_.jpg)
নাটোরের সেলিম কৃষিকাজ করেই স্বাবলম্বী। নাটোর সদরের আহমেদপুর এলাকার মো. নাজিম উদ্দিনের ছেলে সেলিম রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স পাশ করার পর চাকরী করতেন। ভালো লাগেনি বলে পর পর কয়েকবার কর্মক্ষেত্র বদল করেন। কিন্তু পরের অধীনে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না সেলিম। তাই নিজেই কিছু করার কথা ভাবলেন। ২০০০ সালে সারা দেশের ঔষধি বৃক্ষরোপনের সরকারি প্রচারণায় উৎসাহিত হয়ে ২ বিঘা জমিতে ঘৃতকুমারী, মিছরীদানা ও শতমূল চাষ করেন। ভালো উৎপাদন হলেও উৎপাদিত পণ্য বিক্রির সুব্যবস্থা না থাকায় ঔষধি চাষ বন্ধ করে দেন। ২০০৪ সালে ৩৮ বিঘা জমিতে রোপন করেন আপেল কুল। মাত্র তিন বছরেই আপেল কুলের গাছ নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে তিনি কলম প্রযুক্তির মাধ্যমে এগুলোকে থাইকুলে রূপান্তরিত করেন। ২০০৬ সালে ৯ বিঘা জমিতে শুরু করেন পেয়ারা চাষ। কিছুদিন পরে অসময়ে বাঙ্গী, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ, লেবু, পেঁপে, ড্রাগন ও শরিফা চাষ শুরু করেন। বর্তমানে ৭০ বিঘা জমিতে তার এসব ফসল রয়েছে। এই ৭০ বিঘার মধ্যে ২৪ বিঘা জমি নিজের এবং ৪৬ বিঘা প্রতি বছর ১০ থেকে ১২ হাজার টাকায় লিজ নেয়া। তার এসব ফসল রক্ষণাবেক্ষণে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত আছে ২৮ জন শ্রমিক। ফসল তোলার মৌসুমে এখানে কাজ করে আরও শতাধিক শ্রমিক। এসব চাষাবাদের মধ্যে শরিফা ও ড্রাগন চাষে সে এখন ভীষণ মনযোগী। সেলিম রেজা মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় মাটিতে পঁচনশীল কৃষি প্রযুক্তি মালচিং পেপার যার এক পৃষ্ঠা সাদা ও অন্য পৃষ্ঠা কালো রঙের হয়ে থাকে। শীতপ্রধান দেশে কালো পৃষ্ঠা মাটির উপরে এবং আমাদের দেশে সাদা পৃষ্ঠা মাটির উপরের দিকে রাখতে হয়। প্রথমে মাটিতে চাষ ও জৈব সার দিয়ে তৈরি করে মাটি ভালোভাবে মালচিং পেপার দিয়ে ঢেকে দিতে হয়। পরে নির্দিষ্ট দূরত্বে চারা রোপন করতে হয়। এতে মাটিতে খাবার ও সেচ কম লাগে, আগাছা জন্মায় না বলে শ্রমিক কম লাগে, পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয় এতে মাটির আদ্রতা রক্ষাসহ ফসলের খাবারের প্রয়োজন হলে মাঝে যে ড্রেন থাকে সেই ড্রেনের ভেতর সেচ দিয়ে ড্রেনের ভিতর খাবার প্রয়োগ করলে গাছ তা গ্রহণ করে। সেলিম রেজা মনে করেন, আমাদের দেশে এ পদ্ধতি চালুর মাধ্যমে মাটির স্বাস্থ্য রক্ষাসহ অর্গানিক ও কম খরচে বিভিন্ন ফল, সবজি, ফুল যেমন-স্ট্রবেরি, পাতা ও বাধাকপি, বেগুন, শসা, করলা, পটল, পুঁইশাক, লেবু, শরিফা পেয়ারাসহ নিদিষ্ট দূরত্বে যে সকল ফসল উৎপাদন করবে তার সবগুলোই উৎপাদন সম্ভব। গত তিন বছর ধরে সেলিম তার খামারে পরীক্ষামূলক এ পদ্ধতির ব্যবহার করে আসছেন। সেলিম রেজা জানান, ২০০০ সালে মাত্র ২৫ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে ২ বিঘা জমিতে ঔষধি গাছ লাগানোর মধ্যেমে যে কাজ তিনি শুরু করেছিলেন আজ তা সুবিশাল আকার ধারণ করেছে। বর্তমানে ৭০ বিঘা জমিতে তার ফসল ফলাতে বীজ, পানি, শ্রমিকসহ নানা খাতে বছরে ব্যয় হয় প্রায় ৪০ লাখ টাকা। আর গত বছর খরচ বাদেই তার লাভ হয়েছে কোটি টাকার ওপরে। তিনি মনে করেন, যে কোন চাকরির চাইতে কঠোর পরিশ্রম, বুদ্ধি আর একাগ্রতা থাকলে আমাদের দেশের জমিতে ফসল ফলিয়ে যেকোন যুবক ১০ থেকে ১৫ বছরেই পুরোপুরি স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব। আরো জানুন
No comments:
Post a Comment