এই আয়াতে আল্লাহ্ তায়ালা মানব জীবনকে স্বার্থক ও সাফল্যমণ্ডিত করার জন্য আটটি গুণ অর্জনের শর্ত উল্লেখে বলিতেছেনঃ
স্বীয় জীবনকে সাফল্যমণ্ডিত করিতে পারিয়াছে তাহারা-
(১) যাহারা ( আল্লাহ্ ও আল্লাহ্র রসূলকে মান্য করিয়া কেয়ামতের হিসাব নিকাশ, বেহেস্ত – দোযখকে বিশ্বাস করিয়া ) ঈমানদার হইয়াছে।
(২) যাহারা ভয় ও ভক্তির সহিত, আল্লাহ্র দরবারে কাকুতি- মিনতির সহিত নামায কায়েম করিয়াছে।
(৩) যাহারা বৃথা সময় নষ্ট করা হইতে বিরত রহিয়াছে। ( চক্ষু, কর্ণ, জিহ্বা, দর্শনশক্তি, শ্রবণশক্তি, বাকশক্তি, কর্মশক্তি, চলনশক্তি, চিন্তাশক্তি প্রভৃতি যে সব অমূল্য শক্তির সমারোহ আল্লাহ্ তায়ালা মানুষকে দান করিয়াছেন, ঐগুলিকে জীবনের স্থায়ী উন্নতিমূলক কাজে ব্যয় করিবে। অবনতির বা অনর্থক কাজে অপচয় করা হইতে বিরত থাকিতে হইবে)।
প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪০ বোখারী শরীফ
(৪) যাহারা পবিত্রতা সাধন করিয়াছে। ( আত্মার পবিত্রতা, দেহের পবিত্রতা, বস্ত্রের পবিত্রতা, স্ত্রির পবিত্রতা, অর্থের পবিত্রতা, ইত্যাদি সর্ব প্রকারের পবিত্রতাই ইহার অন্তর্ভুক্ত। হিংসা, বিদ্বেষ, নির্দয়তা, নিষ্ঠুরতা, কৃপণতা, স্বার্থন্ধতা, ক্রোধান্ধতা, কপটতা, মোহান্ধতা, ইত্যাদি অপবিত্র স্বভাব সমূহ হইতে আত্মাকে শোধিত রাখিতে হইবে। সুদ, ঘুষ, শোষণ, দুর্নীতি, চুরি- জুয়াচুরি, ধোঁকাবাজি ইত্যাদি সর্ব প্রকার হারাম উপায় হইতে অর্থকে পবিত্র রাখিতে হইবে। তদুপরি শরীয়ত অনুযায়ী যাকাত দান করিতে হইবে। অর্থের উপরই মানুষের সর্বস্ব নির্ভর করে, তাই অর্থের অপবিত্রতা তাহার প্রতিটি স্তরকেই অপবিত্র করিয়া দেয়। কাজেই অর্থের পবিত্রতা ব্যতিরেকে মানুষের কল্যাণ সাধিত হইতে পারে না। এক হাদিসে আছে- কোন কোন ব্যক্তি অসহায় আশ্রয়হীন ও বিপদগ্রস্ত হইয়া আল্লাহ্কে ডাকিতে থাকে। কিন্তু আল্লাহ্ তাহার ডাক শোনেন না, কারন তাহার পানাহারের বস্তু ও পরিধেয় বস্ত্র ইত্যাদি প্রত্যেকটিই হারাম এবং অসদুপায়ে অর্জিত।)
(৫) যাহারা সংযম অভ্যাস করিয়া কাম- রিপুকে দমন করিয়া রাখিয়াছে। অর্থাৎ দেহের রাজা ও জীবনীশক্তির মূলধন বীর্যের অপচয় বা অপব্যয় করে নাই। অবশ্য বিবাহ- সুত্রে আবদ্ধা রমণী অথবা ( এর চেয়েও অধিক আধিপত্য যাহার উপর স্থাপিত হইয়াছে ; বিবাহের ন্যায় শরীয়ত অনুমোদিত অপর সুত্র-) স্বত্ব সূত্রে অর্জিত রমণীর গর্ভে মানব বীজ বপন উদ্দেশে যদি বীর্য্য ব্যয় করে তবে তাহা দূষণীয় নহে। এতদ্ব্যতীত যাহারা অন্য কোনও গর্হিত উপায়ে ( হস্ত মৈথুন, পুংমৈথুন, পশুমৈথুন, বেগানা স্ত্রী দর্শন, স্পর্শন বা ব্যবহার ইত্যাদি দ্বারা ) বীর্য্য ব্যয় করিবে ও কাম- রিপু চরিতার্থ করিবে তাহারা নিশ্চয়ই ব্যভিচারী সাব্যস্ত হইবে।
(৬, ৭) যাহারা নিজেদের নিকট গচ্ছিত আমানতের এবং এবং নিজেদের ওয়াদা অঙ্গীকারের পুরাপুরি রক্ষণাবেক্ষণ করিয়াছে। আমানতের অর্থ- দায়িত্ব গ্রহণ করা। দায়িত্ব অনেক প্রকারের আছে- যথা আল্লাহ্র আমানত, (আল্লাহ্র আমানতের অর্থঃ- আল্লাহ্র আদেশ ও নিষেধাবলী অনুযায়ী স্বীয় জীবনকে গঠিত ও পরিচালিত করার গুরুদায়িত্বভার গ্রহণ করা। এই গুরুদায়িত্বকেই কোরআন শরীফের ২২ পারার ৫ম রুকুতে আল্লাহ্ তায়ালা আমানত বলিয়া ব্যক্ত করিয়া বলিয়াছেন- আমি আসমান, জমিন ও পর্বতমালাকে আমার আমানত বা বিশেষ একটি গুরুদায়িত্বভার গ্রহণ করার প্রতি আহ্বান জানাইলে উহারা সকলেই ভয়ে ভীত হইয়া নিজ নিজ অক্ষমতা প্রকাশ করিল, কিন্তু মানব জাতিকে সেই আহ্বান জানান হইলে তাহারা উহা গ্রহণ করিয়া নিল।) সামাজিক আমানত, রাষ্টিয় আমানত, চাকরি ও পদের আমানত, ব্যক্তিগতভাবে গচ্ছিত টাকা- পয়সা, জমি-জমা বা গোপনীয় কথার আমানত ইত্যাদি। অনুরূপভাবে অঙ্গীকার এবং শপথ ও অনেক প্রকারের- আল্লাহ্ তায়ালার নিকট শপথ, সমাজের নিকট শপথ, রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের শপথ, ব্যক্তিগত ওয়াদা রক্ষার শপথ ইত্যাদি।
প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪১ বোখারী শরীফ
(৮) যাহারা আজীবন নামাযসমূহের প্রতি যত্নবান রহিয়াছে।
অর্থাৎ কখনও সে সাধনায় ক্ষান্ত হয় নাই- স্থান, কাল, পাত্র নির্বিশেষে কোনও বাধা বিপত্তি লক্ষ্য না করিয়া চিরজীবন একনিষ্ঠ সাধনা করিয়ায় গিয়াছে।
যাহারা এই গুনগুলি অর্জন করিতে পারিয়াছে, তাহারাই হইবে ফেরদৌস বেহেস্তের অধিকারী, তাহারা তথায় অমর জীবন লাভ করিয়া অনন্তকাল অফুরন্ত সুখ- শান্তি ভোগ করিবে।