Buy IP

********** Welcome to Buy ip **********

Friday, January 29, 2016

ইসলাম


অন্তরে দৃঢ়বিশ্বাস রাখিয়া মুখে স্বীকার করতঃ আল্লাহ তায়ালার সমুদয় আদেশ নিষেদগুলিকে ব্যবহারিক জীবনে কার্যে পরিণত করার নাম ইসলাম। সমস্ত আদেশ নিষেধ গুলিকে কার্যে পরিণত করার সৌকর্য্য এবং আন্তরিক বিশ্বাসের দৃঢ়তার প্রতিফলনের তারতম্য অনুপাতে ইমানের উন্নতি ও অবনতি হইয়া থাকে। কোরআন শরীফের বহু আয়াতে এই উন্নতি ও অবন্তির প্রতি ইঙ্গিত রহিয়াছে। এ ছাড়া ঈমানের বহু শাখা প্রশাখাও আছে। যেমন- আল্লাহ্‌র প্রিয় ব্যক্তি, বস্তু ও কার্য্যকে ভালবাসা এবং আল্লাহ্‌র অপ্রিয় যাবতীয় বস্তুকে অপছন্দ করা ঈমানের একটি শাখা। স্বীয় চরিত্রে ঐ শাখা- প্রশাখার উন্মেষ ও অস্তিত্বের কম বেশী হওয়ার দরুনও ঈমানের উন্নতি- অবনতি হইয়া থাকে।
আরবী ভাষায় ঈমান শব্দের অর্থ বিশ্বাস। কিন্তু জে ঈমান মানব জাতির কল্যাণের উৎস এবং পরকালের নাজাত, মুক্তি ও সুখ- শান্তির একমাত্র পথ সে ঈমান শুধু মাত্র বিশ্বাসের নামই নহে। বরং সেই ঈমান- রত্ন বহু সাধনার ধন। সাধনা ব্যতিরেকে ঐ অমূল্য রত্ন হাসিলও হয় না, রক্ষিতও হয় না। 
আরো জানুন 



Thursday, January 28, 2016

ঈমান কাহাকে বলে?


ঈমান কাহাকে বলে?

আল্লাহ জাল্লা জালালুহুর নিকট হইতে হযরত মোহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাহা কিছু বহন করিয়া আনিয়া কোরআন রূপে এবং হাদিছের মাধ্যমে মানব জাতিকে দান করিয়েছেন ঐ সবকে অন্তরের সহিত বিশ্বাস ও মৌখিক স্বীকার করিয়া কার্যে পরিণত করার জন্য প্রস্তুত থাকাকে ‘ঈমান’ বলে। 



Tuesday, January 26, 2016

জেনে নিন , শিশুর গায়ে সরিষার তেল মাখা কতটুকু স্বাস্থ্যকর !

জেনে নিন , শিশুর গায়ে সরিষার তেল মাখা কতটুকু স্বাস্থ্যকর !

নবজাতকের পরিচর্যা প্রত্যেক মায়ের জানা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। বিশেষ করে যাঁরা নতুন মা হয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে। নবজাতকের পরিচর্যার ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত?শিশু জন্মের পর মা বা পরিবারের লোকজন তার যত্নআত্তি নিয়ে বেশ চিন্তায় পড়ে যান। দুধ খাওয়ানো, গোসল করানো, পায়খানা-প্রস্রাব ঠিকমতো হলো কি না—এসব নিয়ে নানা প্রশ্ন এসে ভিড় করে তাদের মনের ভেতর।
প্রথমেই যে প্রসঙ্গটি আসে, একটি বাচ্চা প্রসবের পর মায়ের খুব চিন্তা হয় বাচ্চা কী খাবে? খাওয়ার বিষয়টি প্রথমে বলতে চাই। প্রথমেই মায়ের শাল দুধ বাচ্চাকে খাওয়াতে হবে। বাচ্চাকে ঘন ঘন দুধ খাওয়ালে খুব দ্রুত মায়ের দুধের উৎপাদন বাড়বে।

২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মায়ের বুকের দুধ তেমনভাবে উৎপাদন হয় না। দুধ সেভাবে আসে না। তখনই আমাদের দেশে যে বিষয়টি হয়, বাইরের দুধ খাইয়ে দেওয়া হয়। সে জন্য যেটা প্রয়োজন, সঠিক নিয়মে বারবার মায়ের দুধ যদি টানানো যায়, তাহলে দুধ আসবে। সে ক্ষেত্রে মায়ের মস্তিষ্কে একটি সংকেত যাবে দুধ তৈরি করার জন্য। প্রথমে এই সংকেত থাকে না। শিশু যখন দুধ চোষে, সে সময় মস্তিষ্কে সংকেত যায় এবং দুধ তৈরি হয়। তখন হতাশ হয়ে যাওয়া চলবে না।

অনেক সময় দেখা যায়, মায়ের দুধের পরিবর্তে অন্য কিছু খাওয়ায়। মায়ের দুধের পরিবর্তে অন্য কিছু দেওয়া যাবে না। মায়ের শাল দুধ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ইত্যাদি অসুখ থেকে সুরক্ষা দেয়। অনেক সময় দেখা যায়, কেউ মুখে মিসরি দিয়ে দেয় বা মধু দিয়ে দেয়; এটি আসলে ঠিক নয়। এতে শিশুর দুধ চোষার বিষয়টি কমে যায়। শিশুকে বারবার বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।

শাল দুধে প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম; সেটি সবাই জানি। এই শাল দুধ কখন আসবে এবং দেখে কীভাবে বোঝা যাবে এটি শাল দুধ?

শাল দুধ একটু হলুদ রঙের থাকবে, ঘন হবে। সেটিই প্রথম খাওয়াতে হবে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শাল দুধ আসতে থাকবে। পরে দেখা যাবে সাদা দুধটি চলে আসছে।

নবজাতকের জন্য মায়ের বুকের দুধ প্রধান খাবার। তবে কখনো কখনো দেখা যায় তাকে হয়তো পানি বা বাড়তি কিছু দেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে কিছু বলুন?

ছয় মাস পর্যন্ত মায়ের দুধ খাওয়াতে হবে। শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি মায়ের সঙ্গে শিশুর যে বন্ধন রয়েছে, এটিও ভালো হবে। এ ছাড়া জীবাণু থেকে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা শিশু মায়ের বুকের দুধের মাধ্যমে পেয়ে থাকে।

নবজাতকের প্রস্রাব-পায়খানার বিষয়টি নিয়ে মা-বাবারা খুব বেশি উদ্বিগ্ন থাকেন। অনেক সময় দেখা যায়, শিশুটি হয়তো ঘনঘন পায়খানা করছে। আসলে একটি নবজাতক বা একটি বাচ্চার কী রকম হারে প্রস্রাব-পায়খানা হওয়া উচিত?

যতবারই শিশু বুকের দুধ খাবে, ততবারই প্রস্রাব করবে। জন্মের ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যেহেতু কম দুধ পেয়ে থাকে, সেহেতু কম প্রস্রাব করতে পারে। এটি নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই। শিশু জন্মের পাঁচ দিন পর থেকে শিশু ১০ থেকে ১২ বার প্রস্রাব করে থাকে। পায়খানার বিষয়টিও তাই। ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যে পায়খানাটি হয়, সেটির রং কালো থাকে। একে সাধারণত মিকোনিয়াম বলে থাকি। এই মিকোনিয়াম সাধারণত দুই দিন পর থেকে হলুদাভ হয়। একেকটি শিশুর ক্ষেত্রে একেক রকম বিষয় থাকে। দেখা যায়, কোনো কোনো শিশুর ক্ষেত্রে, মায়ের দুধ যারা খায়, একবার দুধ খেল, একটু পায়খানা করল। একে সাধারণত গ্যাসট্রোকলিক রিফ্লেক্স বলি। এটি খুব স্বাভাবিক। অনেক মা খুব চিন্তিত থাকেন বিষয়টি নিয়ে। ভাবেন, সম্ভবত শিশুর ডায়রিয়া হয়ে গেছে। বিশেষ করে এক মাস বয়সে যখন এগুলো হয়।

শিশুদের মলত্যাগ করার প্রক্রিয়া একেকটি শিশুর ক্ষেত্রে একেক রকম হয়। যারা মায়ের দুধ খায়, তাদের এক রকম যারা; ফরমুলা দুধ যারা খায়, তাদের এক রকম। সাধারণত মায়ের দুধ যারা খায়, দেখা যায় কোনো কোনো শিশু ৮ থেকে ১০ বার করে পায়খানা করে। যতবার সে মায়ের দুধ খাবে, ততবারই সে পায়খানা করতে পারে। এটি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এটি একটি স্বাভাবিক ব্যাপার।

আবার অনেক সময় দেখা যায়, কোনো কোনো শিশু সপ্তাহে একবার বা দুবার পায়খানা করে। এক মাস পর থেকে দেখা যায়, এই পরিবর্তনগুলো আসে। প্রথমে এই পরিবর্তনগুলো হয় না। পরে এই পরিবর্তনগুলো শুরু হতে থাকে। তখন মায়েরা চিন্তিত হয়ে যান, এক মাস ধরে তো শিশুটি নিয়মিত পায়খানা করত, এখন কেন এমন হচ্ছে? আসলে বলা যায়, বুকের দুধ কোনো শিশুর দ্রুত হজম হয়ে যায়, ফলে পায়খানা তৈরিও কম হয়। এবং শিশুরা পায়খানাও কম করে। সে ক্ষেত্রে সাত দিনে যদি একবার করে সেটাও স্বাভাবিক, আবার সাত দিনে যদি আট-দশবার করে সেটিও স্বাভাবিক। আবার অনেক শিশু দেখা যায়, দুই-তিন দিন পরপর পায়খানা করে, সেটিও স্বাভাবিক। এগুলো নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই।

তাহলে চিন্তার বিষয় কখন হবে

চিন্তা তখনই করবে, যখন একই ধরনের হয়তো পায়খানা করত হঠাৎ করে তার পরিমাণ বেশি হলো, পায়খানার রংটি হলুদ থেকে বাদামি বা লাল হয়ে যাচ্ছে। রক্ত আসছে পায়খানা থেকে। তখন তার আরেকটি জিনিস খেয়াল রাখতে হবে, প্রস্রাব কয়বার করছে। পায়খানার পরিমাণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যদি প্রস্রাবও ঠিকমতো করে, তবে সেটা নিয়ে চিন্তা করব না। তবে যদি দেখি, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাচ্ছে, তখন বুঝতে হবে বাচ্চার পানিশূন্যতা হচ্ছে। তখন অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

অনেক সময় দেখা যায় নবজাতকের গোসলের বিষয়টি নিয়ে অনেকে খুবই উদ্বিগ্ন থাকেন, আসলে কখন গোসল করানো উচিত এবং কীভাবে করাতে হবে?

আসলে নাভিটি পড়তে সাধারণত ৭ থেকে ১৪ দিন সময় লাগে। বলা হয়, নাভিটা শুষ্ক রাখাই ভালো। তখন গোসল না করিয়ে গা মুছিয়ে দিতে হবে। আমরা বলি, কুসুম গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে সারা শরীর মুছিয়ে দেবেন। নাভির অংশটি যেন শুষ্ক থাকে, সেদিকে খেয়াল করতে হবে। এর পর যখন নাভি পড়ে যাবে, তখন দেড় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে সপ্তাহে দুদিন গোসল করাবে। প্রতিদিন করানোর প্রয়োজন নেই। তিন দিন পরপর একদিন গোসল করবে। আর বাকি দিনগুলোতে গা মুছিয়ে দিতে হবে। শিশুকে অবশ্যই পরিষ্কার রাখতে হবে। বাজারে যে বেবি শ্যাম্পু বা সাবান পাওয়া যায়, সেটি দিয়ে তাকে গোসল দিতে হবে।

এর পর আসে তেল দেওয়ার বিষয়টি। এ ক্ষেত্রে আমরা সাধারণত বলে থাকি, শিশুর দেড় মাস হওয়ার আগে তেল না দেওয়াই ভালো। কারণ শিশুদের ত্বক পাতলা থাকে এবং বিভিন্ন ধরনের র‍্যাশ হয়। এ সময় তেল দিলে অনেকের ক্ষেত্রে র‍্যাশ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বলি, দেড় মাস পরে তাকে তেল, লোশন দেওয়া যাবে। গোসলের আগে তেল দিয়ে গোসল করিয়ে দিতে হবে।

আমরা আগে দেখতাম, মা-খালারা গোসলের পর সরিষার তেল গায়ে মেখে রোদে দিয়ে রাখতেন। শিশুকে সরিষার তেল বারবার দেওয়া খুব কি যৌক্তিক?

আসলে সরিষার তেল দিতে আমরা নিষেধ করি। কারণ, এটি খুব পুরু থাকে। এর জন্য র‍্যাশ হয়। বাচ্চার শরীর ময়লা হয়ে যায়। সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। সরিষার তেলের ঝাঁজ বেশি। আমরা সাধারণত বলি, সরিষার তেল না দেওয়াই ভালো। যদি বেবি অয়েল দিই বা অলিভ অয়েল দিই, সেটা দেওয়া যাবে। তবে সেটাও দেড় মাসের পরে।

একটা জিনিস আমরা দেখি, শিশুটির জন্মের পর খুব দ্রুত নানি-দাদিরা সাবান দিয়ে মেজে তার গোসল দিচ্ছে, সেটি আসলে কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

আসলে মায়ের শরীরে একটি সুরক্ষা দেওয়ার ফ্লুইড থাকে, যাকে এমনিওটিক ফ্লুইড বলি। এর পর তার ওপর আরেকটি লেয়ার থাকে, যাকে ভারনিক্স ক্যাসোসো বলে। সেটা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। জন্মের ছয়-সাত দিন পর এটি এমনিতেই চলে যাবে। আস্তে আস্তে শিশু নড়াচড়া করতে শুরু করলে এটি পরিষ্কার হয়ে যায়। কাজেই একে ঘষে পরিষ্কার করলে রোগ-জীবাণুকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। এটা না করাই ভালো।

মধুর মতো মিষ্টি যাতে হয় তার কণ্ঠস্বর, এ জন্য মধু দিয়ে খাবার শুরু করে। এটি কি খুব বেশি জরুরি?

মধু না দিলেই ভালো।

নবজাতকের নাভির পরিচর্যার ক্ষেত্রে কোন কোন বিষয়ে জোর দেওয়া দরকারঃ

নাভি শুষ্ক রাখতে হবে। নাভি ৭ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে শুকিয়ে পড়ে যাবে। আগে বলা হতো, স্যাভলন বা অ্যান্টিস্যাপটিক এগুলো ব্যবহারের জন্য। তবে এখন বলা হয়, কিছু দেওয়ার প্রয়োজন নেই। যদি কোনো কারণে নাভির চারদিকে লাল হয়ে যায়, নাভি ফুলে যায় তখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। আরেকটি স্বাভাবিক বিষয় হলো, অনেক শিশুর নাভি ফোলা থাকে, তখন মায়েরা চিন্তায় পড়ে যান। নাভি কেন ফুলে যাচ্ছে? এটা নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। এক বছর বয়স হতে হতে বিষয়টি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

এ ছাড়া দেখা যায়, তিন থেকে চার দিন বয়সে অনেক শিশুর বিলুরুবিনের মাত্রাটা বেড়ে যায়, জন্ডিস হয়। অনেক মা এ নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান। এটা আসলে খুব স্বাভাবিক একটি ব্যাপার। এটা বড়দের জন্ডিসের মতো নয় যে চিন্তা করতে হবে।

বিলুরুবিনটা কত বেশি হলে সেটি চিন্তার বিষয়?

সব শিশুরই জন্ডিস হবে, তবে সেটি কম আর বেশি। দেখা যায়, তিন থেকে চার দিনে জন্ডিস বাড়ে। আবার ছয়-সাত দিনে কমে যায়। সেসব শিশুর এর পরও না কমে, তাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। সাধারণত ১৫ থেকে ২০ হলে ফটোলাইট দিয়ে চিকিৎসা করি। এর বেশি হলে অনেক সময় রক্ত পাল্টানোর মতো পরিস্থিতি হয়।


শিশুর স্মরণশক্তি বাড়ানোর উপায়

Cute-Baby

বাবা-মা ও শিক্ষক-শিক্ষীকা ছাত্রছাত্রীর প্রতি একটু খেয়াল ও সতর্ক দৃষ্টি রাখলে সন্তান ভালো ফলাফল করতে পারে। কিছু নিয়ম, কিছু কৌশলী, কিছু ধারণা শিশুকে সামনের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
এই জন্য দরকার :
১. সুষম খাদ্য
২. পরিমিত ঘুম
৩. আত্মবিশ্বাস
৪. নিয়মিত ব্যায়াম
৫. প্রশংসা (পজিটিভ ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি)
৬. পড়ার কৌশল।

শিশুর স্মরণশক্তি বাড়ানোর উপায়

# ছোট শিশুদের জন্য মায়ের দুধ, মায়ের দুধ শিশুর স্মরণশক্তি বৃদ্ধির জন্য এর বিকল্প আর কিছুই নেই। এটা আল্লাহর নেয়ামক।
# কিশোর-কিশোরীদের জন্য পুষ্টি ও সুষম খাদ্য শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য একান্ত দরকার । অনেক টিনএজ মেয়েরা ডায়েটিং করে থাকে। এতে স্মরণশক্তি (মেমোরি) বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অন্তরায় হতে পারে।
# অনেক গবেষক মনে করেন, বাদাম দুধের সঙ্গে মিশিয়ে সকালে খাওয়ানো যেতে পারে।
# তাজা/ফ্রেস ফলমূল যেমন : আম, পেঁপে, পেয়ারা, তরমুজ ইত্যাদি বেশি বেশি খাওয়ানো উচিত।
# শিশুর আয়রণ ও জিংক ঘাটতি থাকলে স্মরণশক্তির সমস্যা থাকতে পারে। সেদিকে খেয়াল রেখে জিংক ও আয়রন চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে খাওয়ানো যেতে পারে।
# ওমেগা ও ফ্যাটি এসিড বুদ্ধি ও স্মরণশক্তি সঙ্গে সম্পৃক্ত আছে বলে বিশ্বাস করা হয় অতএব ওমেগা এগুলো বেশি খাওয়ানো উচিত।
ব্রিটেনে একটি গবেষণায় দেখা গেছে কম মনোযোগী বাচ্চাদের (Fish Oil) খাওয়ানোর পর তাদের বিহেভিয়ার ও স্কুল Performance এর উন্নতি হয়েছে।
তাই এগুলো পরিমাণে সামান্য কম, ভাত+সবজি+মাছ খাওয়াই ভালো।
# ঘুম : পরিমিত ঘুম খুবই দরকার। এইজন্য পরীক্ষার আগে সারারাত জেগে পড়ার কোনো যৌক্তিকতা আছে বলে মনে হচ্ছে না। রুটিনমাফিক পড়াই উত্তম। পড়ার পর বিশ্রাম স্মরণশক্তি বাড়ায়। অর্থাৎ ঘুম স্মরণশক্তি বাড়ায়।
# ব্যায়াম : ব্যায়াম স্মরণশক্তি বাড়ায়। বড় বড় করে বাচ্চাকে শ্বাস নিতে বলুন। পেটভরে শ্বাস তাতে ব্রেনের থিটা ওয়েব বেশি  হবে। ব্রেনে অক্সিজেন বেশি সঞ্চালন হবে। স্মরণশক্তি বাড়বে।
# চুইংগাম : সুগার ছাড়া চুইংগাম চিবাতে পারে এতে কিছুক্ষণের জন্য; ব্রেনে অক্সিজেন সঞ্চালন বেশি হতে পারে।
# যদি খুব টেনশন লাগে তাহলে নিয়মিত মেডিটেশন করা যেতে পারে।
# পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে হলে প্রয়োজন পড়াশুনা বেশিদিন মনে রাখা এবং বেশি সময় স্মরণ থাকা।
প্রত্যেক পিতামাতার উচিত
# কফি, কেনডি ও Drink না খাওয়াই ভালো খেতে দিন পরিমিত পরিমাণে।
# ছোট ছোট শিশুদের বলুন, এই ছড়াটা মনে রাখতে পারলে এই উপহারটা পাবে।
# আত্মবিশ্বাস : আমি পারবো- এই ধারণা শিশুকে আরো সামনে নিয়ে যেতে উৎসাহ জোগাবে।
সময় করে দেয়া : এতোটুকু সময়ে এই পরিমাণ পড়বে এই জন্য টাইমবক্স খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
রিপিট : মনে মনে ওই পড়াটা আবার স্মরণ করা।
শিক্ষণ প্রদ্ধতি : স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির প্রধান শর্ত হলো শিক্ষণ। শিশুকে যতোটুকু পড়াবেন তা যেন শিশু বুঝে বুঝে পড়ে এবং পড়ার সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকে এমন কিছু মিলিয়ে উদাহরণ দিয়ে কোনো ক্ষেত্র তৈরি করে পড়ানো উচিত।
# ছন্দ ও সুর করে পড়া ভালো।
# আবৃত্তি করে পড়া : মৃদু জোরে জোরে পড়লে দুটি ইন্দ্রীয় কাজ করে থাকে বিধায় মনোযোগ বেশি থাকে শিশুর জন্য এটি দরকারি।
# রুটিন প্রদ্ধতি : প্রতিদিন নিয়মিত পড়লে খুব অল্পতে পরীক্ষার প্রস্তুতি হয়ে যায়।
# পরীক্ষার আগে অনেক মানসিক চাপ থাকে এই চাপের কারণে পড়া শেষ হয় না অতএব রুটিনভাবে পড়া উচিত।
# বিশ্রাম : একটানা দীর্ঘ সময় পড়ার পর মাঝখানে একটু বিশ্রাম নেয়া ভালো। তাতে আবার পূর্ণ শক্তি পাওয়া যায়।
# জবারবি করা : পড়ার পর, মাঝখানের থেকে প্রশ্ন করতে হবে কি পড়লাম।
কী এবং কেন এই প্রশ্নটি ছাত্রছাত্রীদের জন্যে আশীর্বাদস্বরূপ। সাইকোলজিস্টদের মতে জবপরঃব যতো বেশি হবে, ততো বেশি মনে পড়াবে ধরুন একটি রাস্তা দিয়ে যতো হাঁটবেন ততো পায়ের ছাপ পড়বে। অতএব পড়াশুনা আর ব্যায়াম ঠিক এরকমই। নিজে নিজে প্রশ্ন করে উত্তর দেয়াÑ এতে কোনো বিষয়ে সামগ্রিক ধারণা তৈরি হবে এবং বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
শিশুর স্মরণশক্তি বৃদ্ধিতে একটি সোজা-সূত্র হলো এক নজরে একটা বিষয় সম্পর্কে ধারণা, মনে মনে একটি ম্যাপ তৈরি করা। এর অর্থ হলো বাচ্চা যতোটুকু পড়লো তার মধ্যে নিজে নিজে প্রশ্ন করে উত্তর দেয়া এতে ওই সম্বন্ধে বিভিন্ন আঙ্গিকে ব্যাখ্যা করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। বুঝে বুঝে পড়া। কোনো কিছু না বুঝে পড়লে বেশিক্ষণ মনে থাকে না।
আবৃত্তিসহ পড়া।


শিশুর জন্য মায়ের বুকের দুধ বাড়ানোর উপায় কি?

মা কে আঁশ জাতিও খাবার যেমন লাউ, মিষ্টি কুমড়া এসব খাবার মাছের মাঝে শিং মাছ এমনকি কালোজিরার ভর্তা খেতে দেয়া হলে বুকের দুধের পরিমাণ বাড়ে, আর অবশ্যই বেশী করে পানি পান করতে বলতে হবে।


বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ান এমন মায়েরা সাধারণত যেসব প্রশ্ন করেন

 

আমার শিশু দিনে কয়বার খেতে চাইতে পারে?
সব শিশুর ক্ষেত্রেই এটি আলাদা, এবং শিশু কীভাবে জন্ম নিয়েছে তার উপরও এটি নির্ভর করে। জন্মের পর প্রথম এক ঘণ্টার মধ্যে একবার দুধ খেয়ে তার শুভসূচনা করার কথা। এরপর শিশুরা ঘুমিয়ে পড়তে পারে, এবং পরে আবার খেতে চাইলে আপনাকে বিভিন্নভাবে সংকেত দেয়ার চেষ্টা করবে। এই সংকেতগুলো হচ্ছেঃ
  • ঘুম থেকে উঠে নড়াচড়া করা শুরু করবে
  • চারপাশে মাথা ঘোরাবে
  • কোন একটা কিছু (বেশীরভাগ সময়ই আঙ্গুল) নিয়ে চোষা শুরু করবে
নার্স শিশুকে নিয়ে আসার সাথে সাথে তাকে এমন ভাবে বুকে নিন যাতে আপনার ত্বক তার শরীরের ত্বকের সংস্পর্শে আসে। এতে সে শান্ত হয়ে আসে। যতক্ষন না সে খেতে চাইছে তাকে ওইভাবে বুকের সাথে ধরে রাখুন। প্রথম ছয় মাস সে ২-৩ ঘণ্টা পর পর দিনে ৮-১০ বার করে খেতে চাইবে। কিন্তু জন্মের ৩য় ও ৬ষ্ঠ সপ্তাহে এবং ৩য় মাসে সে দিনে ১০-১২ বার করে খেতে চাইবে কারণ এ সময়গুলোতে তাদের বৃদ্ধির হার বেশি থাকে। ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ মাসে শিশু দিনে ৪-৫ বার করে খেতে চাইবে।
শিশু “খেতে চাইলেই খেতে দেয়া” কেন গুরুত্বপূর্ণ?
নবজাতকের পাকস্থলী একটা মার্বেলের সমান হয়, তাই তাদেরকে ‘অল্প করে বার বার’ খেতে হয়। এ কারণে বাচ্চা খেতে চাইলেই তাকে খেতে দেয়াটা জরুরি। আপনার শিশু একবার ভাল করে খাওয়ার একটু পরেই আবার ক্ষুধার্ত হয়ে পড়তে পারে। শিশু বড় হওয়ার সাথে সাথে বিভিন্নভাবে খাওয়ার প্রবণতা দেখায়। তারা যখনই খেতে চায় তখনই তাদেরকে খেতে দিলে তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী পুষ্টির সরবরাহ করা নিশ্চিত হয়।
প্রতিবার কতক্ষণ করে খাওয়ানো উচিত?
প্রতিটি শিশুই আলাদা। কেউ কেউ অল্প করে বার বার খেতে চায় আবার কেউ কেউ অনেকক্ষণ ধরে খায়। শিশুকে প্রথমে একটি স্তনের দুধ খাইয়ে শেষ করুন, তারপর আরেকটি স্তন তার মুখে দিন। যদি বাচ্চা সারাক্ষণ খেতে থাকে এবং আপনার তাতে দুশ্চিন্তা হয়, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। ৬ মাসের কম বয়সী শিশুর ২০-৪৫ মিনিট ধরে খাওয়ার কথা।
বাচ্চা যথেষ্ট দুধ পাচ্ছে কিনা তা বুঝব কি করে?
আপনার বাচ্চা যথেষ্ট দুধ পাচ্ছে বুঝতে পারবেন, যদি
  • তার ওজন নিয়মিত হারে বাড়তে থাকে
  • দু’বার খাওয়ার মধ্যবর্তী সময়ে সে সন্তুষ্ট থাকে
  • ঠিকভাবে গিলতে পারে (তার ঢোক গেলার আওয়াজ খেয়াল করে শুনুন)
  • আপনার স্তন বাচ্চাকে খাওয়ানোর আগে শক্ত ও ভারি এবং খাওয়ানোর পর তুলনামুলকভাবে নরম মনে হয়।
  • শিশুর নিয়মিত পায়খানা হয়
জন্মানোর ৫ দিন পরে শিশুর কমপক্ষে ৩ বার পায়খানা হবে, এবং ৬-৮টি ডায়াপার ভেজাবে। তবে বড় হতে থাকার সময় সে পর পর কয়েকদিন পায়খানা না করেও থাকতে পারে।
শিশুকে কতদিন বুকের দুধ খাওয়াবো?
জন্মের পর প্রথম ছয় মাস শিশুকে অন্যকোন খাবার ছাড়া শুধুমাত্র বুকের দুধ খাইয়ে রাখার পরামর্শ দেয়া হয়। এরপর যতদিন আপানার শিশু চায় ততদিন তাকে অন্যান্য খাবারের সাথে সাথে বুকের দুধ দেয়া চালিয়ে যান। বিশেষজ্ঞদের মতে, আপনি শিশুর ২ বছর বয়স বা তারও পর পর্যন্ত তাকে বুকের দুধ দেয়া চালিয়ে যেতে পারেন।
শিশুকে যে কয়দিন বুকের দুধ দিবেন সে কয়দিনই আপনার ও শিশুর জন্য ভাল। কতদিন বুকের দুধ খাওয়াবেন তা আগেভাগে ঠিক করে নেয়ার দরকার নেই। অনেক মা-ই কাজে ফিরে গিয়ে বা আবার পড়াশোনা শুরু করার পরও শিশুকে বুকের দুধ খাইয়ে থাকেন।
স্তন থেকে বের করে রাখা দুধ কতক্ষণ ভাল থাকে?
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে, বুকের দুধ যত বেশি সময় আপনি সংরক্ষণ করবেন, এমনকি তা ফ্রিজে রেখে করলেও, তত বেশি তা থেকে ভিটামিন সি কমতে থাকবে এবং তার চর্বির গুনাগুন নষ্ট হতে থাকবে। সংরক্ষণ করে রাখা বুকের দুধ আপনার নবজাতকের চাহিদা মেটাতে পারলেও, সে যখন বড় হতে থাকবে তখন তার জন্য এটি যথেষ্ট হবে না।
আমাদের দেশের গরম এবং আর্দ্র আবহাওয়ায় বুকের দুধ ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় তিন ঘণ্টা পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। প্রতিবার ১-৪ আউন্সের বেশি সংরক্ষণ করবেন না। এটি ফ্রিজে রাখলে তিন দিন পর্যন্ত ভাল থাকার কথা।
আমার শিশুর ওজন কী পরিমাণে বাড়ার কথা?
জন্মের প্রথম সপ্তাহে শিশুর ওজন তার জন্মের সময়ের ওজনের চাইতে ৮-১০% কমে যাবে। এরপর দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ৬ মাস পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে তার ওজন ৫-৭ আউন্স করে বাড়তে থাকবে, ১২-২৪ মাসের সময় প্রতি সপ্তাহে তার ওজন ২ আউন্স করে বাড়তে থাকবে।
বুকের দুধ দেয়ার সময় আমি কেমন খাওয়া-দাওয়া করব?
বুকের দুধ দেয়ার সময় আপনি যথাযথ খাদ্যাভ্যাস বজায় রেখে এবং ব্যায়াম করে পর্যাপ্ত পরিমাণে ওজন কমাতে পারেন। প্রচুর খাওয়ার দরকার নেই। আপনার শরীরের চাহিদার প্রতি খেয়াল রাখুন এবং খিদে লাগলে খান। তবে স্বাস্থ্যকর খাবার খান। প্রচুর শাকসবজি, ফলমূল, মাছ (সামুদ্রিক মাছ নয়), এবং উপকারি চর্বিযুক্ত খাবার খান। আপনার শিশু ঘন ঘন বুকের দুধ খেলেও আপনি বাড়তি ক্যালরির চাহিদা একটা কলা বা আপেল অথবা পিনাট বাটার দিয়ে এক স্লাইস রুটি খেয়েও মেটাতে পারেন।
যারা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান তারা সাধারণত যেসব মায়েরা বাচ্চাকে বুকের দুধ দেন না তাদের চাইতে এক লিটার পানি বেশি খান। তাই যখনই তেষ্টা পাবে তখনই পানি খান, এতেই আপানার পানির চাহিদা পূরণ হওয়ার কথা।
বুকে দুধ তৈরির পরিমাণ বাড়াতে পারি কী করে?
  • শিশুকে যত দ্রুত সম্ভব বুকের দুধ দেয়া শুরু করুন, এমনকি যদি সে নাও খেতে চায় তাহলেও আপনার শরীর তার শরীরের সংস্পর্শে থাকলে জন্মের প্রথম কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই খাওয়ানোর অভ্যেস তৈরি করাটা সহজ হয়।
  • ঘন ঘন খাওয়ান - প্রতি ২-৩ ঘণ্টা পর পর।
  • আপনার শিশু স্তন যত চুষবে, দুধ তৈরির পরিমাণ তত বৃদ্ধি পাবে
  • দুটি স্তন থেকেই শিশুকে খাওয়ান। আপনার শিশু যদি একটি স্তন থেকে দুধ খায়, অন্যটি থেকে খেতে না চায় তাহলে সেটির দুধ চেপে বের করে রেখে সংরক্ষণ করুন।
  • বুকের দুধ খাওয়ানোর রুটিনের ব্যতিক্রম করবেন না। যদি আপনি শিশুকে খাওয়াতে না পারেন তাহলে স্তন থেকে দুধ চেপে বের করে রাখুন, তাতে দুধ তৈরির পরিমাণ ঠিক থাকবে।
  • যেসব ওষুধের কারণে দুধ তৈরি হওয়া কমে যায় সেগুলো খাবেন না। কোন ওষুধ খাওয়ার আগে ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করে নিন।
বুকের দুধ দেয়ার সময় কোন ওষুধগুলো পরিহার করা উচিত?
এসময় যেসব ওষুধ খেতে পারবেন তার মধ্যে রয়েছে প্যারাসিটামল, ইবুপ্রোফেন (ibuprofen); ওমিপ্রাজোল (omeprazole) এবং এসোমেপ্রাজোল (esomeprazole)-এর মত আলসারের ওষুধ (তবে, রেনিটিডিন (ranitidine) খাবেন না); উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ, যেমনঃ মেথিলডোপা (methyldopa), ল্যাবেটালোল (labetalol), ক্যাপটোপ্রিল (captopril); কৃমির ওষুধ, যেমন আল্বেনডাযোল (albendazole) ও মেবেনডাযোল (mebendazole)।
অ্যান্টিবায়োটিক এবং পেনিসিলিন খাওয়া এসময় নিরাপদ তবে যদি দেখেন যে আপনার শিশুর গায়ে ফুসকুড়ি দেখা দিচ্ছে তাহলে দুধ খাওয়ানো বন্ধ রাখুন এবং বিকল্প ওষুধ ঠিক করুন, কারণ এগুলোতে শিশুর অ্যালার্জি থাকতে পারে। সেফট্রিওয়াক্সন (ceftriaxone)-এর মত সেফালোস্প্রিন (Cephalosporin) জাতীয় ওষুধ নিরাপদ মনে করা হয়, তবে এর কারণে শিশুর পায়খানার অভ্যেস পরিবর্তিত হতে পারে - তার পায়খানা পাতলা হচ্ছে কিনা তা খেয়াল করুন।
যেসব ওষুধ খাবেন না তার মধ্যে রয়েছে, ক্লোরামফেনিকল (chloramphenicol), সিপ্রোফ্লোক্সাসিন (ciprofloxacin), ডক্সিসাইলিন (doxycycline) এবং মেট্রোনিডাযোল (metronidazole)।
আপনি যদি টিবি প্রতিরোধক কেমোথেরাপি (anti-TB chemotherapy) নিতে থাকেন তাহলে তার কোর্স সম্পূর্ণ করাটা জরুরী। চিকিৎসা সম্পূর্ণ করাটাই আপনি আপনার শিশুর দেহে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হতে না দেয়া নিশ্চিত করার সবচেয়ে ভাল উপায়। যক্ষার সব ধরনের ওষুধ বুকের দুধ দিচ্ছেন এমন মায়েদের উপযোগী এবং  এগুলো সেবন করার সময় আপনি দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যেতে পারেন। শিশুকে আইসোনিয়াজাইড প্রোফিলাক্সিস এবং BCG-এর টিকা দিয়ে রাখা উচিত এবং এবং তার জন্ডিস হয়েছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা উচিত।
আপনি যদি খিঁচুনি প্রতিরোধক বা বিষণ্ণতার ওষুধ খেতে থাকেন তাহলে, এটি বন্ধ করা বা বদলে দেয়া কঠিন হতে পারে তাই এমন অবস্থায় শিশুর ঝিমুনি আসছে কিনা বা অন্য কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তার মধ্যে দেখা যাচ্ছে কিনা তা খেয়াল রাখুন। অ্যামিট্রিপ্টিলাইন (amitriptyline)-জাতীয় বিষণ্ণতার ওষুধ দিনে ১৫০ মিলি গ্রাম পর্যন্ত নিরাপদে সেবন করা যায়।
যেসব মায়েদের ডায়াবেটিস আছে তারা নিশ্চিন্তে ইন্সুলিন এবং গ্লিবেঙ্কলামাইড (glibenclamide) নিতে পারেন, তবে এসময় শিশুর রক্তে শর্করা বা চিনির পরিমাণ পর্যবেক্ষণ করতে হবে তার যেন হাইপোগ্লাইসেমিয়া (hypoglycaemia) না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য। হাইপোথাইরয়েডিজমের চিকিৎসায় ব্যবহৃত লেভোথাইরক্সিন (Levothyroxin) এবং হাইপারথাইরয়েডিজমের চিকিৎসায় ব্যবহৃত প্রোপিলথিউরাসিল (propylthiouracil) গর্ভকালীন সময়ে খাওয়া নিরাপদ। যেকোনো ধরনের টিকা নিরাপদ এবং এগুলোর জন্য কোন বিধি-নিষেধ নাই।
আমার বাচ্চা বুকের দুধ খাচ্ছে নাআমি কী করতে পারি?
জন্মের ঠিক পর পর বেশিরভাগ বাবা-মা এই প্রশ্নটি করেন। এতে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। আপনার শিশু যথা সময়ে খাওয়া শুরু করবে। পুরোটা সময় মায়ের শরীরের সাথে তার শরীর লাগিয়ে রাখুন। শিশুকে আপনার কাছে রাখুন এবং সে যখন প্রস্তুত হবে তখন সে চুষে খাওয়া শুরু করবে। কোনমতেই জোর করবেন না।
জন্মের ১২-২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে যাওয়ার পরও শিশু খাওয়া শুরু না করলে তা মায়ের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এসময় ফিডারে করে খাওয়ানোর বদলে স্তন থেকে শালদুধ (কলোস্ট্রাম; colostrum) চেপে বের করে আঙ্গুলে নিয়ে খাওয়ানোর চেষ্টা করুন। যদি আপনার শিশু বেশিক্ষণ ধরে দুধ না খায়, কিন্তু নিয়মিত প্রস্রাব-পায়খানা করে তাহলে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। এসময় ফর্মুলা মিল্ক বা চিনি মেশানো পানি খাওয়ানো শুরু করবেন না। এগুলোর কোন দরকার নেই এবং এতে উপকারের পরিবর্তে ক্ষতি বেশি হয়।


বুকের দুধ বাড়াতে করনীয়

বুকে কম দুধ আসা অনেক মায়ের জন্য একটি বড় সমস্যা। কিন' এর সমাধান খুব সহজ। দুধের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য মূলত যে বিষয়গুলো জরুরি সেগুলো হলো শারীরিক ও মানসিক বিশ্রাম, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া এবং বিশেষ কিছু খাবার খাওয়া যে খাবারগুলো দুধের পরিমাণ বাড়াতে সরাসরি সহযোগিতা করে।
শারীরিক ও মানসিক বিশ্রাম
বুকে দুধ কম এলে অনেক ক্ষেত্রে মাকে ‘অপয়া’ হিসেবে অপবাদ দেয়া হয়। কিন' বিষয়টি সম্পূর্ণই ভ্রান্ত। এরূপ অপবাদে মা মানসিকভাবে আরও বেশি ভেঙে পড়েন এবং এই মানসিক সমস্যাই মায়ের বুকে দুধ না আসার একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। এক্ষেত্রে মা এবং পরিবারের সবাইকে মনে রাখতে হবে যে, বাচ্চা জন্মগ্রহণের পর দুধ আসা একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া এবং মায়ের পুষ্টি যদি নিশ্চিত করা যায় তাহলে দুধ আসবে। অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম এবং মানসিক অশান্তি মায়ের বুকের দুধ তৈরির প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে। এ জন্য মায়ের পর্যাপ্ত বিশ্রামের ব্যবস্থা করতে হবে। যদি সম্ভব হয় প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ মিনিট বিশেষ নিয়মে শবাসন করতে হবে।
শবাসনের নিয়ম 
মা বালিশ ছাড়া চিৎ হয়ে আরামের সঙ্গে শুয়ে পড়বেন (বিছানা বা মেঝেতে পাটি বিছিয়ে)। হাত দুটি শরীরের দুই পাশে থাকবে। দুই পায়ের মাঝে আধা হাত পরিমাণ ফাঁকা থাকবে। হালকাভাবে চোখ বন্ধ রেখে নাক দিয়ে লম্বা করে দম নিয়ে মুখ দিয়ে দম ছাড়তে হবে (পাঁচ-ছয়বার)। এরপর কিছুক্ষণ (দুই-তিনবার) স্বাভাবিকভাবে দম নিতে হবে। এরপর নাক দিয়ে ধীরে ধীরে দম নিয়ে নাক দিয়েই ধীরে ধীরে দম ছাড়তে হবে। দম নেয়ার চেয়ে ছাড়ার সময় একটু বেশি হবে। এরপর মনের চোখে নিঃশ্বাসের প্রবেশপথে মনোযোগ দিতে হবে। এতে শরীর ভারী ভারী অনুভব হবে। এবার চিন্তা করবেন বিশাল ফাঁকা মাঠে নরম ঘাসের ওপর আপনি শুয়ে আছেন। শীতকাল হলে চিন্তা করবেন হালকা গরম বাতাস আপনাকে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছে। গরমকাল হলে চিন্তা করবেন হালকা শীতল বাতাস আপনার শরীরে পরশ বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছে। এবার চারপাশের প্রাকৃতিক পরিবেশ চিন্তা করবেন। পাখির কলতান, ঝরনার ছলছল আর পাতার ঝিরিঝিরি শব্দ ও রঙ, ফুলের মিষ্টি সুবাস প্রভৃতি। এবার আপনার শিশুকে কল্পনায় প্রচুর পরিমাণে আনন্দের সঙ্গে দুধ পান করাতে থাকবেন। তার সঙ্গে খেলবেন, হাসবেন। ঘুমানোর সুযোগ থাকলে ঘুমিয়ে পড়বেন অথবা ধীরে ধীরে মাথা, হাত-পা নাড়বেন এবং উঠে যাবেন।
পানি পান
প্রতিদিন কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত। পানি পানের পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়াতে হবে। ভাতের সঙ্গে কাঁচা লবণ খেতে হবে (অতিরিক্ত পানি খাওয়ার কারণে যাতে শরীরে লবণের ঘাটতি না হয়)। তবে যাদের হাইপ্রেসার বা উচ্চরক্তচাপ আছে তারা কাঁচা বা পাতে লবণ খাবেন না।
ঘন ঘন দুধ খাওয়ানো
বাচ্চাকে যত ঘন ঘন দুধ দেবেন তত বেশি দুধ আসতে থাকবে। বাচ্চা যদি খুব কম দুধ পান করে সে ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে দুধ চিপে ফেলে দেবেন। প্রথম ছয় মাস প্রতিদিন ৮-১০ বার বা বাচ্চার চাহিদা অনুযায়ী আরও বেশি বার দুধ পান করাতে হবে। একবারে ১০-২০ মিনিট বা তারও বেশি সময় ধরে দুধ দেবেন।
খাবার
মাকে যতটুকু সম্ভব বেশি পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার (যেমন- মাছ, ডিম, দুধ প্রভৃতি) খেতে হবে। অতিরিক্ত দুধ তৈরিতে যে খাবারগুলো সরাসরি সহযোগিতা করে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে গাজর, শিম, বাদাম (চীনাবাদাম, কাজুবাদাম), কালোজিরার ভর্তা, লাউ, ডুমুর, পালংশাক, কলমিশাক, টমেটো প্রভৃতি।
বিশেষ সতর্কতা
দুধদানকারী মা যদি এইডস, যক্ষ্মা বা অন্য কোনো দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হন তবে দুধদানের আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অনুমতি নিতে হবে। দুধদানের সময় মায়ের কখনোই কোক, পেপসি, স্প্রাপ্রাইট প্রভৃতি কোমল পানীয় এবং চা, কফি পান করা ঠিক নয়। কারণ এগুলো থেকে ক্ষতিকর কিছু উপাদান মায়ের শরীরে এবং মায়ের শরীর থেকে দুধের সঙ্গে বাচ্চার শরীরে প্রবেশ করতে পারে। এতে বাচ্চা অসুস' হয়ে পড়তে পারে।
লেখক : ডায়েটিশিয়ান
সুনর্গ.ইনফু


প্রাকৃতিক উপায়ে প্রসুতি মায়েদের বুকের দুধ বৃদ্ধি করবেন কিভাবে



আমাদের দেশে প্রায় ৮৫% মায়েরা মনের সন্দেহের কারণেই অভিযোগ করে বসেন যে বুকের দুধ তার সন্তান ঠিক মত পাচ্ছে না, এ ধরনের কোনো সমস্যা থাকলে এমনিতেই তা ঠিক হয়ে যাওয়ার কথা যদি প্রসুতি মাকে উত্সাহ দিয়ে তার মানসিক চাপটা কমিয়ে স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসা যায় অর্থাৎ স্ট্রেস হরমোনের পরিমান যে কোন উপায়ে কমানোটাই হচ্ছে এর উত্তম মাধ্যম। তারপরও নিচের ব্যাবস্থা সমূহ ৫/৭ দিন করে নিতে পারলে দেখবেন মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

সর্ব প্রথম প্রসুতি মাকে স্ট্রেস কমাতে হবে। এক্ষেত্রে সামাজিক কোন কারণে হলেও তা বুঝিয়ে দূর করার চেস্টা করতে হবে অন্তত তার শিশুর সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য। কারণ অনেক সময়ই দেখা যায় মেয়ে সন্তান জন্ম নিলে পরিবারের পক্ষ থেকে কিছু অবেহালা জনিত ব্যাবহার, স্বামীর সন্তান বা মায়ের প্রতি ভালবাসার কিছুটা অনিহা ...........ইত্যাদি লক্ষ্য করা যায়। এধরনের সংকীর্ণতা পরিহার করে প্রসুতি মাকে উত্সাহ দিয়ে তার যাবতীয় মানুষিক চাপ দূর করতে হবে। 

সেই সাথে মাকে প্রতিদিন কম পক্ষে ১৮০০ ক্যালরি ক্ষমতা সম্পন্ন খাবার খাওয়াতে হবে । অবশ্যই আর ও ভাল হবে যদি যে সব খাবারে উচ্চ ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার, দুধ ও ডিম জাতীয় খাবার, প্রচুর ভিটামিন যোক্ত ফল, এবং উন্নত মানের কিছু লতা পাতা জাতীয় শাঁক ও তরকারী, লবণাক্ত মাছ বা সারটিন জাতীয় মাছ, বাদামী চাল, চর্বিহীন মাংস, এবং কচি মুরগের বাচ্চা ইত্যাদি নিজ সাধ্যমত খাওানোর চেস্টা করা উচিত।
এরপরও যদি দেখা যায় মায়ের বুকে বেশী দুধ ভালো আসছেনা যা কোন অসুখের কারণেও হতে পারে, তা হলে আপনার হোমিওপ্যাথের পরামর্শ নিন। তাছাড়া নবজাতক যদি মায়েদের বুকের দুধ না পায় সেক্ষেত্রে হোমিওপ্যাথি চিকিত্সায় মায়েদের বুকের দুধ বাড়ানোর সুন্দর সমাধান রয়েছে। তাই সে ক্ষেত্রে আপনি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াহীন হোমিও চিকিত্সা নিতে পারেন যা আপনার এবং আপনার সন্তান দু' জনের জন্যই মঙ্গলজনক। কারণ হোমিওপ্যাথি হলো সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বিশুদ্ধ এবং প্রাকৃতিক।


মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধির কিছু প্রাকৃতিক উপায়



সান্ত্বনা বিশ্বাস
(ফার্মাসিস্ট)
স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ ।

বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ানোর জন্য প্রতিটি চেষ্টাই খুবই মূল্যবান। কারন শিশুর কমপক্ষে এক বছরের খাদ্য হিসেবে মায়ের বুকের দুধ সর্বোৎকৃষ্ঠ। বুকের দুধ শিশুর সকল পুষ্টির চাহিদা তো পূরণ করেই, সাথে সাথে শিশুর শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি করে যা শিশুকে বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে, অ্যালার্জি প্রতিরোধ করে এবং বেড়ে ওঠার সাথে সাথে অ্যাজমা ও ওবেসিটির ঢাল হিসেবে কাজ করে। বুকের দুধ খাওয়ানো মাকে তার গর্ভকালীন সময়ে বৃদ্ধি পাওয়া ওজন দ্রুত কমাতেও সহায়তা করে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, যে সকল মায়েরা তাদের সন্তানদের বুকের দুধ খাওয়ান তাদের ব্রেস্ট ক্যান্সার ও ওভারিয়ান ক্যান্সার হবার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। এতকিছুর পরেও অনেক মায়েরাই তাদের শিশুদেরকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারেন না। কারন তাদের পর্যাপ্ত বুকের দুধ হয় না। পর্যাপ্ত বুকের দুধ না হওয়ার অন্যতম প্রধান কারনগুলো হল, অপর্যাপ্ত খাদ্য ও তরল গ্রহন, অধিক ধকল নেওয়া এবং বাচ্চাকে বেশি অনিয়মিতভাবে ভাবে অথবা খুব অল্প সময়ের জন্য বুকের দুধ খাওয়ানো।
প্রাকৃতিক উপায়ে এ সমস্যা সমাধানের কিছু টিপস্‌:
(১) সুষম খাবার গ্রহন। প্রতিদিন ২,৫০০ ক্যালরি গ্রহন করতে বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
(২) প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা। মায়ের শরীর কখনোই পর্যাপ্ত দুধ উৎপাদন করতে পারে না যদি পানি পানের পরিমাণ কম হয়।
(৩) রাতে যতটুকু সম্ভব নিশ্চিন্তে ঘুমানো এবং দিনের বেলাতেও শিশু ঘুমানো অবস্থায় অল্পক্ষণের ঘুম দিয়ে নেয়া।
(৪) নিয়মিত কিছু হালকা ব্যায়াম করা।
(৫) বাসার আত্মীয়-স্বজনদের সাথে কাজ ভাগ করে নেওয়া, যাতে একার উপর চাপ বেশি না পড়ে।
(৬) ঘন ঘন বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ালে বুকের দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
(৭) প্রতিদিন এক বাটি করে ওটমিল খাওয়া।


Monday, January 25, 2016

বিক্রয় করা হবে SYMPHONY Xplorer E5 যোগাযোগ 01705901498



হলুদের আশ্চর্য জনক ৯ টি উপকারিতা, জেনে নিন বিস্তারিত!

holud

ভারতীয় উপমহাদেশে সাধারণত তরকারি রান্নার ক্ষেত্রে হলুদ ব্যবহার করা হয়। দক্ষিণ এশিয়া হলুদ গাছের আদি স্থান। এই মসলার রয়েছে কিছু গুণগত উপাদান।
যদি নিয়মিত হলুদ খাওয়া হয়, তাহলে শরীরের ৯টি উপকার হয়। স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট হেলদি ফুড হাউস জানিয়েছে হলুদের সেসব উপকারের কথা। নিয়মিত খাদ্যতালিকায় আধা চা-চমচ হলুদ ব্যবহারে এই উপকারগুলো পেতে পারেন আপনি।
১. দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ দূর করে –
কম সময়ের প্রদাহ শরীরের জন্য উপকারী এবং এটি রোগের সঙ্গে লড়াই করে। তবে দীর্ঘ সময়ের প্রদাহ বা ক্রনিক ইনফ্লামেশন জীবননাশের কারণও হয়। হলুদ এই দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ দূর করতে সাহায্য করে।
২. অ্যান্টি অক্সিডেন্ট –
হলুদের রয়েছে কারকিউমিন, এটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ফ্রি রেডিকেলস দূর করতে সাহায্য করে। ফ্রি রেডিকেলস শরীরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই ফ্রি রেডিকেলসের মাত্রা কমা শরীরের জন্য ভালো।
৩. মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতাকে ভালো রাখে –
বিডিএনএফ হরমোন অথবা ব্রেন-ডিরাইভড নিউরোট্রোপি মস্তিষ্কে নিউরোনের ভাগ এবং সংখ্যা বৃদ্ধিতে কাজ করে। বয়স বাড়লে মস্তিষ্কের এই কার্যকারিতা কমে যায়।
যদি খাদ্যতালিকায় হলুদ থাকে, এই হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যায়। এটি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে, স্মৃতিশক্তি এবং বুদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করে।
৪. মস্তিষ্কের রোগ হওয়ার আশঙ্কা কমায় –
মস্তিষ্কের বিডিএনএফ হরমোনের বৃদ্ধি মস্তিষ্কের রোগের ঝুঁকি কমায়। এটি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। আর আমরা আগেই জেনেছি হলুদ এই হরমোনের নিঃসরণ বাড়ায়।
৫. হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় –
রক্তনালির অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হলে রক্তচাপ অনিয়ন্ত্রিত হয়, এতে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। খাদ্যতালিকায় হলুদ থাকলে রক্তনালীর কার্যক্রম ভালো থাকে। এর ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
৬. স্মৃতিভ্রম রোগ রোধে –
প্রদাহ একটি বড় কারণ বয়স্কদের স্মৃতিভ্রম রোগের। হলুদ প্রদাহ কমিয়ে স্মৃতিভ্রম রোধে সাহায্য করে।
৭. আরথ্রাইটিসের ব্যথা রোধে –
গাঁটের প্রদাহ আরথ্রাইটিসের একটি প্রচলিত কারণ। হলুদের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি বা প্রদাহরোধী গুণ। এটি আরথ্রাইটিস রোধে সাহায্য করে। হলুদে উপস্থিত কারকুমিন বিভিন্ন ক্রনিক (যেসব রোগ প্রতিকার করা যায় না) রোগের চিকিৎসায় বেশ কার্যকর। বিভিন্ন ধরনের পেটের সমস্যা রোধে হলুদ কাজ করে।
৮. ক্যানসার প্রতিরোধে সাহায্য করে –
ক্যানসারের কোষের বৃদ্ধি এবং ছড়িয়ে পড়া রোধে হলুদ সাহায্য করে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এটি মুখগহ্ববরের ক্যানসার রোধে কার্যকরী।
৯. বিষণ্ণতা দূর করে –
গবেষণায় বলা হয়, কারকুমিন বিভিন্ন ধরনের বিষণ্ণতা দূরকারী ওষুধের মতো সমান কাজ করতে পারে। তাই খাদ্যতালিকায় হলুদ রাখা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও ভালো। তবে যেকোনো খাবার নিয়মিত গ্রহণের ক্ষেত্রে আপনার শারীরিক অবস্থা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।


সজনে গাছের ভেষজ গুণাগুণ



সজনে গাছের পাতার যে বহু গুণ আছে, তা কি আপনারা জানতেন? এই গাছটির পাতায় সব এসেনশিয়াল অ্যামাইনো অ্যাসিড আছে (এগুলো দিয়েই আমিষ তৈরি হয়), পালং শাকের থেকেও বেশি পরিমাণ লোহা, দুধের থেকে বেশি পরিমাণে ক্যালশিয়াম, গাজরের থেকে বেশি পরিমাণে ভিটামিন এ, এবং সজনের বীজের সাহায্যে পানিকে বিশুদ্ধও করা যায়।


Sunday, January 24, 2016

মৃত্যুর পর আমাদের শরীরের কি ধরনের পরিবর্তন সাধিত হয়



খুব গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা নিজে পড়ুন
এবং অন্যকে পড়ার জন্য উৎসাহিত
করুন...!!
নিজের মৃত দেহ সম্পর্কে কিছু
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
জেনে নেইঃ
.
মৃত্যুর পর আমাদের শরীরের কি
ধরনের পরিবর্তন সাধিত হয়?
১) তিন দিন পর নখ পড়ে যেতে শুরু
করে।
২) চার দিন পর চুল ক্ষয় হওয়া শুরু
করে।
৩) পাঁচদিন পর মস্তিষ্ক গলে
যেতে শুরু করে।
৪) ছয়দিন পর পাকস্থলি গলে মুখ
দিয়ে এবং গোপন অঙ্গ দিয়ে বের
হতে থাকে।
৫) ষাট দিন পর হাড় ছাড়া কিছুই
থাকেনা।
.
এবার একটু ভাবুনতো, একটু চিন্তা
করুন মনোযোগ দিয়ে...
যদি এই মুহুর্তে আমি বা আপনি
মারা যাই তাহলে উপরোক্ত ঘটনা
ঘটা শুরু হবে আমি অথবা
আপনার দেহের আপনার কিংবা
আমার কোন অস্তিত্ব থাকবেনা
অহংকার করার জন্য।
সাজার জন্য অথবা পরিপাটি
হওয়ার জন্য।
অপরদিকে, আমরা এরকমও দেখতে
পাই যে,
যারা আল্লাহর প্রিয় বান্দা
তাদের লাশ শত শত বছর পরও অক্ষত
থেকে যায়।
আল্লাহ বলেছেন,
''যারা আল্লাহর পথে নিহত হয়
তাদের তোমরা মৃত বলোনা বরং
তারা জীবিত কিন্তু তোমরা
বুঝনা।''
- (সূরা বাকারা ১৫৪)
.
★ তাহলে কি জন্য কিংবা কোন
বিষয়ে
আমরা অহংকার করব?
★ কি কারনে আমরা আল্লাহর
অবাধ্য হব?
★ কোন অজুহাতে আমরা নামাজ
ছেড়ে দেব?
★ কি কারনে আমরা নিশ্চিত মৃত্যু
আমাদের
জন্য অপেক্ষা করছে জেনেও
গাফলতির মধ্যে সময় কাটাব?
.
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন,
"মিনহা খালাক নাকুম ওয়াফিহা
নুয়িদুকুম ওয়ামিনহা নুখরিজুকুম তা
রাতান উখরা।"
অর্থাৎ ,"মাটি দিয়ে আমি সৃষ্টি
করেছি, এই মাটিতেই আবার
ফিরিয়ে দেব এই মাটি থেকেই
আবার আমি তুলে আনব। (সূরা
ত্বাহা :২০ :৫৫)
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আরো
বলেন,
"প্রত্যেক প্রাণিকেই মৃত্যুর স্বাদ
গ্রহন করতে হবে।"
-(আল কোরআন)
.
তাই আসুন, সব ধরনের অহংকার
পরিত্যাগ করে আমরা সবাই মৃত্যুর
জন্য প্রস্তুতি গ্রহন
করি।
নিজে জাহান্নামের আগুন থেকে
বাঁচি এবং আমাদের পরিবার
পরিজনকে জাহান্নামের আগুন
থেকে বাঁচাই।'
.
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সবাইকে
সেই তওফিক দান করুন এবং
জাহান্নামের আগুন থেকে
আমাদের সবাইকে রক্ষা করুন।


Friday, January 22, 2016

কাজী নজরুল ইসলাম জীবনী

কাজী নজরুল ইসলাম (উচ্চারণ: [Kaʒi Naʒrul Islam]মে ২৫১৮৯৯আগস্ট ২৯১৯৭৬) (জ্যৈষ্ঠ ১১, ১৩০৬–ভাদ্র ১২, ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ) ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম জনপ্রিয় অগ্রণী বাঙালি কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ ও দার্শনিক যিনি বাংলা কাব্যে অগ্রগামী ভূমিকা রাখার পাশাপাশি প্রগতিশীল প্রণোদনার জন্য সর্বাধিক পরিচিত। তিনি বাংলা সাহিত্য, সমাজ ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব হিসেবে উল্লেখযোগ্য।[১] বাঙালী মণীষার এক তুঙ্গীয় নিদর্শন নজরুল। তিনি বাংলা ভাষার অন্যতম সাহিত্যিক, দেশপ্রেমী এবং বাংলাদেশের জাতীয় কবিপশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ – দুই বাংলাতেই তাঁর কবিতা ও গান সমানভাবে সমাদৃত। তাঁর কবিতায় বিদ্রোহী দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তাঁকে বিদ্রোহী কবিনামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাঁর কবিতার মূল বিষয়বস্তু ছিল মানুষের ওপর মানুষের অত্যাচার এবং সামাজিক অনাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদ। বিংশ শতাব্দীর বাংলা মননে কাজী নজরুল ইসলামের মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। একাধারে কবি, সাহিত্যিক, সংগীতজ্ঞ, সাংবাদিক, সম্পাদক, রাজনীতিবিদ এবং সৈনিক হিসেবে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে নজরুল সর্বদাই ছিলেন সোচ্চার। তাঁর কবিতা ও গানে এই মনোভাবই প্রতিফলিত হয়েছে। অগ্নিবীণা হাতে তাঁর প্রবেশ, ধূমকেতুর মতো তাঁর প্রকাশ। যেমন লেখাতে বিদ্রোহী, তেমনই জীবনে –- কাজেই "বিদ্রোহী কবি", তাঁর জন্ম ও মৃত্যু বার্ষিকী বিশেষ মর্যাদার সঙ্গে উভয় বাংলাতে প্রতি বৎসর উদযাপিত হয়ে থাকে।
নজরুল এক দরিদ্র মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রাথমিক শিক্ষা ছিল ধর্মীয়। স্থানীয় এক মসজিদে সম্মানিত মুয়াযযিন হিসেবে কাজও করেছিলেন। কৈশোরে বিভিন্ন থিয়েটার দলের সাথে কাজ করতে যেয়ে তিনি কবিতানাটক এবং সাহিত্য সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞান লাভ করেন।ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কিছুদিন কাজ করার পর তিনি সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। এসময় তিনি কলকাতাতেই থাকতেন। এসময় তিনি ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। প্রকাশ করেন বিদ্রোহী এবং ভাঙার গানের মত কবিতা; ধূমকেতুর মত সাময়িকী। জেলে বন্দী হলে পর লিখেন রাজবন্দীর জবানবন্দী, এই সব সাহিত্যকর্মে সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা ছিল সুস্পষ্ট। ধার্মিক মুসলিম সমাজ এবং অবহেলিত ভারতীয় জনগণের সাথে তার বিশেষ সম্পর্ক ছিল। তার সাহিত্যকর্মে প্রাধান্য পেয়েছে ভালবাসা, মুক্তি এবং বিদ্রোহ। ধর্মীয় লিঙ্গভেদের বিরুদ্ধেও তিনি লিখেছেন। ছোট গল্প, উপন্যাস, নাটক লিখলেও তিনি মূলত কবি হিসেবেই বেশি পরিচিত। বাংলা কাব্যে তিনি এক নতুন ধারার জন্ম দেন। এটি হল ইসলামী সঙ্গীত তথা গজল, এর পাশাপাশি তিনি অনেক উৎকৃষ্ট শ্যামাসংগীত ও হিন্দু ভক্তিগীতিও রচনা করেন। নজরুল প্রায় ৩০০০ গান রচনা এবং অধিকাংশে সুরারোপ করেছেন যেগুলো এখন নজরুল সঙ্গীত বা "নজরুল গীতি" নামে পরিচিত এবং বিশেষ জনপ্রিয়। মধ্যবয়সে তিনি পিক্‌স ডিজিজে[২] আক্রান্ত হন। এর ফলে আমৃত্যু তাকে সাহিত্যকর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে হয়। একই সাথে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। বাংলাদেশ সরকারের আমন্ত্রণে ১৯৭২ সালে তিনি সপরিবারে ঢাকা আসেন। এসময় তাকে বাংলাদেশের জাতীয়তা প্রদান করা হয়। এখানেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

জীবনী[সম্পাদনা]

জন্ম ও প্রাথমিক জীবন[সম্পাদনা]

১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২৪মে (জ্যৈষ্ঠ ১১, ১৩০৬ বঙ্গাব্দভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন কাজী নজরুল ইসলাম।[১] চুরুলিয়া গ্রামটি আসানসোল মহকুমার জামুরিয়া ব্লকে অবস্থিত। পিতামহ কাজী আমিন উল্লাহর পুত্র কাজী ফকির আহমদের দ্বিতীয় স্ত্রী জাহেদা খাতুনের ষষ্ঠ সন্তান তিনি। তার বাবা ফকির আহমদ ছিলেন স্থানীয় মসজিদের ইমাম এবং মাযারের খাদেম। নজরুলের তিন ভাইয়ের মধ্যে কনিষ্ঠ কাজী আলী হোসেন এবং দুই বোনের মধ্যে সবার বড় কাজী সাহেবজান ও কনিষ্ঠ উম্মে কুলসুম। কাজী নজরুল ইসলামের ডাক নাম ছিল "দুখু মিয়া"। নজরুল গ্রামের স্থানীয় মসজিদে মুয়াজ্জিনের কাজ করেন। মক্তবে (মসজিদ পরিচালিত মুসলিমদের ধর্মীয় স্কুল) কুরআন, ইসলাম ধর্ম, দর্শন এবং ইসলামী ধর্মতত্ত্ব অধ্যয়ন শুরু করেন। ১৯০৮ সালে তার পিতার মৃত্যু হয়, তখন তার বয়স মাত্র নয় বছর। পিতার মৃত্যুর পর পারিবারিক অভাব-অনটনের কারণে তার শিক্ষাজীবন বাঁধাগ্রস্থ হয় এবং মাত্র দশ বছর বয়সে তিনি জীবিকা অর্জনের জন্য কাজে নামতে হয় তাকে।[৩] এসময় নজরুল মক্তব থেকে নিম্ন মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উক্ত মক্তবেই শিক্ষকতা শুরু করেন। একই সাথে হাজী পালোয়ানের কবরের সেবক এবং মসজিদের মুয়াযযিন (আযান দাতা) হিসেবে কাজ শুরু করেন। এইসব কাজের মাধ্যমে তিনি অল্প বয়সেই ইসলামের মৌলিক আচার-অনুষ্ঠানের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে পরিচিত হবার সুযোগ পান যা পরবর্তীকালে তার সাহিত্যকর্মে বিপুলভাবে প্রভাবিত করে।[১] তিনিই বাংলা সাহিত্যে ইসলামী চেতনার চর্চা শুরু করেছেন বলা যায়।[১]
মক্তব, মসজিদ ও মাজারের কাজে নজরুল বেশি দিন ছিলেন না। বাল্য বয়সেই লোকশিল্পের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে একটি লেটো (বাংলার রাঢ় অঞ্চলের কবিতা, গান ও নৃত্যের মিশ্র আঙ্গিক চর্চার ভ্রাম্যমান নাট্যদল)[৪] দলে যোগ দেন। তার চাচা কাজী বজলে করিম চুরুলিয়া অঞ্চলের লেটো দলের বিশিষ্ট ওস্তাদ ছিলেন এবং আরবি, ফার্সি ও উর্দূ ভাষায় তার দখল ছিল। এছাড়া বজলে করিম মিশ্র ভাষায় গান রচনা করতেন। ধারণা করা হয়, বজলে করিমের প্রভাবেই নজরুল লেটো দলে যোগ দিয়েছিলেন। এছাড়া ঐ অঞ্চলের জনপ্রিয় লেটো কবি শেখ চকোর (গোদা কবি) এবং কবিয়া বাসুদেবের লেটো ও কবিগানের আসরে নজরুল নিয়মিত অংশ নিতেন। লেটো দলেই সাহিত্য চর্চা শুরু হয়। এই দলের সাথে তিনি বিভিন্ন স্থানে যেতেন, তাদের সাথে অভিনয় শিখতেন এবং তাদের নাটকের জন্য গান ও কবিতা লিখতেন। নিজ কর্ম এবং অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বাংলা এবং সংস্কৃত সাহিত্য অধ্যয়ন শুরু করেন। একইসাথে হিন্দু ধর্মগ্রন্থ অর্থাৎ পুরাণসমূহ অধ্যয়ন করতে থাকেন। সেই অল্প বয়সেই তার নাট্যদলের জন্য বেশকিছু লোকসঙ্গীত রচনা করেন। এর মধ্যে রয়েছে চাষার সঙশকুনীবধরাজা যুধিষ্ঠিরের সঙদাতা কর্ণআকবর বাদশাহকবি কালিদাস,বিদ্যাভূতুমরাজপুত্রের গানবুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ এবং মেঘনাদ বধ[১] একদিকে মসজিদ, মাজার ও মক্তব জীবন, অপর দিকে লেটো দলের বিচিত্র অভিজ্ঞতা নজরুলের সাহিত্যিক জীবনের অনেক উপাদান সরবরাহ করেছে। নজরুল কালীদেবিকে নিয়ে প্রচুর শ্যামা সঙ্গিত ও রচনা করেন, নজরুল তার শেষ ভাষনে উল্লেখ্য করেন - “ কেউ বলেন আমার বানী যবন কেউ বলেন কাফের। আমি বলি ও দুটোর কোনটাই না। আমি শুধু হিন্দু মুসলিম কে এক জায়গায় ধরে নিয়ে হ্যান্ডশেক করানোর চেষ্টা করেছি, গালাগালি কে গলাগলি তে পরিণত করার চেষ্টা করেছি। ”
১৯১০ সালে নজরুল লেটো দল ছেড়ে ছাত্র জীবনে ফিরে আসেন। লেটো দলে তার প্রতিভায় সকলেই যে মুগ্ধ হয়েছিল তার প্রমাণ নজরুল লেটো ছেড়ে আসার পর তাকে নিয়ে অন্য শিষ্যদের রচিত গান: "আমরা এই অধীন, হয়েছি ওস্তাদহীন / ভাবি তাই নিশিদিন, বিষাদ মনে / নামেতে নজরুল ইসলাম, কি দিব গুণের প্রমাণ", এই নতুন ছাত্রজীবনে তার প্রথম স্কুল ছিল রানীগঞ্জেরসিয়ারসোল রাজ স্কুল, এরপর ভর্তি হন মাথরুন উচ্চ ইংরেজি স্কুলে যা পরবর্তীতে নবীনচন্দ্র ইনস্টিটিউশন নামে পরিচিতি লাভ করে। মাথরুন স্কুলের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক ছিলেন কুমুদরঞ্জন মল্লিক যিনি সেকালের বিখ্যাত কবি হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। তার সান্নিধ্য নজরুলের অনুপ্রেরণার একটি উৎস। কুমুদরঞ্জন স্মৃতিচারণ করতে যেয়ে নজরুল সম্বন্ধে লিখেছেন,
ছোট সুন্দর ছনমনে ছেলেটি, আমি ক্লাশ পরিদর্শন করিতে গেলে সে আগেই প্রণাম করিত। আমি হাসিয়া তাহাকে আদর করিতাম। সে বড় লাজুক ছিল।
যাহোক, আর্থিক সমস্যা তাকে বেশী দিন এখানে পড়াশোনা করতে দেয়নি। ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ার পর তাকে আবার কাজে ফিরে যেতে হয়। প্রথমে যোগ দেন বাসুদেবের কবিদলে। এর পর একজন খ্রিস্টান রেলওয়ে গার্ডের খানসামা এবং সবশেষে আসানসোলের চা-রুটির দোকানে রুটি বানানোর কাজ নেন। এভাবে বেশ কষ্টের মাঝেই তার বাল্য জীবন অতিবাহিত হতে থাকে। এই দোকানে কাজ করার সময় আসানসোলের দারোগা রফিজউল্লাহ'র' সাথে তার পরিচয় হয়। দোকানে একা একা বসে নজরুল যেসব কবিতা ও ছড়া রচনা করতেন তা দেখে রফিজউল্লাহ তার প্রতিভার পরিচয় পান। তিনিই নজরুলকে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশালের দরিরামপুর স্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি করে দেন। ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি আবার রানীগঞ্জের সিয়ারসোল রাজ স্কুলে ফিরে যান এবং সেখানে অষ্টম শ্রেণী থেকে পড়াশোনা শুরু করেন। ১৯১৭ সাল পর্যন্ত এখানেই পড়াশোনা করেন। ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের শেষদিকে মাধ্যমিকের প্রিটেস্ট পরীক্ষার না দিয়ে তিনি সেনাবাহিনীতে সৈনিক হিসেবে যোগ দেন। এই স্কুলে অধ্যয়নকালে নজরুল এখানকার চারজন শিক্ষক দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন। এরা হলেন উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের সতীশচন্দ্র কাঞ্জিলাল, বিপ্লবী চেতনা বিশিষ্ট নিবারণচন্দ্র ঘটকফার্সি সাহিত্যের হাফিজ নুরুন্নবী এবং সাহিত্য চর্চার নগেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়[১]

সৈনিক জীবন[সম্পাদনা]

সেনাবাহিনীতে নজরুল
১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের শেষদিকে নজরুল সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। প্রথমে কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে এবং পরবর্তীতে প্রশিক্ষণের জন্য সীমান্ত প্রদেশেরনওশেরায় যান। প্রশিক্ষণ শেষে করাচি সেনানিবাসে সৈনিক জীবন কাটাতে শুরু করেন। তিনি সেনাবাহিনীতে ছিলেন ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের শেষভাগ থেকে ১৯২০খ্রিস্টাব্দের মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত, অর্থাৎ প্রায় আড়াই বছর। এই সময়ের মধ্যে তিনি ৪৯ বেঙ্গল রেজিমেন্টের সাধারণ সৈনিক কর্পোরাল থেকে কোয়ার্টার মাস্টার হাবিলদার পর্যন্ত হয়েছিলেন। উক্ত রেজিমেন্টের পাঞ্জাবী মৌলবির কাছে তিনি ফার্সি ভাষা শিখেন। এছাড়া সহসৈনিকদের সাথে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র সহযোগে সঙ্গীতের চর্চা অব্যাহত রাখেন, আর গদ্য-পদ্যের চর্চাও চলতে থাকে একই সাথে। করাচি সেনানিবাসে বসে নজরুল যে রচনাগুলো সম্পন্ন করেন তার মধ্যে রয়েছে, বাউণ্ডুলের আত্মকাহিনী (প্রথম গদ্য রচনা), মুক্তি (প্রথম প্রকাশিত কবিতা); গল্প: হেনা, ব্যথার দান, মেহের নেগার, ঘুমের ঘোরে, কবিতা সমাধিইত্যাদি। এই করাচি সেনানিবাসে থাকা সত্ত্বেও তিনি কলকাতার বিভিন্ন সাহিত্য পত্রিকার গ্রাহক ছিলেন। এর মধ্যে রয়েছে প্রবাসীভারতবর্ষভারতীমানসী,মর্ম্মবাণীসবুজপত্রসওগাত এবং বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা। এই সময় তার কাছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরশরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এবং ফার্সি কবি হাফিজেরকিছু বই ছিল। এ সূত্রে বলা যায় নজরুলের সাহিত্য চর্চার হাতেখড়ি এই করাচি সেনানিবাসেই। সৈনিক থাকা অবস্থায় তিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেন। এ সময় নজরুলের বাহিনীর ইরাক যাবার কথা ছিল। কিন্তু যুদ্ধ থেমে যাওয়ায় আর যাননি। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে যুদ্ধ শেষ হলে ৪৯ বেঙ্গল রেজিমেন্ট ভেঙে দেয়া হয়। এর পর তিনি সৈনিক জীবন ত্যাগ করে কলকাতায় ফিরে আসেন।

সাংবাদিক জীবন ও বিয়ে[সম্পাদনা]

যুদ্ধ শেষে কলকাতায় এসে নজরুল ৩২ নং কলেজ স্ট্রিটে বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতির অফিসে বসবাস শুরু করেন। তার সাথে থাকতেন এই সমিতির অন্যতম কর্মকর্তা মুজফ্‌ফর আহমদ এখান থেকেই তার সাহিত্য-সাংবাদিকতা জীবনের মূল কাজগুলো শুরু হয়। প্রথম দিকেই মোসলেম ভারতবঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকাউপাসনা প্রভৃতি পত্রিকায় তার কিছু লেখা প্রকাশিত হয়। এর মধ্যে রয়েছে উপন্যাস বাঁধন হারা এবং কবিতা বোধন, শাত-ইল-আরব, বাদল প্রাতের শরাব, আগমনী, খেয়া-পারের তরণী, কোরবানি, মোহরর্‌ম, ফাতেহা-ই-দোয়াজ্‌দম্‌, এই লেখাগুলো সাহিত্য ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রশংসিত হয়। এর প্রেক্ষিতে কবি ও সমালোচক মোহিতলাল মজুমদার মোসলেম ভারত পত্রিকায় তার খেয়া-পারের তরণী এবং বাদল প্রাতের শরাব কবিতা দুটির প্রশংসা করে একটি সমালোচনা প্রবন্ধ লিখেন। এ থেকেই দেশের বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও সমালোচকদের সাথে নজরুলের ঘনিষ্ঠ পরিচয় শুরু হয়। বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতির অফিসে কাজী মোতাহার হোসেনমোজাম্মেল হককাজী আবদুল ওদুদমুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌, আফজালুল হক প্রমুখের সাথে পরিচয় হয়। তৎকালীন কলকাতার দুটি জনপ্রিয় সাহিত্যিক আসর গজেনদার আড্ডা এবং ভারতীয় আড্ডায় অংশগ্রহণের সুবাদে পরিচিত হন অতুলপ্রসাদ সেনঅবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরসত্যেন্দ্রনাথ দত্তপ্রেমাঙ্কুর আতর্থীশিশির ভাদুড়ীশরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, নির্মেলন্দু লাহিড়ী, ধুর্জটিপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, হেমেন্দ্রকুমার রায়, দিনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, চারুচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, ওস্তাদ করমতুল্লা খাঁ প্রমুখের সাথে। ১৯২১ সালের অক্টোবর মাসে তিনি শান্তিনিকেতনে যেয়ে রবীন্দ্রনাথের সাথে সাক্ষাৎ করেন। তখন থেকে রবীন্দ্রনাথের মৃত্যু পর্যন্ত তাদের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় ছিল। কাজী মোতাহার হোসেনের সাথে নজরুলের বিশেষ বন্ধুত্ব গড়ে উঠে।
তরুণ নজরুল
১৯২০ খ্রিস্টাব্দের জুলাই ১২ তারিখে নবযুগ নামক একটি সান্ধ্য দৈনিক পত্রিকা প্রকাশিত হওয়া শুরু করে। অসহযোগ ও খিলাফত আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে প্রকাশিত এই পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন শেরে-বাংলা এ.কে. ফজলুল হক- এই পত্রিকার মাধ্যমেই নজরুল নিয়মিত সাংবাদিকতা শুরু করেন। ঐ বছরই এই পত্রিকায় "মুহাজিরীন হত্যার জন্য দায়ী কে?" শিরোনামে একটি প্রবন্ধ লিখেন যার জন্য পত্রিকার জামানত বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং নজরুলের উপর পুলিশের নজরদারী শুরু হয়। যাই হোক সাংবাদিকতার মাধ্যমে তিনি তৎকালীন রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পান। একইসাথে মুজফ্‌ফর আহমদের সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক সভা-সমিতিতে যোগদানের মাধ্যমে রাজনীতি বিষয়ে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অর্জনের সুযোগ পেয়েছিলেন। বিভিন্ন ছোটখাটো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কবিতা ও সঙ্গীতের চর্চাও চলছিল একাধারে। তখনও তিনি নিজে গান লিখে সুর দিতে শুরু করেননি। তবেব্রাহ্মসমাজের সঙ্গীতজ্ঞ মোহিনী সেনগুপ্তা তার কয়েকটি কবিতায় সুর দিয়ে স্বরলিপিসহ পত্রিকায় প্রকাশ করছিলেন। এর মধ্যে রয়েছে: হয়তো তোমার পাব দেখা, ওরে এ কোন স্নেহ-সুরধুনী- সওগাত পত্রিকার ১৩২৭ বঙ্গাব্দের বৈশাখ সংখ্যায় তার প্রথম গান প্রকাশিত হয়। গানটি ছিল: "বাজাও প্রভু বাজাও ঘন"। ১৯২১ সালের এপ্রিল-জুন মাসের দিকে নজরুল মুসলিম সাহিত্য সমিতির অফিসে গ্রন্থ প্রকাশক আলী আকবর খানের সাথে পরিচিত হন। তার সাথেই তিনি প্রথম কুমিল্লার বিরজাসুন্দরী দেবীর বাড়িতে আসেন। আর এখানেই পরিচিত হন প্রমীলা দেবীর সাথে যার সাথে তার প্রথমে পরিণয় ও পরে বিয়ে হয়েছিল।
তবে এর আগে নজরুলের বিয়ে ঠিক হয় আলী আকবর খানের ভগ্নী নার্গিস আসার খানমের সাথে। বিয়ের আখত সম্পন্ন হবার পরে কাবিনের নজরুলের ঘর জামাই থাকার শর্ত নিয়ে বিরোধ বাধে। নজরুল ঘর জামাই থাকতে অস্বীকার করেন এবং বাসর সম্পন্ন হবার আগেই নার্গিসকে রেখে কুমিল্লা শহরে বিরজাসুন্দরী দেবীর বাড়িতে চলে যান। তখন নজরুল খুব অসুস্থ ছিলেন এবং প্রমিলা দেবী নজরুলের পরিচর্যা করেন। এক পর্যায়ে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।[৫]
নজরুল সাম্যবাদের একজন অগ্রদূত ছিলেন। তিনি মুসলিম হয়েও চার সন্তানের নাম হিন্দু এবং মুসলিম উভয় নামেই নামকরন করেন। যেমনঃ কৃষ্ণ মুহাম্মদ, অরিন্দম খালেদ (বুলবুল), কাজী সব্যসাচী এবং কাজী অনিরুদ্ধ।[৬]

বিদ্রোহী নজরুল[সম্পাদনা]

তখন দেশজুড়ে অসহযোগ আন্দোলন বিপুল উদ্দীপনার সৃষ্টি করে। নজরুল কুমিল্লা থেকে কিছুদিনের জন্য দৌলতপুরে আলী আকবর খানের বাড়িতে থেকে আবার কুমিল্লা ফিরে যান ১৯ জুনে- এখানে যতদিন ছিলেন ততদিনে তিনি পরিণত হন একজন সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মীতে। তাঁর মূল কাজ ছিল শোভাযাত্রা ও সভায় যোগ দিয়ে গান গাওয়া। তখনকার সময়ে তার রচিত ও সুরারোপিত গানগুলির মধ্যে রয়েছে "এ কোন পাগল পথিক ছুটে এলো বন্দিনী মার আঙ্গিনায়, আজি রক্ত-নিশি ভোরে/ একি এ শুনি ওরে/ মুক্তি-কোলাহল বন্দী-শৃঙ্খলে" প্রভৃতি। এখানে ১৭ দিন থেকে তিনি স্থান পরিবর্তন করেছিলেন। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে আবার কুমিল্লায় ফিরে যান। ২১ নভেম্বর ছিল সমগ্র ভারতব্যাপী হরতাল- এ উপলক্ষে নজরুল আবার পথে নেমে আসেন; অসহযোগ মিছিলের সাথে শহর প্রদক্ষিণ করেন আর গান করেন, "ভিক্ষা দাও! ভিক্ষা দাও! ফিরে চাও ওগো পুরবাসী"- নজরুলের এ সময়কার কবিতা, গান ও প্রবন্ধের মধ্যে বিদ্রোহের ভাব প্রকাশিত হয়েছে। এর সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে বিদ্রোহী নামক কবিতাটি। বিদ্রোহী কবিতাটি ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয় এবং সারা ভারতের সাহিত্য সমাজে খ্যাতিলাভ করে। এই কবিতায় নজরুল নিজেকে বর্ণনা করেনঃ-
আমি বঞ্চিত ব্যথা পথবাসী চির গৃহহারা যত পথিকের,
আমি অবমানিতের মরম বেদনা, বিষ জ্বালা, চির লাঞ্ছিত বুকে গতি ফের
আমি অভিমানী চির ক্ষুব্ধ হিয়ার কাতরতা, ব্যথা সুনিবিড়,
চিত চুম্বন-চোর-কম্পন আমি থর-থর-থর প্রথম প্রকাশ কুমারীর !
আমি গোপন প্রিয়ার চকিত চাহনি, ছল করে দেখা অনুখন,
আমি চপল মেয়ের ভালবাসা তার কাকন চুড়ির কন-কন ।
...
মহা- বিদ্রোহী রণক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত।
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না,
অত্যাচারীর খড়ুগ কৃপাণ ভীম রণ, ভূমে রণিবে না-
বিদ্রোহী রণক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত।
..........................
আমি চির বিদ্রোহী বীর –
বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির উন্নত শির !
১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ১২ই আগস্ট নজরুল ধূমকেতু পত্রিকা প্রকাশ করে। এটি সপ্তাহে দুবার প্রকাশিত হতো। ১৯২০-এর দশকে অসহযোগ ও খিলাফত আন্দোলন এক সময় ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। এর পরপর স্বরাজ গঠনে যে সশস্ত্র বিপ্লববাদের আবির্ভাব ঘটে তাতে ধূমকেতু পত্রিকার বিশেষ অবদান ছিল। এই পত্রিকাকে আশীর্বাদ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন,
কাজী নজরুল ইসলাম কল্যাণীয়েষু, আয় চলে আয়রে ধূমকেতু।
আঁধারে বাঁধ অগ্নিসেতু, দুর্দিনের এই দুর্গশিরে উড়িয়ে দে তোর বিজয় কেতন।
পত্রিকার প্রথম পাতার শীর্ষে এই বাণী লিখা থাকতো। পত্রিকার ২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯২২ সংখ্যায় নজরুলের কবিতা আনন্দময়ীর আগমনে প্রকাশিত হয়। এই রাজনৈতিক কবিতা প্রকাশিত হওয়ায় ৮ নভেম্বর পত্রিকার উক্ত সংখ্যাটি নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। একই বছরের ২৩ নভেম্বর তার যুগবাণী প্রবন্ধগ্রন্থ বাজেয়াপ্ত করা হয় এবং একই দিনে তাকে কুমিল্লা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর তাকে কুমিল্লা থেকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের ৭ জানুয়ারি নজরুল বিচারাধীন বন্দী হিসেবে আত্মপক্ষ সমর্থন করে এক জবানবন্দী প্রদান করেন। চিফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট সুইনহোর আদালতে এই জবানবন্দী দিয়েছিলেন। তার এই জবানবন্দী বাংলা সাহিত্যে রাজবন্দীর জবানবন্দী নামে বিশেষ সাহিত্যিক মর্যাদা লাভ করেছে। এই জবানবন্দীতে নজরুল বলেছেন:
আমার উপর অভিযোগ, আমি রাজবিদ্রোহী। তাই আমি আজ রাজকারাগারে বন্দি এবং রাজদ্বারে অভিযুক্ত।... আমি কবি,আমি অপ্রকাশ সত্যকে প্রকাশ করার জন্য, অমূর্ত সৃষ্টিকে মূর্তিদানের জন্য ভগবান কর্তৃক প্রেরিত। কবির কণ্ঠে ভগবান সাড়া দেন, আমার বাণী সত্যের প্রকাশিকা ভগবানের বাণী। সেবাণী রাজবিচারে রাজদ্রোহী হতে পারে, কিন্তু ন্যায়বিচারে সে বাণী ন্যায়দ্রোহী নয়, সত্যাদ্রোহী নয়। সত্যের প্রকাশ নিরুদ্ধ হবে না। আমার হাতের ধূমকেতু এবার ভগবানের হাতের অগ্নি-মশাল হয়ে অন্যায় অত্যাচার দগ্ধ করবে...।
১৬ জানুয়ারি বিচারের পর নজরুলকে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। নজরুলকে আলিপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। এখানে যখন বন্দী জীবন কাটাচ্ছিলেন তখন (১৯২৩ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি ২২) বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ তার বসন্ত গীতিনাট্য গ্রন্থটি নজরুলকে উৎসর্গ করেন। এতে নজরুল বিশেষ উল্লসিত হন। এই আনন্দে জেলে বসে আজ সৃষ্টি সুখের উল্লাসেকবিতাটি রচনা করেন।

অসুস্থতা[সম্পাদনা]

১৯৪০ সালে ৪২ বছর বয়সী নজরুল
নবযুগে সাংবাদিকতার পাশাপাশি নজরুল বেতারে কাজ করছিলেন। এমন সময়ই অর্থাৎ ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এতে তিনি বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন। তার অসুস্থতা সম্বন্ধে সুষ্পষ্টরুপে জানা যায় ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে। এরপর তাকে মূলত হোমিওপ্যাথি এবং আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু এতে তার অবস্থার তেমন কোন উন্নতি হয়নি। সেই সময় তাকে ইউরোপে পাঠানো সম্ভব হলে নিউরো সার্জারি করা হত। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে তা সম্ভব হয়ে উঠেনি। ১৯৪২ সালের শেষের দিকে তিনি মানসিক ভারসাম্যও হারিয়ে ফেলেন। এরপর নজরুল পরিবার ভারতে নিভৃত সময় কাটাতে থাকে। ১৯৫২ সাল পর্যন্ত তারা নিভৃতে ছিলেন। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে কবি ও কবিপত্নীকে রাঁচির এক মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হয়। এই উদ্যোগে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল নজরুলের আরোগ্যের জন্য গঠিত একটি সংগঠন যার নাম ছিল নজরুল চিকিৎসা কমিটি, এছাড়া তৎকালীন ভারতের বিখ্যাত রাজনীতিবিদ শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি সহযোগিতা করেছিলেন। কবি চার মাস রাঁচিতে ছিলেন।
এরপর ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে নজরুল ও প্রমীলা দেবীকে চিকিৎসার জন্য লন্ডন পাঠানো হয়। মে ১০ তারিখে লন্ডনের উদ্দেশ্যে হাওড়া রেলওয়ে স্টেশন ছাড়েন। লন্ডন পৌঁছানোর পর বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তার রোগ নির্ণয়ের চেষ্টা করেন। এদের মধ্যে ছিলেন: রাসেল ব্রেইন, উইলিয়াম সেজিয়েন্টএবং ম্যাককিস্ক- তারা তিনবার নজরুলের সাথে দেখা করেন। প্রতিটি সেশনের সময় তারা ২৫০ পাউন্ড করে পারিশ্রমিক নিয়েছিলেন। রাসেল ব্রেইনের মতে নজরুলের রোগটি ছিল দুরারোগ্য বলতে গেলে আরোগ্য করা ছিল ছিল অসম্ভব। একটি গ্রুপ নির্ণয় করেছিল যে নজরুল "ইনভল্যুশনাল সাইকোসিস" রোগে ভুগছেন। এছাড়া কলকাতায় বসবাসরত ভারতীয় চিকিৎসকরাও আলাদা একটি গ্রুপ তৈরি করেছিলেন। উভয় গ্রুপই এই ব্যাপারে একমত হয়েছিল যে, রোগের প্রাথমিক পর্যায়ের চিকিৎসা ছিল খুবই অপ্রতুল ও অপর্যাপ্ত। লন্ডনে অবস্থিত লন্ডন ক্লিনিকে কবির এয়ার এনসেফালোগ্রাফি নামক এক্স-রে করানো হয়। এতে দেখা যায় তার মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল লোব সংকুচিত হয়ে গেছে। ড: ম্যাককিস্কের মত বেশ কয়েকজন চিকিৎসক একটি পদ্ধতি প্রয়োগকে যথোপযুক্ত মনে করেন যার নাম ছিল ম্যাককিস্ক অপারেশন। অবশ্য ড: ব্রেইন এর বিরোধিতা করেছিলেন।
এই সময় নজরুলের মেডিকেল রিপোর্ট ভিয়েনার বিখ্যাত চিকিৎসকদের কাছে পাঠানো হয়। এছাড়া ইউরোপের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও পাঠানে হয়েছিল। জার্মানির বন বিশ্ববিদ্যালয়েরনিউরোসার্জন অধ্যাপক রোঁয়েন্টগেন ম্যাককিস্ক অপারেশনের বিরোধিতা করেন। ভিয়েনার চিকিৎসকরাও এই অপারেশনের ব্যাপারে আপত্তি জানান। তারা সবাই এক্ষেত্রে অন্য আরেকটি পরীক্ষার কথা বলেন যাতে মস্তিষ্কের রক্তবাহগুলির মধ্যে এক্স-রেতে দৃশ্যমান রং ভরে রক্তবাহগুলির ছবি তোলা হয় (সেরিব্রাল অ্যানজিওগ্রাফি)- কবির শুভাকাঙ্খীদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক তাকে ভিয়েনার চিকিৎসক ডঃ হ্যান্স হফের অধীনে ভর্তি করানো হয়। এই চিকিৎসক নোবেল বিজয়ী চিকিৎসক জুলিয়াস ওয়েগনার-জাউরেগের অন্যতম ছাত্র। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দের ৯ ডিসেম্বর কবিকে পরীক্ষা করানো হয়। এর ফলাফল থেকে ড. হফ বলেন যে, কবি নিশ্চিতভাবে পিক্‌স ডিজিজ নামক একটি নিউরন ঘটিত সমস্যায় ভুগছেন। এই রোগে আক্রান্তদের মস্তিষের ফ্রন্টাল ও পার্শ্বীয় লোব সংকুচিত হয়ে যায়। তিনি আরও বলেন বর্তমান অবস্থা থেকে কবিকে আরোগ্য করে তোলা অসম্ভব। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দের ২৭ ডিসেম্বর তারিখে কলকাতার দৈনিক যুগান্তর পত্রিকা ভিয়েনায় নজরুল নামে একটি প্রবন্ধ ছাপায় যার লেখক ছিলেন ডঃ অশোক বাগচি- তিনি উচ্চ শিক্ষার জন্য ভিয়েনায় অবস্থান করছিলেন এবং নজরুলের চিকিৎসা সম্বন্ধে প্রত্যক্ষ জ্ঞান অর্জন করেছিলেন। যাহোক, ব্রিটিশ চিকিৎসকরা নজরুলের চিকিৎসার জন্য বড় অংকের ফি চেয়েছিল যেখানে ইউরোপের অন্য অংশের কোন চিকিৎসকই ফি নেননি। অচিরেই নজরুল ইউরোপ থেকে দেশে ফিরে আসেন। এর পরপরই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ডঃ বিধান চন্দ্র রায় ভিয়েনা যান এবং ড. হ্যান্স হফের কাছে বিস্তারিত শোনেন। নজরুলের সাথে যারা ইউরোপ গিয়েছিলেন তারা সবাই ১৯৫৩ সালের১৪ ডিসেম্বর রোম থেকে দেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।[৭]

বাংলাদেশে আগমন ও প্রয়াণ[সম্পাদনা]

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে অন্তিম শয়নে কবি নজরুল ইসলাম
১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বাঙালিদের বিজয় লাভের মাধ্যমে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৭২খ্রিস্টাব্দের ২৪ মে তারিখে ভারত সরকারের অনুমতিক্রমে কবি নজরুলকে সপরিবারে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান এক্ষেত্রে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কবির বাকি জীবন বাংলাদেশেই কাটে। বাংলা সাহিত্য এবং সংস্কৃতিতে তার বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দের ৯ ডিসেম্বর তারিখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সম্মানসূচক ডি.লিট উপাধিতে ভূষিত করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমাবর্তনে তাকে এই উপাধি প্রদান করা হয়। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারি মাসে বাংলাদেশ সরকার কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করে। একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারিতে তাকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। একুশে পদক বাংলাদেশের সবচেয়ে সম্মানসূচক পদক হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।
এরপর যথেষ্ট চিকিৎসা সত্ত্বেও নজরুলের স্বাস্থ্যের বিশেষ কোন উন্নতি হয়নি। ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে কবির সবচেয়ে ছোট ছেলে এবং বিখ্যাত গিটার বাদককাজী অনিরুদ্ধ মৃত্যুবরণ করে। ১৯৭৬ সালে নজরুলের স্বাস্থ্যেরও অবনতি হতে শুরু করে। জীবনের শেষ দিনগুলো কাটে ঢাকার পিজি হাসপাতালে। ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দের ২৯ আগস্ট তারিখে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। নজরুল তার একটি গানে লিখেছেন, "মসজিদেরই কাছে আমায় কবর দিয়ো ভাই / যেন গোরের থেকে মুয়াজ্জিনের আযান শুনতে পাই";- কবির এই ইচ্ছার বিষয়টি বিবেচনা করে কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে সমাধিস্থ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং সে অনুযায়ী তাঁর সমাধি রচিত হয়।
তাঁর জানাজার নামাযে ১০ হাজারের মত মানুষ অংশ নেয়। জানাজা নামায আদায়ের পর রাষ্ট্রপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম, মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান, রিয়াল এডমিরাল এম এইচ খান, এয়ার ভাইস মার্শাল এ জি মাহমুদ, মেজর জেনারেল দস্তগীর জাতীয় পতাকা মন্ডিত নজরুলের মরদেহ বহন করে সোহরাওয়ার্দী ময়দান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ প্রাঙ্গনে নিয়ে যান।[৮]বাংলাদেশে তাঁর মৃত্যু উপলক্ষ্যে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় শোক দিবস পালিত হয়। আর ভারতের আইনসভায় কবির সম্মানে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।

সাহিত্যকর্ম[সম্পাদনা]

মূল নিবন্ধ: নজরুল রচনা তালিকা

কবিতা[সম্পাদনা]

মূল নিবন্ধ: নজরুলের কবিতা
১৯২১ সালের ডিসেম্বর মাসে কুমিল্লা থেকে কলকাতা ফেরার পথে নজরুল দুটি বৈপ্লবিক সাহিত্যকর্মের জন্ম দেন। এই দুটি হচ্ছে বিদ্রোহী কবিতা ওভাঙ্গার গান সঙ্গীত। এগুলো বাংলা কবিতা ও গানের ধারাকে সম্পূর্ণ বদলে দিয়েছিল। বিদ্রোহী কবিতার জন্য নজরুল সবচেয়ে বেশী জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। একই সময় রচিত আরেকটি বিখ্যাত কবিতা হচ্ছে কামাল পাশা- এতে ভারতীয় মুসলিমদের খিলাফত আন্দোলনের অসারতা সম্বন্ধে নজরুলে দৃষ্টিভঙ্গি এবং সমকালীন আন্তর্জাতিক ইতিহাস-চেতনার পরিচয় পাওয়া যায়। ১৯২২ সালে তার বিখ্যাত কবিতা-সংকলন অগ্নিবীণা প্রকাশিত হয়। এই কাব্যগ্রন্থ বাংলা কবিতায় একটি নতুনত্ব সৃষ্টিতে সমর্থ হয়, এর মাধ্যমেই বাংলা কাব্যের জগতে পালাবদল ঘটে। প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে এর প্রথম সংস্করণ শেষ হয়ে গিয়েছিল। পরপর এর কয়েকটি নতুন সংস্করণ প্রকাশিত হয়। এই কাব্যগ্রন্থের সবচেয়ে সাড়া জাগানো কবিতাগুলোর মধ্যে রয়েছে: "প্রলয়োল্লাস, আগমনী, খেয়াপারের তরণী, শাত-ইল্‌-আরব, বিদ্রোহী, কামাল পাশা" ইত্যাদি। এগুলো বাংলা কবিতার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিল। তাঁর শিশুতোষ কবিতা বাংলা কবিতায় এনেছে নান্দনিকতা খুকী ও কাঠবিড়ালি , লিচু-চোর , খাঁদু-দাদু ইত্যাদি তারই প্রমান। কবি তার মানুষ কবিতায় বলেছিলেন:
পূজিছে গ্রন্থ ভন্ডের দল মূর্খরা সব শোন/ মানুষ এনেছে গ্রন্থ, গ্রন্থ আনেনি মানুষ কোন
তিনি কালী দেবিকে নিয়ে অনেক শ্যামা সঙ্গিত রচনা করেন, ইসলামী গজলও রচনা করেন ।

সঙ্গীত[সম্পাদনা]

মূল নিবন্ধ: নজরুলগীতি
নজরুলের গানের সংখ্যা চার হাজারের অধিক। নজরুলের গান নজরুল সঙ্গীত নামে পরিচিত।

গদ্য রচনা, গল্প ও উপন্যাস[সম্পাদনা]

নজরুলের প্রথম গদ্য রচনা ছিল "বাউণ্ডুলের আত্মকাহিনী"। ১৯১৯ সালের মে মাসে এটি সওগাত পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। সৈনিক থাকা অবস্থায় করাচি সেনানিবাসে বসে এটি রচনা করেছিলেন। এখান থেকেই মূলত তার সাহিত্যিক জীবনের সূত্রপাত ঘটেছিল। এখানে বসেই বেশ কয়েকটি গল্প লিখেছেন। এর মধ্যে রয়েছে: "হেনা, ব্যাথার দান, মেহের নেগার, ঘুমের ঘোরে"। ১৯২২ সালে নজরুলের একটি গল্প সংকলন প্রকাশিত হয় যার নাম ব্যথার দান- এছাড়া একই বছর প্রবন্ধ-সংকলন যুগবাণী প্রকাশিত হয়।

রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় দর্শন[সম্পাদনা]

সৈনিক জীবন ত্যাগ করে নজরুল বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতির অফিসে মুজফ্‌ফর আহমদের সাথে বাস করছিলেন। মুজফ্‌ফর আহমদ ছিলেন এদেশে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন প্রতিষ্ঠার অগ্রদূত। এখান থেকেই তাই নজরুলের রাজনৈতিক চেতনার বিকাশ শুরু হয়। মুজফ্‌ফর আহমদের সাথে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক সভা-সমিতি ও বক্তৃতায় অংশ নিতেন। এ সময় থেকেই সমাজতান্ত্রিক আদর্শের সাথে পরিচিত হন। ১৯১৭ সালে রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব তাকে নানাভাবে প্রভাবিত করে। তার লাঙ্গল ও গণবাণী পত্রিকায় তিনি প্রকাশ করেন সাম্যবাদী ও সর্বহারাকবিতাগুচ্ছ। এরই সাথে প্রকাশ করেছিলেন কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল-এর অনুবাদ জাগ অনশন বন্দী ওঠ রে যত- তার পত্রিকায় প্রকাশিত হয় রেড ফ্ল্যাগ-এর অবলম্বনে রচিত রক্তপতাকার গান
তখন মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন এবং মাওলানা মোহাম্মদ আলী ও শওকত আলীর নেতৃত্বে খিলাফত আন্দোলন- অসহযোগ আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল শান্তিপূর্ণ উপায়ে ভারতবর্ষ থেকে ইংরেজদের বিতারণ। আর খিলাফত আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল তুরস্কে মধ্যযুগীয় সামন্ত শাসন ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখা, কারণ এই সমন্বিত সুলতানী শাসন ব্যবস্থার প্রধান তথা তুরস্কের সুলতানকে প্রায় সকল মুসলমানরা মুসলিম বিশ্বের খলীফা জ্ঞান করতো। নজরুল এই দুটি আন্দোলনের আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন না। তিনি সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে স্বাধীনতা তথা স্বরাজ অর্জনে বিশ্বাস করতেন যা মহাত্মা গান্ধীর দর্শনের বিপরীত ছিল। আবার মোস্তফা কামাল পাশার নেতৃত্বে তুরস্কের সালতানাত উচ্ছেদের মাধ্যমে নতুন তুরস্ক গড়ে তোলার আন্দোলনের প্রতি নজরুলের সমর্থন ছিল। তারপরও তিনি অসহযোগ ও খিলাফত আন্দোলন যোগ দিয়েছিলেন। এর কারণ, এই সংগ্রাম দুটি ভারতীয় হিন্দু মুসলমানদের সম্মিলিত সম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছিল।
তবে সব দিক বিচারে নজরুল তার রাষ্ট্রীয় ধ্যান ধারণায় সবচেয়ে বেশী প্রভাবিত হয়েছিলেন কামাল পাশার দ্বারা। নজরুল ভেবেছিলেন তুরস্কের মুসলমানরা তাদের দেশে যা করতে পেরেছে ভারতীয় উপমহাদেশে কেন তা সম্ভব হবেনা? গোড়ামী, রক্ষণশীলতা, ধর্মান্ধতা, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে নজরুলের অবস্থান ছিল কঠোর। আর তার এই অবস্থানের পিছনে সবচেয়ে বড় প্রভাব ছিল কামাল পাশার। সে হিসেবে তার জীবনের নায়ক ছিলেন কামাল পাশা। নজরুলও তার বিদ্রোহী জীবনে অনুরুপ ভূমিকা পালনের প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। উল্লেখ্য ১৯২১ সনের সেপ্টেম্বর মাসে মুজফ্‌ফর আহমদ ও নজরুল তালতলা লেনের যে বাসায় ছিলেন সে বাড়িতেই ভারতের প্রথম সমাজতান্ত্রিক দল গঠিত হয়েছিল। ১৯১৭ সনের রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মাধ্যমেও নজরুল প্রভাবিত হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি নিজে কখনই এই দলের সদস্য হননি, যদিও কমরেড মুজফ্‌ফর তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন আজীবন।
১৯২০ এর দশকের জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে তিনি অংশ গ্রহণের চেষ্টা করেন। প্রথমে কংগ্রেসে সমর্থন লাভের জন্য তিনি কলকাতা যান। কিন্তু কংগ্রেসের কাছ থেকে তেমন সাড়া না পেয়ে তিনি একাই নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেন। নির্বাচনে তিনি তেমন সাফল্য পাননি। এরপর সাহিত্যের মাধ্যমে তার রাজনৈতিক চিন্তার বহিপ্রকাশ অব্যাহত থাকলেও রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ কমে যায়। [৯]

সম্মান[সম্পাদনা]

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন বা বিএফডিসি'র মধ্যে স্মারক ভাস্কর্য।
কাজী নজরুল ইসলামের সম্মানে উৎসর্গিত কলকাতা মেট্রোর কবি নজরুল (গড়িয়া বাজার) মেট্রো স্টেশন।

বাংলাদেশ[সম্পাদনা]

কাজী নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জাতীয় কবির মর্যাদা দেওয়া হয়। তাঁর রচিত "চল্‌ চল্‌ চল্‌, ঊর্ধগগনে বাজে মাদল" বাংলাদেশের রণসংগীত হিসাবে গৃহীত। নজরুলের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী প্রতি বছর বিশেষভাবে উদযাপিত হয়। নজরুলের স্মৃতিবিজড়িত ত্রিশালে (বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জেলায়) ২০০৫ সালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় নামক সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় কবির স্মৃতিতে নজরুল একাডেমীবুলবুল ললিতকলা একাডেমী ও শিশু সংগঠন বাংলাদেশ নজরুল সেনা স্থাপিত হয়। এছাড়া সরকারীভাবে স্থাপিত হয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান নজরুল ইন্সটিটিউট- ঢাকা শহরের একটি প্রধান সড়কের নাম রাখা হয়েছে কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ

ভারত[সম্পাদনা]

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের চুরুলিয়ায় "নজরুল অ্যাকাডেমি" নামে একটি বেসরকারি নজরুল-চর্চা কেন্দ্র আছে। চুরুলিয়ার কাছে আসানসোলমহানগরে ২০১২ সালে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে।[১০][১১] আসানসোলের কাছেই দুর্গাপুর মহানগরের লাগোয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটির নাম রাখা হয়েছে কাজী নজরুল ইসলাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর[১২] উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলায় অবস্থিত নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রাজধানী কলকাতার যোগাযোগ-রক্ষাকারী প্রধান সড়কটির নাম রাখা হয়েছে কাজী নজরুল ইসলাম সরণি। কলকাতা মেট্রোর গড়িয়া বাজার মেট্রো স্টেশনটির নাম রাখা হয়েছে "কবি নজরুল মেট্রো স্টেশন"।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. ↑ ঝাঁপ দাও:১.০ ১.১ ১.২ ১.৩ ১.৪ ১.৫ ১.৬ রফিকুল ইসলাম (জানুয়ারি ২০০৩)। "ইসলাম, কাজী নজরুল"। in সিরাজুল ইসলাম। বাংলাপিডিয়া (বাংলা ভাষায়) (অনলাইন সংস্করণ)। ঢাকাএশিয়াটিক সোসাইটি বাংলাদেশ। আইএসবিএন 984-32-0576-6। সংগৃহীত জুলাই ১৩, ২০১৫
  2. ঝাঁপ দাও Farooq, Dr. Mohammad Omar (২০০৭-০৩-১০)। "Nazrul's Illness and Treatment" (HTML)। Nazrul.org (March 2007)। সংগৃহীত ২০০৭-০৩-১০
  3. ঝাঁপ দাও Chaudhuri, Dilip (২০০৬-০৯-২২)। "Nazrul Islam: The unparalleled lyricist and composer of Bengal" (HTML)। Press Information Bureau,Government of India। সংগৃহীত ২০০৬-০৯-২২
  4. ঝাঁপ দাও কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬) - রফিকুল ইসলাম; কলকাতার সাহিত্যম্‌ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত নজরুল শ্রেষ্ঠ সংকলনে এই প্রবন্ধটি সংযুক্ত আছে।
  5. ঝাঁপ দাও নজরুল জীবনে নারী ও প্রেম; ড. আবুল আজাদ
  6. ঝাঁপ দাও Huda, Mohammad Nurul (২০০০)। "Nazrul's Personlore"। in Mohammad Nurul Huda। Nazrul: An Evaluation। Dhaka: Nazrul Institute। পৃ: 306–307। আইএসবিএন 984-555-167-X
  7. ঝাঁপ দাও 1. Muzaffar Ahmad, Kazi Nazrul Islam Smritikatha [Memoirs of Kazi Nazrul Islam - Kolkata, India: National Book Agency, 10th print, 1998] 2. Rafiqul Islam, Nazrul Jiboni [Life of Nazrul - Department of Bangla, Dhaka University, May 1972]; Prof. Rafiqul Islam is a national Nazrul professor in Bangladesh and one of the leading Nazrul researchers. 3. Sushilkumar Gupta, Nazrul Chorit-manosh [Kolkata, India: De's Publishing, 1990]
  8. ঝাঁপ দাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশি বছররফিকুল ইসলাম; পৃষ্ঠা: ২৭১
  9. ঝাঁপ দাও http://www.thedailystar.net/magazine/2010/05/03/tribute.htm
  10. ঝাঁপ দাও "Private education Bill passed amidst Opposition walkout"। The Statesman। ৬ জুলাই ২০১২। সংগৃহীত ৭ জুলাই ২০১২
  11. ঝাঁপ দাও "Bill passed to set up private varsity"। Asian Age। ৭ জুলাই ২০১২। সংগৃহীত ৭ জুলাই ২০১২
  12. ঝাঁপ দাও "Mamata proposes to name new airport as Kazi Nazrul Islam international airport - Times Of India"। Articles.timesofindia.indiatimes.com। ২০১৩-০৫-২৫। সংগৃহীত ২০১৩-০৯-২০

আরো দেখুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]