হযরত ইব্রাহিম (আঃ) বলিয়াছেন- আমি
আমার অন্তরের সমস্ত অছওয়াছা (মানবীয় দুর্বলতা) দূর করতঃ একীন ও বিশ্বাসকে গাঢ় হইতে
গাঢ়তর করিয়া ঈমানের উন্নতি সাধন করিতে চাই।
ছাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ
(রাঃ) বলিতেন- প্রতিবন্ধকতায় কর্মজীবন এবং ত্যাগ তিতিক্ষা ও কষ্ট- ক্লেশের
পরীক্ষার ভিতর দিয়া যে অটল বিশ্বাস প্রমাণিত হয় উহাই আসল পূর্ণাঙ্গ ঈমান। ঐরূপ
বিশ্বাস ব্যতিরেকে শুধু মুখে বুলি আওরড়ানো বা ভাবাবেগ প্রকাশের নাম ঈমান নহে।
পৃষ্ঠা ৩৬ বোখারী শরীফ
আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ)
বলিতেন- প্রত্যেক জিনিসেরই কোন না কোন গুনাগুন বা ক্রিয়া- প্রতিক্রিয়া থাকবেই; এই
সব গুনাগুন বা ক্রিয়া- প্রতিক্রিয়ার দ্বারাই জিনিষটির পরিচয় হয়। সেমতে ঈমানেরও
কতিপয় গুনাগুন বা ক্রিয়া- প্রতিক্রিয়া আছে- উহা এই যে, ঈমানদার ব্যক্তির আল্লাহ্র
উপর বিশ্বাস এবং ভয় ও ভক্তি এত বাড়িয়া যায় যে, (আল্লার স্পষ্ট আদিষ্ট কাজগুলি ত
করেই এবং নিষিদ্ধ কাজগুলিও চিরতরে বর্জন করে। এতদ্ব্যতীত) যে কোন কাজে বা কথায়
তাহার মনে যদি সামান্য মাত্র খটকা বা সংশয়ের উদয় হয় যে, হয়ত এই কাজটি বা কথাটি
পরিণামে আল্লাহ্র অসন্তষ্টির কারন হইতে পারে বা ইহাতে আল্লাহ্র অনুমোদন না
থাকিতে পারে, ঈমানের প্রতিক্রিয়ার ফলে তাহাও সে বর্জন করিয়া চলে। মানুষের জীবনে এই
অবস্থা যখন উপস্থিত হয়, তখনই তাহার ঈমান পূর্ণতা লাভ করে এবং খাঁটি তাকওয়া তাহার
হাসিল হয়।
কোরআন শরীফের একটি আয়াতে আছেঃ- আল্লাহ্
তায়ালা হযরত মোহাম্মাদ (সাঃ) কে এবং নুহ, ইব্রাহীম, মুছা ও ইছাকে (আঃ) (এতদ্ভিন্ন
সমস্ত পয়গাম্বরগণকে) একই ধর্ম এবং একই ঈমান ও ইসলাম প্রতিষ্ঠীর আদেশ করিয়াছেন; এবং
ইহাও বলিয়া দিয়াছেন যে, এই মুল ধর্মকে সকলে ঠিক রাখ- ইহাতে বিভিন্ন মত পোষণ করিও
না।
অন্য এক আয়াতে আছে- তোমাদের
প্রত্যেকের জন্য ভিন্ন ভিন্ন পথ এবং ভিন্ন ভিন্ন তরিকা ও পদ্ধতি নির্দিষ্ট করিয়া
দিয়াছি।
উক্ত আয়াতদ্বয়ের সমষ্টিগত তৎপরয
এই যে, বিভিন্ন নবীগণের শরীয়তের ধর্ম পালনের পদ্ধতি ও প্রণালীর এবং ধর্মাচরণের
খুঁটিনাটি বিষয়ে হয়ত পার্থক্য আছে বটে; কিন্তু মুল ধর্মের ভিতরে কোন পার্থক্য নাই।
এক আল্লাহ্র দাসত্ব স্বীকার করতঃ একান্ত অনুগত হইয়া তাঁহার আদেশ পালনার্থে
প্রতিযোগিতা করিয়া নেক কাজে অগ্রসর হওয়াই ঈমানের আসল মুল। এখনে ধর্মীয় অনুছানাদি ও
আচারণের পার্থক্য স্বরূপ বলা যায়- যেমন নামায কায়েম করার হুকুম প্রত্যেক নবীর
শরীয়তেই ছিলো, কিন্তু পূর্ণাঙ্গ পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামায়াতে আদায় করার হুকুম
হইয়াছে শুধু শেষ নবী মোহাম্মাদ (সাঃ) এর শরীয়তে।
অন্য এক আয়াতে আছেঃ- তোমরা যদি
আমার প্রভু আল্লাহ্কে না ডাক, তাঁহার নিকট প্রার্থনা না কর, তবে তাহাতে আমার
প্রভুর কোনই ক্ষতি নাই।
পৃষ্ঠা ৩৭ বোখারী শরীফ
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) এখানে আল্লাহ্ তায়ালার
নিকট প্রার্থনা (দোয়া) করাকে ঈমানের অন্তর্ভুক্ত বলিয়া বর্ণনা করিয়াছেন।
অতএব সহজেই উপলব্ধি করা যায় যে, ঈমান রত্ন কত ব্যাপক ও
সম্প্রসারিত এবং কত খুঁটিনাটি বিষয়বস্তু ইহার অন্তর্ভুক্ত রহিয়াছে। সুতরাং ঈমান
শুধু বিশ্বাস করার নামই নহে।
No comments:
Post a Comment