুনাহ। নিয়ত যা-ই হোক বিক্রিলব্ধ অর্থ পুরোটাই সদকা করে দেওয়া জরুরি। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০১, কাযীখান ৩/৩৫৪

কুরবানীর শেষ সময়ে মুকীম হলে

মাসআলা : ৬৪. কুরবানীর সময়ের প্রথম দিকে মুসাফির থাকার পরে ৩য় দিন কুরবানীর সময় শেষ হওয়ার পূর্বে মুকীম হয়ে গেলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে। পক্ষান্তরে প্রথম দিনে মুকীম ছিল অতপর তৃতীয় দিনে মুসাফির হয়ে গেছে তাহলেও তার উপর কুরবানী ওয়াজিব থাকবে না। অর্থাৎ সে কুরবানী না দিলে গুনাহগার হবে না। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৪৬, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৯

কুরবানীর পশুতে ভিন্ন ইবাদতের নিয়তে শরীক হওয়া

মাসআলা : ৬৫. এক কুরবানীর পশুতে আকীকা, হজ্বের কুরবানীর নিয়ত করা যাবে। এতে প্রত্যেকের নিয়তকৃত ইবাদত আদায় হয়ে যাবে।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৯, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬, আলমাবসূত সারাখছী ৪/১৪৪, আলইনায়া ৮/৪৩৫-৩৪৬, আলমুগনী ৫/৪৫৯

কুরবানীর গোশত দিয়ে খানা শুরু করা

মাসআলা : ৬৬. ঈদুল আযহার দিন সর্বপ্রথম নিজ কুরবানীর গোশত দিয়ে খানা শুরু করা সুন্নত। অর্থাৎ সকাল থেকে কিছু না খেয়ে প্রথমে কুরবানীর গোশত খাওয়া সুন্নত। এই সুন্নত শুধু ১০ যিলহজ্বের জন্য। ১১ বা ১২ তারিখের গোশত দিয়ে খানা শুরু করা সুন্নত নয়। -জামে তিরমিযী ১/১২০, শরহুল মুনয়া ৫৬৬, আদ্দুররুল মুখতার ২/১৭৬, আলবাহরুর রায়েক ২/১৬৩

কুরবানীর পশুর হাড় বিক্রি

মাসআলা : ৬৭. কুরবানীর মৌসুমে অনেক মহাজন কুরবানীর হাড় ক্রয় করে থাকে। টোকাইরা বাড়ি বাড়ি থেকে হাড় সংগ্রহ করে তাদের কাছে বিক্রি করে। এদের ক্রয়-বিক্রয় জায়েয। এতে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু কোনো কুরবানীদাতার জন্য নিজ কুরবানীর কোনো কিছু এমনকি হাড়ও বিক্রি করা জায়েয হবে না। করলে মূল্য সদকা করে দিতে হবে। আর জেনে শুনে মহাজনদের জন্য এদের কাছ থেকে ক্রয় করাও বৈধ হবে না। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৫, কাযীখান ৩/৩৫৪, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০১

রাতে কুরবানী করা

মাসআলা : ৬৮. ১০ ও ১১ তারিখ দিবাগত রাতে কুরবানী করা জায়েয। তবে রাতে আলোস্বল্পতার দরুণ জবাইয়ে ত্রুটি হতে পারে বিধায় রাতে জবাই করা অনুত্তম। অবশ্য পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকলে রাতে জবাই করতে কোনো অসুবিধা নেই। -ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৪৫, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২০, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৬, আহসানুল ফাতাওয়া ৭/৫১০

কাজের লোককে কুরবানীর গোশত খাওয়ানো

মাসআলা : ৬৯. কুরবানীর পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসাবে দেওয়া জায়েয নয়। গোশতও পারিশ্রমিক হিসেবে কাজের লোককে দেওয়া যাবে না। অবশ্য এ সময় ঘরের অন্যান্য সদস্যদের মতো কাজের লোকদেরকেও গোশত খাওয়ানো যাবে।-আহকামুল কুরআন জাস্সাস ৩/২৩৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪, আলবাহরুর রায়েক ৮/৩২৬, ইমদাদুল মুফতীন

জবাইকারীকে পারিশ্রমিক দেওয়া

মাসআলা : ৭০. কুরবানী পশু জবাই করে পারিশ্রমিক দেওয়া-নেওয়া জায়েয। তবে কুরবানীর পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসাবে দেওয়া যাবে না। -কিফায়াতুল মুফতী ৮/২৬৫

মোরগ কুরবানী করা

মাসআলা : ৭১. কোনো কোনো এলাকায় দরিদ্রদের মাঝে মোরগ কুরবানী করার প্রচলন আছে। এটি না জায়েয। কুরবানীর দিনে মোরগ জবাই করা নিষেধ নয়, তবে কুরবানীর নিয়তে করা যাবে না। -খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৪, ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২৯০, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২০০ ষ  



মেয়ে শিশু


আপনার মেয়ে শিশুকে রক্ষা করুন!

কিছু পদক্ষেপের তালিকা দেওয়া হলো আপনার শিশুকে শিক্ষা দিতে পারেনঃ

১. আপনার শিশুকে কারো কোলে বসতে দিবেন না।

২. সন্তানের বয়স দু’বছরের বেশী হলেই তার সামনে আর আপনি কাপড়চোপড় পাল্টাবেন না।

৩. প্রাপ্ত বয়স্ক কেউ আপনার শিশুকে উদ্দেশ্য করে বলছে: ‘আমার বৌ’, ‘আমার স্বামী’- এটা অ্যালাউ করবেন না।

৪. আপনার শিশু যখন বলছে সে খেলতে যাচ্ছে, কোন্ ধরণের খেলা সে খেলছে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন, উঠতি বয়সি বাচ্চাদের মধ্যে অ্যাবিউজিং প্রবণতা পাওয়া যাচ্ছে।

৫. স্বাচ্ছন্দবোধ করছে না এমন কারো সাথে কোথাও যেতে আপনার শিশুকে জোরাজুরি করবেন না। পাশাপাশি লক্ষ্য রাখুন, আপনার শিশু বিশেষ কোন প্রাপ্ত বয়স্কের ভক্ত হয়ে উঠেছে কিনা।

৬. দারুণ প্রাণচ্ছল কোন শিশু হঠাৎ নির্জিব হয়ে গেলে, তাকে প্রশ্ন করুণ। তার মনের অবস্থাটা পড়তে চেষ্টা করুণ।

৭. বয়:সন্ধি পেরোচ্ছে এমন বাচ্চাকে যৌনমূল্যবোধ সম্পর্কে শিক্ষা দিন। আপনি যদি এ কাজ না করেন, তবে সমাজ তাকে ভুল টা শিখিয়ে দেবে।

৮. কোন ছবি, কার্টুন ইত্যাদি বাচ্চাদের জন্য আনলে আগে তা নিজে দেখুন। কোন বই সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে তবেই তা কোমলমতি সন্তানের হাতে দিন।

৯. আপনি নিশ্চিত হন যে আপনি প্যারেন্টাল কন্ট্রোল অপশন অ্যাক্টিভেট করে রেখেছেন কেবল নেটওয়ার্কে, বিশেষ করে সেই সমস্ত নেটওয়ার্কে যেখানে আপনার শিশু প্রায়শই ভিজিট করে।

১০. তিন বছর বয়স হয়েছে এমন সন্তানকে তাদের ব্যক্তিগত গোপন স্থানসমূহ কিভাবে পরিস্কারপরিচ্ছন্ন রাখতে হয় তা শেখান। সতর্ক করে দিন যেন সেসব এলাকা কেউ স্পর্শ করতে না পারে- নিষিদ্ধদের মধ্যে আপনিও আছেন (মনে রাখবেন চ্যারিটি বিগিনস অ্যাট হোম এ্যান্ড উইথ ইউ)।

১১. কালো তালিকাভুক্ত করুণ সেই সব বই, গান, মুভি, পরিবার বা ব্যক্তিকে- আপনি মনে করেন যে বা যা আপনার শিশুর মনের সৌন্দর্য নষ্ট করতে পারে।

১২. আপনার শিশুকে ভিড়ের বাইরে গিয়ে দাড়ানোর মূল্যবোধ শেখান।

১৩. আপনার শিশু যদি কারো সম্পর্কে অভিযোগ করে তবে দয়া করে বিষয়টি নিয়ে মুখ বুজে থাকবেন না।

মনে রাখবেন আপনি হয় বাবা মা হবেন দু’দিন বাদে, যে কোন ব্যথা কিন্তু সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হয়...

আপনার সচেতনতা আপনার পরিবারের নিরাপত্তা।


Wednesday, August 24, 2016

কোরআন

মাশাআল্লাহ__ আল্লাহর কালাম কোরআন কে বুকের সাথে লাগিয়ে রাখল
আল্লাহর এই ছোট ছোট বান্দারা 



Tuesday, August 23, 2016

নিয়ামত

সুস্থতা আল্লাহ্‌ তায়ালার এক বড় নিয়ামত 



Sunday, August 21, 2016

পর্দা


স্বামীঃ তুমি বোরকা ছাড়া
আগামী
শুক্রবার তোমার চাচাতো
বোনের
বিবাহের অনুষ্ঠানে যেতে
চাচ্ছো ?
.
স্ত্রীঃ হ্যাঁ, কেন নয়? বিশেষ
একটা
দিন!
.
স্বামীঃ তুমি বোরকা ছাড়া ঘর
থেকে বের হতে পারো না।
.
স্ত্রীঃ দেখো!! আমি বাহিরে
বোরকা পরিধান করে বের হয়ে
থাকি
এ জন্য সবর্দা বোরকা পড়ে বের
হতে
হবে? আর তুমিতো আমার সাথেই
যাচ্ছো?? তুমি কি আমাকে
সন্দেহ
করো??
.
স্বামীঃ সন্দেহ করবো কেন??
আচ্ছা
আমি বাজারে যাচ্ছি।
.
স্ত্রীঃ কেন?
.
স্বামীঃ একটা জিনিস আনতে।
(স্বামী বাজারে গিয়ে একটা
বল
কিনে আনলেন যে বলটা দেখলে
মনে
হবেই এটা স্বর্ণের তৈরি বল।
অতঃপর
স্বামী বলটি নিয়ে বাসায়
গেলেন।)
.
স্ত্রীঃ এটা কি স্বর্ণের ?
.
স্বামীঃ হ্যাঁ এটা অনেক
মূল্যবান। এটা
ড্রইং রুমে ঝুলিয়ে রাখতে
পারো।
.
স্ত্রীঃ তুমি কি বোকা? কেউ
যদি এটা
দেখে ফেলে এবং চুরি করে?
.
স্বামীঃ দুটো দিন ঝুলিয়ে রাখ,
এরপরে না হয় আলমারিতে
রেখে দিও।
.
স্ত্রীঃ তোমার মাথায় কি
গোবর ?
যখন কেউ যেনে যাবে আমাদের
কাছে
স্বর্ণের বল আছে তখন সে নিশ্চয়
অন্যকে
বলে দিবে, এরপর তারা সকলে
মিলে
ডাকাতি করতে আসতে পারে।
.
স্বামীঃ (মুচকি হেসে বলল) তুমি
তো
ভীষণ চালাক,, তুমি স্বর্ণের বল
আলমারিতে সুরক্ষিত করতে চাও
অথচ
বোরকার ভিতর নিজেকে
সুরক্ষিত করতে
চাওনা। তুমি কি জানো তুমি
আমার
কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে দামী ?
সুতরাং তোমাকেও আমি
সুরক্ষিত করে
রাখতে চাই। একটা দিন যদি তুমি
বোরাকা ছাড়া বের হও প্রথম
দিন
তোমার উপর দুষ্টু লোকদের বদ
নজরে
পড়বে, তারা তোমার সৌন্দর্যময়
দেহের প্রতি লোভী হয়ে উঠবে,
তার
একদিন সুযোগ বুঝে তোমার
শ্রেষ্ট
সম্পদের উপর আক্রোমন করে বসবে।
তখন কি হবে বুঝতে পারছো?
.
স্ত্রীঃ সত্যিই কি আমি তোমার
কাছে
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সম্পদ??
.
স্বামীঃ অবশ্যই.. কেন
নয়? ,,হাদীসে
আছে উত্তম স্ত্রী পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ
সম্পদ।
.
স্ত্রীঃ আজ থেকে আল্লাহর
পর্দার বিধান
সঠিক রুপে পালন করবই। ইনশাআল্লাহ।
আমি বুঝতে পারছি।
.
স্বামীঃ আলহামদুলিল্লাহ।
আল্লাহ কবুল
করুন।


Saturday, August 20, 2016

মজা


কোটিপতির হারাম টাকার খাবার থেকে এই গরীবদের হালাল টাকার খাবার - আলাদাই মজা -- একমত হলে


Friday, August 19, 2016

কাতার

বোখারী শরীফ, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা  ৩১৮
একামত আরম্ভেই কাতার সোজা করিবে, প্রয়োজন হইলে পরেও উহার জন্য তৎপর হইবে
৪২২। হাদিছঃ-
নো’মান ইবনে বশীর (রাঃ) বর্ণনা করিয়াছেন, নবী (সাঃ) ফরমাইয়াছেন, খবরদার হুশিয়ার! তোমরা নামাযের মধ্যে সোজাভাবে সারিবদ্ধ হইয়া দাঁড়াইবে। অন্যথায় আল্লাহ্‌ তায়ালা তোমাদের মধ্যে পরস্পর বিরোধ সৃষ্টি করিয়া দিবেন।
ব্যাখ্যাঃ- নামাযের মধ্যে কাতার বাঁকা করিয়া দাঁড়ান একটি সাধারণ বিষয় মনে করা হইয়া থাকে, কিন্তু উহার কুফল বড়ই মারাত্মক। ইহার দরুন আল্লাহ্‌ তাহালা পরস্পরের বিরোধ, বিভেদ ও বিষাদ সৃষ্টি করিয়া দেন। বর্তমান মোসলমানদের অবস্থা দেখিলেই রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর উক্তির সত্যতা প্রমাণিত হইয়া যাইবে। পরস্পর বিভেদ ও বিবাদ বড় শাস্তি যাহা জ্ঞানী মাত্রই উপলব্ধি করিতে পারেন। আল্লাহ্‌ তায়ালা কোরআন শরিফের বহু স্থানে ইহুদী ও নাছারাদের উপর স্বীয় গজব ও আজাবের উল্লেখপূর্বক বলিয়াছেন-“আমি তোমাদের মধ্যে পরস্পর হিংসা, বিদ্বেষ, বিভেদ ও বিবাদের সৃষ্টি করিয়া দিয়াছি”।
মূল হাদিছের অর্থ এরূপও বলা হয়, “তোমরা নামাযের মধ্যে সোজাভাবে সারিবদ্ধ হইয়া দাঁড়াইবেনতুবা আল্লাহ্‌ তায়ালা তোমাদের আকৃতি বিকৃত করিয়া দিবেন

কাতার সোজা করিতে ইমাম তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখিবে
৪২৩। হাদিছঃ-
আনাছ (রাঃ) বর্ণনা করিয়াছেন – একদা নামাযের একামত শেষ হইয়া গেলে পর, রসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাদের প্রতি লক্ষ্য করিয়া বলিলেন, সোজা সারিবদ্ধভাবে পরস্পর মিলিত হইয়া দাড়াও। স্মরণ রাখিও, আমি পেছনের দিকেও তোমাদিগকে দেখি। ( অনেকে ইহার রূপক অর্থ বলিয়াছেন। অর্থাৎ জ্ঞাত হইয়া থাকি। আর অনেকে বলিয়াছেন, প্রকৃত প্রস্তাবেই হযরত (সাঃ) ইচ্ছা করিলে স্বীয় চোখে পেছন দিকেও দেখিতে পাইতেন, ইহা তাঁহার খোদা প্রদত্ত বৈশিষ্ট্য ছিল। যেমন সাধারণতঃ কানের দ্বারা পেছনের শব্দও শুনা যায়। )

পৃষ্ঠা  ৩১৯
কাতার সোজা করা নামাযের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ
৪২৪। হাদিছঃ-
আনাছ (রাঃ) হইতে বর্ণিত আছে – রসুলুল্লাহ (সাঃ) ফরমাইয়াছেন, কাতার সোজা কর। কাতার সোজা করা নামাযের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ।
৪২৫। হাদিছঃ-
আবু হোরায়রা (রাঃ) হইতে বর্ণিত আছে, রসুলুল্লাহ (সাঃ) বলিয়াছেন, নামাযের মধ্যে কাতার সোজা করিয়া দাড়াও। কারণ, উহার উপর নামাযের সৌন্দর্য্য নির্ভর করে।
কাতার সোজা এবং পূর্ণ না করা গোনাহ
৪২৬। হাদিছঃ-
( রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর বহু দিন পর ) সাহাবী আনাছ (রাঃ) বছরা হইতে মদিনায় আসিলেন। কোন এক ব্যক্তি তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিল, আপনি রসুলুল্লাহ (সাঃ) এর যামানার অনুপাতে আমাদের মধ্যে কি কি দোষ ত্রুটি দেখিতে পান? তিনি বলিলেন অন্য কোন দোষ বিশেষরূপে ব্যক্ত করিতে চাই না, কিন্তু এই একটি দোষ যে, তোমরা নামাযের মধ্যে কাতার ঠিক ও দুরস্ত কর না।

পরস্পর লাগালাগি হইয়া সারি বাঁধিবে ফাঁক রাখিবে না
ছাহাবী নোমান ইবনে বশীর (রাঃ) বলিয়াছেন, আমাদের ( তথা ছাহাবীদের) প্রত্যেককেই দেখিয়াছি, নিজ সঙ্গীর কাঁধে কাঁধ মিলাইয়া এবং পরস্পর পায়ের গিঁঠ মিলাইয়া নামাযে দাঁড়াইতেন।
আনাছ (রাঃ) বলিয়াছেন, ( জামাতে নামায পড়িতে ) আমাদের প্রত্যেকেই নিজ সঙ্গীর কাঁধে কাঁধ ও পায়ের পা মিলাইয়া দাঁড়াইতেন।
পাঠকবৃন্দ! একটু লক্ষ্য করিলেই বুঝিতে পারিবেন যে, পরস্পর পা মিলাইয়া দাঁড়ানোর উদ্দেশ্য এই নয় যে, বস্তুতঃ একে অন্যের পায়ের সহিত পা মিলাইয়া দাঁড়াইতে হইবে। সে জন্যই এখানে কাঁধের এবং পায়ের গিঁঠেরও উল্লেখ আছে ; অথচ সারি বাঁধিতে পরস্পর কাঁধে কাঁধ মিলানো সহজ ব্যাপার নহে এবং পায়ের গিঁঠে গিঁঠ মিলানো ত সম্ভবই নহে। এখানে এই সমস্ত বাক্যের দ্বারা বস্তুতঃ দুইটি বিষয়ে তৎপর হওয়ার আদেশ করাই আসল উদ্দেশ্য। প্রথম- এই যে, খুব সোজাভাবে সারি বাঁধিবে ; যেরূপ কাঁধে কাঁধ ও পায়ে পা মিলাইয়া দাঁড়াইলে স্বভাবতঃই উহা হইয়া থাকে এবং কাতার সোজা করার ইহা অন্যতম উপায়। দ্বিতিয়- এই যে, যথাসাধ্য লাগালাগি দাঁড়াইবে ; মধ্যভাগে ফাঁক ছাড়িবে না।
অনেক হাদীছে এরূপ উল্লেখ আছে যে, মধ্যভাগে একটু ফাঁক থাকিলে শয়তান সেখানে আসিয়া প্রবেশ করে ( নামাজিদের অন্তরে ওছওয়াছার সৃষ্টি করে )
আনাছ (রাঃ) এর উক্তি  কাঁধে কাঁধ এবং পায়ের পা মিলানর একমাত্র উদ্দেশ্য যে ইহাই তাহার প্রকৃষ্ট প্রমাণও বিদ্যমান রহিয়াছে যে,  আনাছ (রাঃ) তাঁহার উক্তির ভিত্তি নিম্নে বর্ণীত হাদিছটির উপর স্থাপন করিয়াছে।
৪২৭। হাদিছঃ-
আনাছ (রাঃ) হইতে বর্ণীত আছে, নবী (সাঃ) বলিয়াছেন, তোমরা কাতার খুব সোজা করিয়া দাঁড়াইবে ; আমি আমার পেছন দিকেও দেখিয়া থাকি ( অনেকে ইহার রূপক অর্থ বলিয়াছেন। অর্থাৎ জ্ঞাত হইয়া থাকি। আর অনেকে বলিয়াছেন, প্রকৃত প্রস্তাবেই হযরত (সাঃ) ইচ্ছা করিলে স্বীয় চোখে পেছন দিকেও দেখিতে পাইতেন, ইহা তাঁহার খোদা প্রদত্ত বৈশিষ্ট্য ছিল। যেমন সাধারণতঃ কানের দ্বারা পেছনের শব্দও শুনা যায়। ) আনাছ (রাঃ) বলেন- সেমতে আমাদের প্রতেকেই কাঁধে কাঁধ এবং পায়ের পা মিলাইয়া থাকিত। 




Thursday, August 18, 2016

হকদার



এক ব্যক্তি স্ত্রীর বকায় অতিষ্ট হয়ে খলিফা উমর রাঃ এর কাছে আসেন নালিশ করার জন্য। কিন্তু এ কি! খলিফার ঘরের দরজায় আসতেই তিনি শুনতে পান খলিফার স্ত্রী রাগতস্বরে খলিফাকে বকছে। শুনে ঐ ব্যক্তি তো হতবাক। তিনি খলিফাকে কিছু না বলে ফিরে চললেন। ইতিমধ্যে খলিফা দরজা খুলে বাইরে এলেন। ঐ ব্যাক্তিকে চলে যেতে দেখে ডাক দিলেন। জানতে চাইলেন,কেনো এসেছিলে আর কেনোই বা কিছু না বলেই চলে যাচ্ছ। ঐ ব্যক্তি বললেন,আমি এসেছিলাম স্ত্রীর ব্যাপারে নালিশ করতে কিন্তু এসে শুনলাম আপনার স্ত্রী আপনাকে আরো বেশী কথা শোনাচ্ছে। তাই ফিরে যাচ্ছিলাম। আচ্ছা আমরা পুরুষরা আপনাকে বাঘের মত ভয় করি সেখানে একজন মহিলা আপনাকে কী করে কথা শোনায়?

হযরত উমর রাঃ বলেন,ভাই ঐ মহিলার অনেক হক আছে যা আমি আদায় করতে পারিনি।তাছাড়া এই মহিলা আমার রান্না করে,ঘরবাড়ি,কাপড় চোপর পরিস্কার করে,সন্তানদের প্রতিপালন করে এমনি আরও অনেক অনেক কাজ যা সে করতে বাধ্য নয়। এসব কাজ করে সে আমায় ইহসান করে,অতএব সে একজন পাওনাদার আর পাওনাদারের দু'কথা বেশী বলার অধিকার আছে। ঐ ব্যক্তি তখন বললো আমার স্ত্রীও তো এসব কাজ করে এবং আমিও তো তার অনেক হকই আদায় করতে পারিনি। খলিফা হাসি মুখে বললেন,তাহলে ভাই একটু সহ্য কর।

(কিতাবুল কাবায়ের, পৃঃ ২২১। ঈমাম সামসুদ্দিন আয যাহাবী)

কতটা সম্মান দিয়েছে ইসলাম আমাদের নারীদের। নারীদের যেমন সহমর্মী হতে হবে তেমনি পুরুষরাও যদি তাদের প্রাপ্য সম্মান দেয় ও সহযোগী মনোভাব পোষণ করে তাহলে বিয়ের পরে সম্পর্কে এত জটিলতা থাকে না,পরিবার ও সমাজে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় থাকে, যে শান্তির খোঁজে প্রতিনিয়ত আমাদের ছুটে চলা,এত আয়োজন। আল্লাহু মুস্তায়ান।

আবূ হুরায়রা(রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি আয়িশা(রা) কে জিজ্ঞেস করলাম, রসুলুল্লাহ( ﷺ ) যখন বাসায় থাকতেন তখন কী করতেন? তিনি বললেনঃ “তিনি গৃহস্থলীর কাজকর্মে সাহায্য করতেন এবং যখন নামাযের সময় হত তখন নামাযের জন্য বেরিয়ে যেতেন।”
[সহীহ বুখারীঃ ৬৭৬]

সুবহানাল্লাহ! এটাই হচ্ছে আমাদের রসুলুল্লাহ( ﷺ ) এর আদর্শ।


Monday, August 15, 2016

Sunday, August 14, 2016

মসজিদ


আফ্রিকাতে তৈরি করা একটা মসজিদ পুরোটাই
মাটি দ্বারা তৈরি ভালো লাগলে লাইক দিতে পারেন। 


Saturday, August 13, 2016

স্বামী স্ত্রী


স্বামিঃ বাজারে গিয়ে স্রীর কাছে ফোন দিল,
নং ওয়েটিং থাকাই দরজার ওপাশ থেকে
স্রী কে ছালাম দিয়ে জানতে চাইলো তুমি
কেমন আছো।

স্রী বলল ভাল, স্বামি বলল বাজারে গিয়ে
তোমাকে ফোন দিছিলাম দেখলাম নং বিজি,
কার সাথে কথা বলছিলে, স্রী বলল আমার
এক বান্ধবির সাথে।

স্বামি, বলল দেখ আমার আল্লাহ সোবহানা
তায়ালা মিথ্যে বলতে বারণ করেছেন।
বান্দা যখন মিথ্যা কথা বলে সেই মিথ্যে
কথার দৃগন্ধে রহমতের ফেরাস্তা এক মাইল
দুরে চলে যায়।

আর আল্লাহর রাসুল বলেছেন আমার
উম্মত কখনো মিথ্যেবাদী হতে পারেনা,
স্রী কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল আমার এক
বন্ধুর সাথে কথা বলছিলাম।

স্বামি বলল, দেখ আমার আল্লাহ তায়ালা
স্বামি স্রীর সমপর্ককে হালাল করেছেন,
আর তুমি যে ছেলেদের সাথে কথা বলো তা
হচ্ছে সম্পৃর্ন রুপে হারাম।

আর তুমি কি জানো জান্নাত কোথাই,
স্রী বলল না, স্বামি বলল হুজুর পাক (সঃ)
বলেছেন জান্নাত তোমার দু উরু ও দু চোয়ালের মাঝখানে, যে ব্যক্তি এই দুই জিনিসের হেফাজত
করতে পারবে সে জান্নাতি হবে।

স্বামি নামাজের জন্য দাড়ালেন, নামাজে বসে
স্রীর জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করছেন,

ইয়া আল্লাহ তুমি যদি হযরত ওয়াশী(রাঃ) মতো
কঠিন হৃদয়ের মানুষ কে তোমার দ্বীনের বোঝ
দিতে পারো, তুমি যদি হযরত ওমর ফারুক (রাঃ)
মতো কঠিন মানুষ কে হেদায়েত দিতে পারো,
তাহলে তুমি আমার স্রীকেও হেদায়েত দাও।

এবং তার মাধ্যমে আমাকে নেক্কার সন্তান দান
করো, স্রী স্বামির মোনাজাত শুনে চিন্তা করলো
আমি যার সাথে ফোনে কথা বলি সে তো এই
মানুষটির জুতা বহন করারও যোগ্যতা রাখেনা।

সব কিছু জেনেও আমাকে এতোটা ভালোবাসে
সো আর নয় স্বামির পায়ে ধরে ক্ষমা চাইবো,
গভীর রাতে স্রী তার স্বামির পা ধরে ক্ষমা
চাইছে, স্বামি বলল,আমি জানি তুমি অবোঝ
তাই ভুল করেছো, আল্লাহ তোমার হেফাজত করুন।

স্বামি স্রীকে বুকে টেনে নিয়ে চোখের পানি ফেলে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করলেন।

আমাদের বর্তমান সমাজে এই রকম স্বামি খুব
কমই আছে।

মানুষ মাত্রই ভুল করবে এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু আপনার স্রীর ভুল শুধরানোর দায়িত্ব শুধুই
আপনার, আল্লাহ সবাইকে সঠিক পথে চলার
তৌফিক দান করুন--আমিন--?
গল্পটা যদি ভালো লাগে কমেন্টে শুধু আমিন লিখে উৎসাহ দিবেন
তাহলে ভালো কিছু লিখতেও ভালো লাগে আমিন।


Friday, August 12, 2016

Forex demo account

How to open a forex demo account in InstaForex

ফরেক্স ডেমো একাউন্ট খুলুন এই লিঙ্ক থেকে  



সূচী আগস্ট

বাংলাদেশ, রাজশাহী ও তার পার্শবতী এলাকার জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় সূচী 



বন্ধু


ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে বন্ধু নির্বাচন।
.
বিখ্যাত দার্শনিক ইমাম গাজ্জালি [রহ.] বলেছেন,‘সবাইকে বন্ধু নির্বাচন করা যাবে না;বরং তিনটি স্বভাব যার মাঝে বিদ্যমান,এমন লোককে বন্ধু নির্বাচন করা চাই।
তিনটি গুণ হলো।
এক.বন্ধুকে হতে হবে জ্ঞানী,বিচক্ষণ।
দুই. বন্ধুর চরিত্র হতে হবে সুন্দর ও মাধুর্যময়
তিন.বন্ধুকে হতে হবে নেককার, পূণ্যবান।’
.
বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে জগদ্বিখ্যাত কবি আল্লামা শেখ সাদি [রহ.] বিখ্যাত উক্তি
দিয়েছেন,সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস,অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।
.
একজন ভালো বন্ধু যেমন মানুষের
জীবনের গতি পাল্টে দিতে পারে,তেমনি একজন অসৎ বন্ধুর কারণে জীবন হয়ে যেতে পারে অন্ধকারাচ্ছন্ন।তাই বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইসলাম প্রদর্শিত নির্দেশ অনুসরণ করতে হবে।এতে একদিকে যেমন
নানাবিধ সমস্যা ও ভোগান্তি থেকে বেঁচে থাকা যাবে,অন্যদিকে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল
[সা.]-এর পথ অনুসরণ করার সাওয়াব পাওয়া যাবে।আল্লাহ আমাদের সবাইকে ভালো ও নেক বন্ধু নির্বাচনের তাওফিক
দান করুন।
.
আমিন।


Tuesday, August 9, 2016

ইসলামী পোষাক



ইসলামে ইসলামি পোষাক আছে, এবং জুব্বা টুপি এবং পাগরি ইসলামি পোষাক , আর সার্ট পেন্ট কোর্ট টাই যে ইসলামি পোষাক না, তার দলিল । এবং যেখানে হাদিসে বলা হয়েছে এটা করো, এর দারা বুঝা যায় এর বীপরিতে ঐটা ছারো,
দলিলগুলি সংগ্রহে রাখুন
যারা বলে নামাজে টুপি পাগরি না পরলে কি হয় ? ইসলামে কোনো পোষাক নাই , তাহলে এগুলি কি ??
নবিজির [সা.] প্রিয় পোশাক ছিলো কোনটি!
হযরত আবু কাবশা রহ.বলেন সাহাবাদের টুপি গোল এবং মাথায় লাগোয়া ছিল উঁচু ছিল না।-তিরমিজী ১/২১৬
হযরত আয়েশা (রাঃ)বলেছেন, হযরত রসুলুল্লাহ (সঃ)সাদা রং এর টুপি পরিধান করতেন, যা তাঁর মাথা মুবারকে লেগে থাকত।-কানযুল উম্মাল ৭/১২১
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযিঃ) বর্ণনা করেন, হযরত রসুলুল্লাহ (সঃ)পাগড়ির নীচে টুপি পরিধান করতেন এবং পাগড়ি ছাড়াও টুপি পরিধান করতেন। -কানযুল উম্মাল ৭/১২১।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযি:)থেকে বর্ণনা,হযরত রসুলুল্লাহ (সঃ)ইরশাদ করেছেন, হযরত মুসা আ: যেদিন আল্লাহর সাথে কথা বলেছিলেন, সেদিন তার গায়ে ছিল পশমি চাদর, পশমি জুব্বা, পশমি টুপি ও পশমি পাজামা। আর জুতা ছিল গাধার চামড়ার তৈরি। - তিরমিজী ৪/১৯৬।
উত্তম পোশাক হিসেবে নামাযে পাগড়ী ও টুপি পরা
حَدَّثَنَا هُشَيْمٌ ، قَالَ : أَخْبَرَنَا يُونُسُ بْنُ عُبَيْدٍ ، عَنِ ابْنِ سِيرِينَ ، عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ ؛ أَنَّ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَأَى رَجُلاً يُصَلِّي وَعَلَيْهِ قَلَنْسُوَةٌ ، بِطَانَتُهَا مِنْ جُلُودِ الثَّعَالِبِ ، قَالَ : فَأَلْقَاهَا عَنْ رَأْسِهِ ، وَقَالَ : مَا يُدْرِيَك لَعَلَّهُ لَيْسَ بِذَكِيٍّ ؟. (إبْنُ أبِىْ شَيْبَة : بَابٌ فِي الصَّلَاةِ فِي جُلُودِ الثَّعَالِبِ)
হাদীস নম্বর-৭২ : হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত: হযরতউমার রা. এক ব্যক্তিকে এমন একটি টুপি পরে নামায পড়তেদেখেলেন যে টুপির ভেতরের অংশ ছিলো শিয়ালের চামড়ারতৈরী। হযরত আনাস বলেন: হযরত উমার রা. সেটা তারমাথা থেকে ফেলে দিলেন এবং বললেন: তোমার জানা আছেকি হয়তো এটা জবাইকৃত না। (অর্থাৎ, হতে পারে যে,জবাইয়ের মাধ্যমে চামড়া পবিত্র করা হয়নি)। (ইবনে আবীশাইবা: ৬৫৩৬)
হাদীসটির স্তর : সহীহ। এ হাদীসের রাবীগণ সবাই-ই প্রসিদ্ধমুহাদ্দিস এবং বুখারী-মুসলিমের রাবী।
সারসংক্ষেপ : এ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সাহাবায়েকিরামের সময়ে টুপি
মাথায় দিয়ে নামায পড়ার প্রচলন ছিলো। সুতরাং এটানামাযের আদব বা মুস্তাহাব। হযরত উমার রা. তা ফেলেদিয়েছিলেন কেবল নাপাক হওয়ার আশঙ্কায়; অন্যথায় তিনিতা ফেলতেন না।
حَدَّثَنَا عَبْدُ السَّلَامِ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْوَابِصِيُّ، حَدَّثَنَا أَبِي، عَنْ شَيْبَانَ، عَنْ حُصَيْنِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ هِلَالِ بْنِ يَسَافٍ، قَالَ: قَدِمْتُ الرَّقَّةَ، فَقَالَ لِي بَعْضُ أَصْحَابِي: هَلْ لَكَ فِي رَجُلٍ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ، صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ: قُلْتُ: غَنِيمَةٌ، فَدَفَعْنَا إِلَى وَابِصَةَ، قُلْتُ لِصَاحِبِي: نَبْدَأُ فَنَنْظُرُ إِلَى دَلِّهِ، فَإِذَا عَلَيْهِ قَلَنْسُوَةٌ لَاطِئَةٌ ذَاتُ أُذُنَيْنِ، وَبُرْنُسُ خَزٍّ أَغْبَرُ، وَإِذَا هُوَ مُعْتَمِدٌ عَلَى عَصًا فِي صَلَاتِهِ، فَقُلْنَا بَعْدَ أَنْ سَلَّمْنَا، فَقَالَ: حَدَّثَتْنِي أُمُّ قَيْسٍ بِنْتُ مِحْصَنٍ،أَنَّ رَسُولَ اللَّه صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمَّا أَسَنَّ وَحَمَلَ اللَّحْمَ، اتَّخَذَ عَمُودًا فِي مُصَلَّاهُ يَعْتَمِدُ عَلَيْهِ (رَوَاه ابُوْ دَاود فِىْ بَابِ الرَّجُلِ يَعْتَمِدُ فِي الصَّلَاةِ عَلَى عَصًا)
হাদীস নম্বর-৭৩ : হযরত হিলাল বিন ইয়াসাফ রহ. বলেন:আমি (শামের একটি শহর) রক্কায় গেলাম। আমার এক বন্ধুআমাকে বললেন: রসূলুল্লাহ স.-এর এক সাহাবার সঙ্গে তুমিসাক্ষাত করবে? আমি বললাম: এটা তো বড় সুযোগ। তখনআমরা দু’জনে হযরত ওয়াবিসা রা.-এর নিকটে গেলাম।আমার বন্ধুকে বললাম: প্রথমে আমরা তাঁর চারিত্রিক সৌন্দর্যদেখব। তখন দেখলাম তিনি লাঠির ওপর ভর দেওয়া অবস্থায়নামাযে রত আছেন। তাঁর গায়ে ছিলো মেটে রঙের টুপিওয়ালারেশমী জামা এবং মাথায় লেগে থাকা দুই কান বিশিষ্ট টুপি।আমরা তাঁকে সালাম দিয়ে (লাঠির ওপর ভর করে নামাযপড়ার বিষয়ে) জিজ্ঞেস করলাম। জবাবে তিনি বললেন:আমাকে উম্মে কায়েস বিনতে মিহসান রা. হাদীস শুনিয়েছেনযে, রসূলুল্লাহ স. যখন বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছিলেন এবং শরীর ভারীহয়ে গিয়েছিলো তখন নামাযের স্থানে একটি খুঁটি গেড়েনিয়েছিলেন যাতে ভর করে তিনি নামায পড়তেন। (আবুদাউদ: ৯৪৮)
হাদীসটির স্তর : সহীহ, হুকমী মারফু’। হাকেম আবু আব্দুল্লাহনিশাপুরী তাঁর মুসতাদরাক কিতাবে হাদীসটি বর্ণনা করেএটাকে বুখারী-মুসলিমের শর্তে সহীহ বলেছেন।(মুসতাদরাকে হাকেম: ৯৭৫) ইমাম জাহাবী রহ.ও হাকেমেরউক্ত মন্তব্য সমর্থন করে এটাকে বুখারী-মুসলিমের শর্তেসহীহ বলেছেন। শায়খ আলবানী এটাকে মুসলিমের শর্তেসহীহ বলেছেন। (সহীহ আবু দাউদ: ৮৭৪)
সারসংক্ষেপ : এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, রসূলুল্লাহ স.-এর সাহাবা টুপি মাথায় দিয়ে নামায পড়েছেন। সুতরাং টুপিমাথায় দিয়ে নামায পড়া মুস্তাহাব।
وَحَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللهِ بْنِ بَزِيعٍ، حَدَّثَنَا يَزِيدُ يَعْنِي ابْنَ زُرَيْعٍ، حَدَّثَنَا حُمَيْدٌ الطَّوِيلُ، حَدَّثَنَا بَكْرُ بْنُ عَبْدِ اللهِ الْمُزَنِيُّ، عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: تَخَلَّفَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَتَخَلَّفْتُ مَعَهُ فَلَمَّا قَضَى حَاجَتَهُ قَالَ: «أَمَعَكَ مَاءٌ؟» فَأَتَيْتُهُ بِمِطْهَرَةٍ، «فَغَسَلَ كَفَّيْهِ وَوَجْهَهُ، ثُمَّ ذَهَبَ يَحْسِرُ عَنْ ذِرَاعَيْهِ فَضَاقَ كُمُّ الْجُبَّةِ، فَأَخْرَجَ يَدَهُ مِنْ تَحْتِ الْجُبَّةِ، وَأَلْقَى الْجُبَّةَ عَلَى مَنْكِبَيْهِ، وَغَسَلَ ذِرَاعَيْهِ، وَمَسَحَ بِنَاصِيَتِهِ وَعَلَى الْعِمَامَةِ وَعَلَى خُفَّيْهِ، ثُمَّ رَكِبَ وَرَكِبْتُ فَانْتَهَيْنَا إِلَى الْقَوْمِ، وَقَدْ قَامُوا فِي الصَّلَاةِ، يُصَلِّي بِهِمْ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عَوْفٍ وَقَدْ رَكَعَ بِهِمْ رَكْعَةً، فَلَمَّا أَحَسَّ بِالنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَهَبَ يَتَأَخَّرُ، فَأَوْمَأَ إِلَيْهِ، فَصَلَّى بِهِمْ، فَلَمَّا سَلَّمَ قَامَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقُمْتُ، فَرَكَعْنَا الرَّكْعَةَ الَّتِي سَبَقَتْنَا» ( رَوَاه مُسْلِمٌ فِىْ بَابِالْمَسْحِ عَلَى النَّاصِيَةِ وَالْعِمَامَةِ)
হাদীস নম্বর-৭৪ : হযরত মুগীরা বিন শু’বা রা. থেকে বর্ণিত,এক সফরে রসূলুল্লাহ স. সাথীদের থেকে পেছনে রয়েগেলেন। আমিও তাঁর সঙ্গে পেছনে রয়ে গেলাম। অতঃপরতিনি ইস্তিঞ্জার প্রয়োজন মিটিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন:তোমার সঙ্গে পানি আছে কি? আমি পানির পাত্র এনে দিলাম।তিনি উভয় হাতের কব্জি পর্যন্ত এবং মুখ ধুলেন। অতঃপরউভয় বাহু খুলতে গেলেন। কিন্তু জামার হাতা সংকীর্ণ হয়েযাওয়ায় জামার ভিতর দিক দিয়ে হাত বের করলেন এবংজামা কাঁধের উপর রেখে দিলেন। এরপর উভয় বাহু ধুলেন।মাথার অগ্রভাগ, পাগড়ী এবং উভয় মোজার ওপর মাসেহকরলেন। অতঃপর তিনি সওয়ার হলেন; আমিও সওয়ারহলাম এবং কওমের নিকটে পৌঁছলামÑ তখন তারা নামাযশুরু করে দিয়েছে। হযরত আব্দুর রহমান বিন আওফ রা.তাদের নামায পড়াচ্ছিলেন এবং এক রাকাত পড়িয়েফেলেছেন। রসূলুল্লাহ স.-এর আগমন টের
আসুন আমরা দেখি
হুজুর পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার পোষাক মুবারক
কেমন ছিলো-
ﻋﻦ ﺍﻡ ﺳﻠﻤﺔ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﺘﻪ
ﻗﺎﻟﺖ ﻛﺎﻥ ﺍﺣﺐ ﺍﻟﺜﻴﺎﺏ ﺍﻟﻲ
ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ
ﻭ ﺳﻠﻢ ﺍﻟﻘﻤﻴﺺ
অর্থ: হযরত উম্মে
সালমা আলাইহাস
সালাম
বলেন, পোষাক সমূহের
মধ্যে হুজুর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম উনার
নিকট
সর্বাধিক প্রিয়
ছিলো “ক্বামীছ”।
দলীল-
√ শামায়িলুন নবী
ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া
সাল্লাম,- অষ্টম
অধ্যায়ে হুজুর
পাক ছল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম
উনার
পোষাকের বিবরন
অধ্যায়,- হাদীস শরীফ
নং ৫৫,৫৬,৫৭
লেখক- হযরত ইমাম তিরমিযী (রহ:)
পোশাক পরিধান করা কোনো ক্ষেত্রে ফরজ, কখনো হারাম আবার কোনো কোনো সময়ে মুস্তাহাব। ফরজ পোশাক হলো এতটুকু, যা দিয়ে সতর আবৃত করা যায়। আর হারাম হলো, পুরুষের জন্যে পায়ের গোড়ালির নীচে পোশাক পরিধান করা। দুই ঈদে উত্তম পোশাক পরিধান করাও মুস্তাহাব।
উম্মে সালামা [রা] বলেন, রাসুল [সা.] পোশাক হিসেবে সর্বাধিক পছন্দ করতেন ‘কামীস’। [ইবনে মাজাহ, হাদিস-৪০২৭]
কামীসের বিবরণ সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিসের ভিত্তিতে জানা যায়, এই পোশাকটি ছিলো হাঁটুর নিম্নভাগ পর্যন্ত লম্বা। হাতা ছিলো হাতের আঙ্গুলের প্রান্ত পর্যন্ত দীর্ঘ। এ পোশাকের দৈর্ঘ সবসময়ই পায়ের গোড়ালির উপরে থাকতো। রাসুল [সা.] অধিকাংশ সময়ে এই ধরনের পোশাক পরতে ভালোবাসতেন। [শামায়েলে তিরমিজি-২৮]
আল্লাহ তাআলা বলেছেন তাকওয়ার পোশাকই উত্তম। রাসূল সাঃ এর পোশাক সম্পর্কে দেখতে শামায়েলে তিরমিযী দেখতে পারেন। সিহাহ সিত্তাহর মধ্যেও কিতাবুল লেবাস অধ্যায়ে অনেক বর্ণনা আছে।
হাসান বিন মেহরান থেকে বর্ণিত-
عن رجل من الصحابة : قال : أكلت مع رسول الله صلى الله عليه وسلم، ورأيت عليه قلنسوة بيضاء
একজন সাহাবী বলেছেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে তাঁর দস্তরখানে খেয়েছি এবং তাঁর মাথায় সাদা টুপি দেখেছি’ (আল ইসাবাহ ৪/৩৩৯)
এ হাদীসটি ইমাম ইবনুস সাকান তার কিতাবুস সাহাবায় সনদসহ বর্ণনা করেছেন। তবে তাঁর এ বর্ণনায় সাহাবীর নাম আসেনি। তা এসেছে তাঁর অন্য বর্ণনায় এবং ইমাম বুখারী ও ইমাম আবু হাতেমের বর্ণনায়। তাঁর নাম ফারকাদ। (দ্র. আততারীখুল কাবীর ৭/১৩১; কিতাবুল জারহি ওয়াত তা’দীল ৭/৮১) উল্লেখ্য, ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. ইমাম ইবনুস সাকানের উপরোক্ত বর্ণনার দ্বারা আবু নুআইম আল আসবাহানী রহ.এর এ দাবি খন্ডন করেছেন যে, ফারকাদ সাহাবী আল্লাহর নবীর দস্তরখানে খাবার খাননি। বরং হাসান ইবনে মেহরান খাবার খেয়েছেন সাহাবী ফারকাদের সাথে। (মারিফাতুস সাহাবা ৪/১০৪)
হাফেজ ইবনে হাজার রহিমাহুল্লাহ বলেন, এ ক্ষেত্রে আবু নুআইমই ভুলের শিকার হয়েছেন। প্রমাণ হিসেবে তিনি ইমাম ইবনুস সাকানের উপরোক্ত বর্ণনাটি উল্লেখ করেন। এতে প্রমাণিত হয় এ বর্ণনা সহীহ। অন্যথায় প্রমাণ-গ্রহণ শুদ্ধ হতো না। এবং আবু নুআইম এর মত ইমাম এর কথাকে খন্ডন করা যেত না।
তাছাড়া সাহাবী ফারকাদ রা.এর আল্লাহর নবীর দস্তরখানে খাবার খাওয়ার কথা ইমাম বুখারী, ইমাম আবু হাতেম ও ইবনু আবদিল বারও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন।
হাদীস-২
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. বলেন
أن النبي صلى الله عليه وسلم كان يلبس من القلانس في السفر ذوات الآذان، وفي الحضر المشمرة يعني الشامية.
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফর অবস্থায় কান বিশিষ্ট টুপি পরতেন আর আবাসে শামী টুপি পরতেন। (আখলাকুন নুবুওয়্যাহ, আল জামে লি আখলাকির রাবী ওয়া আদাবিস সামে পৃ. ২০২)
এ হাদীসের সকল রাবী ‘‘ছিকা’’। উরওয়া ও হিশাম তো প্রসিদ্ধ ইমাম। আর মুফাদদাল ইবনে ফাদালা নামে দুইজন রাবী আছেন। একজন মিসরী, তিনি অনেক বড় ইমাম ছিলেন। মিসরের কাযী ছিলেন। সর্বসম্মতিক্রমে তিনি ‘‘ছিকা’’। আসমাউর রিজালের কিতাবাদি থেকে প্রতীয়মান হয় সনদে উল্লেখিত ব্যক্তি ইনিই। কারণ তিনিই হিশাম ইবনে উরওয়া ও ইবনে জুরাইজ থেকে রেওয়ায়েত করেন যা আল্লামা ইবনে আদী ও আল্লামা মুহাম্মাদ বিন হাসান বিন কুতায়বা তার কিতাবে উল্লেখ করেছেন। (আল-কামিল ৭/৪০৯ ইকমালু তাহযীবিল কামাল ১১/৩৩৮)
অপর জন বসরী। তাঁর স্মৃতিশক্তির বিষয়ে কিছু আপত্তি থাকলেও ইবনে হিববান তাকে ছিকা রাবীদের মধ্যে গণ্য করেছেন।
আবু হাতেম বলেছেন يكتب حديثه
আর ইমাম ইবনে আদী তার একটি বর্ণনাকে ‘মুনকার’ হিসেবে চিহ্নিত করে বাকিগুলো সম্পর্কে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন-
‘তার অন্য বর্ণনাগুলো সঠিক।’ সুতরাং সনদে উল্লেখিত রাবী যদি বসরীও হন তবুও তার এ বর্ণনা সঠিক।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, একবার আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বসা ছিলাম। ইতিমধ্যে একজন আনসারী সাহাবী তাঁর কাছে এলেন। এবং তাঁকে সালাম দিলেন। তিনি ফিরে যাওয়ার সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আনসারী! আমার ভাই সাদ ইবনে উবাদাহ কেমন আছে? আনসারী বললেন, ভাল আছে। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমাদের কে কে তাকে দেখতে যাবে? অতপর তিনি দাঁড়ালেন আমরাও দাঁড়ালাম। আমরা সংখ্যায় দশের অধিক হব। আমাদের পায়ে মোজাও ছিল না। চপ্পলও না। গায়ে জামাও ছিল না, টুপিও না। ঐ কংকরময় ভূমিতে আমরা চলছিলাম। অবশেষে আমরা সাদ এর নিকট পৌঁছলাম তখন তার পাশ থেকে মানুষজন সরে গেল। অতপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সঙ্গীরা প্রবেশ করলেন।
এখানে সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রা. এর বাক্য ‘‘আমাদের পায়ে মোজাও ছিল না, চপ্পলও না। গায়ে জামাও ছিল না টুপিও না’’ থেকে বোঝা যায়, ঐ যুগে টুপিও ছিল লিবাসের অংশ এবং কোথাও যাওয়ার জন্য সেগুলো রীতিমত আবশ্যকীয় এর ন্যয় ছিল। তাই এখানে এগুলো না থাকায় হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর তা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন।
বিষয়টি ঠিক এরকম যেমন ইমাম বুখারী রহ. সহীহ বুখারীতে বুরনুস প্রমাণ করেছেন। সহীহ বুখারীতে কিতাবুল লিবাসে باب البرانس নামে শিরোনাম দাঁড় করেছেন আর দলীল হিসেবে উল্লেখ করেছেন হজের একটি হাদীস।
لا يلبس المحرم القميص ولا العمائم ولا البرانس
‘‘ইহরাম গ্রহণকারী জামাও পরবে না, পাগড়ীও না, বুরনুস (এক প্রকার টুপি)ও না।’’
আল্লামা আবু বকর ইবনুল আরাবী এ হাদীস থেকে পাগড়ী প্রমাণ করেছেন। তিনি বলেন, এ হাদীস প্রমাণ করে যে, তৎকালে পাগড়ী পরিধানের রীতি ছিল। এ কারণে ইহরাম অবস্থায় তা পরিধান করা নিষেধ করেছেন।
একইভাবে আলোচিত হাদীস দ্বারাও টুপি ও তার প্রচলন প্রমাণে কারো দ্বিমত থাকার কথা নয়।
উমর ইবনে খাত্তাব রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন-
الشهداء ثلاثة : رجل مؤمن ... ورفع رسول الله صلى الله عليه وسلم رأسه حتى وقعت قلنسوته أو قلنسوة عمر.
শহীদ হল তিন শ্রেণীর লোক : এমন মুমিন ... এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাথা তুললেন। তখন তাঁর টুপি পড়ে গেল। অথবা বলেছেন উমরের টুপি পড়ে গেল। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস : ১৪৬ জামে তিরমিযী, হাদীস : ১৬৪৪ ইত্যাদি)
হাদীসটির ক্ষেত্রে ইমাম তিরমিযী বলেছেন, ‘হাসানুন গারীবুন।’
হাদীসটির সনদ এই,
عن عبد الله بن لهيعة عن عطاء بن دينار أبي يزيد الخولاني عن فضالة بن عبيد عن عمر بن الخطاب رضي الله عنهم
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে লাহিয়া এর ক্ষেত্রে যদিও মুহাদ্দিসীনদের বিভিন্ন রকম বক্তব্য আছে, কিন্তু এ হাদীসটি তাঁর থেকে বর্ণনা করেছেন আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক। আর এক্ষেত্রে ইমামগণ এক মত যে ইবনে লাহিয়া থেকে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনুল মুবারক কর্তৃক বর্ণনাকৃত হাদীসগুলো সঠিক।
উপরন্তু আব্দুল্লাহ ইবনে লাহিয়ার একজন ‘মুতাবি’ও আছেন সায়ীদ ইবনে আবী আইয়ূব। যা ইমাম বুখারী ও ইমাম আবু হাতিম এর কথায় পাওয়া যায়।
قال الترمذي : سمعت محمدا يقول : قد روى سعيد بن أبي أيوب هذا الحديث عن عطاء بن دينار عن أشياخ من خولان، ولم يذكر فيه عن أبي زيد.
وقال أبو حاتم : وروى سعيد بن أبي أيوب عن عطاء بن دينار عن أشياخ من خولان عن فضالة عن عمر.
আর এ সনদের আরেকজন রাবি, আবু ইয়াযিদ আল খাওলানী। মুতাআখখিরীনদের মাঝে কেউ কেউ তাকে মাজহুল বলেছেন।
এক্ষেত্রে প্রথম কথা এই যে, হাদীসটি শুধু তিনিই বর্ণনা করেননি; বরং খাওলান শহরের আরো অনেক মুহাদ্দিস তা বর্ণনা করেন, যা ইমাম বুখারী ও ইমাম আবু হাতেম এর উপরোক্ত কথায় পাওয়া যায়।
দ্বিতীয় কথা এই যে, ইমাম বুখারী, ইমাম আবু হাতেম, ইমাম তিরমিযীসহ মুতাকাদ্দিমীন ইমামগণের কেউ তাকে মাজহুল বলেন নি; বরং সকলে তাঁর জীবনীতে তাঁর নাম উল্লেখ করে এ হাদীসটি উল্লেখ করেছেন। কেউ তাঁর সম্পর্কে ভালোও বলেননি মন্দও বলেননি। এটাকে হাদীস শাস্ত্রের পরিভাষায় বলা হয় سكوت المتكلمين في الرجال অর্থাৎ ইমামগণের নীরব থাকা। এই কারণে রাবী মাজহুল হওয়া আবশ্যক নয় বরং এটাকে এক প্রকার তা’দীল হিসেবে ধরা হয়। বিশেষত রাবী যদি তাবেয়ী স্তরের হন। আর এখানেও তা ঘটেছে। সম্ভবত এ নিশ্চুপ থাকাকেই পরবর্তীদের কেউ মাজহুল বলে দিয়েছেন, যা ঠিক নয়।
পাগড়ি পরিধানের হুকুম কি ?
অনেককে দেখা যায়, বিশেষ বিশেষ সময় বিশেষ বিশেষ স্থানে পাগড়ি পরিধান করে থাকেন। কেউ ফরয নামাযের সময়, কেউ আবার জুমার নামাযের সময় আর কেউ ঈদ বা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পরিধান করেন। দলিল-প্রমাণসহ জানতে চাই।
__________________________________________
পাগড়ি পোশাকের একটি সুন্নত। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণত যেসকল পোশাক ব্যবহার করতেন পাগড়িও সেগুলোর অন্তর্ভুক্ত ছিল। রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবা, তাবেয়ীন ও তাবে তাবেয়ীনের নিকট পাগড়ি একটি পছন্দনীয় পোশাক ছিল এটি আরবের একটি ঐতিহ্যও বটে।
স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিভিন্ন সময় পাগড়ি ব্যবহার করেছেন তা বহু হাদীস দ্বারা প্রমাণিত আছে। এখানে দু’ একটি হাদীস উল্লেখ করা হল।
জাবির রা. বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (মক্কায়) প্রবেশ করলেন। তখন তাঁর মাথায় কালো পাগড়ি ছিল।
-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৩৫৮
মুগীরা ইবনে শুবা রা. বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওযু করলেন এবং মাথার অগ্রভাগ ও পাগড়ির উপর মাসাহ করলেন।
-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ৮১
সহীহ মুসলিমের অন্য এক বর্ণনায় আমর ইবনে হুরাইস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার লোকদের উদ্দেশে বক্তব্য দিলেন। সে সময় তিনি কালো পাগড়ি পরিহিত ছিলেন।
-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ১৩৫৯
তাঁর পাগড়ি পরিধান সংক্রান্ত এ ধরনের আরো অনেক বর্ণনা হাদীসের বিভিন্ন কিতাবে বর্ণিত হয়েছে।
সাহাবা, তাবেয়ীগণও নামাযে এবং নামাযের বাইরে বিভিন্ন সময় ব্যাপকভাবে পাগড়ি ব্যবহার করতেন।
দ্রষ্টব্য : সহীহ বুখারী ১/৫৬
সুলাইমান ইবনে আবি আবদিল্লাহ রাহ. বলেন, আমি মুহাজির সাহাবীগণকে কালো, সাদা, হলুদ, সবুজ বিভিন্ন রঙের পাগড়ি পরতে দেখেছি।-মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস : ২৫৪৮৯
আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. সম্পর্কে বর্ণিত আছে, তিনি মক্কা মুকাররমার উদ্দেশে বের হলে সঙ্গে পাগড়ি নিতেন এবং তা পরিধান করতেন।
-সহীহ মুসলিম, হাদীস : ২৫৫২
আবু উবাইদ রাহ. বলেছেন, আমি আতা ইবনে ইয়াযিদকে পাগড়ি পরিহিত অবস্থায় নামায পড়তে দেখেছি।
-মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১১৭৮০
উপরোক্ত হাদীস ও আছার থেকে এ কথা সুস্পষ্ট যে, সাহাবা, তাবেয়ীন নামাযে ও নামাযের বাইরে বিভিন্ন সময় ব্যাপকভাবে পাগড়ি পরতেন। তাঁদের কাছে পোশাক হিসেবে পাগড়ির একটি বিশেষ অবস্থান ও গুরুত্ব ছিল।
তাই পোশাকের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম ও সালাফের অভ্যাসের অনুসরণ করা ভালো এবং তাদের মহববতে এই অনুসরণের কারণে ইনশাআল্লাহ সওয়াবও হবে।
আহলে খবিশ লামাযহাবী এবং মৌদুদিবাদীদের বলছি, তোমরাতো নবীর জুব্বা টুপি পাগরি পরতে ভালো লাগেনা, পরতে ভালো লাগে পেন্ট-সার্ট, কোট-টাই , তাইনা ? আবার বলে ইসলামে কোনো পোষাক নির্দিষ্ট করা হয় নাই , তাহলে কোর্ট টাই সার্ট পরলে কি হয় ? আবার কেউ কেউ বলে কোর্ট পেন্ট টাই সার্ট এগুলি নাকি সুন্নাতি পোষাক ? নায়ুযুবিল্লাহ । তোমাদের কাছে নবীজির (সা:) হাদীসটা রেখে গেলাম, এবার তুমি বুঝবে আর তোমার আল্লাহ বুঝবে, আমার কর্তব্য জানিয়ে দেয়া, তাই জানিয়ে হক আদাই করার চেষ্টা করলাম মাত্র
নবী মুহাম্মাদ (ﷺ ) বলেন,
“যে ব্যক্তি বিজাতির তরীকা অনুযায়ী আমল করে, সে
আমাদের কেউ নয়।
(ত্বাবারানী, সিলসিলাহ সহীহাহ ২১৯৪নং)