Buy IP

********** Welcome to Buy ip **********

Tuesday, September 29, 2015

ইমাম আবু হানিফা

নোমান ইবনে সাবিত, ইমাম আবু হানিফা (র:) জিবনী ইমাম আবু হানিফা ইরাকের কুফায় ৫ সেপ্টেম্বর ৬৯৯ ইংরেজী মোতাবেক ৮০

হিজরীতে জন্ম গ্রহণ করেন। এবং ১৪ জুন ৭৬৭ ইংরেজী ১৫০ হিজরী ইন্তেকাল করেন। সাহাবী আনাস ইবনে মালিক (রা) এর সাথে সাক্ষাত হওয়ার কারনে তিনি একজন তাবেঈ।ইমাম আবু হানীফা রহ. অন্যুন আটজন সাহাবীর সাক্ষাত লাভ করেছেন। এঁরা হচ্ছেন-
১) হযরত আনাস ইবনে মালেক রা. (ওফাত ৯৩ হিজরী)
২) আব্দুল্লাহ ইবনে আবী আওফা রা. (ওফাত ৮৭ হিজরী)
৩) সহল ইবনে সাআদ রা. (ওফাত
৮৮ হিজরী)
৪) আবু তোফায়ল রা. (ওফাত ১১০ হিজরী)
৫) আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়দী রা. (ওফাত ৯৯ হিজরী)
৬) জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রা. (ওফাত ৯৪ হিজরী)
৭) ওয়াসেনা ইবনুল আসকা রা. (ওফাত ৮৫ হিজরী)
ইমাম সাহেবের শিক্ষা জীবনঃ সে সময়কার রাজনৈতিক পরিস্হিতি ইমাম আবু হানীফা রহ. যখন জন্ম গ্রহণ করেন তখন আলমে আসলামের খেলাফতের মনসদে অধিষ্ঠিত ছিলেন আবদুল মালেক ইবনে মারওয়ান। ইরাকের শাসন কর্তৃত্ব ছিল হাজ্জান ইবনে ইউসুফের হাতে।
সাহাবী এবং যুগশ্রষ্ঠ জ্ঞানীগুনিগণের শহর কুফা ছিল তার রাজধানী।
হাজ্জাজকে ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে জালেম প্রশাসকরূপে আখ্যায়িত করা হয়। শুধুমাত্র রাজনৈতিক মতপার্থক্যের কারণে কয়েকজন বিশিষ্ট সাহাবীসহ অগণিত সংখ্যক জ্ঞানী গুনীকে তার জুলুম অত্যাচরের কবলে প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়েছিল। খলীফা ওমর ইবনে আবদুল আযীয বলতেনপূর্ববর্তী উম্মতগণের সকল জালেমকে এক পাল্লায়
এবং আমাদের হাজ্জাজকে যদি আর এক পাল্লায় তোলা হয়
তবে নিঃসন্দেহে হাজ্জাজের জুলুমের পাল্লা অনেক ভারি হবে। ইবরাহীম নখয়ীর রহ. ন্যায় সাধক ব্যক্তি হাজ্জাজের মৃত্যুসংবাদ শুনে সেজদায়
পড়ে অশ্রুভারাক্রান্ ত চোখে আল্লাহর শুকুর আদায় করেছিলেন। জুলুম-অত্যাচরের বিভীষিকাময়
পরিস্হিতিতে আলেম-সাধক
এবং দীনদার শ্রেণীর
লোকেরা অনেকটা নিষ্ক্রীয়তা এবং নির্জনবাস বেছে নিয়েছিলেন। যারাই একটু সাহসের সাথে অগ্রসর হয়েছেনতাদের কেউ এই জালেমের কবল
থেকে নিষ্কৃতি পাননি। খলীফা আবদুল মালেকের ইন্তেকাল হয় হিজরী ৮৬ সনে। দুর্দন্তপ্রতাপ এই খলিফার
শাসনামলে ইসলামী খেলাফতের সীমান্ত পূর্বে কাবুল-কান্দাহার এবং সিন্ধু-পান্জাব পর্যন্ত এবং পশ্চিমে স্পেন পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করেছিল। কিন্তু এলমে-দীনের বড় বড় কেন্দ্রগুলি ছিল স্তব্ধ। আলেমগণ নিজেদের নির্জন হুজরায় বরে দীনি এলেমের
চর্চা নামেমাত্র
বাঁচিয়ে রেখেছিলেন সত্যকিন্তু বৃহত্তর জনগণের মধ্যে এলেমের চর্চা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। হিজরী ৯৫ সনে হাজ্জাজ মৃত্যু মুখে পতিত হয়। পরবর্তী বছর আব্দুল মালেকের পুত্র ওলীদেরও মৃত্যু হয়। ওলীদের মৃত্যুর পর সুলায়মান ইবনে আবদুল মালেক খেলাফতের দায়িত্ব লাভ করেন। ইতিহাসবিদগণের বিবেচনায় সুলায়মান ছিলেন উমাইয়া বংশীয় খলীফাদণের মধ্যে অন্যতম সেরা সৎ শাসক। হিজরী প্রথম শতাব্দির মুজাদ্দেদ রূপে পরিচিত ওমর ইবনে আব্দুল আজীজ রহ. নিযুক্ত হন তার প্রধান উপদেস্টারূপে। মত্র পৌনে তিন বৎসর খেলাফতের দায়িত্ব পালন করার পর যখন তার ইন্তেকাল হয়তখন খলিফার অসিয়্যত অনুযায়ী ওমর ইবনে আবদুল আজীজ পরবর্তী খলিফা নির্বাচিত হন। (হিজরী ৯৯ সন)
ওমর ইবনে আবদুল আজীজ রহ. স্বয়ং একজন সাধক প্রকৃতির আলেম ছিলেন। তাঁর ব্যক্তিগত আগ্রহ ও যত্নে সে যুগের বিশিষ্ট আলেমগণ হাদিসতফসীর ও ফেকাহশাস্ত্রের চর্চায় ব্যাপকভাবে আত্মনিয়োগ করেন। ইমাম বুখারী লিখেছেনওমর ইবনে আবদুল আজীজ রহ. আবু বকর ইবনে হাদম এর
বরাবরে লিখিত এক পত্রে এ মর্মে আদেশ প্রদান করেন যেরাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদিস সুমূহ যত্নের সাথে সংগ্রহ ও তা লিপিবদ্ধ করার ব্যবস্হা কর। আমার আশঙ্কা হয় (বিরাজমান অবস্হায়) এলেম
চর্চা এবং আলেমগণের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে না যায়! (সহীহ আল বুখারী)
আল্লামা বদরুদ্দিন আইনী বহ. বলেন ওমর ইবনে আবদুল আজীজ উপরোক্ত মর্মের আদেশনামাটি সে যুগের সব বিশিষ্ট আলেমের নিকট প্রেরণ করেছিলেন। যার
ফলশ্রুতিতে হিজরী ১০০ সন থেকে হাদিস সংকলনের কাজ ব্যাপকভাবে শুরু হয়ে যায়। তা না হলে আজ আমাদের নিকট হাদিসের যে বিরাট ভান্ডার মজুদ আছেতা হয়ত থাকতো না। (ওমদাতুল-ক্বারী ১ম খন্ড) ওলীদের যখন মৃত্যু হয় (হিজরী ৯৬) তখন আবু হানীফা রহ. ষোল বছরের তরুণ। এ পর্যন্ত তাঁর লেখাপড়া পারিবারিক পরিবেশেই সীমিত ছিল। সে বছরই পিতার সাথে হজ্বে গমন করে মসজিদুল- হারামের দরছের হালকায়
বসে আল্লাহর নবীর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একজন সাহাবীর জবানী হাদিস শ্রবণ করার মাধ্যমে এলমে-হাদিসের সাথে তাঁর
সরাসরি পরিচিতি ঘটে। প্রথম যৌবনের সীমিত কিছুদিন ছাড়া ইমাম আবু হানীফার জীবনের শেষ মুহূর্তটি পর্যন্তটি ছিল ভয়াবহ রাজনৈতিক
সংকটে কন্টকিত। তাঁর কর্মজীবনের শুরুতেই উমাইয়া শাসনের পতন
এবং আব্বাসীয়দের খেলাফতের উত্থান ঘটে। আব্বাসীয়দের দাবী ছিল খোলাফায়ে- রাশেদীনের শাসন
ব্যবস্হা পূনঃপ্রতিষ্ঠা এবং শাসন ক্ষমতায় আহলে-বাইতের প্রাধান্য স্হাপন। যে কারণে সমসাময়িক বিশিষ্ট আলেম ওলামাগণের পাশাপাশি ইমাম আবু হানীফাও রাষ্ট্রবিপ্লব ঘটানোর বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় শরীক হয়েছিলেন। সেই বিস্ফোরণমূথী রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক পরিবেশের মধ্যেই ইমাম আবু হনীফা কুরআন-সুন্নাহ এবং সাহাবীগণের জীবনপদ্ধতি মন্হন করে এলমে- ফেকাহ বা বিধান শাস্ত্র রচনা করে গেছেন। সর্বকালের মুসলমানদের ব্যক্তিগতপারিবারিকসামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য বিজ্ঞান সম্মত বিধিবিধান সম্বলিত
এগরো লক্ষাধীক মাসআলা সংকলিত করে গেছেন তিনি। তাঁর সংকলিত মৌলিক মাসআলা-মাসায়েল ের সুত্রগুলির মধ্যে এমন একটিও খুঁজে পাওয়া যাবে নাযার সমর্থনে কুরআনহাদিস
বা সাহাবীগণের আছার এর সমর্থন নাই। এর দ্বারাই অনুমিত হয় যেতাঁর জ্ঞানের পরিধি কতটুকু বিস্তৃত ছিল।
ইমাম আবু হানীফার পৈত্রিক পেশা ছিল কাপড়ের ব্যবসা। ইরান থেকে শুরু করে ইরাকসিরিয়া ও হেজায পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চলব্যপী বিপুল পরিমণ মুল্যবান রেশমী কাপড়ের আমদানী ও রফতানী হতো। পৈত্রিক এই ব্যবসার সুবাদেই তিনি প্রচুর বিত্তের মালিক ছিলেন। বিশিষ্ট ওলামাগণের মধ্যে সম্ভবত তিনিই ছিলেন প্রথম
ব্যক্তি যিনি রাস্ট্রীয় প্রষ্ঠপোষকতা বা বিত্তবানদের হাদীয়-তোহফা প্রাপ্তির পরোয়া না করে নিজ উপার্জনের দ্বারা জীবিকা নির্বাহএলেমের সেবা এবং তাঁর নিকট সমবেত গরীব শিক্ষার্থীদের যাবতীয় ব্যয়ভার নির্বাহ করার ব্যবস্হা করতেন। তাঁর অন্যতম বিশিষ্ট সাগরেদ ইমাম মুহম্মদকে তিনি বাল্যকাল থেকেই লালন-পালন করে প্রতিষ্ঠার চুড়ান্ত
শিখরে পৌছে দিয়েছিলেন। তাঁর অর্থ সাহায্যে লালিত এবং জ্ঞান চর্চার বিভিন্ন শাখায় সুপ্রতিষ্ঠিত মনীষীবর্গের তালিকা অনেক দীর্ঘ।
কিশোর বয়স থেকেই ইমাম সাহেব পিতার ব্যবসার কাজে যোগ দিয়েছিলেন। ব্যবসায়ীক কাজেই তাঁকে বিভিন্ন বাজার
ওবাং বাণিজ্য কেন্দ্রে যাতায়াত করতে হতো। ঘটনাচক্রে একদিন ইমাম শাবীর সাথে তাঁর সাক্ষাত হয়ে যায়। প্রথম দর্শনেই ইমাম শাবী আবু হনীফার নিষ্পাপ চেহারার মধ্যে প্রতিভার স্ফুরণ লক্ষ করেছিলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেনবৎস! তুমি কি কর
পথে তোমাকে সব সময় যাতায়াত করতে দেখি! তুমি কোথায় যাওয়া- আসা কর?
ইমাম সাহেব জবাব দিলেন,
আমি ব্যবসা করি। ব্যবসার দায়িত্ব পালনার্থেই ব্যবাসায়ীদের
দোকানে দোকানে আমাকে যাওয়া- আসা করতে হয়। ইমাম
শাবী পুনরায় জিজ্ঞেস করলেনএটা তো তোমার লেখাপড়ার বয়স। কোন আলেমের শিক্ষায়তনেও কি তোমার যাতায়াত আছে?
আবু হানীফা রহ. সরলভাবেই জবাব দিলেনসেরূপ সুযোগ আমার খুব কমই হয়।
কিছুক্ষন আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই ইমাম শাবী আবু হানীফাকে জ্ঞানার্জনে মনোযোগী হওয়ার প্রতি আগ্রহী করে তুললেন। ইমাম সাহেব বলেনইমাম শাবীর সেই আন্তরিকতাপূর্ণ উপদেশবাণী গুলো আমার অন্তরে গভীরভাবে রেখাপাত করল এবং এরপর থেকেই
আমি বিপনীকেন্দ্রগুল োতে আসা- যাওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা কেন্দ্রেও যাতায়াত শুরু করলাম। (মুয়াফেকআবু জোহরা) এ সময় আবু হানীফার রহ. বয়স ছিল উনিশ বা বিশ বছর। তিনি দীর্ঘ আঠারো বছর কাল ইমাম হাম্মাদের একান্ত
সান্নিধ্যে জ্ঞানার্জনে নিমগ্ন থাকেন। ইমাম হাম্মাদের যখন ইন্তেকাল হয়তখন আবু হানীফার বয়স ছিল চল্লিশ বছর। এ সময় তিনি উস্তাদের স্হলাভিষিক্ত হয়ে তাঁর শিক্ষাকেন্দ্রের পূর্ণদায়িত্ব গ্রহণ করেন। ফাতাওয়ার ক্ষেত্রে ইমাম আবু হানীফার রঃ অনুসৃত নীতিঃ
যে কোন সমস্যার সমাধান অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে ইমাম আবু হানীফার রঃ অনুসৃত নীতি ছিলপ্রথমে কুরআনের শরণাপন্ন হওয়া। কুরআনের পর হাদিস শরীফের আশ্রয় গ্রহণ করা। হাদিসের পর সাহাবায়ে কেরাম গৃহীত নীতির উপর গুরুত্ব দেওয়া। উপরোক্ত তিনটি উৎসের
মধ্যে সরাসরি সামাধান পাওয়া না গেলে তিনটি উৎসের আলোকে বিচার-বুদ্ধির (কেয়াসের) প্রয়োগ করা। তাঁর সুস্পস্ট বক্তব্য ছিলরাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে কোন ধরনের হাদিস বা সাহাবীগণের অভিমতের সাথে যদি আমার কোন বক্তব্যকে সাংঘর্ষিক মনে হয়তবে আমার বক্তব্য অবশ্য পরিত্যাজ্য হবে। হাদিস
এবং আছারে সাহাবা দ্বারা যা প্রমাণিত সেটাই আমার মাযহাব। (তাফসীরে মাযহারীখায়রাতুল- হেসান)
ইমাম ইবনে হাযম রঃ বলেনআবু হানীফার রঃ সকল ছাত্রই এ ব্যাপারে একমত যেনিতান্ত দূর্বল সনদযুক্ত একখানা হাদিসও তাঁর নিকট কেয়াসের তুলনায় অনেক বেশী মুল্যবান
দলিলরূপে বিবেচিত হবে। (খায়রাতুল-হেসা ন) সম্ভবতঃ এ কারণেই পরবর্তী যুগে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে যে সব কালজয়ী প্রতিভার জন্ম হয়েছেতাঁদের অধিকাংশ ইমাম আবু হানীফার রঃ মাযহাব অনুসরণ করেছেন। হযরত মোজাদ্দেদ আলফেসানী রঃ বক্তব্য হচ্ছে- এই ফকীরের উপর প্রকাশিত হয়েছে যেএলমে-কালামের বিতর্কিত বিষয়গুলি মধ্যে হক হানাফী মাযহাবের
দিকে এবং ফেকাহর বিতর্কিত মাসআলাগুলির অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হক হানাফী মাযহাবের
দিকে এবং খুব কম সংখ্যক মাসআলাই সন্দেহযুক্ত। (মাবদা ও মাআদ)
শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দেস দেহলভী রঃ হারামাইন
শরীফে কাশফ যুগে যে সব তথ্য অবগত হয়েছেনসে সবের আলোকে লিখেছেন- হযরত
নবী করিম সাল্লাল্লাহু আমাকে অবগত করেছেনযেহানাফী মাযহাব একটি সর্বোত্তম তরিকা। ইমাম বুখারীর
সময়ে যেসব হাদিস সংকলিত হয়েছেসেগুলোর তুলনায় আবু হানীফার
রঃ সিদ্ধান্তগুলি সুন্নতে-নববীর সাথে অনেক বেশী সামন্জস্যপূর্ণ। (ফুযুলুল-হারামা ইন)
সুতরাং যারা এ কথা বলতে চায় যেহানাফী মাযহাব সহীহ হাদীসের সাথে সামন্জস্যপূর্ণ নয় বা ইমাম আবু হানীফা রঃ বহু ক্ষেত্রে হাদিসের প্রতিকূলে অবস্হান গ্রহণ করেছেনতাদের বক্তব্য যে নিতান্তই উদ্ভট তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই। বরং হানাফী মাযহাব
হচ্ছে কুরআন-সুন্নাহর এমন এক যুক্তিগ্রাহ্য ও সুবিন্যস্ত ব্যাখ্যা-বিশ্লে ষণ যা সর্বযুগের মানুষের নিকটই
সমভাবে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছে।
শিক্ষাদান পদ্ধতিঃ
সে জামানার দরসের
হালকা বা শিক্ষাঙ্গনের চিত্র ছিলউস্তাদ কোন একটি উচ্চ আসনে বসে তকরীর করতেন। ছাত্রগণ চারদিকে হাঁটু গেড়ে বসে নিতান্ত নিবিষ্টতার সাথে তকরীর শ্রবণ করতেন। অনেকেই তকরীর শুনে তা আয়ত্ব করার পাশাপাশি লিপিবদ্ধ করে রাখতেন। এসব তকরীর উস্তাদ কর্তৃক অনুমোদিত হলে যিনি তকরীর করতেন তাঁর নামেই
সেগুলো গ্রন্হাকারে প্রকাশিত হতো। হিজরী প্রথম ও দ্বিতীয় শতাব্দির সংকলিত হয়েছে। ইমাম আবু হানীফার রঃ শিক্ষাদান কার্যক্রমেও সে পদ্ধতিই অনুসরণ করা হতো। কোন কোন মাসআলায় তর্ক শুরু হয়ে যেত। সে তর্ক কয়েকদিন পর্যন্তও চলতো। শেষ পর্যন্ত কুরআন ও সুন্নাহর দৃষ্টিতে যা সাব্যস্ত হতো সেটাই লিপিবদ্ধ হতো। কোন কোন মাসআলায় উস্তাদ ও সাগরেতের মধ্যকার মতভেদ অমীমাংসিতই থেকে যেত। সেই মত পার্থক্যগুলিও স্ব স্ব যুক্তি সহকারেই কিতাব লিপিবদ্ধ করা হতো। এভাবেই হানাফী মাযহাবের মৌলিক গ্রন্হগুলি সংকলিত হয়েছে। ইমাম সাহেবের দরছগাহ সপ্তাহে দুইদিন ছুটি থাকতো। শুক্রবার ও শনিবার। শনিবার দিনটি তিনি ব্যবসায়িক কাজকর্ম এবং পারিবারিক ব্যস্ততার জন্য নির্দিষ্ট করে রাখতেন। শুক্রবার দিন জুমার প্রস্তুতি এবং জুমাবাদ তার বাসস্হানে বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের া সমবেত হতেন। এ দিন বিশেষ যত্নের
সাথে অপেক্ষাকৃত উন্নতমানের খানা প্রস্তুত হতো। ইমাম সাহেব সমবেত
সবাইকে নিয়ে খানা খেতেন। কর্মদিবস গুলিতে তিনি এশরাক থেকে চাশতের সময় পর্যন্ত ব্যবসায়িক কাজকর্ম করতেন। জোহরের পর থেকে সন্ধা পর্যন্ত শিক্ষাদান কার্যে নিয়োজিত থাকতেন। ফতোয়া দানের জন্যও এ সময়টাই নির্ধারিত ছিল। তবে অবস্হা ভেদে এ সময়সূচীর মধ্যে পরিবর্তনও হতো। দরসের মজলিসে শিক্ষার্থীগণের সাথে অনেক সাধারণ লোকও শরীক হতেন।
তর্কচ্ছলে অনেকে আপত্তিকর মন্তব্যও করত। কিন্তু
কারো প্রতি বিরক্তি প্রকাশ না করে পরম ধৈর্যের সাথে জবাব দিতেন। চরম ধৃষ্ঠতা প্রদর্শনের মোকাবেলাতেও তাঁর ধৈর্যচ্যুতি ঘটত না। প্রায সময়ই তিনি একটা কবিতাংশ
আবৃত্তি করতেন। যা অর্থ ছিলো- ইয়া আল্লাহ ! যাদের অন্তর আমাদের দিক থেকে সংকুচিত হয়ে আছেআমাদের অন্তর তাদের প্রতি প্রশস্ত করে দাও। (আবু যোহরা)
প্রতিটি তকরীরের
শেষে তিনি বলতেনএটি আমার অভিমত। যতটুকু সম্ভব হয়েছেতা আমি বললাম। কেউ যদি আমার চাইতেও মজবুত দলীল ও যুক্তির অবতারনা করতে পারেনতবে তাই অধিকতর গ্রহণযোগ্য হবে। (আবু যোহরা)
কোন একটি বিষয় আলোচনার সময় একবার একজন ছাত্র বলেছিলেনআপনার এই অভিমতটি খুবই চমৎকার।
জবাবে তিনি বলেছিলেনএমনও তো হতে পারে যেএক
পর্যায়ে এটি ভুল প্রমাণিত হবে। (আবু যোহরা)
ইমাম আবু ইউসুফ রঃ তাঁর সব আলোচনারই লিপিবদ্ধ করে রাখার চেষ্টা করতেন। ইমাম সাহেব বলতেনআমার তকরীর
শুনে তা অনুধাবন
করতে বেশি যত্নবান হও। এমনও হতে পারে যেআজকের এই কথাগুলি পরবর্তীতে ভুল প্রমাণিত হবে। (আবু যোহরা)
যারা বিরূপ মন্তব্য করতোতাদের সম্পর্কে ইমাম সাহেবের মন্তব্য ছিল- যদি কেউ আমার
সম্পর্কে এমন কথা বলেযা আমার মধ্যে নাইতবে সে ভুল বলছে। আর আলেমদের কিছু না কিছু দোষ চর্চা তো তাদের মৃত্যুর পরও অব্যাহত থাকে।
ইমাম সাহেব প্রথম যখন শিক্ষা দান শুরু করেনতখন শুধুমাত্র ইমাম হাম্মাদের সাগরেদগণই তাতে শরীক হতেন। কিন্তু ধীরে ধীরে তাতে কূফার সর্বস্তরের মানুষবিশিষ্ট জ্ঞানীগুনীএমনকি ইমাম সাহেবের উস্তাদগণেরও কেউ কেউ এসে শরীক হতেন। বিখ্যাত তাবেয়ী মাসআব ইবনে কোদামইমাম আমাশ প্রমুখ নিজে আসতেন এবং অন্যদেরকেও দরসে যোগ দিতে উৎসাহিত করতেন। একমাত্র স্পেন ব্যতীত তখনকার মুসলিম- বিশ্বের এমন কোন অঞ্চল ছিল নাযেখানকার শিক্ষার্থীগণ ইমাম আবু হানীফ রঃ এর দরসে সমবেত হননি। মক্কা-মদীনাদামেস্কওয়াসেতমুসেলজায়িরানসীবাইনরামলামিসরফিলিস্তিনইয়ামানইয়ানামাআহওয়াযউস্তুর আবাদজুরজাননিশাপুরসমরকন্দবুখারাকাবুল- হেমস প্রভৃতিসহ বিখ্যাত এমন কোন জনপদ ছিল না যেখান
থেকে শিক্ষার্থীগণ এসে ইমাম আবু হানীফা রঃ এর নিকট শিক্ষা লাভ করেননি।
মুসলিম-বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে জ্ঞানতৃষ্ঞা মিটানোর লক্ষ্যে সমবেত শিক্ষার্থীগণের বিচারেও ইমাম আবু
হানীফা রঃ ছিলেন তাবেয়ীগণের মধ্যে কুরআন-হাদীস
এবং আনুষঙ্গিক বিষয়ে সর্বাধিক জ্ঞানী এবং তাকওয়া পরহেজগারীতে অনন্য ব্যক্তিত্ব। ইমাম সাহেবের অনুপম শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের বদৌলতে সে যুগে এমন কিছু সংখ্যক উজ্জল ব্যক্তিত্বের সৃষ্টি হয়েছিলযাঁরা মুসলিম উম্মাহর জ্ঞান ও প্রজ্ঞার আকাশে এক একজন জ্যোতিষ্ক হয়ে রয়েছেন। ইমাম সাহেবের সরাসরি সাগরেদগণের মধ্যে ২৮ ব্যক্তি বিভিন্ন
সময়ে কাজী (বিচারক)
এবং শতাধীক ব্যক্তি মুফতীর দায়িত্ব পালন করেছেন। ইসালামের ইতিহাসে এক ব্যক্তির প্রচেষ্টায় এত বিপুল সংখ্যক প্রাজ্ঞ ব্যক্তির আবির্ভাব আর কোথাও দেখা যায় না।
খলীফা মানসুরের সময় ইমাম আবু হানিফাকে প্রধান বিচারপতির পদ গ্রহনের জন্য আহবান জানানো হয়। তিনি উক্ত প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান
করে খলীফাকে সম্বোধন
করে বলেন, ’’ আল্লাহর শপথ কোন ব্যাপারে আমার
ফয়সালা যদি আপনার বিরুদ্ধে যায় এবং আপনি আমাকে হুকুম দেন যে হয়ত সিদ্বান্ত পাল্টাও না হলে তোমাকে ফোরাত
নদীদে ডুবিয়ে মারা হবে। তখন আমি ডুবে মরতে প্রস্তুত থাকব তবু নিজের সিদ্বান্ত
পাল্টাতে পারবনা।
তা ছাড়া আপনার দরবারে এমন অনেক লোক রয়েছে যাদের মনতুষ্টি করার মত কাজীর প্রয়োজন।’’
ইমাম আবু হানিফা খলীফার প্রস্তাব প্রত্যখ্যান করার পর তাকে ত্রিশটি বেত্রাঘাত করা হয় । যারফলে তাঁর সারা শরীর রক্কাক্ত হয়ে পড়ে। তখন খলীফা মানসুরের চাচা আব্দুস সামাদ ইবন আলী তাকে এজন্য খুবই তিরিষ্ড়্গার করে বলেন , ’’ ইনি শুধু ইরাকের ফকীহ নন। সমগ্র প্রাচ্যবাসীর ফকীহ।’’ এতে মনসুর লজ্জিত হয়ে প্রত্যেক চাবুঘাতের বদলে এক হাজার দিরহাম ইমাম আবু হানিফার কাছে পাঠান। কিন্তু ইমাম উক্ত দিরহাম
গ্রহনে অস্বীকৃতি জানান। তখন তাকে বলা হয় তিনি এ অর্থ গ্রহন করে নিজের জন্য না রাখলেও দুঃখী-গরীবদের
মাঝে বিলিয়ে দেন। এর
জবাবে ইমাম বলেণ ’’ তার কাছে কি কোন হালাল অর্থও রয়েছে’’?। মানসুর এরপর আরও প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে উঠে। ইমামকে আরও চাবুকাঘাত করা হয়। কারারুদ্ধ
করে পানাহারে নানাভাবে কষ্ট দেয়া হয়। তারপর
একটা বাড়ীতে নজরবন্দী করে রাখা হয়। সেখানেই ইমাম আবু হানিফার মৃত্যূ হয়।
কারো কারো মতে তাঁকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়। নির্মম নির্যাতনের শিকার ইমাম আবু হানিফা মৃত্যুর আগে অসিয়ত করে যান যে খলীফা মানুসর জনগনের অর্থ অন্যায়ভাবে দখল করে বাগদাদের যেই এলাকায় শহর নির্মান করেছে সে এলাকায় যেন এন্তেকালের পর তাঁকে দাফন করা না হয়।



No comments:

Post a Comment