
লোহা একটি মৌলিক পদার্থ। যার পারমাণবিক সংখ্যা ২৬ এবং রাসায়নিক সঙ্কেত। প্রকৃতিতে ধাতুগুলোর মধ্যে প্রাচুর্যের দিক থেকে অনন্য স্থান লোহার। পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দুর অংশটি লোহার তৈরি। এ হিসেবে পৃথিবীতে লোহার পরিমাণ অনেক। এটি এক ধরনের ধাতু। আমরা অনেকেই মনে করি, অতি পরিচিত মৌল লোহার কোনো বিশেষত্ব নেই; এটি পৃথিবীতে অন্যান্য পদার্থের মতো সৃষ্টি হয়েছে। অথচ পবিত্র কোরআনের ৫৭নং সূরা আল হাদিদের ২৫নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ লোহা পাঠিয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে প্রচন্ড শক্তি এবং এতে রয়েছে মানুষের জন্য বহুবিধ কল্যাণ।’ তাফসিরে মাজহারির নবম খন্ডের ১৮৪ পৃষ্ঠায় হজরত ইবনে ওমর (রা.) -এর বরাত দিয়ে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা নভোমন্ডল থেকে ভূমন্ডলে চারটি বরকত নাজিল করেছেন- লোহা, আগুন, পানি ও লবণ।
তাফসিরে ইবনে কাছিরে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) -এর উদ্ধৃতি আনা হয়েছে। তিনি বলেন, তিনটি জিনিস আদম (আ.)-এর সঙ্গে জান্নাত থেকে এসেছে- ১. লৌহকর্মের দণ্ড বিশেষ, ২. গোর্জ, ৩. হাতুড়ি। এছাড়া কোরআনে কারিমে যে আল্লাহ তায়ালা লোহার বহুবিধ কল্যাণের কথা উল্লেখ করেছেন, তা আমরা আমাদের নিত্য ব্যবহারিক জিনিসপত্রের দিকে দৃষ্টি দিলেই দেখতে পাই। বাসাবাড়িতে রান্নাবান্নার হাঁড়ি-কড়াই, কুটাকাটার যন্ত্রপাতি- দা, বঁটি, ছুরি, কাঁচি; বাড়িঘর নির্মাণের মূল উপকরণ রডসহ ব্যবহার ও নির্মাণের সিংহভাগ উপকরণই লোহার তৈরি। শিল্পকারখানার ইঞ্জিন, যন্ত্রাংশ, কলকব্জা, যোগাযোগ মাধ্যমের বাহন- সাইকেল, ভ্যান, রিকশা, বাস, মিনি বাস, ট্রলার, স্টিমার, লঞ্চ ও ট্রেন; পণ্য পরিবহনের লরি, ট্রাক এমনকি বিমানেরও অধিকাংশ যন্ত্রাংশও লোহার তৈরি। লোহা সম্পর্কিত কোরআনে প্রদত্ত তথ্যগুলো বিজ্ঞানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
লক্ষ করলে দেখা যায়, আমাদের পৃথিবীর একদম মধ্যবর্তী স্থানটি অর্থাৎ পৃথিবীর কেন্দ্র লোহার তৈরি। সূরা হাদিদ (হাদিদ অর্থ লোহা) কোরআনের ঠিক মধ্যখানে অবস্থিত। কোরআনের ১১৪টি সূরার মধ্যে সূরা হাদিদ ৫৭নং সূরা। অর্থাৎ হাদিদের অবস্থান একেবারে মাঝখানে। আবার হাদিদের অ্যাটোমিক নাম্বার বা পারমাণবিক সংখ্যা ২৬। আর ‘হাদিদ’ শব্দটির সংখ্যাগত মানও ২৬ (হা = ৮, দাল = ৪, ইয়া = ১০ এবং দাল = ৪)। এছাড়া লোহার পারমাণবিক সংখ্যা ২৬ হওয়ায় লোহা পরমাণুর অভ্যন্তরে ২৬টি প্রোটন ও ২৬টি ইলেকট্রনও রয়েছে।মানবজাতির জন্য অত্যন্ত সৌভাগ্য আর খুশির বিষয় হলো সর্বস্রষ্টা করুণাময় আল্লাহর নিয়ম এমন যে, পৃথিবীর যে বস্তুটা যত বেশি প্রয়োজনীয় ও উপকারী, আল্লাহ তায়ালা মানব সম্প্রদায়ের জন্য সে বস্তুটিকে তত বেশি সস্তা ও সহজলভ্য করে দিয়েছেন। ধরুন, লোহা যদি স্বর্ণ-রৌপ্যের মতো দামি হতো, তাহলে সর্বসাধারণের পক্ষে তা ক্রয় করা কতই না দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়াত!
No comments:
Post a Comment