Buy IP

********** Welcome to Buy ip **********

Thursday, September 22, 2016

তাক্বদীর কী

তাক্বদীর শব্দটির অর্থ নির্ধারণ করা বা অনুমান করা। শারঈ পরিভাষায় তাক্বদীর হ’ল, আল্লাহ কর্তৃক বান্দার ভবিষ্যত নির্ধারণ করা। আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক মানুষের তাক্বদীর লিপিবদ্ধ করেছেন আসমান-যমীন সৃষ্টির ৫০ হাযার বছর পূর্বে এবং তিনি যার ভাগ্যে যা লিপিবদ্ধ করেছেন তাই ঘটবে (ছহীহ মুসলিম, মিশকাত হা/৭৯)। তাক্বদীর সম্পূর্ণ গোপনীয় বিষয়। আল্লাহ তা‘আলা স্বয়ং তাক্বদীরের জ্ঞান তাঁর সৃষ্টিকুল থেকে গোপন রেখেছেন। এজন্য রাসূল (ছাঃ) এ প্রসঙ্গে অহেতুক বিতর্কে জড়িয়ে পড়তে নিষেধ করেছেন(তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, মিশকাত হা/৯৮)। একদিন ছাহাবায়ে কেরাম তাকে কেবল তাক্বদীরের উপর ভরসা করে সকল আমল ছেড়ে দেওয়ার আবেদন জানালে রাসূল (ছাঃ) বললেন, তোমরা সৎকর্ম করে যাও। কেননা যাকে যেজন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, তার পক্ষে সে কাজ সহজসাধ্য হবে। যারা সৌভাগ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত, তাদের জন্য সেরূপ আমল এবং যারা দুর্ভাগাদের অন্তর্ভুক্ত তাদের জন্য সেরূপ আমল সহজ করে দেওয়া হয়েছে (বুখারী হা/৪৯৪৯)।

           তাক্বদীরের প্রতি বিশ্বাস’ মুমিনের মৌলিক ও অপরিহার্য ছয়টি আক্বীদার অন্তর্ভুক্ত। তাক্বদীর একটি গায়েবী বিষয়, যার রহস্য মহান আল্লাহ ব্যতীত কেউ অবগত নন। এজন্য সাধারণভাবে বিষয়টি এভাবে ব্যাখ্যা করা যায় যে, যেমন একজন লোকের সামনে ফলের রস ভর্তি গ্লাস রাখা রয়েছে। সে ইচ্ছা করলে তা পান করতে পারে, নাও পারে। অর্থাৎ সে পান করতে বাধ্য নয়। অতঃপর যদি সে পান করে, তবে তা আল্লাহর জ্ঞানে পূর্ব থেকেই রক্ষিত রয়েছে। আবার যদি পান না করে, তবুও তা আল্লাহর জ্ঞানে আগে থেকেই রক্ষিত আছে। যদি বলা হয় এর ব্যাখ্যা কি? এর জবাব এতটুকুই দেওয়া যায় যে, অসীম জ্ঞানের অধিকারী মহান আল্লাহর সৃষ্টি রহস্য মানুষের স্বল্পজ্ঞান দিয়ে অনুধাবন করা সম্ভব নয়। মানুষের সৎ-অসৎ যাবতীয় কর্মের ক্ষেত্রেও অনুরূপ বক্তব্যই প্রযোজ্য। একজন পাপাচারী পাপকর্মের দিকে প্রবৃত্ত হয় এবং নিজ হাতে তা বাস্তবায়ন করে। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, নিজ ইচ্ছা ও ক্ষমতা প্রয়োগ করে সে পাপাচারে লিপ্ত হচ্ছে। কিন্তু একই সাথে আল্লাহর জ্ঞান বা পূর্বনির্ধারণ থেকে বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা তার নেই। এটা আল্লাহ তা‘আলার অপরিসীম ক্ষমতা ও হিকমতের বহিঃপ্রকাশ। এক্ষণে বান্দা যেহেতু নিজের তাক্বদীর জানে না, সেহেতু তাকে মন্দ কর্ম হ’তে রক্ষা পাওয়ার জন্য আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করতে হবে এবং সর্বদা আল্লাহর বিধান মেনে কাজ করে সুন্দর পরিণতি লাভের চেষ্টা করতে হবে। তার সাধ্যমত চেষ্টার পরেও যেটা ঘটবে, বুঝতে হবে সেটাই ছিল তার তাক্বদীরের লিখন।


মূলতঃ আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করে বিবেক-বুদ্ধি  দান করে, ভালো আর মন্দ দু’টি পথ দেখিয়ে এক মহাপরীক্ষার মধ্যে ফেলেছেন। আর ভালো  পথের জন্য জান্নাত আর মন্দ পথের জন্য জাহান্নাম নির্ধারণ করে রেখেছেন। ফলে বিবেক  দিয়ে নিজ স্বাধীনতাকে ব্যবহার করে মানুষ এ পৃথিবীতে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত যা কিছু করবে, আল্লাহ তাঁর অগ্রিম জ্ঞানে  সেগুলোর সব কিছু সম্পর্কে জানেন এবং সেগুলোই তিনি লিখে রেখেছেন।

            তবে হে, আল্লাহ তাক্বদীরের মন্দকে পরিবর্তন  করে দিতে পারেন। তিনি তাক্বদীরের ভাল-মন্দকে ইচ্ছা করলে মিটিয়ে দিতে পারেন এবং  বহালও রাখতে পারেন (রা‘দ ৩৯)।  রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘মানুষ পাপকর্মের কারণে রূযী  থেকে বঞ্চিত হয়। দো‘আর মাধ্যমে তাক্বদীর পরিবর্তন হয় এবং নেকীর মাধ্যমে বয়স বৃদ্ধি  পায় (নাসাঈ, ইবনু মাজাহ, হা/৪৯২৪; মিশকাত হা/৪৯২৫)। তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি স্বীয় জীবিকায় প্রশস্ততা ও মৃত্যুতে বিলম্ব কামনা করে,  সে যেন আত্মীয়-স্বজনের সাথে উত্তম ব্যবহার করে’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৪৯১৮)।

            কেউ কেউ ‘ভাগ্যে যা আছে তাই  হবে, আমার কিছু করার নেই’ বলে  নিজেকে বিভ্রান্তির পথে টেনে নিয়ে যায়। অথচ দুনিয়ায় তারা না খেয়ে বসে থাকে না,  পরীক্ষার জন্য প্রস্ত্ততি না নিয়ে পরীক্ষা দেয় না, পিপাসা লাগলে পানি না খেয়ে ভরসা  করে না। অর্থাৎ ক্ষণস্থায়ী জীবনের জন্য তারা ভাগ্যের উপর ভরসা না করে চেষ্টা করে। কিন্তু যত ভরসা কেবল চিরস্থায়ী  জীবনের ক্ষেত্রেই করে! এরূপ অপযুক্তির  মাধ্যমে মানুষ কেবল নিজেকে ধ্বংসেই নিক্ষেপ করে। ভ্রান্ত ফের্কা অদৃষ্টবাদী  জাবরিয়াগণ এরূপ ভেবে থাকেন। অথচ আল্লাহ বান্দার তাক্বদীর জানেন। কিন্তু বান্দা তা  জানেনা। তাই তাকে সাধ্যমত আল্লাহর পথে কাজ করে যেতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘বান্দা  কেবল সেটাই পায়, যেটার জন্য সে চেষ্টা করে’ (নাজম ৫৩/৩৯)।


ভাগ্যে বিশ্বাস : একটি তাত্ত্বিক আলোচনা


অনেকে প্রশ্ন করেন : মানুষ ভাল-মন্দ যত কাজ করে তা ল্লাহর ইচ্ছায়  তাকদীরের লিপিবদ্ধ থাকার কারণে  করে তাই মানুষেরকি দোষ?
কেন আল্লাহ তাকে মন্দ কাজের জন্য শাস্তি দেবেন?
আবার অনেকের প্রশ্নের ভাষা  রকম যে, আমি জান্নাতে যাবো না জাহান্নামে যাবো তাতো অনেক আগেই লেখা হয়েছে তাই কষ্টকরে নেক আমল করে লাভ কী? তাকদীরে জান্নাত লেখা থাকলে কোন আমল না করেও জান্নাতে যাওয়া যাবে আর কপালে জাহান্নামলেখা থাকলে হাজার ভাল কাজ করেও জান্নাতে যাওয়া যাবে না
আবার অনেকে বলেন, আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া যখন কিছুই হয় না তাই আমি যদি কোন খারাপ কাজ করে থাকি তবে তা আল্লাহর ইচ্ছায়করেছি আল্লাহ ইচ্ছে করলে আমাকে ফিরিয়ে রাখতে পারতেন
প্রশ্নের ভাষার ধরণ যাই হোকনা কেন, কথা হল সব কিছু যখন আল্লাহর ইচ্ছায় হয় তখন মানুষের কী দোষ?

 সকল প্রশ্নের উত্তর দিতে যেয়ে অনেক বিজ্ঞজন হিমশিম খেয়েছেন এক পর্যায়ে বলতে বাধ্য হয়েছেন, তাকদীর সম্পর্কে বেশীআলোচনা বা প্রশ্ন করা ঠিক নয়  ব্যাপারে যুক্তি-তর্ক করতে যেয়ে অনেকে হয়েছে গোমরাহ  উদ্ভব হয়েছে জাবরিয়া, কদরিয়াইত্যাদি বাতিল ফেরকার
তাই আমি  বিষয়টি সম্পর্কে অতি সংক্ষেপে একটা ধারণা দেয়ার চেষ্টা করবো আমার  প্রবন্ধে

প্রথম কথা হল,  ধরনের প্রশ্ন কোন মুসলিম করতে পারে কিনা?
আল-কুরআনুল কারীমে যা দেখা যায় তাতে প্রমাণিত হয় যে,  ধরনের প্রশ্ন কাফির মুশরিকরা করত যেমন ইরশাদ হচ্ছে :
سَيَقُولُ الَّذِينَ أَشْرَكُوا لَوْ شَاءَ اللَّهُ مَا أَشْرَكْنَا وَلَا آَبَاؤُنَا وَلَا حَرَّمْنَا مِنْ شَيْءٍ كَذَلِكَ كَذَّبَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ حَتَّى ذَاقُوا بَأْسَنَا قُلْ هَلْ عِنْدَكُمْ مِنْ عِلْمٍ فَتُخْرِجُوهُ لَنَا إِنْ تَتَّبِعُونَ إِلَّا الظَّنَّ وَإِنْ أَنْتُمْ إِلَّا تَخْرُصُونَ
অচিরেই মুশরিকরা বলবে, আল্লাহ যদি চাইতেন, আমরা শিরক করতাম না এবং আমাদের পিতৃপুরুষরাও না এবং আমরা কোন কিছুহারাম করতাম না এভাবেই তাদের পূর্ববর্তীরা মিথ্যারোপ করেছে, যে পর্যন্ত না তারা আমার আযাব আস্বাদন করেছে বল, তোমাদেরকাছে কি কোন জ্ঞান আছে, যা তোমরা আমাদের জন্য প্রকাশ করবে? তোমরা তো শুধু ধারণার অনুসরণ করছ এবং তোমরা তোকেবল অনুমান করছ (সূরা আল আনআম : ১৪৮)
দেখুন ! মুশরিকরা তাদের শিরকের ব্যাপারে আল্লাহর ইচ্ছার কথা বলে রেহাই পাবার প্রয়াস পেয়েছে এবং তাদের  কথা দ্বারা তারাইসলামকে প্রত্যাখ্যান করেছে অতএব যারা আল্লাহর ইচ্ছার দোহাই দিয়ে সত্যকে প্রত্যাখ্যান  সৎকর্ম থেকে দূরে থাকতে চায় তারামূলত: মুশরিকদের মতই কাজ করল  তাদের অনুস্বরণ করল
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরো বলেন:
وَقَالَ الَّذِينَ أَشْرَكُوا لَوْ شَاءَ اللَّهُ مَا عَبَدْنَا مِنْ دُونِهِ مِنْ شَيْءٍ نَحْنُ وَلَا آَبَاؤُنَا وَلَا حَرَّمْنَا مِنْ دُونِهِ مِنْ شَيْءٍ كَذَلِكَ فَعَلَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ فَهَلْ عَلَى الرُّسُلِ إِلَّا الْبَلَاغُ الْمُبِينُ
{আর যারা শির্ করেছে, তারা বলল, যদি আল্লাহ চাইতেন তবে আমরা তাকে ছাড়া কোন কিছুর ইবাদাত করতাম না এবং আমাদেরপিতৃপুরুষরাও না আর তার বিপরীতে আমরা কোন কিছু হারাম করতাম না এমনিই করেছে, যারা তাদের পূর্বে ছিল সুতরাংস্পষ্টভাবে পৌঁছে দেয়া ছাড়া রাসূলদের কি কোন কর্তব্য আছে?} [সূরা আন নাহল: ৩৫]
তিনি আরো বলেন:
وَقَالُوا لَوْ شَاءَ الرَّحْمَنُ مَا عَبَدْنَاهُمْ مَا لَهُمْ بِذَلِكَ مِنْ عِلْمٍ إِنْ هُمْ إِلَّا يَخْرُصُونَ
{আর তারা (মুশরিকরাবলে, পরম করুণাময় আল্লাহ ইচ্ছা করলে আমরা এদের ইবাদাত করতাম না,  বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞাননেই তারা শুধু মনগড়া কথা বলছে। } [ সূরা যখরুফ২০]
উল্লি­খিত তিনটি আয়াতে কারীমা পাঠ করে কয়েকটি বিষয় স্পষ্টভাবে জানা গেল:-
(একমুশরিকরা আল্লাহর ইচ্ছার দোহাই দিয়ে শিরক করত তাদের শিরকের প্রমাণ হিসাবে তারা আল্লাহর ইচ্ছাকে পেশ করত
(দুইতারা বিশ্বাস করত সবকিছু আল্লাহর ইচ্ছায় হয়  বিশ্বাস পোষণ করার পরও তারা কাফির  মুশরিক রয়ে গেছে
(তিনতারা আল্লাহর গুণাবলিতে বিশ্বাস করত (যেমন সূরা যুখরুফের আলোচ্য আয়াতে রহমান গুণ) তারপরেও তারা মুশরিক থেকেছে
(চারতারা তাদের শিরকের সমর্থনে আল্লাহর ইচ্ছাকে প্রমাণ হিসাবে পেশ করে বলেছে যে, তারা এসব আল্লাহর ইচ্ছায়ইকরছে আল্লাহ তাদের মিথ্যাবাদী বলেছেন কারণ, তারা বলেছে তাদের শিরকি কাজগুলো আল্লাহর ইচ্ছায় করা হচ্ছে
(পাঁচতাদের  সকল বক্তব্য নতুন কিছু নয় তাদের পূর্ব-পুরুষরাও  রকম বক্তব্য দিয়েছে

এরপরও যদি কোন মুসলিম ব্যক্তি কাফির-মুশরিকদের মত অনুরূপ প্রশ্ন করে  তাকে আমরা কয়েকটি উত্তর দিতে পারি
এক. যে ব্যক্তি  ধরনের প্রশ্ন করবে তাকে বলা হবে আপনি জান্নাতে যেতে চান না জাহান্নামে?
উত্তরে সে হয়তো বলবে আমি জান্নাতে যেতে চাই
তারপর তাকে জিজ্ঞেস করুন, আচ্ছা আপনার তাকদীরে কী লেখা আছে জান্নাত না জহান্নাম, আপনি কি  তা জানেন? সে বলবে, নাআমি জানি না
আচ্ছা, তাহলে বিষয়টি আপনার কাছে অজ্ঞাত আর অজ্ঞাত বিষয়ের উপর নির্ভর করে কোন ভাল কাজ ছেড়ে দেয়া কি কোনবুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে?
পরীক্ষায় পাশ করবে না ফেল করবে, এটা অজানা থাকার পরও মানুষ অনেক কষ্ট করে পরীক্ষা দেয় পাশ করার আশায় অপারেশনসাকসেস হবে কি হবে না, তা অজ্ঞাত থাকা সত্বেও মানুষ অপারেশন করায় রোগ-মুক্তির আশায় ফলাফল অজ্ঞাত থাকার অজুহাতেকোন কাজ ছেড়ে দিয়ে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকা সুস্থ মস্তিস্কের কাজ হতে পারে না আপনার তাকদীরে জান্নাত লেখা আছে নাজাহান্নাম তা আপনার জানা নেই কিন্তু আপনার লক্ষ্য যখন জান্নাত তখন লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য অবশ্যই কাজ করতে হবে যেমনদুনিয়াবি-পার্থিব সকল কাজ-কর্ম  লক্ষ্য-উদ্দেশ্য অর্জন করার বেলায় আমরা করে থাকি
আর জান্নাত  জাহান্নামের স্রষ্টা যখন বলে দিয়েছেন এটা জান্নাতের পথ আর ওটা জাহান্নামের পথ তখন তা বিশ্বাস করে আমল করতেঅসুবিধা কোথায়?
দুই. যার তাকদীরে জান্নাত লেখা আছে সাথে সাথে এটাও লেখা আছে যে, সে জান্নাত লাভের জন্য নেক আমল করবে তাই জান্নাতেযাবে আর যার তাকদীরে জাহান্নাম লেখা আছে সাথে সাথে এটাও লেখা আছে যে, সে জাহান্নামের কাজ করবে ফলে সে জাহান্নামেযাবে
তিন. সব কিছু আল্লাহর ইচ্ছায় হয় মানুষ সকল কাজই আল্লাহর ইচ্ছায় করে ঠিকই কিন্তু আল্লাহর সন্তুষ্টি মোতাবেক করে নাআল্লাহর সন্তুষ্টি মোতাবেক কাজ করার জন্য সে জান্নাতে যাবে আর সন্তুষ্টি মোতাবেক কাজ না করার জন্য সে জাহান্নামে যাবে
প্রশ্ন হতে পারে ইচ্ছা (ইরাদা বা মাশিয়্যত সন্তুষ্টি (রেজা দুয়ের মধ্যে পার্থক্য আছে কি?
হ্যাঁ অবশ্যই আছে ইচ্ছা  সন্তুষ্টির মধ্যে পার্থক্য আছে অবশ্যই ছোট একটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টা সহজে বুঝানো যেতে পারেযেমন এক ব্যক্তির ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়ল চিকিৎসক বললেন তার পেটে অপারেশন করতে হবে অপারেশন ছাড়া অন্য কোন পথনেই
এখন বেচারা অপারেশন করাতে রাজী নয়  কাজে সে সন্তুষ্ট নয়, তবুও সে অপারেশন করিয়ে থাকে এমন কি  কাজের জন্যডাক্তারকে টাকা পয়সা দেয় অতএব, দেখা গেল  অপারেশনে তার ইচ্ছা পাওয়া গেল, কিন্তু তার সন্তুষ্টি পাওয়া যায়নি অপারেশনকরাতে সে ইচ্ছুক কিন্তু রাজী নয় দেখা গেল ইচ্ছা  সন্তুষ্টি দুটো আলাদা বিষয়
অনেক সময় ইচ্ছা পাওয়া যায়, কিন্তু সেখানে সন্তুষ্টি পাওয়া যায় না কিন্তু যেখানে সন্তুষ্টি পাওয়া যায় সেখানে ইচ্ছা অবশ্যই থাকে
তাই সকল কাজ মানুষ আল্লাহর ইচ্ছায় করে ঠিকই কিন্তু তার সন্তুষ্টি  রেজামন্দি অনুযায়ী করে না বিভ্রান্তি তখনই দেখা দেয় যখনইচ্ছা দ্বারা সন্তুষ্টি বুঝানো হয় তাই জান্নাতে যেতে হলে তাঁর ইচ্ছায় কাজ করলে হবে না তাঁর সন্তুষ্টি অনুযায়ী কাজ করতে হবে যেকাজে তিনি সন্তুষ্ট হন বলে প্রমাণ আছে সে সকল কাজ করতে হবে
 আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি  অসন্তুষ্টি কিভাবে বুঝার উপায়
কোন কাজে আল্লাহ সন্তুষ্ট হন, আর কোন কাজে তিনি অসন্তুষ্ট হন তা বুঝা যাবে কুরআন  সহীহ হাদীস দ্বারা কোন কাজ সংঘটিতহয়ে গেলেই সাধারণভাবে বুঝে নেয়া হবে যে এটা আল্লাহ তাআলার ইচ্ছায় হয়েছে তা অবশ্যই বলতে হবে কিন্তু তা আল্লাহর সন্তুষ্টিতেহয়েছে কিনা তা বুঝা যাবে না কুরআন বা হাদীসের মাধ্যম ব্যতীত কুরআন বা হাদীসে উক্ত বিষয়টির সমর্থন থাকলে বুঝা যাবে সেটাআল্লাহর সন্তুষ্টিতে সম্পন্ন হয়েছে আর যদি কাজটি কুরআন বা হাদীসের পরিপন্থী হয় তাহলে ধরে নেয়া হবে কাজটি আল্লাহরসমন্তুষ্টির খেলাফ হয়েছে তাই আল্লাহর সন্তুষ্টি অনুযায়ী কাজ করলে জান্নাতের অধিকারী হওয়া যাবে আর তার সন্তুষ্টি অনুযায়ী কাজনা করলে জাহান্নামে যেতে হবে ভাল করে মনে রাখতে হবে সব কাজ আল্লাহর ইচ্ছায় হয় ঠিকই কিন্তু সব কাজ তার সন্তুষ্টি মোতাবেকহয় না আরো মনে রাখতে হবে ইচ্ছা  সন্তুষ্টি এক বিষয় নয় দুটো আলাদা বিষয়
চার. আল্লাহ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী তার ইচ্ছায় সবকিছু হয় তাই তিনি ইচ্ছা করেই মানুষকে ইচ্ছা শক্তি দিয়েছেন যাতে মানুষনিজ ইচ্ছায়  ¯^vaxbZvq ভাল  মন্দ পথ Aej¤^b  বর্জন করতে পারে
যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন :
وَقُلِ الْحَقُّ مِنْ رَبِّكُمْ فَمَنْ شَاءَ فَلْيُؤْمِنْ وَمَنْ شَاءَ فَلْيَكْفُرْ
{বল, সত্য তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে ; সুতরাং যার ইচ্ছা বিশ্বাস করুক  যার ইচ্ছা সত্য প্রত্যাখ্যান করুক।} [সূরা আলকাহাফ: ২৯]
তাই বলা যায় আল্লাহর দেয়া ইচ্ছাশক্তিতেই মানুষ ভাল-মন্দ কাজ করে তবে আল্লাহ ইচ্ছা করলে মানুষের ইচ্ছাশক্তি রহিত করে ভালবা মন্দ কাজ করতে বাধ্য করতে পারেন
মানুষ কোন খারাপ কাজ করলে  কথা বলা যাবে না যে,  ক্ষেত্রে মানুষের কোন ইচ্ছা ছিল না  কথাও বলা যাবে না যে আল্লাহরইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজটি হয়েছে কাজটা আল্লাহর ইচ্ছায় হয়েছে এটা যেমন সত্য, তেমনি মানুষের ইচ্ছাও কাজটা করার ব্যাপারেভূমিকা রেখেছে, এটাও সত্য
কিভাবে এটা সম্ভব? একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টা পরিস্কার হয়ে যাবে
উদাহরণটা হল, বিদ্যুৎ ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষ  বিদ্যুৎ গ্রাহকের ভূমিকা বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করলেবিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে, তেমনি বিদ্যুৎ গ্রাহকও ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে কিন্তু দায়বহন করতে হবে বিদ্যুৎ গ্রাহকের মাস শেষে যখন হাজার টাকার বিদ্যুৎ বিল আসল, তখন কর্তৃপক্ষকে  কথা বলে দোষ দেয়া চরমবোকামি হবে যে, তারা কেন বিদ্যুৎ সরবরাহ করল, তারা ইচ্ছা করলে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে আমার বিদ্যুৎ খরচ কমাতে পারত
তারা ইচ্ছা করলে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে আপনার খরচ কমাতে পারত এটা যেমন ঠিক, তেমনি আপনিও সাশ্রয়ী হয়ে বিদ্যুৎখরচ কমাতে পারতেন, এটাও ঠিক আর খরচের  দায়ভার বহন করবে গ্রাহক, সরবরাহকারী কর্তৃপক্ষ নয় কেননা  ক্ষেত্রে গ্রাহকেরইচ্ছা  কর্ম দায়ী
তাই মানুষের ভাল-মন্দ আমলের ব্যাপারেও এটা বলা যায় যে, আল্লাহ ইচ্ছা করলে মানুষ কাজ করত না আবার  মন্দ কাজ করারজন্য মানুষই দায়ীতার ইচ্ছা শক্তি প্রয়োগের জন্য
পাচআল্লাহ নিজের ইচ্ছায় মানুষকে ভাল  মন্দ কাজ করার ইচ্ছা শক্তি দান করে থাকেন তিনি তার ইচ্ছায় কাউকে ভাল বা মন্দকাজ করার জন্য বাধ্য করেন না যদি তিনি এরূপ করতেন তাহলে দুনিয়ার সকল মানুষ ঈমানদার হয়ে যেত
যেমন তিনি বলেন:
وَلَوْ شَاءَ رَبُّكَ لَآَمَنَ مَنْ فِي الْأَرْضِ كُلُّهُمْ جَمِيعًا أَفَأَنْتَ تُكْرِهُ النَّاسَ حَتَّى يَكُونُوا مُؤْمِنِينَ
{আর যদি তোমার রব চাইতেন, তবে যমীনের সকলেই ঈমান আনত তবে কি তুমি মানুষকে বাধ্য করবে, যাতে তারা মুমিন হয়?} [সূরা ইউনূস ,আয়াত ৯৯]

সারকথা . নিজেদের খারাপ কাজগুলো আল্লাহর ইচ্ছায়  তাকদীরের লেখার কারণে হয়েছে এধরনের কথা বলে খারাপ কর্মের শাস্তিথেকে রেহাই পাওয়া যাবে না তাকদীরের দোহাই দিয়ে জাহান্নাম থেকে মুক্তি বা জান্নাত লাভ করা যাবে না
 ক্ষেত্রে ছোট একটা ঘটনা উল্লে­ না করে পারছি না আর তা হল:
উমর রা. এর খেলাফত যুগে এক লোক চুরির অভিযোগে অভিযুক্ত হল,   আদালতে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমাণিত হলশাস্তি হিসেবে তার হাত কাটার নির্দেশ দেয়া হল লোকটি উমর রা. এর কাছে গিয়ে বলল, মুসলিম জাহানের হে মহান খলীফাআল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া কিছু হয় না আমিও তো আল্লাহর ইচ্ছার বাইরে নই আমি তো তার ইচ্ছায়ই চুরি করেছি আমার হাত কাটা যাবে কেন?
উমার রা. বললেন : সব কিছু আল্লাহর ইচ্ছায় বা তাকদীরের কারণে হয় তুমি যেমন আল্লাহর ইচ্ছায় চুরি করেছ, তেমনি তোমার হাতআল্লাহর ইচ্ছায়ই কাটা হবে
মহান বিচার দিবসে যদি কোন মানুষ আল্লাহ তাআলাকে বলে যে, হে আল্লাহআমি বিশ্বাস করতাম আপনার ইচ্ছা ছাড়া কিছু হয় না,আপনিও তাই বলেছেন আমি যে অন্যায় করেছি, জুলুম করেছি তা তো আপনার ইচ্ছায়ই করেছি কাজেই আজ আপনি  কাজেরঅপরাধে আমাকে জাহান্নামে পাঠাবেন কেন?
তখন আল্লাহ আহকামুল হাকেমীন যদি বলেনঠিক আছে তোমার কথাই ঠিক আমার ইচ্ছায় যখন পাপাচারে লিপ্ত হয়েছে, আমারনা-ফরমানী করেছ তখন আমার ইচ্ছায়ই তোমাকে জাহান্নামে যেতে হবে তুমি তো জানো আমার ইচ্ছার সামনে তোমার কিছুই করারনেই আমার ইচ্ছায় যখন পাপাচার করতে তোমার আপত্তি ছিল না তাহলে জাহান্নামে যেতে আপত্তি কেন? তখন সে মানুষটির কিছুবলার থাকবে কি?
আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক অর্থ্যে ভাগ্য বিষয়ে ধারণা অর্জনের তাউফিক দান করুন।